০৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে।
রেজাউল করিম খোকন
  • প্রকাশ: ০২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ৫৭৮ বার পড়া হয়েছে

বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে।

হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমিত হয়ে আছে আমাদের শ্রমবাজার। যদিও সরকারি নথিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তালিকায় ১৬৮ দেশের নাম রয়েছে।  বিদেশে পাঠানো মোট কর্মীর ৯৭ শতাংশ গেছেন মাত্র ১০টি দেশে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশে পাঠানো কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে অন্তত এক জন কর্মী পাঠানো হয়েছে, এমন দেশ যুক্ত করলেও কর্মী পাঠানো হয়েছে মোট ১৩৭টি দেশে। কর্মী পাঠানোর তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। কাজ নিয়ে বৈধভাবে বিদেশে যেতে সব কর্মীকে এ সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সংস্থাটির তথ্য বলছে, তালিকায় থাকা দেশের মধ্যে ৩১টি দেশে কোনো কর্মী যায়নি গত পাঁচ বছরে। এর বাইরে মালয়েশিয়া ও সিংগাপুর বড় কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভালো সম্ভাবনা থাকলেও কর্মী গেছে অনেক কম। ইউরোপের দেশগুলোতেও কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না তেমন একটা। তাই নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা শুধুই মুখে মুখে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগ নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে নিয়মিত কাজ করছে। যেসব দেশে কর্মী কম যায়, সেখানেও বাড়ানোর চেষ্টা আছে। তবে বেশি কর্মী পাঠানোর চেয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি।  ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। কিন্তু দূতাবাস না থাকায় ভারতে গিয়ে ভিসার আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনো অনেকে যাচ্ছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে। দুর্ঘটনায় মারাও যাচ্ছেন নিয়মিত। তবে গত দুই বছর দেশটিতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো বেড়েছে। এতে গত পাঁচ বছরে বেশি কর্মী পাঠানো দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে উঠে এসেছে ইতালির নাম। এ সময় ২৫ হাজারের বেশি কর্মী গেছে দেশটিতে।

পাশাপাশি কানাডা, জাপান, কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে। ফলে ইউরোপকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লোক নিতে হচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন ইউরোপের বাজার দখল করতে পারছি না, সেটাই প্রশ্ন। সরকারি-বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দেশে ও বিদেশে যেসব গবেষণা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ফলে ইউরোপে বিভিন্ন খাতে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ঠিক কতখানি এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে কি না, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। উদাহরণস্বরূপ, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমরাস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই খাতে শ্রমিকদের চাহিদাও বেড়েছে। তবে এই খাতে কোন ধরনের শ্রমশক্তি দরকার, সে সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। বাংলাদেশে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ইউরোপের স্কুল পর্যায়ে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ফরাসি, জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ এসব ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সমন্বিত পাঠ্যক্রমের আওতায় শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ অপ্রতুল। অনেক ক্ষেত্রে তা ইউরোপের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা সনদ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সনদের সমতুল্য নয়। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আমরা আমাদের পাঠক্রমকে ঐ পর্যায়ে আনতে পারিনি।

প্রথমত, ইউরোপের শ্রমবাজার সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক ও তাদের দক্ষতা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের পরিসংখ্যান তৈরি করে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। আমাদের নিজস্ব জব পোর্টাল তৈরি করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর নিয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন আমাদের এই জব পোর্টালে প্রবেশাধিকার পায়, সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর যারা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান, তারা অদক্ষ অবস্থায় বিদেশে গেলেও দক্ষ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাই এসব দেশে লোক পাঠানোর সময় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম অনেকটাই ইউরোপীয় আদলে তৈরি। চাইলেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব। তৃতীয়ত, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসংকট বা সরঞ্জামের ঘাটতি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

চতুর্থত, দেশের অনেক তৈরি পোশাকশিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নিজেদের কর্মী ইউরোপে পাঠাচ্ছে। বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝে তাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইউরোপের শ্রমবাজারে নিজেদের প্রচার বাড়াতে হবে। পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকে মাথায় রেখে পাঠক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের যে ভুল ধারণা আছে, তা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের বোঝাতে হবে, বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং, অভিভাবকদের মনোজাগতিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন, সরকারিভাবে প্রচার, শিক্ষার্থীদের ধ্যানধারণার পরিবর্তনেও কাজ করতে হবে। তাদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে হবে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

