০২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ওষুধ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক।
ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ
  • প্রকাশ: ০৭:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ৩২৪ বার পড়া হয়েছে

ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। | ছবি: Pixabay.com

রোগ প্রতিরোধ-প্রতিকারে আমরা ওষুধ ব্যবহার করি। সঠিক সময় সঠিক মাত্রায় সঠিক ওষুধটি প্রয়োগ করলে আমরা অল্প ওষুধেই সুফল পেয়ে থাকি ও সুস্থ হয়ে উঠি। ওষুধের রোগ সারানোর অপূর্ব ক্ষমতাকে আমরা শুধু ধর্তব্যের মধ্যে নিয়ে থাকি। কিন্তু রোগ সারানোর পাশাপাশি ওষুধ যে আমাদের শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা জানি না বা মনে রাখি না।

কোনো কোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে মানুষ মারাও যেতে পারে। এ বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে। মনে রাখা উচিত, ওষুধ সাধারণ ভোগ্যপণ্যের মতো কোনো পণ্য নয়। ওষুধ দেয়া বা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। উন্নত বিশ্বে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

কেউ ওষুধের দোকান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোনো ওষুধ কিনতে পারে না। আমাদের দেশে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যে কোনো পরিমাণে সবরকম ওষুধ কিনতে পারে। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্পর্কে কোনো ওষুধ প্রদান ও ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টের সুস্পষ্ট পরামর্শ থাকা বাধ্যতামূলক। নয়তো ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক, হৃদরোগ-রক্তচাপ-ডায়াবেটিসের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, আসক্তি সৃষ্টিকারী ওষুধ, ট্রাংকুইলাইজার, মৃগী রোগের ওষুধসহ আরও অসংখ্য ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত। এমন কিছু ওষুধ আছে, দৈনন্দিন জীবনে যেগুলোর ব্যবহার ব্যাপক হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের দরকার হয় না। এসব ওষুধকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ড্রাগ বলা হয়। প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, ভিটামিন, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত। রোগীকে ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্যই ওষুধের এ শ্রেণি বিভাগ এবং ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। ওষুধের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগের মাধ্যমে এ ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো যথাসম্ভব ন্যূনতম রেখে রোগীকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সুফল প্রদানের প্রচেষ্টাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের আসল লক্ষ্য।

একটি ওষুধের রিস্ক-বেনিফিট অনুপাত যত কম হবে, রোগীর জন্য তত মঙ্গল। কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে রিস্ক-বেনিফিট অনুপাত ব্যবধান কম হওয়া সত্ত্বেও ওষুধ হিসেবে এগুলোর কোনো বিকল্প থাকে না বলে রোগীর জীবনরক্ষার জন্য এসব ওষুধ আবশ্যক হয়ে পড়ে। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে রোগী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রোগে ব্যবহৃত ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত।

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের প্রতিনিয়তই অন্য একধরনের ভয়ংকর বিপদ ও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত সাত দশক ধরে অ্যান্টিবায়োটিককে সংক্রামক রোগের প্রতিকারে ম্যাজিক বুলেট হিসেবে গণ্য করে আসা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে একদিকে যেমন লক্ষ-কোটি লোকের জীবন রক্ষা করা গেছে, তেমনি এসব ওষুধের বিষক্রিয়া, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অপপ্রয়োগের ফলে ভোগান্তি ছাড়াও অনেক লোককে জীবন দিতে হয়েছে। সংক্রামক রোগের চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জীবাণুতত্ত্বীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হয় রোগী কোন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত এবং সেই জীবাণু বা জীবাণুগুলো কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।

