০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতি এবং প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির ধারণা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০৪:১২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৪২৫৭ বার পড়া হয়েছে

পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতি এবং প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির ধারণা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

শিখন-শেখানো কার্যক্রমে বক্তৃতা পদ্ধতি বা লেকচার মেথড (lecture method) একটি সনাতন পদ্ধতি। বক্তৃতা পদ্ধতিটি হলো পূর্বকাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। শিক্ষাদানের বক্তৃতা পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে বা প্রাথমিকভাবে সহজ এবং খুবই জনপ্রিয়। তবে এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আধুনিক শিক্ষণ-কার্যক্রমে দূর করার উদ্যোগ বিশ্বব্যপ্ত। এরই ধারাবাহকতায় এসেছে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি, যা বক্তৃতা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের একটা ধাপ বিশেষ। টেকসই ও কার্য উপযোগী শিক্ষাদানে আত্মনিয়োগ করতে বক্তৃতা পদ্ধতি ও প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি- এই দুই সনাতন পদ্ধতির সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

বক্তৃতা পদ্ধতি (Lecture Method of Teaching)

শ্রেণিকক্ষে কেবল মৌখিক বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের সামনে শিখনফল লাভের উদ্দেশ্যে উপস্থাপনকে বক্তৃতা পদ্ধতি বলে।

বক্তৃতা পদ্ধতি সনাতন শিক্ষাদান পদ্ধতির অন্যতম একটি পদ্ধতি। যদিও প্রাচীন এবং মনে করা হয় বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শেখানোর চেয়ে অনেক উন্নততর ও কার্যকর পদ্ধতিই এখন গ্রাহ্য, তবু সামনাসামনি (face-to-face) বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা এখনো অপরিহার্য। শিখন-শেখানো কার্যক্রমে বক্তৃতা পদ্ধতি একটি শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা করেন- শিক্ষার্থী নীরবে শোনে। পরবর্তী পর্যায়ে, অথবা বক্তৃতার ফাঁকে-ফাঁকেই শিক্ষক প্রশ্ন করে জেনে নিতে চান শিক্ষার্থী কতটাবুঝেছে। শিক্ষার্থী সাধ্যমত জবাব দেবার চেষ্টা করে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবেও শিক্ষক বিষয়বস্তুর সার্বিক বা খুঁটিনাটি প্রসঙ্গেও বক্তৃতা প্রদান করেন।

বক্তৃতা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

  • এটি সর্বদাই শিক্ষক-নির্ভর পাঠদান প্রক্রিয়া বিশেষ।
  • বক্তৃতা পদ্ধতিতে (ওপরে যেমনটি বলা হয়েছে), শিক্ষকই বলে যান আর শিক্ষার্থীরা প্রধানত শুনে যায়।
  • নিঃসন্দেহে বক্তৃতা পদ্ধতি অনেক পুরনো পাঠদান প্রক্রিয়া, একথা বলাই বাহুল্য।
  • স্বল্প সংখ্যক থেকে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটি প্রযোজ্য।
  • সাধারণত, বক্তৃতা পদ্ধতিতে বিশেষ সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না।
  • সময় ও অর্থ সাশ্রয় দুই-ই এতে করা যেতে পারে।
  • বোঝাই যায় যে, বক্তৃতা পদ্ধতিতে শিক্ষকের কর্মতৎপরতাই সর্বাধিক।
  • ধরে নেয়া হয় যে, এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বিষয়বস্তুর পাঠদান সম্পন্ন করা যেতে পারে।