রেজাউল করিম খোকন

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে।

শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমিত হয়ে আছে আমাদের শ্রমবাজার। যদিও সরকারি নথিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তালিকায় ১৬৮ দেশের নাম রয়েছে।  বিদেশে পাঠানো মোট কর্মীর ৯৭ শতাংশ গেছেন মাত্র ১০টি দেশে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশে পাঠানো কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে অন্তত এক জন কর্মী পাঠানো হয়েছে, এমন দেশ যুক্ত করলেও কর্মী পাঠানো হয়েছে মোট ১৩৭টি দেশে। কর্মী পাঠানোর তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। কাজ নিয়ে বৈধভাবে বিদেশে যেতে সব কর্মীকে এ সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সংস্থাটির তথ্য বলছে, তালিকায় থাকা দেশের মধ্যে ৩১টি দেশে কোনো কর্মী যায়নি গত পাঁচ বছরে। এর বাইরে মালয়েশিয়া ও সিংগাপুর বড় কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভালো সম্ভাবনা থাকলেও কর্মী গেছে অনেক কম। ইউরোপের দেশগুলোতেও কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না তেমন একটা। তাই নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা শুধুই মুখে মুখে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগ নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে নিয়মিত কাজ করছে। যেসব দেশে কর্মী কম যায়, সেখানেও বাড়ানোর চেষ্টা আছে। তবে বেশি কর্মী পাঠানোর চেয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি।  ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। কিন্তু দূতাবাস না থাকায় ভারতে গিয়ে ভিসার আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনো অনেকে যাচ্ছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে। দুর্ঘটনায় মারাও যাচ্ছেন নিয়মিত। তবে গত দুই বছর দেশটিতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো বেড়েছে। এতে গত পাঁচ বছরে বেশি কর্মী পাঠানো দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে উঠে এসেছে ইতালির নাম। এ সময় ২৫ হাজারের বেশি কর্মী গেছে দেশটিতে।

পাশাপাশি কানাডা, জাপান, কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে। ফলে ইউরোপকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লোক নিতে হচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন ইউরোপের বাজার দখল করতে পারছি না, সেটাই প্রশ্ন। সরকারি-বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দেশে ও বিদেশে যেসব গবেষণা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ফলে ইউরোপে বিভিন্ন খাতে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ঠিক কতখানি এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে কি না, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। উদাহরণস্বরূপ, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমরাস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই খাতে শ্রমিকদের চাহিদাও বেড়েছে। তবে এই খাতে কোন ধরনের শ্রমশক্তি দরকার, সে সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। বাংলাদেশে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ইউরোপের স্কুল পর্যায়ে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ফরাসি, জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ এসব ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সমন্বিত পাঠ্যক্রমের আওতায় শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ অপ্রতুল। অনেক ক্ষেত্রে তা ইউরোপের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা সনদ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সনদের সমতুল্য নয়। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আমরা আমাদের পাঠক্রমকে ঐ পর্যায়ে আনতে পারিনি।

প্রথমত, ইউরোপের শ্রমবাজার সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক ও তাদের দক্ষতা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের পরিসংখ্যান তৈরি করে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। আমাদের নিজস্ব জব পোর্টাল তৈরি করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর নিয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন আমাদের এই জব পোর্টালে প্রবেশাধিকার পায়, সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর যারা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান, তারা অদক্ষ অবস্থায় বিদেশে গেলেও দক্ষ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাই এসব দেশে লোক পাঠানোর সময় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কারিগরি শিক্ষার পাঠক্রম অনেকটাই ইউরোপীয় আদলে তৈরি। চাইলেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব। তৃতীয়ত, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসংকট বা সরঞ্জামের ঘাটতি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

চতুর্থত, দেশের অনেক তৈরি পোশাকশিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নিজেদের কর্মী ইউরোপে পাঠাচ্ছে। বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝে তাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইউরোপের শ্রমবাজারে নিজেদের প্রচার বাড়াতে হবে। পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকে মাথায় রেখে পাঠক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের যে ভুল ধারণা আছে, তা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের বোঝাতে হবে, বৈশ্বিক বাজারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিয়ে অর্থ ও সম্মান দুটোই অর্জন সম্ভব। দেশে আমাদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং, অভিভাবকদের মনোজাগতিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন, সরকারিভাবে প্রচার, শিক্ষার্থীদের ধ্যানধারণার পরিবর্তনেও কাজ করতে হবে। তাদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে হবে।