ক্যাডেট কলেজে বর্ধিত টিউশন ফি মেধাবীদের পড়াশুনায যেন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়
যদিও অনেকেরই ধারণা ক্যাডেট কলেজগুলোতে শুধু লেখাপড়াই হয়, আর পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল দেখে অনেকে তাই মনে করেন; আসলে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো সময়টিকে বলা হয় প্রশিক্ষণকাল।
- প্রকাশ: ০১:০৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
- / ২৮৩ বার পড়া হয়েছে
যদিও অনেকেরই ধারণা ক্যাডেট কলেজগুলোতে শুধু লেখাপড়াই হয়, আর পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল দেখে অনেকে তাই মনে করেন; আসলে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো সময়টিকে বলা হয় প্রশিক্ষণকাল।
ক্যাডেট কলেজ একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানকার ভর্তি প্রক্রিয়া, শিক্ষদানপদ্ধতি ও ধরন, প্রশিক্ষন, শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনা, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলা বিষয়ক কর্মকান্ড অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা।প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষন, পুরোপুরি আবাসিক এবং অ্যাকাডেমিক কার্যাকলাপের মতো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ন এক্সট্রা ও কো-কারিকুলার কার্যাবলী ক্যাডেট কলেজগুলোকে অন্যন্যতা দান করেছে।
যদিও অনেকেরই ধারণা ক্যাডেট কলেজগুলোতে শুধু লেখাপড়াই হয়, আর পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল দেখে অনেকে তাই মনে করেন; আসলে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো সময়টিকে বলা হয় প্রশিক্ষণকাল। একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছয় বছর অতিবাহিত করতে হয়। সামরিক ও বেসামরিক সেক্টরে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরির লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৮সালে ফৌজদারহার ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের দেশে ক্যাডেট কলেজের যাত্রা শুরু। ব্রিটিশ পাবলিক স্কুলের আদলে এখানার লেখাপড়া ও প্রশাসনিক কার্যবালী পরিচালিত হতো। প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন স্যার উইলিয়াম মরিস ব্রাউন। এই ক্যাডেট কলেজের সাফল্য ও শিক্ষাদানের ধারা প্রশংসতি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ১৯৬৩ সালে ঝিনাইদহ, ১৯৬৫ সালে মির্জাপুর এবং ১৯৬৬ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি গার্লস ক্যাডেট কলেজসহ মোট বারটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এখানকার লেখাপড়া কিন্তু শ্রেণিকক্ষেই , রাতের পড়াও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসনের সমন্বয়ে এখানকার প্রশাসন। এটিও এক ধরনের ব্যতিক্রম ।
শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের হাউস থেকে একাডেমিক ব্লকে আসা-যাওয়া করেন, ডাইনিং হলে কিভাবে একসাথে সবাই খাবার গ্রহন করেন এর সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে আলাদা ধরনের শিক্ষা যা বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপস্থিত। একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার অনুসরন করা হয় যেখানে সব ধরনের কার্যবালীর উল্লেখ থাকে এবং সমসস্ত ক্যাডেটকে সব ধরনের খেলাধুলার সাথে পরিচিতি থাকতে হয়, অংশগ্রহন করতে হয়। সব ধরনের সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডের চর্চা নিয়মিত হয়ে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারিত হয় অভিভাবকের আয়ের উপর। সম্প্রতি এ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
তিনি বলেন, ১৯ ধাপে ক্যাডেট কলেজ সমূহে টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচচ পর্যায়ের মধ্যে ১৮নম্বর ধাপে অভিভাবকের যদি এক লাখ টাকার ওপর আয় হয়, সেখানে টিউশন ফি দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। যেটা ৩০ শতাংশ বাড়ালে ২০২৪ সাল থেকে দিতে হবে ২৬হাজার টাকা। মাঝামাঝি পর্যায়ে অভিভাবকের ৪০ হাজার টকা যদি ইনকাম হয় তখন বাচচার জন্য তাকে দিতে হবে ১৬হাজার ২৫০ টাকা, যা তার পুরো রোজগারের ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় টিউশন ফি না বাড়িয়ে বরং এটিকে আরও সহনীয় পর্যায়ে পুন:নির্ধারনের বিবেচেনা করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেন মাননীয় সংসদ সদস্য। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ক্যাডেট কলেজসমূহে ক্যাডেটদের টিউশন ফি ব্যতীত নিজস্ব আয়ের উৎস না থাকায় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলেও তা বৃদ্ধি করা হয়নি। পরবর্তীতে সপ্তম শ্রেণির নবাগত ক্যাডেটদের টিউশন ফি ২০টি ধাপে বাড়ানো হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ধাপে ফি ১৫০০ টাকা। আর সর্বোচেচ ধাপে ২৮ হাজার ৬০০ টাকা করা হয় যা পূর্বে ছিল ২২ হাজার টাকা।