এ ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন না করেই যত্রতত্র যখন-তখন বিভিন্ন মাত্রায় যুক্তিহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অনেক জীবাণু ইতিমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা রোধ বা ধ্বংস করে সফল চ্যালেঞ্জার হিসেবে টিকে থাকার দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন করেছে। জীবাণুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন এ শতাব্দীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক নতুন নতুন কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবসভ্যতাকে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ নয়, প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। সুতরাং নিরাপদ ও সফল কার্যকারিতা লাভের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক অতিমাত্রায় ব্যবহার যেমন ক্ষতিকর, কম মাত্রায় গ্রহণ তেমনি বিপজ্জনক। একটি বা দুটি প্যারাসিটামল খেলে ব্যথা সারে বলে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, একটি বা দুটি অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সংক্রামক রোগ সারবে।

প্রত্যেক সংক্রামক ব্যাধির জন্যই চিকিৎসক প্রদত্ত নির্বাচিত ওষুধটি নির্ধারিত মাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট দিনের জন্য গ্রহণ করতে হবে। এর কমও নয়, বেশিও নয়। নির্ধারিত মাত্রায় কম ওষুধ খেলে জীবাণু নির্মূল হবে না। ওষুধ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম হলে রোগীর ভোগান্তি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজকাল চিকিৎসকদের কারণেও ওষুধের অপব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বেড়ে গেছে। ভাইরাল সংক্রমণ সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগেও ঢালাওভাবে তারা অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

শিশু ও নারীদের ওপর ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে ওষুধ প্রদান বাঞ্ছনীয়। শিশু ও নারীদের ওষুধ প্রয়োগের সময় আমরা ভুলে যাই, শিশুর বাড়ন্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং বিভিন্ন ডেলিকেট সিস্টেম আকার ও কর্মক্ষমতার দিক থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করে না বলে ওষুধের বিপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শিশুদের খুব বেশি অনভিপ্রেত ওষুধ প্রদান করা হয়ে থাকে এবং এর ফলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশুদের প্রদত্ত দুই-তৃতীয়াংশ ওষুধই অপ্রয়োজনীয় বা সামান্য প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন দেশে অধিকাংশ শিশুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। আমরা প্রায়ই শিশুদের প্রকৃত সমস্যা বুঝতে পারি না। শিশুরা অসুস্থ হলে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হই। আমাদের ধারণা, ওষুধ রোগ সারায়; কিন্তু ওষুধ যে রোগ সৃষ্টি করতে পারে তা আমরা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারি। শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া, কফ, ঠাণ্ডা লাগার মতো কয়েকটি সাধারণ রোগে বেশি ভোগে। সনাতনী ধারণা থেকে শিশুর এসব রোগে যেসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর। এসব রোগ সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয় এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ নেই। সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডা লাগলেই শিশুদের নির্বিচারে অ্যান্টিহিস্টামিন প্রদান করা হয়। অ্যান্টিহিস্টামিন ধরনের ওষুধে ঘুমের প্রভাব থাকায় শিশুরা এ ধরনের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং বাবা-মা নিশ্চিন্ত হয় এই ভেবে যে, তাদের শিশু সুস্থ হয়ে উঠছে। এ ধারণা ঠিক নয়। শিশুদের ওপর অ্যান্টিহিস্টামিন বা সিডেটিভ ধরনের ওষুধের সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এসব ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে শিশুদের পেশি নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয় ও ভারসাম্যে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। কাশি হলেই আজকাল কফ মিক্শ্চার প্রদান করা হয়। এসব কফ মিক্শ্চারে সিউডোএফিড্রিন থাকে। এ যৌগটি শিশুদের দুঃস্বপ্ন ছাড়াও ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

শারীরিক গঠন, ওজন, অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যা, হরমোনের ধরন ও কর্মকাণ্ডের ভিন্নতার কারণে নারীদের শরীরে ওষুধের মেটাবলিজম ও প্রতিক্রিয়া পুরুষের চেয়ে ভিন্ন। ওষুধের প্রতি সহনশীলতা, কার্যকারিতাও স্বভাবতই আলাদা। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিষক্রিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়েদের ওষুধ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়েদের ওপর পর্যাপ্ত গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পাদনে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বিশ্বজুড়ে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, অনুমান ও নিজস্ব চিন্তাভাবনার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়াই চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ওষুধের ছাড়পত্র দিতে হচ্ছে। ফলে শিশু ও নারীদের ওপর ওষুধের, বিশেষ করে নতুন আবিষ্কৃত ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী নারীদের ওষুধ প্রয়োগের কারণে বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে শুধু মা নয়, শিশুরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ওষুধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত শিশু ও নারীদের, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ওসব ওষুধ প্রদান করা উচিত নয়।

