০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের গল্প

অনির্বাণ জানা
  • প্রকাশ: ০১:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১
  • / ৯৯৫ বার পড়া হয়েছে

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আবিষ্কারের গল্প | Image: Getty Images


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

চিকিৎসা শাখায় আবিষ্কারের গল্প লিখতে বসলে তা মনে হয় শেষ হবে না। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যে পথ ধরে এসে আজকের রূপ নিয়েছে, সেই পথের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে আছে বহু কাহিনি। একেকটা আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানকে একটু একটু করে এগিয়ে দিয়েছে।

কখনও স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার, কখনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার, কখনও এক্সরে আবিষ্কার তো অত্যাধুনিক রোবোটিক সার্জারির আবিষ্কার; সবেরই মধ্যে লুকিয়ে আছে মজার মজার গল্প।

এই পেরিয়ে আসা ধাপগুলো ধরে যদি পিছিয়ে যাই, তাহলে মনে প্রশ্ন জাগে- একদম শুরুতে, যখন মানুষ সবে হোমোস্যাপিয়েন্স হয়েছে, তখনকার দিনে তারা নিজেদের জন্য আদৌ কি কোনো চিকিৎসা করত? তারা ব্যথা পেলে, কষ্ট হলে শুধুই কি অন্যান্য পশুদের মতো চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করত? নাকি উপশমের পথ খুঁজত? কল্পবিজ্ঞানের গল্পের টাইমমেশিন থাকলে না হয় সেই সময়টা থেকে ঘুরে আসা যেত। সেটা যখন আমাদের হাতে নেই, তখন কিছু পরোক্ষ প্রমাণ আর কিছু কল্পনা দিয়ে সেই সময়ের চিকিৎসা সম্বন্ধে কিছু ধারণা করা যায়। সেই সব পরোক্ষ প্রমাণ নিয়ে নাড়াঘাঁটা করলে বোঝা যায়, মানুষ আজকের হোমোস্যাপিয়েন্স হবার আগে থেকেই নিজেদের জন্য চিকিৎসা করত।

ওষুধ ব্যবহারের প্রাচীনতম প্রমাণ

স্পেনের উত্তর-পশ্চিম অংশের সিড্রন গুহায় কয়েকটি ফসিল হয়ে যাওয়া হাড়গোড় আর দাঁত পাওয়া যায়। সেগুলো হোমোনিয়ানডেরথ্যালেনসিসের। মানুষের সদ্য হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ। বিজ্ঞানীদের সবকিছু খুঁচিয়ে দেখা অভ্যাস, পূর্বপুরুষের দাঁতও খোঁচাখুঁচি করলেন তাঁরা। সেখানে পাওয়া গেল ইয়ারো আর চ্যামোমাইল নামক লতাপাতার আস্তরণ। উদ্ভিদ দু’টোর তো কোনও পুষ্টিগুণ নেই, তার ওপর ভয়ংকর রকমের তেতো খেতে। ইয়ারো টনিক রক্তপাত বন্ধ করে আর চ্যামোমাইল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেশ কিছু দাঁতে লতাপাতার ফসিলও থাকায় ধরে নেওয়া যায় তারা প্রয়োজনে ওই তেতো লতাপাতা চিবাতো। ফসিলগুলো ঊনপঞ্চাশ হাজার বছরের পুরনো। এটাই বোধহয় ওষুধ ব্যবহার করার প্রাচীনতম প্রমাণ।

গাছ থেকে অনেক আধুনিক ওষুধ

আজকের আধুনিক ওষুধপত্রের অনেকগুলোই গাছপালা থেকে তৈরি করা। পেনিসিলিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়েছে পেনিসিলিয়াম ক্রাইসোজেনাম নামক ছত্রাক থেকে। অ্যাসপিরিন নামক ব্যথা কমানোর ওষুধ পাওয়া গেছে বার্চ এবং হোয়াইট উইলো থেকে। সিনকোনা গাছ থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনিন, ফক্সগ্লাভ গুল্ম থেকে ডিগোক্সিন, এক ধরনের গাছ থেকে ক্যান্সারের ওষুধ প্যাকলিটাক্সেল- উদাহরণের লিস্ট বেশ লম্বা।

রক্তক্ষরণের রোগীকে বাঁচানোর চিকিৎসা?

