০২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

শিক্ষা পরিকল্পনা কাকে বলে? শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্য কী?

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০৭:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২৫৪১২ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষা পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ | ছবি: আনস্পল্যাশ

পরিকল্পনা কী?

হনরি ফেয়ল বলেন, “পরিকল্পনা হল ভবিষ্যত নির্ধারণ করা এবং তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।” 

টেরি এবং ফ্রাংকলিন বলেছেন, “পরিকল্পনা হলো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যাবলী অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ কি করতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা তৈরী ও বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা।” 

কুঞ্জ এবং উইরিচ এর মতে “লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যাবলী নির্ণয়এবং তা অর্জনের জন্য করণীয় কাজ নির্ধারণের সাথে পরিকল্পনা জড়িত। এর জন্য প্রয়োজন হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অর্থাৎ ভবিষ্যত একাধিক বিকল্প কর্মধারা থেকে একটিকে বাছাই করা।” 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিকল্পনা হলো একটি গতিশীল, যুক্তিগ্রাহ্য, মানসিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত একটি প্রক্রিয়া যা কোন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য স্থির এবং ঐ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে করণীয় সবচেয়ে সম্ভাব্য উপযুক্ত কর্মসূচী প্রণয়ন করে।

শিক্ষা পরিকল্পনার ধারণা

এইচ. নিউম্যান বলেছেন,  পরিকল্পনা হলো প্রকল্পায়িত ক্রিয়াকলাপের গতিপথ এবং শিক্ষা পরিকল্পনা হলো কোনো দেশের সামগ্রিক শিক্ষার জন্য প্রণীত পরিকল্পনা।

শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা। শিক্ষাকে যুগোপযোগী, মানসম্পন্ন, কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হলো শিক্ষা পরিকল্পনা। শিক্ষা পরিকল্পনার যাত্রা শুরু সেই প্রাচীন কাল থেকেই। 

শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন টেকনিক্যাল, প্রশাসনিকসহ বহু সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী ব্যক্তি জড়িত থাকে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের স্তর, শিক্ষায় অগ্রগতি বা পশ্চাৎপদতা, সম্পদ প্রাপ্তি প্রভৃতিকে বিবেচনায় রাখতে হয় শিক্ষা পরিকল্পনার জন্য।

শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

পরিকল্পিত মানবসম্পদ উন্নয়নB (Human resource development) শিক্ষার লক্ষ্য এবং এই পুঁজি সুপরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্যই শিক্ষা পরিকল্পনার প্রয়োজন। শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারিত হয় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদার নিরিখে।

শিক্ষা পরিকল্পনার বিশেষ কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হল:

১। শিক্ষা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো সাধারণ এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সাক্ষরতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়া।

২। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে শিক্ষার পরিমাণগত দিক অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত দিকের উন্নয়ন সাধন।

৩। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ করা।

৪। শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পুরণে সক্ষম করে গড়ে তোলা।

৫। সমাজের চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদী কর্মসূচি প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল ও নির্দেশনা প্রদান করা।

৬। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাখাতে সীমিত বরাদ্দ পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করে অধিক প্রতিদান লাভ করা।

৭। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের উপযোগী বয়সের শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনা।

৮। সকলের জন্য শিক্ষা এবং গণসাক্ষরতা অর্জনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।

৯। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগদান এবং দেশে ও বিদেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

১০। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্তরের প্রচলিত কারিকুলাম ও সিলেবাস পর্যালোচনা করা ও উন্নততর কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রচলন করা।

এছাড়াও আরও অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে।

শিক্ষা পরিকল্পনার উপাদান/বৈশিষ্ট্য

সামাজিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মতো শিক্ষা পরিকল্পনারও কতগুলো নির্দিষ্ট উপাদান রয়েছে। উপাদানগুলো নিম্নরূপ:

১. শিক্ষা পরিকল্পনার প্রক্রিয়া: শিক্ষা পরিকল্পনা একটা নিরবচ্ছিন্ন কর্মকান্ড যা সম্পাদন করার জন্য ইনপুট হিসেবে সম্পদ ও শক্তির প্রয়োজন রয়েছে।

২. প্রস্তুতি: শিক্ষা পরিকল্পনা হলো কতগুলো সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণের প্রক্রিয়া এবং সরকারি কোনো সংস্থার মাধ্যমে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়।