ভেষজ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই—এ কথাটি আমার বোধগম্য নয়। আমি বহু বছর ধরে ভেষজ উদ্ভিদ ও ওষুধের ওপর গবেষণা করে আসছি। বিভিন্ন ঔষধি গাছ থেকে প্রায় দু’শ নতুন রাসায়নিক যৌগ আইসোলেট করে অনেকগুলোর ঔষধি গুণাগুণের ওপর প্রচুর কাজ করেছি। সুতরাং ঔষধি গাছ এবং হার্বাল ওষুধের ওপর আমার যৎসামান্য অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে বলে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। পৃথিবীতে এমন কোনো ওষুধ নেই, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। প্রিয় পাঠক, এবার ভেষজ ওষুধের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

সাম্প্রতিককালে পরিচালিত বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে- হার্বাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়াজনিত রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার ধ্বংস ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হচ্ছে। হার্বাল ওষুধের অন্যতম ভয়াবহ সীমাবদ্ধতা হল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশকজাতীয় পদার্থ দ্বারা কন্টামিনেশন বা দূষিত হয়ে পড়া। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে অসংখ্য হার্বাল ওষুধে এসব ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

বলা হয়ে থাকে, হার্বাল ওষুধের নিজস্ব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে এসব ভয়ংকর পদার্থের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকগুণ বেশি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, হার্বাল ওষুধের প্রস্তুতকারকরা এবং তাদের প্রমোটাররা এসব তথ্য কোনো সময়ই উল্লেখ করেন না। এ ছাড়াও কোনো কোনো ভেষজ উদ্ভিদে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। তবে ইদানীং চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়নের কারণে জানা সম্ভব কোন উদ্ভিদে এসব ক্ষতিকর যৌগ রয়েছে। জনমনে ওষুধ সম্পর্র্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারমাধ্যমে, বিশেষ করে রেডিও-টেলিভিশনে ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার সম্পর্র্কে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার করা প্রয়োজন। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে ওষুধের অযৌক্তিক ব্যবহার বন্ধ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।

ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ

  • ১. শুধু প্রয়োজনেই ওষুধ সেবন করুন। অপ্রয়োজনে কখনই ওষুধ সেবন করবেন না। অন্যকেও অপ্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করুন। অপ্রয়োজনে ভিটামিনও খাবেন না। 
  • ২. খেয়ালখুশির বশবর্তী হয়ে যখন-তখন ওষুধ খাবেন না। প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া শুরু করলে যখন-তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করবেন। সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবন করুন। প্রায়ই দেখা যায়, ড্রাগ স্টোর থেকে ভুল ডোজের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। মাঝে মাঝে রোগী বা রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট ওষুধের ডোজে ভুল করেন। এটা রোগীর জন্য ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক হতে পারে।
  • ৩. সুস্থবোধ করলেও ওষুধের নির্দিষ্ট কোর্স সমাপ্ত করুন। কোনোমতেই কোর্স সমাপ্ত না করে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে কোর্স সমাপ্ত না করলে পরবর্তীকালে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
  • ৪. বেশি মাত্রায় বা বেশি ওষুধ খেলে বেশি ফল পাওয়া যাবে—এ ধারণা ঠিক নয়। আবার নির্দিষ্ট মাত্রার কম ওষুধ খেলেও অসুখ সারবে না।
  • ৫. রোগ ও ওষুধের ব্যাপারে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টরাই বিশেষজ্ঞ। আপনি এ দুয়ের কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত না হলে রোগ ও ওষুধের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।
  • ৬. শিশুরা রোগাক্রান্ত হয় যেমন সহজে, মারাও যায় তেমনি বেশি। শিশুদের ব্যাপারে ঝুঁকি না নিয়ে এবং কালক্ষেপণ না করে সব রোগের ক্ষেত্রে শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও যুক্তিবাদী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুকে নিজের খেয়ালখুশিমতো ওষুধ খাওয়াবেন না। 
  • ৭. গর্ভবতী নারীদের বেলায় ওষুধ গ্রহণ বা প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কারণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে গর্ভজাত সন্তানের ক্ষতি ও জীবন বিপন্ন হতে পারে।
  • ৮. কোনো কোনো সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে আত্মচিকিৎসা গ্রহণযোগ্য হলেও নিয়ন্ত্রণহীন আত্মচিকিৎসা ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন- ব্যথা বা জ্বর নিয়ন্ত্রণে মাত্রাতিরিক্ত প্যারাসিটামল ব্যবহার লিভার ও কিডনি ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
  • ৯. অননুমোদিত দোকান থেকে ওষুধ কিনবেন না। ওষুধের গায়ে খুচরা বিক্রয় মূল্য, ব্যাচ নম্বর, এক্সপায়ার ডেট ঠিক আছে কিনা দেখে ওষুধ কিনুন। ভুয়া, নকল, ভেজাল ও ক্ষতিকর ওষুধ থেকে সাবধান। মাঝে মাঝে এরকমও দেখা যায়, বিক্রেতারা প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত কোনো বিশেষ ওষুধ স্টোরে বা সরবরাহ নেই বলে অন্য ব্র্যান্ডের কম গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ বিক্রি করতে চায়। মনে রাখবেন, ভিটামিনের চেয়ে অ্যান্টিবায়োটিক আপনার সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। ড্রাগ স্টোরের ওষুধ বিক্রেতাদের এ অশুভ ও অনৈতিক মানসিকতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  • ১০. ওষুধের সঙ্গে দেয়া লিফলেটে প্রদত্ত তথ্যাবলি আপনার কাজে আসতে পারে। তাই লিফলেটটি সংরক্ষণ করুন এবং ভালোভাবে পড়ুন।
  • ১১. ইনজেকশনের ক্ষেত্রে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ নিরাপদ। নকল বা ব্যবহৃত ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। বহু ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মাধ্যমে অনেক মারাত্মক রোগ সংক্রমিত হয়। অনেকে হয়তো জানেন না, নকল ও ব্যবহৃত ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ রিপ্যাক হয়ে আবার বাজারে বিক্রি হয়।
  • ১২. অন্যের ওষুধ সেবন করবেন না বা আপনার ওষুধ অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না।
  • ১৩. মনে রাখবেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের চেয়ে সেবাযত্ন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন রোগীর জন্য বেশি উপকারী হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা আপনাকে বহু রোগ থেকে রক্ষা করবে।
  • ১৪. খাওয়ার আগে দেখে নিন ঠিক ওষুধটি আপনি খাচ্ছেন বা খাওয়াচ্ছেন কিনা। ভালো করে দেখে নিন, ওষুধটি খাওয়ার আগে না পরে খেতে হবে। কোনো কোনো ওষুধ খালি পেটে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আবার কোনো কোনো ওষুধ খালি পেটে সেবন করলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
  • ১৫. বিশেষ কিছু জানার থাকলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। যে চিকিৎসক আপনাকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করবেন না, তাকে বর্জন করুন।
  • ১৬. কোনো কোনো ওষুধ গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
  • ১৭. সবসময় সুস্থ থাকার ব্রত গ্রহণ করুন। ব্যায়াম, খাবার ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে আপনি অতি সহজে সুস্থ থাকতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থ হলে মনে করতে হবে- রোগটি আপনার কোনো ভুলের কারণেই হয়েছে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সাবেক অধ্যাপক ও ডিন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক।

