১১:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনে বেসরকারি খাতের ভূমিকা

ড. মো. আইনুল ইসলাম
  • প্রকাশ: ০৬:০৮:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
  • / ৫২৭ বার পড়া হয়েছে

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজি’ শীর্ষক বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার মূল দর্শন হলো— কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। এসডিজি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এটি অপরিহার্য। এসডিজির আওতায় ১৭টি মূল অভীষ্ট থেকে ৩৯টি সূচককে বাংলাদেশের জন্য ‘এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলার বাস্তবতা বিবেচনায় একটি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারিত রয়েছে। এসডিজি প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং শেষ হবে ২০৩০ সালে।

এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব

২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজি মহাপরিকল্পনা ইতিমধ্যে সাত বছর অতিক্রম করেছে, যার বাস্তবায়ন গতি কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউরোপে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য হ্রাসের পরিবর্তে এখন তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল ও টেকসই হওয়া দূরের কথা, অর্ধশতাধিক দেশ আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার গুরুতর ঝুঁকিতেও রয়েছে। তবে নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সাফল্য এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতির প্রবণতা নির্ধারিত সময়ে এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন, যেখানে সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও বেসরকারি খাতের গুরুত্বও অপরিসীম। কারণ লক্ষ্য অর্জনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে আরো প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন হবে, যার ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশকে স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে, যার প্রায় ৪২ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়ন করতে হলে বেসরকারি খাতের শক্তিশালী অংশগ্রহণ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি খাত এই অর্থের সংস্থান করবে মূলত বিনিয়োগের মাধ্যমে।

আমাদের সকলেরই এসডিজির ১৭ টি মূল লক্ষ্য জানা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির সেই ১৭ টি লক্ষ্যের কোথাও বেসরকারি খাতের ভূমিকা বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। এ কারণে অনেকের ধারণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে। তবে একটু বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, বেসরকারি খাতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া এসডিজির উল্লিখিত লক্ষ্যসমূহ অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রকৃতপক্ষে, সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এখানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকার একা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে সক্ষম হবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করার দায়িত্ব করপোরেশন, সুশীল সমাজ এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য জরুরি। তবে সরকার যেহেতু বৃহত্তর আঙ্গিকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সেহেতু সরকারই এখানে মূল ভূমিকা পালনকারী। এখানে বেসরকারি খাতের ভূমিকা শুধু অর্থায়ন ও বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং উদ্ভাবন, মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও তথ্য এবং প্রযুক্তিগত ইনপুট প্রবর্তনের মূল ক্ষমতা বেসরকারি খাতের।

মূল্য সৃষ্টির সুযোগ জড়িত এমন সব টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার বেসরকারি খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু, এটি পরীক্ষিত যে, টেকসই উন্নয়নকাজ ব্যবসার পরিবেশ, বাজারকেও উন্নত করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য ট্রিলিয়ন ডলার সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের সুপরিকল্পিত ব্যবহার দায়িত্বশীল কোম্পানিগুলোকে উন্নয়নের সমাধান খুঁজে বের করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

এসডিজি অর্জন ও টেকসই উন্নয়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য সংস্থার যুগোপযোগী পরিবর্তনের চালক হওয়ার ক্ষমতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এককভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এটি কম বর্জ্য তৈরি করবে এবং ভোক্তাদের একটি টেকসই পছন্দ বেছে নিতে বাধ্য করবে। আবার একটি ছোট বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান যদি তার পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার আলোকে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবসহ অন্যান্য খাতে নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের একটি নতুন উৎস তৈরি হয়, যা কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে পারে। এভাবে দিন শেষে সব খাতেরই ভিত্তি টেকসই হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ চাকরি বেসরকারি খাতের। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের কাছে বিশ্বের মূল চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার সুযোগ ও সক্ষমতা বেশি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেসরকারি খাতে যে কোনো পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নিয়োগের অনুশীলন বাস্তবায়িত করে, যা ক্রমশ কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বয়ে আনে। ফলস্বরূপ সামগ্রিকভাবে বৈষম্য হ্রাস পায় এবং শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবনমানে উন্নতি ঘটে।