মন্ত্রী বলেন, অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী সন্তানদের জন্য ক্যাডেট কলেজে একটি ’ এনডোমেন্ট ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার মধ্যামে অস্চছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি ফল ভোগ করবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ক্যাডেট কলেজ সমূহে আবাস পেনশনের থোক বরাদ্দ না থাকায় ২০২২-২৩ অর্থ বছর থেকে ক্যাডেট কলেজের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসর ভাাতা প্রদান বন্ধ রয়েছে। কিছুক্ষন পর মন্ত্রী বলেন, আমি এই মাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলাম পেনশন বাবদ যে টাকাটা দেযার কথা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে, প্রধানমন্ত্রী সেই অর্থ বরাদ্দের ফাইল সই করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। দেশের মেধাবী সন্তানদের জাতির যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকগন যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তাদের পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। এটি একটি অত্যন্ত সময়োপয়োগী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
বাবা-মা’র আয়ের ওপর ভিত্তি করে ক্যাডেট কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সর্বনিম্ন এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচচ ২২ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। সম্প্রতি নিম্ন ধাপের টিউশন ফি অপরিবর্তিত রেখে অন্যান্য ধাপগুলোর ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচচ ধাপের টিউশন ফি প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮ হাজার ৬০০ টাকা। এ বৃদ্ধির হার সর্বশেষ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত টিউশন ফি’র তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি নয়। ৫ মে সংসদের প্রশ্নোত্তর সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য জানান। এর আগে স্পীকার ড. শিরীন শাারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। প্রশ্নোত্তরে ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ক্যাডেট কলেজের বেতন বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব যৌক্তিক পর্যায নির্ধারন করা হবে কী না তা জানতে চান। এ বিষয়ে সরকার দলের এমপি সালাউদ্দিন মিয়াজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ক্যাডেট কলেজের পেনশন সংক্রান্ত বকেয়া অর্থ প্রধানমন্ত্রী ৫ মে তারিখেই অনুমোদন দিয়েছেন। তারা যেহেতু একটি সুখবর পেয়েছেন। এখন হয়তো টিউশন বৃদ্ধির যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের বিবেচনা করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে তিনি অভিভাবকদের ক্যাডেট কলেজ পরিষদের কাছে একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন।
ক্যাডেট কলেজের একজন সাবেক শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে চাই, যে ক্যাডেট বাড়িতে মাটির সানকিতে ভাত খেতেন, সেই ক্যাডেটই কলেজে দেশের সর্বোচচ পর্যাযের সেনা ও সিভিল অফিসারদের ছেলেমেয়েদের সাথে পড়াশুনা করেছেন, একই ডাইনিংয়ে কাটা চামচ দিয়ে খেয়েছেন, একই পোশাক পড়ে কৃতিত্বের সাথে কলেজ থেকে পাস করে বিশ^বিদ্যালয়ে উচচ শিক্ষা নিযে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। বিদেশে উচচশিক্ষার জন্য গিয়েছেন।এই হচেছ ক্যাডেট কলেজ! সেই বিষয়টি যেন এখনও থাকে অর্থাৎ ঐ ক্যাডেটদের মতো দেশের মেধাবীরা সন্তানরা অর্থের অভাবে যাতে এখানকার আদর্শ শিক্ষা থেকে বি ত না হন। আবার এও দেখেছি দরিদ্র ক্যাডেট বাবা এলাকায় চাঁদা তুলে নামমাত্র ফিতে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছেন, সেই ক্যাডেট বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। আর আমরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সাবেক বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিউর রহমান তাঁর ক্যাডেট কলেজে পড়ার ইতিহাস নিজেই লিখেছেন।তাঁর লেখা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, এলাকার স্থানীয় মার্কেটের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা চাঁদা তুলে তার অর্থের খরচ জুগিয়েছিলেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য। আর তৎকালীন অধ্যক্ষ তার কলেজে ফি কোন কোন ক্ষেত্রে কমিয়ে, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারে মওকুফ করে তার পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই ব্যবস্থা যাতে এখনও থাকে সেটিই আমাদের কাম্য। অর্থাৎ দেশের মেধাবী সন্তানগন যাতে এখানে আগের মতোই পড়তে পারেন, অর্থনৈতিক দৈন্যতা যাতে তাদের পড়াশুনার পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি।