০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে স্যার উইলিয়াম কেরির অবদান বা ভূমিকা

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০১:৩৩:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  • / ১৪০২ বার পড়া হয়েছে

স্যার উইলিয়াম কেরি | ছবি: কুনাল বর্মণ/আনন্দবাজার

সতের শতক থেকেই বাংলায় খ্রিষ্টান মিশনারিরা সীমিতভাবে ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মিশনারিদের তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির আগমনের মধ্যদিয়ে প্রটেস্ট্যান্ট মতবাদ প্রচারিত হতে থাকে।

উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি। স্যার উইলিয়াম কেরিকে আধুনিক যুগের খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকদের জনক বা ফাদার অব মডারন মিশন্স (father of modern missions) বলা হয়।

উইলিয়াম কেরি ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী।

জসুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড নামের দুই বন্ধুকে নিয়ে উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে আসেন এবং সেখানে তিনি হুগলি জেলার সিরামপুরে একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করে ধর্মপ্রচারের যাত্রা শুরু করেছিলেন। সিরামপুর মিশন কালক্রমে খ্রিষ্টধর্ম বিকাশ ও নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রে পরিণত হয়।

হুগলি জেলার সিরামপুরে প্রতিষ্ঠিত এই মিশনের উদ্যোগে উইলিয়াম কেরির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল। এর কারিকুলামে যুক্ত করা হয়েছিল আধুনিক বিজ্ঞান, ভূগোল এবং ইতিহাস। সিরামপুর মিশনের উদ্যোগে স্কুলগুলোর জন্য বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। পুস্তক মুদ্রণের জন্য এই মিশনে স্থাপন করা হয় ছাপাখানা। কেরি জার্মানি থেকে মুদ্রণযন্ত্র ক্রয় করে এনেছিলেন। 

উইলিয়াম কেরি ও তাঁর বন্ধুরা ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা টেক্সটবুক সোসাইটি স্থাপন করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য এখান থেকে পুস্তক ছাপা হতো। উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে সিরামপুরে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে খ্রিষ্টান ও অ-খ্রিষ্টান সকল শিক্ষার্থীকেই শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হতো। এই মিশন পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিক ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি চার্টার অনুমোদন করেন। 

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ছাড়াও সিরামপুর মিশন বাংলা ভাষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এরমধ্যে ছিল অভিধান প্রণয়ন ও ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা। এছাড়াও উইলিয়াম কেরি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এ ব্যাপারে মিশনারীদের সাহায্য করেছিলেন রামরাম বসু। তিনি নিজে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ না করলেও মিশনারীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাইবেল অনুবাদে তাঁর প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল। রামরাম বসু খ্রিষ্টধর্মসংগীত রচনা করেছিলেন। এই মিশন থেকে ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’ নামে দুটি সাময়িকীও প্রকাশ করা হয়। এভাবেই এদেশে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়। 

স্যার উইলিয়াম কেরি: তাঁর জন্ম ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে। © Getty Images

‘দ্য ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশিত হয় সিরামপুর মিশন থেকে। ‘দ্য ফ্রেন্ড অব ইডিয়া’ ছিল ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকার আদি রূপ। 

উদ্ভিদচর্চা এবং কৃষি উন্নয়নেও উইলিয়াম কেরি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। উদ্ভিদ উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য তিনি হাওড়ার কাছে শিবপুরে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উাদ্ভিদ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি পৃথিবীর নানা দেশ থেকে উদ্ভিদ বীজ এনে এখানে বপন করেন।

উইলিয়াম কেরির এই প্রচেষ্টার ফল ছিল উত্তরকালে প্রতিষ্ঠিত ‘এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’। হিন্দু ধর্মের ভেতর কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ ছিল। যেমন সতীদাহ প্রথা বা কালাপানি (সমুদ্র) পাড়ি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। এসবের বিরুদ্ধে উইলিয়াম কেরি জনমত তৈরি করতে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