আমরা যদি এসডিজির ১২ নম্বর লক্ষ্য পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব যে, দায়িত্বশীল উৎপাদন ও খরচের ধরন বেসরকারি খাতের মূল উপাদান। যেহেতু প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে এবং প্রতিটি মানুষের বস্তুগত চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু বেসরকারি খাত স্থায়িত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।

প্রাইস ওয়াটার্স হাউজ কুপারসের (পিডব্লিউসি) এক সমীক্ষামতে, উন্নত বিশ্বে ৭০ শতাংশের বেশি কোম্পানি তাদের বার্ষিক করপোরেট রিপোর্টে এখন এসডিজির উল্লেখ করছে, যার মধ্যে ২৩ শতাংশ এসডিজিসম্পর্কিত মূল কর্মক্ষমতা সূচক ও লক্ষ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করছে। পিডব্লিউসির মতে, কর্মের ধরনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন উপকরণ হিসেবে অন্যান্য ব্যবসাসৃষ্ট উপজাতসমূহ পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন দৃঢ় করতে পারে। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দায়িত্বশীল ও সংরক্ষণভিত্তিক উৎপাদন অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নয়নের কৌশল বিকাশের দিকেও তারা মনোনিবেশ করতে পারে। 

এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ

অনেকে মনে করেন, বেসরকারি খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো যোগ্য প্রতিভা ও দক্ষ লোকবলের অভাব। এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তা অনুশীলনের জন্য মূলধারার শিক্ষা কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে শিক্ষার মূল চালক হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তাদের শিক্ষা বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত হলে চলবে না। বরং শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে করা ঐ বিনিয়োগ এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে, যেন তা তাদের ভবিষ্যতের চাহিদার প্রতি কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারে।

অর্থাৎ, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এমন পেশাদার কর্মী বাহিনী সৃষ্টি করবে, যা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কীভাবে তারা তাদের পণ্য তৈরি করছে, পরিষেবাসমূহ সরবরাহ করছে এবং এতে করে পরিবেশ ও সমাজে কতটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সেদিকেও তাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। কীভাবে এবং কী ধরনের লোক নিয়োগ হচ্ছে, সে সম্পর্কে বেসরকারি খাতের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। কাঁচামাল ও পশ্চাৎ উপকরণের বিকল্প উৎস চিহ্নিত করাও তাদের পণ্য ও সেবা টেকসইকরণের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের পুরো ব্যবসা ব্যবস্থাপনা স্থায়িত্ব পাবে। উন্নয়নকামী দেশ হিসেবে মোটা দাগে বাংলাদেশে বেসরকারি খাত এসডিজি অর্জনে যেসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিম্নরূপ: এসডিজি অর্জনে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনশীল কাজে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানির বাজারও বাড়াতে হবে।  অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের কর্মকাণ্ডকে বাস্তবে রূপ দিতে বেসরকারি খাতকে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র চিহ্নিত করে আর্থিক বিনিয়োগ করতে হবে।

এসডিজি অর্জনে যেসব খাতে বেশি চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেখানে কার্যকর বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে এখন চামড়া, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি, হালকা প্রকৌশলের মতো অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। 

বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের উচিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও দেশীয় ব্র্যান্ড সৃষ্টির জন্য গবেষণাকাজে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।

 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা | জাতিসংঘ
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা | জাতিসংঘ

রপ্তানি ও বাণিজ্য পণ্যের গুণমান বজায় রেখে বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের বাজার ঠিক রাখতে এবং তার ক্রমোন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে। নিজস্ব ব্র্যান্ডিং তৈরি করে রপ্তানি বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ভাবমূর্তি বৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে পণ্যসামগ্রী আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।  বিশ্বে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবার যে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে টেকসই রূপ দিতে বিনিয়োগ কতে হবে।  বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় দেশে সেই সব পণ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে পণ্যের মানোন্নয়নে বিনিয়োগ ও বাজার বিস্তৃতির চেষ্টা করতে হবে।  