ওষুধ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

প্রকাশ: ০৭:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

রোগ প্রতিরোধ-প্রতিকারে আমরা ওষুধ ব্যবহার করি। সঠিক সময় সঠিক মাত্রায় সঠিক ওষুধটি প্রয়োগ করলে আমরা অল্প ওষুধেই সুফল পেয়ে থাকি ও সুস্থ হয়ে উঠি। ওষুধের রোগ সারানোর অপূর্ব ক্ষমতাকে আমরা শুধু ধর্তব্যের মধ্যে নিয়ে থাকি। কিন্তু রোগ সারানোর পাশাপাশি ওষুধ যে আমাদের শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা জানি না বা মনে রাখি না।

কোনো কোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে মানুষ মারাও যেতে পারে। এ বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে। মনে রাখা উচিত, ওষুধ সাধারণ ভোগ্যপণ্যের মতো কোনো পণ্য নয়। ওষুধ দেয়া বা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। উন্নত বিশ্বে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

কেউ ওষুধের দোকান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোনো ওষুধ কিনতে পারে না। আমাদের দেশে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যে কোনো পরিমাণে সবরকম ওষুধ কিনতে পারে। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্পর্কে কোনো ওষুধ প্রদান ও ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টের সুস্পষ্ট পরামর্শ থাকা বাধ্যতামূলক। নয়তো ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক, হৃদরোগ-রক্তচাপ-ডায়াবেটিসের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, আসক্তি সৃষ্টিকারী ওষুধ, ট্রাংকুইলাইজার, মৃগী রোগের ওষুধসহ আরও অসংখ্য ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত। এমন কিছু ওষুধ আছে, দৈনন্দিন জীবনে যেগুলোর ব্যবহার ব্যাপক হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের দরকার হয় না। এসব ওষুধকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ড্রাগ বলা হয়। প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, ভিটামিন, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত। রোগীকে ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্যই ওষুধের এ শ্রেণি বিভাগ এবং ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। ওষুধের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগের মাধ্যমে এ ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো যথাসম্ভব ন্যূনতম রেখে রোগীকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সুফল প্রদানের প্রচেষ্টাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের আসল লক্ষ্য।

একটি ওষুধের রিস্ক-বেনিফিট অনুপাত যত কম হবে, রোগীর জন্য তত মঙ্গল। কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে রিস্ক-বেনিফিট অনুপাত ব্যবধান কম হওয়া সত্ত্বেও ওষুধ হিসেবে এগুলোর কোনো বিকল্প থাকে না বলে রোগীর জীবনরক্ষার জন্য এসব ওষুধ আবশ্যক হয়ে পড়ে। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে রোগী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রোগে ব্যবহৃত ওষুধ এ শ্রেণিভুক্ত।

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের প্রতিনিয়তই অন্য একধরনের ভয়ংকর বিপদ ও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত সাত দশক ধরে অ্যান্টিবায়োটিককে সংক্রামক রোগের প্রতিকারে ম্যাজিক বুলেট হিসেবে গণ্য করে আসা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে একদিকে যেমন লক্ষ-কোটি লোকের জীবন রক্ষা করা গেছে, তেমনি এসব ওষুধের বিষক্রিয়া, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অপপ্রয়োগের ফলে ভোগান্তি ছাড়াও অনেক লোককে জীবন দিতে হয়েছে। সংক্রামক রোগের চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জীবাণুতত্ত্বীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হয় রোগী কোন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত এবং সেই জীবাণু বা জীবাণুগুলো কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।