বক্তৃতা পদ্ধতির সুবিধা বা উপযোগিতা 

বক্তৃতা পদ্ধতি প্রাচীন বা গতানুগতিক হলেও বেশ কিছু সুবিধা আছে বলেই এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতির কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • এতে এক সঙ্গে, প্রয়োজন হলে, অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা যেতে পারে।
  • ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী, কেননা শিক্ষকের মৌখিক উপস্থাপন সম্বল করেই পাঠদান চলতে পারে।
  • প্রাক-পরিকল্পনা করতে পারলে, অল্প সময়ে অধিক তথ্য পরিবেশন করে এই পদ্ধতিতে পাঠদান করা যায় বলে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাসূচি সমাপ্ত করা যেতে পারে।
  • উপরিউক্ত প্রাক-পরিকল্পনায় শিক্ষকের প্রস্তুতি সময়-উপযোগী হতে পারে; বক্তৃতা সুন্দর ও শ্রুতি-আকর্ষক করার জন্য শিক্ষক প্রস্তুত হয়ে থাকেন।
  • বক্তৃতা শুনে-শুনে শিক্ষার্থীর বাস্তবক্ষেত্রে শ্রবণ-ক্ষমতা ও শ্রুত বিষয়ের তাৎপর্য অনুধাবনের অনুভূতি বৃদ্ধি পায় বলে ধরে নেয়া হয়।
  • এই পদ্ধতিতে পাঠদানের মাধ্যমে সুবিধা মত ভাষা, কৌশল ও উপমা ব্যবহার করে শিক্ষণীয় বিষয়কে পূর্ণাঙ্গ রূপে ব্যক্ত করা যায়।
  • বক্তৃতার সময় শিক্ষার্থীরা বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না বলে শিক্ষক বাধাহীনভাবে, নিজের মত গুছিয়ে পাঠদানে এগিয়ে যেতে পারেন।
  • উন্নয়নশীল দেশে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের জন্য পর্যাপ্ত পাঠসহায়ক উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও সমর্থন (logistic support) প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যায় না; তাই বক্তৃতামূলক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতেই হয়।

বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা 

পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতির কিছু সুবিধা থাকলেও কার্যকর পাঠদানের মাধ্যমে শিখনফল অর্জনে এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলোই প্রধান। নিচে বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যাগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • বক্তৃতা পদ্ধতি পদ্ধতি ব্যবহারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিখন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কারণ শিক্ষক সর্বস্ব বলে এটি একমুখী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত।
  • বক্তৃতা পদ্ধতির পাঠদানে শিক্ষার্থীর সামর্থ্য  বিবেচনায় আনার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীর মেধা, মনন, চাহিদা; সবই অপ্রধান এবং গুরুত্বহীন। তাই এই পদ্ধতি মনোবিজ্ঞান সম্মত নয় বলে বড়ো অভিযোগ।
  • বক্তৃতার সর্বব্যপ্তিতে শিক্ষার্থীরা একান্তভাবে শিক্ষকের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা ও জ্ঞান-বিচারের ক্ষেত্রে, কোনো বিষয়ের তাৎপর্য বোঝার জন্য শিক্ষকের মুখাপেক্ষি না হয়ে পারে না।
  • এই পদ্ধতি পাঠের লক্ষ্য অর্জনে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়; কারণ এখানে পাঠদানকে সফল করার জন্য শিক্ষকের যে যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন সে রকম উপযুক্ত শিক্ষক খুব কমই পাওয়া যায়।
  • এখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ পায় না; ফলে পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়।
  • বক্তৃতা পদ্ধতির পাঠদানে উন্নতমেধা ও ক্ষীণমেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সার্বিক ভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
  • এখানে শিক্ষককে শ্রেণিশৃঙ্খলা রক্ষার ও পাঠের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কিছুটা কঠোর হতে হয়, নতুবা পাঠদান সার্থক করা যায় না।
  • এতে যদিও শিক্ষকের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে কিন্তু শিক্ষার্থীর তা হয় না; ফলে ‘শিখন সঞ্চালন’ সম্ভব হয় না।
  • একবার বক্তৃতা পদ্ধতিতে পাঠদানে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শিক্ষকের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যাহত হতে পারে; তাতে তাঁর ঐ উদ্ভাবনী শক্তিও স্তিমিত হয়ে পড়ে।