সাত হাজার বছরের পুরনো কিছু কঙ্কালের দাঁতে কৃত্রিম ছিদ্র পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ওগুলো মাড়ির ফোঁড়া কাটার জন্য করা হয়েছিল। কিছু কিছু খুলিতে তো ছোটও ছোটো ফুটোও পাওয়া গেছে। ফুটো করে শাস্তি দেওয়া হত? নাকি চিকিৎসার অঙ্গ? নাকি সুকুমার রায়ের কল্পিত কেউ ফুটোস্কোপ নিয়ে ঘুরে বেড়াত? নাকি আধুনিক বারহোল অপারেশন আমাদের পিতৃপুরুষেরা করতে জানত? কিছু কিছু ছিদ্র পরীক্ষা করে দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে ক্রনিসিটির লক্ষণ আছে। অর্থাৎ রোগীর জীবদ্দশায় প্রায়শই গর্তগুলো খোলা হত। এখনকার দিনে বোনফ্ল্যাপ তুলে রাখা একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তো বটেই। হয়তো আঘাত পেয়ে মাথায় রক্তক্ষরণের রোগীকে এইভাবে বাঁচাত তারা।

ওটজি, প্রথম ডাক্তার?

আর এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রথম ডাক্তার? বরফমানব ওটজিকে পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ সালের উনিশে সেপ্টেম্বর। দশ হাজার পাঁচশো তিরিশ ফুট উচ্চতায় অস্ট্রিয়া আর ইতালির সীমানায় আল্পস পর্বতমালায় ওটজিকে খুঁজে পেয়েছিলেন দুই জার্মান পর্যটক। পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানা গেল মমিটি ৫৩০০ বছরের পুরনো এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল পঁয়তাল্লিশ বছরের মতো। তার সম্পত্তির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল তির-ধনুক, ছুরি, কুঠার আর কিছু ছালবাকল। এই ছালবাকলগুলোর কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ আছে আর কিছুর পায়খানা নরম রাখা বা ল্যাক্সেটিভের কাজ আছে। এক্সরে করিয়ে দেখা গেল ওটজিবাবুর হাড়ের বেশ ব্যামো ছিল। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, ওইসব ব্যথার জায়গায় পঞ্চাশের ওপর ট্যাটুর দাগ আছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ওগুলো ব্যাথা কমানোর জন্য আকুপাংচার থেরাপির দাগ। ওটজি নির্ঘাত একজন ডাক্তার ছিল। বেচারাকে নিজের চিকিৎসা প্রায়ই করতে হতো।

আদি চিকিৎসক এবং হোয়াইট লেডি

বিজ্ঞানের উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে কিছু আধিভৌতিক ক্রিয়াকলাপও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এখনও আফ্রিকা, আমেরিকার আদিবাসী এবং এশিয়ার কিছু অংশের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের পোশাক পরা এবং মন্ত্র ও নাচের পরে ওষুধ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র ও পাথরের ওপর আঁকা কিছু ছবিতে বিশেষ পোশাক পরা মানুষের ছবি পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের ধারণা ছবিগুলি আদি চিকিৎসকের। নামিবিয়ার ব্রান্ডবার্গ পর্বতের একটি গুহায় দু’হাজার বছরের পুরনো একটি ছবি পাওয়া গেছে। ‘হোয়াইট লেডি’ নামের এই চিত্রটিতে আঁকা মহিলা প্রাচীন চিকিৎসক বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা।

গাছগাছালি নির্ভর আদি চিকিৎসা পদ্ধতি

আফ্রিকা ও আমেরিকার শামান পদ্ধতিতে চিকিৎসা হোক বা মায়া সভ্যতার আহমেন পদ্ধতিতেই চিকিৎসা হোক, আদি চিকিৎসকেরা কিছু গাছগাছালির ওপর নির্ভর করত। দেখা গিয়েছে, পঁচিশ শতাংশ আধুনিক ওষুধই লতাপাতা ও গাছগাছালি থেকে নেওয়া এবং প্রাচীন চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহার করত। ইবোগা উদ্ভিদের মূল অল্প মাত্রায় উদ্দীপক এবং বেশি মাত্রায় হ্যালুসিনোজেন বা উল্টোপাল্টা দেখানোর কাজ করায়। দক্ষিণ আফ্রিকার গুল্ম বুচু প্রস্রাবের ইনফেকশন এবং বদহজমে কাজ দেয়। গাঁজা, মদও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। দক্ষিণ আমেরিকায় ইপাকাকুহানা বমি করাতে ব্যবহার করা হত।

সবথেকে মজার বিষয়, এইসব জিনিস পৃথিবীর এখনও কিছু প্রজাতি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর ছাল ও শরীরের অংশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