এ ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন না করেই যত্রতত্র যখন-তখন বিভিন্ন মাত্রায় যুক্তিহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অনেক জীবাণু ইতিমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা রোধ বা ধ্বংস করে সফল চ্যালেঞ্জার হিসেবে টিকে থাকার দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন করেছে। জীবাণুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন এ শতাব্দীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক নতুন নতুন কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবসভ্যতাকে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ নয়, প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। সুতরাং নিরাপদ ও সফল কার্যকারিতা লাভের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক অতিমাত্রায় ব্যবহার যেমন ক্ষতিকর, কম মাত্রায় গ্রহণ তেমনি বিপজ্জনক। একটি বা দুটি প্যারাসিটামল খেলে ব্যথা সারে বলে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, একটি বা দুটি অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সংক্রামক রোগ সারবে।

প্রত্যেক সংক্রামক ব্যাধির জন্যই চিকিৎসক প্রদত্ত নির্বাচিত ওষুধটি নির্ধারিত মাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট দিনের জন্য গ্রহণ করতে হবে। এর কমও নয়, বেশিও নয়। নির্ধারিত মাত্রায় কম ওষুধ খেলে জীবাণু নির্মূল হবে না। ওষুধ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম হলে রোগীর ভোগান্তি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজকাল চিকিৎসকদের কারণেও ওষুধের অপব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বেড়ে গেছে। ভাইরাল সংক্রমণ সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগেও ঢালাওভাবে তারা অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

শিশু ও নারীদের ওপর ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে ওষুধ প্রদান বাঞ্ছনীয়। শিশু ও নারীদের ওষুধ প্রয়োগের সময় আমরা ভুলে যাই, শিশুর বাড়ন্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং বিভিন্ন ডেলিকেট সিস্টেম আকার ও কর্মক্ষমতার দিক থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করে না বলে ওষুধের বিপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শিশুদের খুব বেশি অনভিপ্রেত ওষুধ প্রদান করা হয়ে থাকে এবং এর ফলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশুদের প্রদত্ত দুই-তৃতীয়াংশ ওষুধই অপ্রয়োজনীয় বা সামান্য প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন দেশে অধিকাংশ শিশুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। আমরা প্রায়ই শিশুদের প্রকৃত সমস্যা বুঝতে পারি না। শিশুরা অসুস্থ হলে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হই। আমাদের ধারণা, ওষুধ রোগ সারায়; কিন্তু ওষুধ যে রোগ সৃষ্টি করতে পারে তা আমরা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারি। শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া, কফ, ঠাণ্ডা লাগার মতো কয়েকটি সাধারণ রোগে বেশি ভোগে। সনাতনী ধারণা থেকে শিশুর এসব রোগে যেসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর। এসব রোগ সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয় এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ নেই। সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডা লাগলেই শিশুদের নির্বিচারে অ্যান্টিহিস্টামিন প্রদান করা হয়। অ্যান্টিহিস্টামিন ধরনের ওষুধে ঘুমের প্রভাব থাকায় শিশুরা এ ধরনের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং বাবা-মা নিশ্চিন্ত হয় এই ভেবে যে, তাদের শিশু সুস্থ হয়ে উঠছে। এ ধারণা ঠিক নয়। শিশুদের ওপর অ্যান্টিহিস্টামিন বা সিডেটিভ ধরনের ওষুধের সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এসব ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে শিশুদের পেশি নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয় ও ভারসাম্যে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। কাশি হলেই আজকাল কফ মিক্শ্চার প্রদান করা হয়। এসব কফ মিক্শ্চারে সিউডোএফিড্রিন থাকে। এ যৌগটি শিশুদের দুঃস্বপ্ন ছাড়াও ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

শারীরিক গঠন, ওজন, অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যা, হরমোনের ধরন ও কর্মকাণ্ডের ভিন্নতার কারণে নারীদের শরীরে ওষুধের মেটাবলিজম ও প্রতিক্রিয়া পুরুষের চেয়ে ভিন্ন। ওষুধের প্রতি সহনশীলতা, কার্যকারিতাও স্বভাবতই আলাদা। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিষক্রিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়েদের ওষুধ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়েদের ওপর পর্যাপ্ত গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পাদনে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বিশ্বজুড়ে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, অনুমান ও নিজস্ব চিন্তাভাবনার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়াই চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ওষুধের ছাড়পত্র দিতে হচ্ছে। ফলে শিশু ও নারীদের ওপর ওষুধের, বিশেষ করে নতুন আবিষ্কৃত ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী নারীদের ওষুধ প্রয়োগের কারণে বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে শুধু মা নয়, শিশুরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ওষুধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত শিশু ও নারীদের, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ওসব ওষুধ প্রদান করা উচিত নয়।

ভেষজ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই—এ কথাটি আমার বোধগম্য নয়। আমি বহু বছর ধরে ভেষজ উদ্ভিদ ও ওষুধের ওপর গবেষণা করে আসছি। বিভিন্ন ঔষধি গাছ থেকে প্রায় দু’শ নতুন রাসায়নিক যৌগ আইসোলেট করে অনেকগুলোর ঔষধি গুণাগুণের ওপর প্রচুর কাজ করেছি। সুতরাং ঔষধি গাছ এবং হার্বাল ওষুধের ওপর আমার যৎসামান্য অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে বলে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। পৃথিবীতে এমন কোনো ওষুধ নেই, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। প্রিয় পাঠক, এবার ভেষজ ওষুধের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

সাম্প্রতিককালে পরিচালিত বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে- হার্বাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়াজনিত রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার ধ্বংস ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হচ্ছে। হার্বাল ওষুধের অন্যতম ভয়াবহ সীমাবদ্ধতা হল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশকজাতীয় পদার্থ দ্বারা কন্টামিনেশন বা দূষিত হয়ে পড়া। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে অসংখ্য হার্বাল ওষুধে এসব ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

বলা হয়ে থাকে, হার্বাল ওষুধের নিজস্ব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে এসব ভয়ংকর পদার্থের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকগুণ বেশি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, হার্বাল ওষুধের প্রস্তুতকারকরা এবং তাদের প্রমোটাররা এসব তথ্য কোনো সময়ই উল্লেখ করেন না। এ ছাড়াও কোনো কোনো ভেষজ উদ্ভিদে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। তবে ইদানীং চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়নের কারণে জানা সম্ভব কোন উদ্ভিদে এসব ক্ষতিকর যৌগ রয়েছে। জনমনে ওষুধ সম্পর্র্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারমাধ্যমে, বিশেষ করে রেডিও-টেলিভিশনে ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার সম্পর্র্কে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার করা প্রয়োজন। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে ওষুধের অযৌক্তিক ব্যবহার বন্ধ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।

ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ

  • ১. শুধু প্রয়োজনেই ওষুধ সেবন করুন। অপ্রয়োজনে কখনই ওষুধ সেবন করবেন না। অন্যকেও অপ্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করুন। অপ্রয়োজনে ভিটামিনও খাবেন না। 
  • ২. খেয়ালখুশির বশবর্তী হয়ে যখন-তখন ওষুধ খাবেন না। প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া শুরু করলে যখন-তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করবেন। সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবন করুন। প্রায়ই দেখা যায়, ড্রাগ স্টোর থেকে ভুল ডোজের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। মাঝে মাঝে রোগী বা রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট ওষুধের ডোজে ভুল করেন। এটা রোগীর জন্য ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক হতে পারে।
  • ৩. সুস্থবোধ করলেও ওষুধের নির্দিষ্ট কোর্স সমাপ্ত করুন। কোনোমতেই কোর্স সমাপ্ত না করে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে কোর্স সমাপ্ত না করলে পরবর্তীকালে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
  • ৪. বেশি মাত্রায় বা বেশি ওষুধ খেলে বেশি ফল পাওয়া যাবে—এ ধারণা ঠিক নয়। আবার নির্দিষ্ট মাত্রার কম ওষুধ খেলেও অসুখ সারবে না।
  • ৫. রোগ ও ওষুধের ব্যাপারে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টরাই বিশেষজ্ঞ। আপনি এ দুয়ের কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত না হলে রোগ ও ওষুধের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।
  • ৬. শিশুরা রোগাক্রান্ত হয় যেমন সহজে, মারাও যায় তেমনি বেশি। শিশুদের ব্যাপারে ঝুঁকি না নিয়ে এবং কালক্ষেপণ না করে সব রোগের ক্ষেত্রে শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও যুক্তিবাদী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুকে নিজের খেয়ালখুশিমতো ওষুধ খাওয়াবেন না। 
  • ৭. গর্ভবতী নারীদের বেলায় ওষুধ গ্রহণ বা প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কারণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে গর্ভজাত সন্তানের ক্ষতি ও জীবন বিপন্ন হতে পারে।
  • ৮. কোনো কোনো সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে আত্মচিকিৎসা গ্রহণযোগ্য হলেও নিয়ন্ত্রণহীন আত্মচিকিৎসা ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন- ব্যথা বা জ্বর নিয়ন্ত্রণে মাত্রাতিরিক্ত প্যারাসিটামল ব্যবহার লিভার ও কিডনি ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
  • ৯. অননুমোদিত দোকান থেকে ওষুধ কিনবেন না। ওষুধের গায়ে খুচরা বিক্রয় মূল্য, ব্যাচ নম্বর, এক্সপায়ার ডেট ঠিক আছে কিনা দেখে ওষুধ কিনুন। ভুয়া, নকল, ভেজাল ও ক্ষতিকর ওষুধ থেকে সাবধান। মাঝে মাঝে এরকমও দেখা যায়, বিক্রেতারা প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত কোনো বিশেষ ওষুধ স্টোরে বা সরবরাহ নেই বলে অন্য ব্র্যান্ডের কম গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ বিক্রি করতে চায়। মনে রাখবেন, ভিটামিনের চেয়ে অ্যান্টিবায়োটিক আপনার সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। ড্রাগ স্টোরের ওষুধ বিক্রেতাদের এ অশুভ ও অনৈতিক মানসিকতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  • ১০. ওষুধের সঙ্গে দেয়া লিফলেটে প্রদত্ত তথ্যাবলি আপনার কাজে আসতে পারে। তাই লিফলেটটি সংরক্ষণ করুন এবং ভালোভাবে পড়ুন।
  • ১১. ইনজেকশনের ক্ষেত্রে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ নিরাপদ। নকল বা ব্যবহৃত ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। বহু ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মাধ্যমে অনেক মারাত্মক রোগ সংক্রমিত হয়। অনেকে হয়তো জানেন না, নকল ও ব্যবহৃত ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ রিপ্যাক হয়ে আবার বাজারে বিক্রি হয়।
  • ১২. অন্যের ওষুধ সেবন করবেন না বা আপনার ওষুধ অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না।
  • ১৩. মনে রাখবেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের চেয়ে সেবাযত্ন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন রোগীর জন্য বেশি উপকারী হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা আপনাকে বহু রোগ থেকে রক্ষা করবে।
  • ১৪. খাওয়ার আগে দেখে নিন ঠিক ওষুধটি আপনি খাচ্ছেন বা খাওয়াচ্ছেন কিনা। ভালো করে দেখে নিন, ওষুধটি খাওয়ার আগে না পরে খেতে হবে। কোনো কোনো ওষুধ খালি পেটে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আবার কোনো কোনো ওষুধ খালি পেটে সেবন করলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
  • ১৫. বিশেষ কিছু জানার থাকলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। যে চিকিৎসক আপনাকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করবেন না, তাকে বর্জন করুন।
  • ১৬. কোনো কোনো ওষুধ গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
  • ১৭. সবসময় সুস্থ থাকার ব্রত গ্রহণ করুন। ব্যায়াম, খাবার ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে আপনি অতি সহজে সুস্থ থাকতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থ হলে মনে করতে হবে- রোগটি আপনার কোনো ভুলের কারণেই হয়েছে।