বক্তৃতা পদ্ধতি কার্যকরি করার উপায়

  • শিক্ষকের কন্ঠস্বর সুস্পষ্ট ও জোরালো হতে হবে।
  • উপস্থাপনা ও প্রকাশভঙ্গী মার্জিত ও মনোজ্ঞ হওয়া উচিত।
  • শিক্ষকের অঙ্গভঙ্গি প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় হতে হবে।
  • আকর্ষণীয় উপকরণসমৃদ্ধ ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করবেন।
  • বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত, অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং প্রশ্নোত্তর বিনিময় করবেন।
  • সঠিক দৃষ্টি বিন্যাস থাকবে।
পাঠকে ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষক পরিস্থিতি অনুসারে একাধিক পদ্ধতি ও কৌশলের সংমিশ্রণে নিজের মতো করে পাঠ পরিচালনা করতে পারেন। পাঠের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষকের বিচক্ষণতা এবং বিষয়জ্ঞান ও শিখন পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের উপর।
পাঠকে ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষক পরিস্থিতি অনুসারে একাধিক পদ্ধতি ও কৌশলের সংমিশ্রণে নিজের মতো করে পাঠ পরিচালনা করতে পারেন। পাঠের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষকের বিচক্ষণতা এবং বিষয়জ্ঞান ও শিখন পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের উপর।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি (Question-Answer Method of Teaching)

শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করাকে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বলে। একে সক্রেটিস পদ্ধতিও বলা হয় (Socratic Method of Teaching)।

এই পদ্ধতিতে শিক্ষক প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানা থেকে অজানার দিকে এবং বিষয়বস্তু অনুধাবনেপরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। শিক্ষার্থীরাও প্রশ্ন করে বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয় থাকেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয়ে বোঝা পড়া এবং আদান প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ থাকে।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যাবলি 

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমান ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে উভয়েরই মানসিক প্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়, কারণ মানসিক শৈথিল্য গোটা শিক্ষাদান পরিস্থিতিকে অবজ্ঞার বস্তুতে পরিণত করতে পারে।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল জাগ্রত করা এবং তা নিবারণ এই পদ্ধতিতে করা যায়।
  • ক্লাশের সকল শিক্ষার্থীকে একই প্রশ্ন করে তাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন মেধার যাচাই করা যেতে পারে।
  • দামি শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই এই পদ্ধতিতে সাবলীলভাবে শ্রেণিকক্ষে প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ এর ব্যবহারে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নেই।
  • শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ম করে।
  • এটিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদান পদ্ধতি বলা যেতে পারে।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সুবিধা ব উপযোগিতা 

  • এই পদ্ধতির প্রয়োগে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
  • সরাসরি মনের ভাব আদান-প্রদানের সুযোগ থাকায় শিক্ষণীয় বিষয়ের যে অংশ জটিল বলে মনে হয় শিক্ষার্থী প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছ থেকে তা বুঝে নিতে পারে। শিক্ষকও প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীর পারগতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে সে অনুযায়ী পাঠদান করতে পারেন এবং প্রশ্নোত্তরের পুনরাবৃত্তির দ্বারা পাঠের মূল বক্তব্য অনুধাবনে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে পারেন।
  • পাঠ গ্রহণে শিক্ষার্থী কতটুকু মনোযোগী শিক্ষক প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তা জানতে পারেন।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সক্রিয়তা ও কর্মতৎপরতা জাগিয়ে তোলে।
  • এই পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীর বুদ্ধির দরজা খুলতে এবং যুক্তিতর্কের অবতারণা করতে শিক্ষক যথেষ্ট সাহায্য করতে পারেন।
  • প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়া ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো বিষয় উপস্থাপন করলে তারা স্বকীয়তা প্রকাশের সুযোগ পায়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষকগণ প্রকৃষ্ট শিক্ষণ পদ্ধতির কয়েকটি নীতি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য ও সহযোগিতা দান করতে পারেন। [সেই নীতিগুলো হলো: মূর্ত থেকে অমূর্ত, সহজ থেকে জটিল, জানা থেকে অজানা, নির্দিষ্ট থেকে অনির্দিষ্ট, বিশেষ থেকে সাধারণ, সমগ্র থেকে অংশ ইত্যাদি।]
  • প্রয়োজনবোধে শ্রবণ-দর্শনমূলক উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মান আরো উন্নত করতে পারে।
  • গতানুগতিক বক্তৃতা পদ্ধতির সহজ বিকল্প হলো প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি।
  • শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি না হলে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বাস্তবায়নে খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা 