৩. সেট: এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ ও শিক্ষা পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এক ধরনের সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ, কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এক সেট সিদ্ধান্তের সমাহার।

৪. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন: প্রাথমিকভাবে শিক্ষা পরিকল্পনার জন্য পরিকল্পনাবিদ, পরিকল্পনা সম্পর্কে জ্ঞাতব্যক্তি, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি, উন্নততর সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। অতঃপর পরিকল্পনার জন্য জনসমর্থন আদায় ও গণসম্পর্ক উন্নয়ন প্রভৃতি করতে হয়। সর্বশেষে শিক্ষা পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সচেষ্ট হতে হয়।

৫. ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি: শিক্ষা পরিকল্পনার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো এটি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। এতে বর্তমান সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের প্রক্ষেপণ করা হয় এবং পরিকল্পনাকালীন সময়ে অবিরাম পুনমূল্যায়ন, উপযোজন প্রভৃতির মাধ্যমে নমনীয় পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

৬. লক্ষ্যাভিমুখীতা: ভবিষ্যত কিছু লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষা পরিকল্পনার কর্মপন্থায় অনেকগুলো সুপারিশ গৃহীত হয়ে থাকে। ল

৭. উপযুক্ত/প্রত্যাশিত উপকরণ: শিক্ষা পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিছু যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়। শিক্ষা পরিকল্পনার পদ্ধতি, কার্যপ্রণালী এবং কৌশলের মৌলিক লক্ষ্য হলো সামান্যতম সম্পদের সাহায্যে এসব প্রত্যাশিত উপকরণসমূহের সরবরাহ নিশ্চিত করা।

অতএব, শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এমন একটি যৌক্তিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ সচেতনভাবে নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে শিক্ষার কতকগুলো লক্ষ্য চিহ্নিত করে এবং সেসকল লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ে অর্জনের পদ্ধতি ও সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে।

(বাউবি শিক্ষক মডিউল অবলম্বনে)

শেয়ার করুন

2 thoughts on “শিক্ষা পরিকল্পনা কাকে বলে? শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্য কী?

  1. খুব ভাল লাগল। নতুন সব তথ্য পেলাম।আশা করি আরোও আপডেট তত্ত্ব পাব।

  2. শিক্ষা পরিকল্পনা হলো শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন, কার্যকরী ও সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বস্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের শিক্ষার উন্নয়ন মূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এ সাহায্য করে।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

শিক্ষা পরিকল্পনা কাকে বলে? শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্য কী?

প্রকাশ: ০৭:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

পরিকল্পনা কী?

হনরি ফেয়ল বলেন, “পরিকল্পনা হল ভবিষ্যত নির্ধারণ করা এবং তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।” 

টেরি এবং ফ্রাংকলিন বলেছেন, “পরিকল্পনা হলো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যাবলী অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ কি করতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা তৈরী ও বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা।” 

কুঞ্জ এবং উইরিচ এর মতে “লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যাবলী নির্ণয়এবং তা অর্জনের জন্য করণীয় কাজ নির্ধারণের সাথে পরিকল্পনা জড়িত। এর জন্য প্রয়োজন হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অর্থাৎ ভবিষ্যত একাধিক বিকল্প কর্মধারা থেকে একটিকে বাছাই করা।” 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিকল্পনা হলো একটি গতিশীল, যুক্তিগ্রাহ্য, মানসিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত একটি প্রক্রিয়া যা কোন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য স্থির এবং ঐ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে করণীয় সবচেয়ে সম্ভাব্য উপযুক্ত কর্মসূচী প্রণয়ন করে।

শিক্ষা পরিকল্পনার ধারণা

এইচ. নিউম্যান বলেছেন,  পরিকল্পনা হলো প্রকল্পায়িত ক্রিয়াকলাপের গতিপথ এবং শিক্ষা পরিকল্পনা হলো কোনো দেশের সামগ্রিক শিক্ষার জন্য প্রণীত পরিকল্পনা।

শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা। শিক্ষাকে যুগোপযোগী, মানসম্পন্ন, কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হলো শিক্ষা পরিকল্পনা। শিক্ষা পরিকল্পনার যাত্রা শুরু সেই প্রাচীন কাল থেকেই। 

শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন টেকনিক্যাল, প্রশাসনিকসহ বহু সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী ব্যক্তি জড়িত থাকে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের স্তর, শিক্ষায় অগ্রগতি বা পশ্চাৎপদতা, সম্পদ প্রাপ্তি প্রভৃতিকে বিবেচনায় রাখতে হয় শিক্ষা পরিকল্পনার জন্য।

শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

পরিকল্পিত মানবসম্পদ উন্নয়নB (Human resource development) শিক্ষার লক্ষ্য এবং এই পুঁজি সুপরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্যই শিক্ষা পরিকল্পনার প্রয়োজন। শিক্ষা পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারিত হয় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদার নিরিখে।

শিক্ষা পরিকল্পনার বিশেষ কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হল:

১। শিক্ষা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো সাধারণ এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সাক্ষরতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়া।

২। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে শিক্ষার পরিমাণগত দিক অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত দিকের উন্নয়ন সাধন।

৩। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ করা।

৪। শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পুরণে সক্ষম করে গড়ে তোলা।

৫। সমাজের চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদী কর্মসূচি প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল ও নির্দেশনা প্রদান করা।

৬। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাখাতে সীমিত বরাদ্দ পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করে অধিক প্রতিদান লাভ করা।

৭। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের উপযোগী বয়সের শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনা।

৮। সকলের জন্য শিক্ষা এবং গণসাক্ষরতা অর্জনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।

৯। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগদান এবং দেশে ও বিদেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

১০। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্তরের প্রচলিত কারিকুলাম ও সিলেবাস পর্যালোচনা করা ও উন্নততর কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রচলন করা।

এছাড়াও আরও অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে।

শিক্ষা পরিকল্পনার উপাদান/বৈশিষ্ট্য

সামাজিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মতো শিক্ষা পরিকল্পনারও কতগুলো নির্দিষ্ট উপাদান রয়েছে। উপাদানগুলো নিম্নরূপ:

১. শিক্ষা পরিকল্পনার প্রক্রিয়া: শিক্ষা পরিকল্পনা একটা নিরবচ্ছিন্ন কর্মকান্ড যা সম্পাদন করার জন্য ইনপুট হিসেবে সম্পদ ও শক্তির প্রয়োজন রয়েছে।

২. প্রস্তুতি: শিক্ষা পরিকল্পনা হলো কতগুলো সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণের প্রক্রিয়া এবং সরকারি কোনো সংস্থার মাধ্যমে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়।

৩. সেট: এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ ও শিক্ষা পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এক ধরনের সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ, কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এক সেট সিদ্ধান্তের সমাহার।

৪. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন: প্রাথমিকভাবে শিক্ষা পরিকল্পনার জন্য পরিকল্পনাবিদ, পরিকল্পনা সম্পর্কে জ্ঞাতব্যক্তি, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি, উন্নততর সিদ্ধান্ত প্রস্তুতকরণ প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। অতঃপর পরিকল্পনার জন্য জনসমর্থন আদায় ও গণসম্পর্ক উন্নয়ন প্রভৃতি করতে হয়। সর্বশেষে শিক্ষা পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সচেষ্ট হতে হয়।

৫. ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি: শিক্ষা পরিকল্পনার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো এটি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। এতে বর্তমান সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের প্রক্ষেপণ করা হয় এবং পরিকল্পনাকালীন সময়ে অবিরাম পুনমূল্যায়ন, উপযোজন প্রভৃতির মাধ্যমে নমনীয় পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

৬. লক্ষ্যাভিমুখীতা: ভবিষ্যত কিছু লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষা পরিকল্পনার কর্মপন্থায় অনেকগুলো সুপারিশ গৃহীত হয়ে থাকে। ল

৭. উপযুক্ত/প্রত্যাশিত উপকরণ: শিক্ষা পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিছু যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়। শিক্ষা পরিকল্পনার পদ্ধতি, কার্যপ্রণালী এবং কৌশলের মৌলিক লক্ষ্য হলো সামান্যতম সম্পদের সাহায্যে এসব প্রত্যাশিত উপকরণসমূহের সরবরাহ নিশ্চিত করা।

অতএব, শিক্ষা পরিকল্পনা হলো এমন একটি যৌক্তিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ সচেতনভাবে নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে শিক্ষার কতকগুলো লক্ষ্য চিহ্নিত করে এবং সেসকল লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ে অর্জনের পদ্ধতি ও সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে।

(বাউবি শিক্ষক মডিউল অবলম্বনে)