বেসরকারি খাতে উৎপাদনশীল কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।   দেশে প্রচুর শিক্ষিত বেকারের প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা, রাজস্ব আদায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যবসার উন্নতিকে টেকসই রূপ দিতে হবে। বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের সৎ মানসিকতা এবং বিনিয়োগে দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে তার বিনিয়োগকে টেকসই রূপ দিতে হবে, যা এসডিজি অর্জনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

এসডিজি বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর বর্তালেও বেসরকারি খাতই হচ্ছে উন্নয়নের চালিকাশক্তি। সেই দৃষ্টিতে বাংলাদেশে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বেসরকারি খাতকে আস্থায় আনতে হবে। এ জন্য সরকারকেই দ্যোগী হয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি অভিন্ন মঞ্চ তৈরি করতে হবে, যেখানে সরকার থেকে সুনির্দিষ্টভাবে দিকনির্দেশনা থাকবে, যাতে বেসরকারি খাত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক শক্তি হতে পারে। যদিও আমাদের দেশে সরকারের এক বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয়ে লক্ষণীয় ঘাটতি রয়েছে, তবু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সরকারি-বেসরকারি খাতের কাজের মধ্যে সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যবসাই করে যাচ্ছে, কিন্তু বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কল্যাণমূলক অনেক কর্মসূচি পালন করলেও অনুৎপাদনশীল কাজেও বিনিয়োগ করছে। নিজের অস্তিত্বের স্বার্থেই অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি খাতকে পরিবেশের ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে, দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে হবে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১৬ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান’, যা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়, বেসরকারি খাতেরও। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে এসডিজি কেন, কোনো লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হবে না।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. মো. আইনুল ইসলাম

ড. মো. আইনুল ইসলাম, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনে বেসরকারি খাতের ভূমিকা

প্রকাশ: ০৬:০৮:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজি’ শীর্ষক বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার মূল দর্শন হলো— কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। এসডিজি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এটি অপরিহার্য। এসডিজির আওতায় ১৭টি মূল অভীষ্ট থেকে ৩৯টি সূচককে বাংলাদেশের জন্য ‘এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলার বাস্তবতা বিবেচনায় একটি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারিত রয়েছে। এসডিজি প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং শেষ হবে ২০৩০ সালে।

এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব

২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজি মহাপরিকল্পনা ইতিমধ্যে সাত বছর অতিক্রম করেছে, যার বাস্তবায়ন গতি কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউরোপে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য হ্রাসের পরিবর্তে এখন তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল ও টেকসই হওয়া দূরের কথা, অর্ধশতাধিক দেশ আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার গুরুতর ঝুঁকিতেও রয়েছে। তবে নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সাফল্য এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতির প্রবণতা নির্ধারিত সময়ে এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন, যেখানে সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও বেসরকারি খাতের গুরুত্বও অপরিসীম। কারণ লক্ষ্য অর্জনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে আরো প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন হবে, যার ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশকে স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে, যার প্রায় ৪২ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়ন করতে হলে বেসরকারি খাতের শক্তিশালী অংশগ্রহণ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি খাত এই অর্থের সংস্থান করবে মূলত বিনিয়োগের মাধ্যমে।