উপরে বর্ণিত সুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি প্রয়োগের কিছু অসুবিধার দিকও আছে। সেগুলো এই রকম:

  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো: ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিষয়বস্তুর সঠিক উপস্থাপন। যদি প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেগুলো রচিত ও উপস্থাপিত না হয় তবে প্রশ্নোত্তরের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। কেননা, বিষয়বস্তুর যেন-তেন উপস্থাপন শিক্ষার্থীর মনে কোনো চিরস্থায়ী দাগ কাটতে পারে না, বরং ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে।
  • মানতেই হবে যে, ব্যক্তিভেদে শিক্ষকের প্রশ্ন করার দক্ষতা ও কৌশল সমান কার্যকর হয় না; এই গুণ রপ্ত করতে না পারলে উৎকৃষ্ট প্রশ্ন তৈরি এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে-কোনো ধরনের প্রশ্নের মোকাবিলা তিনি করতে পারেন না।
  • বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্ব-প্রস্তুতি না ঘটলে শিক্ষকের পক্ষে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে উপস্থিত প্রশ্নাবলি শিক্ষার্থীর চাহিদা, বয়স, আগ্রহ ও মেধার উপযোগী না হলে তা থেকে সুফল আশা করা যায় না। প্রশ্নাবলি অবশ্যই শ্রেণি-উপযোগী হতে হবে; খুব সহজ হলে শিক্ষার্থীরা পাঠে আকর্ষণ বোধ করবে না, আবার খুব কঠিন/জাটিল হলে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া সম্ভবপর হবে না। 
  • মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অনেক অবান্তর বিষয়ের অবতারণায় অনেকটা সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রশ্ন-সংগঠন ও উপস্থাপনে সূক্ষ্ম চিন্তার প্রয়োগ করতে হবে, নয়তো মূল বিষয়বস্তু থেকে দূরে সরে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক হলে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সুষ্ঠুবাস্তবায়নে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা সমানভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের নিষ্ক্রিয়তা পদ্ধতিটির বাস্তবায়নের অন্তরায়, আবার শিক্ষার্থীর নিষ্ক্রিয়তাও এতে বিরাট বাধার সৃষ্টি করে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতি এবং প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির ধারণা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

প্রকাশ: ০৪:১২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিখন-শেখানো কার্যক্রমে বক্তৃতা পদ্ধতি বা লেকচার মেথড (lecture method) একটি সনাতন পদ্ধতি। বক্তৃতা পদ্ধতিটি হলো পূর্বকাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। শিক্ষাদানের বক্তৃতা পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে বা প্রাথমিকভাবে সহজ এবং খুবই জনপ্রিয়। তবে এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আধুনিক শিক্ষণ-কার্যক্রমে দূর করার উদ্যোগ বিশ্বব্যপ্ত। এরই ধারাবাহকতায় এসেছে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি, যা বক্তৃতা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের একটা ধাপ বিশেষ। টেকসই ও কার্য উপযোগী শিক্ষাদানে আত্মনিয়োগ করতে বক্তৃতা পদ্ধতি ও প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি- এই দুই সনাতন পদ্ধতির সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

বক্তৃতা পদ্ধতি (Lecture Method of Teaching)

শ্রেণিকক্ষে কেবল মৌখিক বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের সামনে শিখনফল লাভের উদ্দেশ্যে উপস্থাপনকে বক্তৃতা পদ্ধতি বলে।

বক্তৃতা পদ্ধতি সনাতন শিক্ষাদান পদ্ধতির অন্যতম একটি পদ্ধতি। যদিও প্রাচীন এবং মনে করা হয় বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শেখানোর চেয়ে অনেক উন্নততর ও কার্যকর পদ্ধতিই এখন গ্রাহ্য, তবু সামনাসামনি (face-to-face) বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা এখনো অপরিহার্য। শিখন-শেখানো কার্যক্রমে বক্তৃতা পদ্ধতি একটি শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা করেন- শিক্ষার্থী নীরবে শোনে। পরবর্তী পর্যায়ে, অথবা বক্তৃতার ফাঁকে-ফাঁকেই শিক্ষক প্রশ্ন করে জেনে নিতে চান শিক্ষার্থী কতটাবুঝেছে। শিক্ষার্থী সাধ্যমত জবাব দেবার চেষ্টা করে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবেও শিক্ষক বিষয়বস্তুর সার্বিক বা খুঁটিনাটি প্রসঙ্গেও বক্তৃতা প্রদান করেন।