সভ্যতা যত এগিয়ে যাবে, ততই পুরনো হবে ফেলে আসা সময়ের বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু একটা একটা করে ইট গেঁথে যেমন ইমারত তৈরি হয়, তেমনি পেরিয়ে আসা সময়ের প্রতিটি আবিষ্কার তৈরি করবে ভবিষ্যতের চিকিৎসা পদ্ধতি।

সত্যিই- ‘জীবনের কড়ি কিছুই যাবেনা ফেলা।’

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

অনির্বাণ জানা

ভারতীয় চিকিৎসক

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের গল্প

প্রকাশ: ০১:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

চিকিৎসা শাখায় আবিষ্কারের গল্প লিখতে বসলে তা মনে হয় শেষ হবে না। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যে পথ ধরে এসে আজকের রূপ নিয়েছে, সেই পথের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে আছে বহু কাহিনি। একেকটা আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানকে একটু একটু করে এগিয়ে দিয়েছে।

কখনও স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার, কখনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার, কখনও এক্সরে আবিষ্কার তো অত্যাধুনিক রোবোটিক সার্জারির আবিষ্কার; সবেরই মধ্যে লুকিয়ে আছে মজার মজার গল্প।

এই পেরিয়ে আসা ধাপগুলো ধরে যদি পিছিয়ে যাই, তাহলে মনে প্রশ্ন জাগে- একদম শুরুতে, যখন মানুষ সবে হোমোস্যাপিয়েন্স হয়েছে, তখনকার দিনে তারা নিজেদের জন্য আদৌ কি কোনো চিকিৎসা করত? তারা ব্যথা পেলে, কষ্ট হলে শুধুই কি অন্যান্য পশুদের মতো চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করত? নাকি উপশমের পথ খুঁজত? কল্পবিজ্ঞানের গল্পের টাইমমেশিন থাকলে না হয় সেই সময়টা থেকে ঘুরে আসা যেত। সেটা যখন আমাদের হাতে নেই, তখন কিছু পরোক্ষ প্রমাণ আর কিছু কল্পনা দিয়ে সেই সময়ের চিকিৎসা সম্বন্ধে কিছু ধারণা করা যায়। সেই সব পরোক্ষ প্রমাণ নিয়ে নাড়াঘাঁটা করলে বোঝা যায়, মানুষ আজকের হোমোস্যাপিয়েন্স হবার আগে থেকেই নিজেদের জন্য চিকিৎসা করত।

ওষুধ ব্যবহারের প্রাচীনতম প্রমাণ

স্পেনের উত্তর-পশ্চিম অংশের সিড্রন গুহায় কয়েকটি ফসিল হয়ে যাওয়া হাড়গোড় আর দাঁত পাওয়া যায়। সেগুলো হোমোনিয়ানডেরথ্যালেনসিসের। মানুষের সদ্য হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ। বিজ্ঞানীদের সবকিছু খুঁচিয়ে দেখা অভ্যাস, পূর্বপুরুষের দাঁতও খোঁচাখুঁচি করলেন তাঁরা। সেখানে পাওয়া গেল ইয়ারো আর চ্যামোমাইল নামক লতাপাতার আস্তরণ। উদ্ভিদ দু’টোর তো কোনও পুষ্টিগুণ নেই, তার ওপর ভয়ংকর রকমের তেতো খেতে। ইয়ারো টনিক রক্তপাত বন্ধ করে আর চ্যামোমাইল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেশ কিছু দাঁতে লতাপাতার ফসিলও থাকায় ধরে নেওয়া যায় তারা প্রয়োজনে ওই তেতো লতাপাতা চিবাতো। ফসিলগুলো ঊনপঞ্চাশ হাজার বছরের পুরনো। এটাই বোধহয় ওষুধ ব্যবহার করার প্রাচীনতম প্রমাণ।

গাছ থেকে অনেক আধুনিক ওষুধ

আজকের আধুনিক ওষুধপত্রের অনেকগুলোই গাছপালা থেকে তৈরি করা। পেনিসিলিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়েছে পেনিসিলিয়াম ক্রাইসোজেনাম নামক ছত্রাক থেকে। অ্যাসপিরিন নামক ব্যথা কমানোর ওষুধ পাওয়া গেছে বার্চ এবং হোয়াইট উইলো থেকে। সিনকোনা গাছ থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনিন, ফক্সগ্লাভ গুল্ম থেকে ডিগোক্সিন, এক ধরনের গাছ থেকে ক্যান্সারের ওষুধ প্যাকলিটাক্সেল- উদাহরণের লিস্ট বেশ লম্বা।

রক্তক্ষরণের রোগীকে বাঁচানোর চিকিৎসা?