আমাদের সকলেরই এসডিজির ১৭ টি মূল লক্ষ্য জানা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির সেই ১৭ টি লক্ষ্যের কোথাও বেসরকারি খাতের ভূমিকা বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। এ কারণে অনেকের ধারণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে। তবে একটু বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, বেসরকারি খাতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া এসডিজির উল্লিখিত লক্ষ্যসমূহ অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রকৃতপক্ষে, সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এখানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকার একা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে সক্ষম হবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করার দায়িত্ব করপোরেশন, সুশীল সমাজ এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য জরুরি। তবে সরকার যেহেতু বৃহত্তর আঙ্গিকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সেহেতু সরকারই এখানে মূল ভূমিকা পালনকারী। এখানে বেসরকারি খাতের ভূমিকা শুধু অর্থায়ন ও বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং উদ্ভাবন, মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও তথ্য এবং প্রযুক্তিগত ইনপুট প্রবর্তনের মূল ক্ষমতা বেসরকারি খাতের।

মূল্য সৃষ্টির সুযোগ জড়িত এমন সব টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার বেসরকারি খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু, এটি পরীক্ষিত যে, টেকসই উন্নয়নকাজ ব্যবসার পরিবেশ, বাজারকেও উন্নত করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য ট্রিলিয়ন ডলার সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের সুপরিকল্পিত ব্যবহার দায়িত্বশীল কোম্পানিগুলোকে উন্নয়নের সমাধান খুঁজে বের করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

এসডিজি অর্জন ও টেকসই উন্নয়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য সংস্থার যুগোপযোগী পরিবর্তনের চালক হওয়ার ক্ষমতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এককভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এটি কম বর্জ্য তৈরি করবে এবং ভোক্তাদের একটি টেকসই পছন্দ বেছে নিতে বাধ্য করবে। আবার একটি ছোট বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান যদি তার পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার আলোকে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবসহ অন্যান্য খাতে নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের একটি নতুন উৎস তৈরি হয়, যা কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে পারে। এভাবে দিন শেষে সব খাতেরই ভিত্তি টেকসই হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ চাকরি বেসরকারি খাতের। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের কাছে বিশ্বের মূল চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার সুযোগ ও সক্ষমতা বেশি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেসরকারি খাতে যে কোনো পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নিয়োগের অনুশীলন বাস্তবায়িত করে, যা ক্রমশ কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বয়ে আনে। ফলস্বরূপ সামগ্রিকভাবে বৈষম্য হ্রাস পায় এবং শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবনমানে উন্নতি ঘটে।

আমরা যদি এসডিজির ১২ নম্বর লক্ষ্য পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব যে, দায়িত্বশীল উৎপাদন ও খরচের ধরন বেসরকারি খাতের মূল উপাদান। যেহেতু প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে এবং প্রতিটি মানুষের বস্তুগত চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু বেসরকারি খাত স্থায়িত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।

প্রাইস ওয়াটার্স হাউজ কুপারসের (পিডব্লিউসি) এক সমীক্ষামতে, উন্নত বিশ্বে ৭০ শতাংশের বেশি কোম্পানি তাদের বার্ষিক করপোরেট রিপোর্টে এখন এসডিজির উল্লেখ করছে, যার মধ্যে ২৩ শতাংশ এসডিজিসম্পর্কিত মূল কর্মক্ষমতা সূচক ও লক্ষ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করছে। পিডব্লিউসির মতে, কর্মের ধরনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন উপকরণ হিসেবে অন্যান্য ব্যবসাসৃষ্ট উপজাতসমূহ পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন দৃঢ় করতে পারে। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দায়িত্বশীল ও সংরক্ষণভিত্তিক উৎপাদন অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নয়নের কৌশল বিকাশের দিকেও তারা মনোনিবেশ করতে পারে। 

এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ

অনেকে মনে করেন, বেসরকারি খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো যোগ্য প্রতিভা ও দক্ষ লোকবলের অভাব। এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তা অনুশীলনের জন্য মূলধারার শিক্ষা কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে শিক্ষার মূল চালক হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তাদের শিক্ষা বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত হলে চলবে না। বরং শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে করা ঐ বিনিয়োগ এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে, যেন তা তাদের ভবিষ্যতের চাহিদার প্রতি কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারে।

অর্থাৎ, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এমন পেশাদার কর্মী বাহিনী সৃষ্টি করবে, যা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কীভাবে তারা তাদের পণ্য তৈরি করছে, পরিষেবাসমূহ সরবরাহ করছে এবং এতে করে পরিবেশ ও সমাজে কতটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সেদিকেও তাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। কীভাবে এবং কী ধরনের লোক নিয়োগ হচ্ছে, সে সম্পর্কে বেসরকারি খাতের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। কাঁচামাল ও পশ্চাৎ উপকরণের বিকল্প উৎস চিহ্নিত করাও তাদের পণ্য ও সেবা টেকসইকরণের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের পুরো ব্যবসা ব্যবস্থাপনা স্থায়িত্ব পাবে। উন্নয়নকামী দেশ হিসেবে মোটা দাগে বাংলাদেশে বেসরকারি খাত এসডিজি অর্জনে যেসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিম্নরূপ: এসডিজি অর্জনে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনশীল কাজে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানির বাজারও বাড়াতে হবে।  অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের কর্মকাণ্ডকে বাস্তবে রূপ দিতে বেসরকারি খাতকে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র চিহ্নিত করে আর্থিক বিনিয়োগ করতে হবে।

এসডিজি অর্জনে যেসব খাতে বেশি চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেখানে কার্যকর বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে এখন চামড়া, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি, হালকা প্রকৌশলের মতো অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। 

বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের উচিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও দেশীয় ব্র্যান্ড সৃষ্টির জন্য গবেষণাকাজে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।

 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা | জাতিসংঘ
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা | জাতিসংঘ

রপ্তানি ও বাণিজ্য পণ্যের গুণমান বজায় রেখে বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের বাজার ঠিক রাখতে এবং তার ক্রমোন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে। নিজস্ব ব্র্যান্ডিং তৈরি করে রপ্তানি বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ভাবমূর্তি বৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে পণ্যসামগ্রী আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।  বিশ্বে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবার যে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে টেকসই রূপ দিতে বিনিয়োগ কতে হবে।  বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় দেশে সেই সব পণ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে পণ্যের মানোন্নয়নে বিনিয়োগ ও বাজার বিস্তৃতির চেষ্টা করতে হবে।  

বেসরকারি খাতে উৎপাদনশীল কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।   দেশে প্রচুর শিক্ষিত বেকারের প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা, রাজস্ব আদায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যবসার উন্নতিকে টেকসই রূপ দিতে হবে। বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ীদের সৎ মানসিকতা এবং বিনিয়োগে দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে তার বিনিয়োগকে টেকসই রূপ দিতে হবে, যা এসডিজি অর্জনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

এসডিজি বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর বর্তালেও বেসরকারি খাতই হচ্ছে উন্নয়নের চালিকাশক্তি। সেই দৃষ্টিতে বাংলাদেশে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বেসরকারি খাতকে আস্থায় আনতে হবে। এ জন্য সরকারকেই দ্যোগী হয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি অভিন্ন মঞ্চ তৈরি করতে হবে, যেখানে সরকার থেকে সুনির্দিষ্টভাবে দিকনির্দেশনা থাকবে, যাতে বেসরকারি খাত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক শক্তি হতে পারে। যদিও আমাদের দেশে সরকারের এক বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয়ে লক্ষণীয় ঘাটতি রয়েছে, তবু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সরকারি-বেসরকারি খাতের কাজের মধ্যে সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যবসাই করে যাচ্ছে, কিন্তু বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কল্যাণমূলক অনেক কর্মসূচি পালন করলেও অনুৎপাদনশীল কাজেও বিনিয়োগ করছে। নিজের অস্তিত্বের স্বার্থেই অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি খাতকে পরিবেশের ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে, দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে হবে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১৬ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান’, যা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়, বেসরকারি খাতেরও। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে এসডিজি কেন, কোনো লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হবে না।