বক্তৃতা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

  • এটি সর্বদাই শিক্ষক-নির্ভর পাঠদান প্রক্রিয়া বিশেষ।
  • বক্তৃতা পদ্ধতিতে (ওপরে যেমনটি বলা হয়েছে), শিক্ষকই বলে যান আর শিক্ষার্থীরা প্রধানত শুনে যায়।
  • নিঃসন্দেহে বক্তৃতা পদ্ধতি অনেক পুরনো পাঠদান প্রক্রিয়া, একথা বলাই বাহুল্য।
  • স্বল্প সংখ্যক থেকে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটি প্রযোজ্য।
  • সাধারণত, বক্তৃতা পদ্ধতিতে বিশেষ সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না।
  • সময় ও অর্থ সাশ্রয় দুই-ই এতে করা যেতে পারে।
  • বোঝাই যায় যে, বক্তৃতা পদ্ধতিতে শিক্ষকের কর্মতৎপরতাই সর্বাধিক।
  • ধরে নেয়া হয় যে, এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বিষয়বস্তুর পাঠদান সম্পন্ন করা যেতে পারে।

বক্তৃতা পদ্ধতির সুবিধা বা উপযোগিতা 

বক্তৃতা পদ্ধতি প্রাচীন বা গতানুগতিক হলেও বেশ কিছু সুবিধা আছে বলেই এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতির কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • এতে এক সঙ্গে, প্রয়োজন হলে, অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা যেতে পারে।
  • ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী, কেননা শিক্ষকের মৌখিক উপস্থাপন সম্বল করেই পাঠদান চলতে পারে।
  • প্রাক-পরিকল্পনা করতে পারলে, অল্প সময়ে অধিক তথ্য পরিবেশন করে এই পদ্ধতিতে পাঠদান করা যায় বলে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাসূচি সমাপ্ত করা যেতে পারে।
  • উপরিউক্ত প্রাক-পরিকল্পনায় শিক্ষকের প্রস্তুতি সময়-উপযোগী হতে পারে; বক্তৃতা সুন্দর ও শ্রুতি-আকর্ষক করার জন্য শিক্ষক প্রস্তুত হয়ে থাকেন।
  • বক্তৃতা শুনে-শুনে শিক্ষার্থীর বাস্তবক্ষেত্রে শ্রবণ-ক্ষমতা ও শ্রুত বিষয়ের তাৎপর্য অনুধাবনের অনুভূতি বৃদ্ধি পায় বলে ধরে নেয়া হয়।
  • এই পদ্ধতিতে পাঠদানের মাধ্যমে সুবিধা মত ভাষা, কৌশল ও উপমা ব্যবহার করে শিক্ষণীয় বিষয়কে পূর্ণাঙ্গ রূপে ব্যক্ত করা যায়।
  • বক্তৃতার সময় শিক্ষার্থীরা বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না বলে শিক্ষক বাধাহীনভাবে, নিজের মত গুছিয়ে পাঠদানে এগিয়ে যেতে পারেন।
  • উন্নয়নশীল দেশে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের জন্য পর্যাপ্ত পাঠসহায়ক উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও সমর্থন (logistic support) প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যায় না; তাই বক্তৃতামূলক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতেই হয়।

বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা 

পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতির কিছু সুবিধা থাকলেও কার্যকর পাঠদানের মাধ্যমে শিখনফল অর্জনে এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলোই প্রধান। নিচে বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যাগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • বক্তৃতা পদ্ধতি পদ্ধতি ব্যবহারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিখন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কারণ শিক্ষক সর্বস্ব বলে এটি একমুখী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত।
  • বক্তৃতা পদ্ধতির পাঠদানে শিক্ষার্থীর সামর্থ্য  বিবেচনায় আনার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীর মেধা, মনন, চাহিদা; সবই অপ্রধান এবং গুরুত্বহীন। তাই এই পদ্ধতি মনোবিজ্ঞান সম্মত নয় বলে বড়ো অভিযোগ।
  • বক্তৃতার সর্বব্যপ্তিতে শিক্ষার্থীরা একান্তভাবে শিক্ষকের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা ও জ্ঞান-বিচারের ক্ষেত্রে, কোনো বিষয়ের তাৎপর্য বোঝার জন্য শিক্ষকের মুখাপেক্ষি না হয়ে পারে না।
  • এই পদ্ধতি পাঠের লক্ষ্য অর্জনে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়; কারণ এখানে পাঠদানকে সফল করার জন্য শিক্ষকের যে যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন সে রকম উপযুক্ত শিক্ষক খুব কমই পাওয়া যায়।
  • এখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ পায় না; ফলে পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়।
  • বক্তৃতা পদ্ধতির পাঠদানে উন্নতমেধা ও ক্ষীণমেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সার্বিক ভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
  • এখানে শিক্ষককে শ্রেণিশৃঙ্খলা রক্ষার ও পাঠের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কিছুটা কঠোর হতে হয়, নতুবা পাঠদান সার্থক করা যায় না।
  • এতে যদিও শিক্ষকের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে কিন্তু শিক্ষার্থীর তা হয় না; ফলে ‘শিখন সঞ্চালন’ সম্ভব হয় না।
  • একবার বক্তৃতা পদ্ধতিতে পাঠদানে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শিক্ষকের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যাহত হতে পারে; তাতে তাঁর ঐ উদ্ভাবনী শক্তিও স্তিমিত হয়ে পড়ে।

বক্তৃতা পদ্ধতি কার্যকরি করার উপায়

  • শিক্ষকের কন্ঠস্বর সুস্পষ্ট ও জোরালো হতে হবে।
  • উপস্থাপনা ও প্রকাশভঙ্গী মার্জিত ও মনোজ্ঞ হওয়া উচিত।
  • শিক্ষকের অঙ্গভঙ্গি প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় হতে হবে।
  • আকর্ষণীয় উপকরণসমৃদ্ধ ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করবেন।
  • বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত, অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং প্রশ্নোত্তর বিনিময় করবেন।
  • সঠিক দৃষ্টি বিন্যাস থাকবে।
পাঠকে ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষক পরিস্থিতি অনুসারে একাধিক পদ্ধতি ও কৌশলের সংমিশ্রণে নিজের মতো করে পাঠ পরিচালনা করতে পারেন। পাঠের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষকের বিচক্ষণতা এবং বিষয়জ্ঞান ও শিখন পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের উপর।
পাঠকে ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষক পরিস্থিতি অনুসারে একাধিক পদ্ধতি ও কৌশলের সংমিশ্রণে নিজের মতো করে পাঠ পরিচালনা করতে পারেন। পাঠের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষকের বিচক্ষণতা এবং বিষয়জ্ঞান ও শিখন পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের উপর।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি (Question-Answer Method of Teaching)

শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করাকে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বলে। একে সক্রেটিস পদ্ধতিও বলা হয় (Socratic Method of Teaching)।

এই পদ্ধতিতে শিক্ষক প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানা থেকে অজানার দিকে এবং বিষয়বস্তু অনুধাবনেপরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। শিক্ষার্থীরাও প্রশ্ন করে বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয় থাকেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয়ে বোঝা পড়া এবং আদান প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ থাকে।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যাবলি 

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমান ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে উভয়েরই মানসিক প্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়, কারণ মানসিক শৈথিল্য গোটা শিক্ষাদান পরিস্থিতিকে অবজ্ঞার বস্তুতে পরিণত করতে পারে।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল জাগ্রত করা এবং তা নিবারণ এই পদ্ধতিতে করা যায়।
  • ক্লাশের সকল শিক্ষার্থীকে একই প্রশ্ন করে তাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন মেধার যাচাই করা যেতে পারে।
  • দামি শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই এই পদ্ধতিতে সাবলীলভাবে শ্রেণিকক্ষে প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ এর ব্যবহারে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নেই।
  • শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ম করে।
  • এটিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদান পদ্ধতি বলা যেতে পারে।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সুবিধা ব উপযোগিতা 