স্যার উইলিয়াম কেরির জন্ম ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে স্যার উইলিয়াম কেরির অবদান বা ভূমিকা

প্রকাশ: ০১:৩৩:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সতের শতক থেকেই বাংলায় খ্রিষ্টান মিশনারিরা সীমিতভাবে ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মিশনারিদের তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির আগমনের মধ্যদিয়ে প্রটেস্ট্যান্ট মতবাদ প্রচারিত হতে থাকে।

উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি। স্যার উইলিয়াম কেরিকে আধুনিক যুগের খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকদের জনক বা ফাদার অব মডারন মিশন্স (father of modern missions) বলা হয়।

উইলিয়াম কেরি ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী।

জসুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড নামের দুই বন্ধুকে নিয়ে উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে আসেন এবং সেখানে তিনি হুগলি জেলার সিরামপুরে একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করে ধর্মপ্রচারের যাত্রা শুরু করেছিলেন। সিরামপুর মিশন কালক্রমে খ্রিষ্টধর্ম বিকাশ ও নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রে পরিণত হয়।

হুগলি জেলার সিরামপুরে প্রতিষ্ঠিত এই মিশনের উদ্যোগে উইলিয়াম কেরির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল। এর কারিকুলামে যুক্ত করা হয়েছিল আধুনিক বিজ্ঞান, ভূগোল এবং ইতিহাস। সিরামপুর মিশনের উদ্যোগে স্কুলগুলোর জন্য বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। পুস্তক মুদ্রণের জন্য এই মিশনে স্থাপন করা হয় ছাপাখানা। কেরি জার্মানি থেকে মুদ্রণযন্ত্র ক্রয় করে এনেছিলেন। 

উইলিয়াম কেরি ও তাঁর বন্ধুরা ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা টেক্সটবুক সোসাইটি স্থাপন করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য এখান থেকে পুস্তক ছাপা হতো। উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে সিরামপুরে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে খ্রিষ্টান ও অ-খ্রিষ্টান সকল শিক্ষার্থীকেই শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হতো। এই মিশন পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিক ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি চার্টার অনুমোদন করেন। 

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ছাড়াও সিরামপুর মিশন বাংলা ভাষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এরমধ্যে ছিল অভিধান প্রণয়ন ও ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা। এছাড়াও উইলিয়াম কেরি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এ ব্যাপারে মিশনারীদের সাহায্য করেছিলেন রামরাম বসু। তিনি নিজে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ না করলেও মিশনারীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাইবেল অনুবাদে তাঁর প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল। রামরাম বসু খ্রিষ্টধর্মসংগীত রচনা করেছিলেন। এই মিশন থেকে ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’ নামে দুটি সাময়িকীও প্রকাশ করা হয়। এভাবেই এদেশে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়। 

স্যার উইলিয়াম কেরি: তাঁর জন্ম ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে। © Getty Images

‘দ্য ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশিত হয় সিরামপুর মিশন থেকে। ‘দ্য ফ্রেন্ড অব ইডিয়া’ ছিল ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকার আদি রূপ। 

উদ্ভিদচর্চা এবং কৃষি উন্নয়নেও উইলিয়াম কেরি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। উদ্ভিদ উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য তিনি হাওড়ার কাছে শিবপুরে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উাদ্ভিদ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি পৃথিবীর নানা দেশ থেকে উদ্ভিদ বীজ এনে এখানে বপন করেন।

উইলিয়াম কেরির এই প্রচেষ্টার ফল ছিল উত্তরকালে প্রতিষ্ঠিত ‘এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’। হিন্দু ধর্মের ভেতর কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ ছিল। যেমন সতীদাহ প্রথা বা কালাপানি (সমুদ্র) পাড়ি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। এসবের বিরুদ্ধে উইলিয়াম কেরি জনমত তৈরি করতে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

স্যার উইলিয়াম কেরির জন্ম ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে।