১০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বাঁশের কেল্লা: তিতুমীর এবং তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও বাঁশের কেল্লা

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ১১:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৫৯২৬ বার পড়া হয়েছে

তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংস এবং আন্দোলন ব্যর্থ হলেও পরবর্তিকালে স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সংগ্রাম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় প্রায় একই সময়ে দুটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের শুরু হয়। পূর্ব বাংলার আন্দোলনটি ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। আর পশ্চিম বাংলার আন্দোলনের নাম ওয়াহাবি আন্দোলন বা ‘তারিক-ই-মুহম্মদিয়া’। পশ্চিমবঙ্গে ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিতুমীর। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে এ আন্দোলন শুরু এবং শেষ হয় ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিতুমীরের শাহাদাৎ বরণের মধ্য দিয়ে।

তিতুমীরের সংগ্রাম

মীর নিসার আলী হলো তিতুমীরের আসল নাম। তিতুমীর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যখন ওয়াহাবি আন্দোলনের (তাহরিক-ই-মুহম্মদিয়া) জোয়ার চলছে, তখন পশ্চিম বঙ্গের বারাসাত অঞ্চলে তিতুমীরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। উনিশ শতকে ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক কুসংস্কার দূর করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের সঠিক পথ নির্দেশ করাই এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল। বাংলার ওয়াহাবিরাও তিতুমীরের নেতৃত্বে একই উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিল। তিতুমীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘তাহরিক-ই-মুহম্মদিয়া’ আন্দোলন বা ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল উত্তর ভারতের সৈয়দ আহমদ শহীদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। তিতুমীর হজকরার জন্য মক্কা শরিফ যান এবং১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। 

মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিনি ধর্মীয় সংস্কার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে বহু মুসলমান, বিশেষ করে চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়া জেলার বহু কৃষক, তাঁতী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়। ফলে জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের প্রতি নানা নির্যাতনমূলক আচরণ শুরু করে। তিতুমীর এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে সুবিচার চেয়ে ব্যর্থ হন।

শেষ পর্যন্ত তিনি ও তাঁর অনুসারীরা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর তাঁর প্রধান ঘাটি স্থাপন করেন; নির্মাণ করেন ইতিহাস খ্যাত তাঁর বাঁশের কেল্লা। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন সুদক্ষ শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী। ইংরেজ জমিদার, নীলকরদের দ্বারা নির্যাতিত কৃষকরা দলে দলে তিতুমীরের বাহিনীতে যোগ দিলে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলে কৃষকদের সংঘবদ্ধতা এবং তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে উঠে শাসক-শোষক, জমিদার শ্রেণি।

বাঁশের কেল্লা

ব্রিটিশ শক্তিকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বাংলার সন্তান মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর ১৮৩১ সালে ভারতের কলকাতার নিকটবর্তী নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি বিপ্লবী কেন্দ্র শিবিরের গোড়াপত্তন করেন এবং সেখানে বাঁশ দিয়ে কেল্লা নির্মাণ করেন, এটিই ইতিহাস বিখ্যাত বাঁশের কেল্লা। এই কেল্লাকে ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ নামেও চিহ্নিত করা হয়।

তিতুমীর তাঁর বাঁশের কেল্লায় প্রচলিত ও সনাতন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেন, যে গুলো নিজেদেরই তৈরি। কৃষক-প্রজাদেরকে সেখানে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় সজ্জিত এই বাহিনীকে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বাঁশের কেল্লায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিরাট বাহিনী ছিল স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সংগ্রামী চেতনায় উদ্দীপ্ত। তাঁরা তিতুমীরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করে।

বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করা হয় ১৮৩১ সালের ১৭ নভেম্বর।

ইংরেজদের গোলাবারুদ, নীলকর, জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে তাঁর বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক। যা যুগে যুগে বাঙালিকে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে সাহস যুগিয়েছে। প্রেরণা যুগিয়েছে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে।

ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষ

জমিদারদের প্ররোচনায় ইংরেজ সরকার তিতুমীর এবং তার অনুসারীদের দমনের জন্য বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজেন্ডারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তারা তিতুমীরের বাহিনীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ১৫ জন ইংরেজ সৈন্য নিহত ও বহু আহত হয়। কৃষ্ণনগরের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঠানো ইংরেজ বাহিনীও তিতুমীরের বাহিনীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন বড়ো লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তিতুমীরের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার এক বিশাল প্রশিক্ষিত বাহিনী প্রেরণ করে। মেজর স্কটের নেতৃত্বে এই বাহিনী তিতুমীরের নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। ইংরেজদের কামান বন্দুকের সামনে বীরের মতো লড়াই করে পরাজিত হয় তিতুমীরের বাহিনী।  যুদ্ধে শহিদ হন তিতুমীরসহ অর্ধশত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা উড়ে যায়। এ ভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলনের।

এই যুদ্ধে তিতুমীরের ৫০ জন অনুসারী নিহত হন। গোলাম মাসুমসহ ২৫০ জনকে বন্দি করা হয়। পরে এক প্রহসনমূলক বিচারে গোলাম মাসুমকে ফাঁসি এবং অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

তিতুমীর ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সারকথা

তিতুমীরের পরিচালিত তাহরিক-ই-মুহাম্মদিয়া বা ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার। পরবর্তিতে এটি একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। যা শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়। ১৮৩১ সালে তিতুমীর নারিকেলবাড়িয়ায় গড়ে তোলেন বাঁশের কেল্লা। ইংরেজ সরকার, জমিদার নীলকরদের ঐক্যবদ্ধ আক্রমণের মুখে তিতুমীর ও তার বাহিনী পরাজিত হয়। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংস এবং আন্দোলন ব্যর্থ হলেও পরবর্তিকালে স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সংগ্রাম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো গুরুত্ব এটাই।

শেয়ার করুন

2 thoughts on “বাঁশের কেল্লা: তিতুমীর এবং তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও বাঁশের কেল্লা

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

বাঁশের কেল্লা: তিতুমীর এবং তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও বাঁশের কেল্লা

প্রকাশ: ১১:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১

পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় প্রায় একই সময়ে দুটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের শুরু হয়। পূর্ব বাংলার আন্দোলনটি ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। আর পশ্চিম বাংলার আন্দোলনের নাম ওয়াহাবি আন্দোলন বা ‘তারিক-ই-মুহম্মদিয়া’। পশ্চিমবঙ্গে ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিতুমীর। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে এ আন্দোলন শুরু এবং শেষ হয় ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিতুমীরের শাহাদাৎ বরণের মধ্য দিয়ে।

তিতুমীরের সংগ্রাম

মীর নিসার আলী হলো তিতুমীরের আসল নাম। তিতুমীর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যখন ওয়াহাবি আন্দোলনের (তাহরিক-ই-মুহম্মদিয়া) জোয়ার চলছে, তখন পশ্চিম বঙ্গের বারাসাত অঞ্চলে তিতুমীরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। উনিশ শতকে ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক কুসংস্কার দূর করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের সঠিক পথ নির্দেশ করাই এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল। বাংলার ওয়াহাবিরাও তিতুমীরের নেতৃত্বে একই উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিল। তিতুমীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘তাহরিক-ই-মুহম্মদিয়া’ আন্দোলন বা ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল উত্তর ভারতের সৈয়দ আহমদ শহীদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। তিতুমীর হজকরার জন্য মক্কা শরিফ যান এবং১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। 

মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিনি ধর্মীয় সংস্কার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে বহু মুসলমান, বিশেষ করে চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়া জেলার বহু কৃষক, তাঁতী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়। ফলে জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের প্রতি নানা নির্যাতনমূলক আচরণ শুরু করে। তিতুমীর এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে সুবিচার চেয়ে ব্যর্থ হন।

শেষ পর্যন্ত তিনি ও তাঁর অনুসারীরা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর তাঁর প্রধান ঘাটি স্থাপন করেন; নির্মাণ করেন ইতিহাস খ্যাত তাঁর বাঁশের কেল্লা। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন সুদক্ষ শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী। ইংরেজ জমিদার, নীলকরদের দ্বারা নির্যাতিত কৃষকরা দলে দলে তিতুমীরের বাহিনীতে যোগ দিলে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলে কৃষকদের সংঘবদ্ধতা এবং তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে উঠে শাসক-শোষক, জমিদার শ্রেণি।

বাঁশের কেল্লা

ব্রিটিশ শক্তিকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বাংলার সন্তান মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর ১৮৩১ সালে ভারতের কলকাতার নিকটবর্তী নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি বিপ্লবী কেন্দ্র শিবিরের গোড়াপত্তন করেন এবং সেখানে বাঁশ দিয়ে কেল্লা নির্মাণ করেন, এটিই ইতিহাস বিখ্যাত বাঁশের কেল্লা। এই কেল্লাকে ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ নামেও চিহ্নিত করা হয়।

তিতুমীর তাঁর বাঁশের কেল্লায় প্রচলিত ও সনাতন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেন, যে গুলো নিজেদেরই তৈরি। কৃষক-প্রজাদেরকে সেখানে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় সজ্জিত এই বাহিনীকে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বাঁশের কেল্লায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিরাট বাহিনী ছিল স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সংগ্রামী চেতনায় উদ্দীপ্ত। তাঁরা তিতুমীরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করে।

বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করা হয় ১৮৩১ সালের ১৭ নভেম্বর।

ইংরেজদের গোলাবারুদ, নীলকর, জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে তাঁর বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক। যা যুগে যুগে বাঙালিকে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে সাহস যুগিয়েছে। প্রেরণা যুগিয়েছে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে।

ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষ

জমিদারদের প্ররোচনায় ইংরেজ সরকার তিতুমীর এবং তার অনুসারীদের দমনের জন্য বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজেন্ডারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তারা তিতুমীরের বাহিনীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ১৫ জন ইংরেজ সৈন্য নিহত ও বহু আহত হয়। কৃষ্ণনগরের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঠানো ইংরেজ বাহিনীও তিতুমীরের বাহিনীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন বড়ো লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তিতুমীরের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার এক বিশাল প্রশিক্ষিত বাহিনী প্রেরণ করে। মেজর স্কটের নেতৃত্বে এই বাহিনী তিতুমীরের নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। ইংরেজদের কামান বন্দুকের সামনে বীরের মতো লড়াই করে পরাজিত হয় তিতুমীরের বাহিনী।  যুদ্ধে শহিদ হন তিতুমীরসহ অর্ধশত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা উড়ে যায়। এ ভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলনের।

এই যুদ্ধে তিতুমীরের ৫০ জন অনুসারী নিহত হন। গোলাম মাসুমসহ ২৫০ জনকে বন্দি করা হয়। পরে এক প্রহসনমূলক বিচারে গোলাম মাসুমকে ফাঁসি এবং অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

তিতুমীর ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সারকথা

তিতুমীরের পরিচালিত তাহরিক-ই-মুহাম্মদিয়া বা ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার। পরবর্তিতে এটি একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। যা শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়। ১৮৩১ সালে তিতুমীর নারিকেলবাড়িয়ায় গড়ে তোলেন বাঁশের কেল্লা। ইংরেজ সরকার, জমিদার নীলকরদের ঐক্যবদ্ধ আক্রমণের মুখে তিতুমীর ও তার বাহিনী পরাজিত হয়। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংস এবং আন্দোলন ব্যর্থ হলেও পরবর্তিকালে স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সংগ্রাম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো গুরুত্ব এটাই।