  • এই পদ্ধতির প্রয়োগে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
  • সরাসরি মনের ভাব আদান-প্রদানের সুযোগ থাকায় শিক্ষণীয় বিষয়ের যে অংশ জটিল বলে মনে হয় শিক্ষার্থী প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছ থেকে তা বুঝে নিতে পারে। শিক্ষকও প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীর পারগতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে সে অনুযায়ী পাঠদান করতে পারেন এবং প্রশ্নোত্তরের পুনরাবৃত্তির দ্বারা পাঠের মূল বক্তব্য অনুধাবনে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে পারেন।
  • পাঠ গ্রহণে শিক্ষার্থী কতটুকু মনোযোগী শিক্ষক প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তা জানতে পারেন।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সক্রিয়তা ও কর্মতৎপরতা জাগিয়ে তোলে।
  • এই পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীর বুদ্ধির দরজা খুলতে এবং যুক্তিতর্কের অবতারণা করতে শিক্ষক যথেষ্ট সাহায্য করতে পারেন।
  • প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়া ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো বিষয় উপস্থাপন করলে তারা স্বকীয়তা প্রকাশের সুযোগ পায়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষকগণ প্রকৃষ্ট শিক্ষণ পদ্ধতির কয়েকটি নীতি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য ও সহযোগিতা দান করতে পারেন। [সেই নীতিগুলো হলো: মূর্ত থেকে অমূর্ত, সহজ থেকে জটিল, জানা থেকে অজানা, নির্দিষ্ট থেকে অনির্দিষ্ট, বিশেষ থেকে সাধারণ, সমগ্র থেকে অংশ ইত্যাদি।]
  • প্রয়োজনবোধে শ্রবণ-দর্শনমূলক উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মান আরো উন্নত করতে পারে।
  • গতানুগতিক বক্তৃতা পদ্ধতির সহজ বিকল্প হলো প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি।
  • শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি না হলে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বাস্তবায়নে খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা 

উপরে বর্ণিত সুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি প্রয়োগের কিছু অসুবিধার দিকও আছে। সেগুলো এই রকম:

  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো: ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিষয়বস্তুর সঠিক উপস্থাপন। যদি প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেগুলো রচিত ও উপস্থাপিত না হয় তবে প্রশ্নোত্তরের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। কেননা, বিষয়বস্তুর যেন-তেন উপস্থাপন শিক্ষার্থীর মনে কোনো চিরস্থায়ী দাগ কাটতে পারে না, বরং ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে।
  • মানতেই হবে যে, ব্যক্তিভেদে শিক্ষকের প্রশ্ন করার দক্ষতা ও কৌশল সমান কার্যকর হয় না; এই গুণ রপ্ত করতে না পারলে উৎকৃষ্ট প্রশ্ন তৈরি এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে-কোনো ধরনের প্রশ্নের মোকাবিলা তিনি করতে পারেন না।
  • বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্ব-প্রস্তুতি না ঘটলে শিক্ষকের পক্ষে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে উপস্থিত প্রশ্নাবলি শিক্ষার্থীর চাহিদা, বয়স, আগ্রহ ও মেধার উপযোগী না হলে তা থেকে সুফল আশা করা যায় না। প্রশ্নাবলি অবশ্যই শ্রেণি-উপযোগী হতে হবে; খুব সহজ হলে শিক্ষার্থীরা পাঠে আকর্ষণ বোধ করবে না, আবার খুব কঠিন/জাটিল হলে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া সম্ভবপর হবে না। 
  • মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অনেক অবান্তর বিষয়ের অবতারণায় অনেকটা সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রশ্ন-সংগঠন ও উপস্থাপনে সূক্ষ্ম চিন্তার প্রয়োগ করতে হবে, নয়তো মূল বিষয়বস্তু থেকে দূরে সরে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক হলে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়।
  • প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সুষ্ঠুবাস্তবায়নে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা সমানভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের নিষ্ক্রিয়তা পদ্ধতিটির বাস্তবায়নের অন্তরায়, আবার শিক্ষার্থীর নিষ্ক্রিয়তাও এতে বিরাট বাধার সৃষ্টি করে।