সাত হাজার বছরের পুরনো কিছু কঙ্কালের দাঁতে কৃত্রিম ছিদ্র পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ওগুলো মাড়ির ফোঁড়া কাটার জন্য করা হয়েছিল। কিছু কিছু খুলিতে তো ছোটও ছোটো ফুটোও পাওয়া গেছে। ফুটো করে শাস্তি দেওয়া হত? নাকি চিকিৎসার অঙ্গ? নাকি সুকুমার রায়ের কল্পিত কেউ ফুটোস্কোপ নিয়ে ঘুরে বেড়াত? নাকি আধুনিক বারহোল অপারেশন আমাদের পিতৃপুরুষেরা করতে জানত? কিছু কিছু ছিদ্র পরীক্ষা করে দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে ক্রনিসিটির লক্ষণ আছে। অর্থাৎ রোগীর জীবদ্দশায় প্রায়শই গর্তগুলো খোলা হত। এখনকার দিনে বোনফ্ল্যাপ তুলে রাখা একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তো বটেই। হয়তো আঘাত পেয়ে মাথায় রক্তক্ষরণের রোগীকে এইভাবে বাঁচাত তারা।

ওটজি, প্রথম ডাক্তার?

আর এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রথম ডাক্তার? বরফমানব ওটজিকে পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ সালের উনিশে সেপ্টেম্বর। দশ হাজার পাঁচশো তিরিশ ফুট উচ্চতায় অস্ট্রিয়া আর ইতালির সীমানায় আল্পস পর্বতমালায় ওটজিকে খুঁজে পেয়েছিলেন দুই জার্মান পর্যটক। পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানা গেল মমিটি ৫৩০০ বছরের পুরনো এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল পঁয়তাল্লিশ বছরের মতো। তার সম্পত্তির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল তির-ধনুক, ছুরি, কুঠার আর কিছু ছালবাকল। এই ছালবাকলগুলোর কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ আছে আর কিছুর পায়খানা নরম রাখা বা ল্যাক্সেটিভের কাজ আছে। এক্সরে করিয়ে দেখা গেল ওটজিবাবুর হাড়ের বেশ ব্যামো ছিল। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, ওইসব ব্যথার জায়গায় পঞ্চাশের ওপর ট্যাটুর দাগ আছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ওগুলো ব্যাথা কমানোর জন্য আকুপাংচার থেরাপির দাগ। ওটজি নির্ঘাত একজন ডাক্তার ছিল। বেচারাকে নিজের চিকিৎসা প্রায়ই করতে হতো।

আদি চিকিৎসক এবং হোয়াইট লেডি

বিজ্ঞানের উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে কিছু আধিভৌতিক ক্রিয়াকলাপও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এখনও আফ্রিকা, আমেরিকার আদিবাসী এবং এশিয়ার কিছু অংশের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের পোশাক পরা এবং মন্ত্র ও নাচের পরে ওষুধ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র ও পাথরের ওপর আঁকা কিছু ছবিতে বিশেষ পোশাক পরা মানুষের ছবি পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের ধারণা ছবিগুলি আদি চিকিৎসকের। নামিবিয়ার ব্রান্ডবার্গ পর্বতের একটি গুহায় দু’হাজার বছরের পুরনো একটি ছবি পাওয়া গেছে। ‘হোয়াইট লেডি’ নামের এই চিত্রটিতে আঁকা মহিলা প্রাচীন চিকিৎসক বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা।

গাছগাছালি নির্ভর আদি চিকিৎসা পদ্ধতি

আফ্রিকা ও আমেরিকার শামান পদ্ধতিতে চিকিৎসা হোক বা মায়া সভ্যতার আহমেন পদ্ধতিতেই চিকিৎসা হোক, আদি চিকিৎসকেরা কিছু গাছগাছালির ওপর নির্ভর করত। দেখা গিয়েছে, পঁচিশ শতাংশ আধুনিক ওষুধই লতাপাতা ও গাছগাছালি থেকে নেওয়া এবং প্রাচীন চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহার করত। ইবোগা উদ্ভিদের মূল অল্প মাত্রায় উদ্দীপক এবং বেশি মাত্রায় হ্যালুসিনোজেন বা উল্টোপাল্টা দেখানোর কাজ করায়। দক্ষিণ আফ্রিকার গুল্ম বুচু প্রস্রাবের ইনফেকশন এবং বদহজমে কাজ দেয়। গাঁজা, মদও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। দক্ষিণ আমেরিকায় ইপাকাকুহানা বমি করাতে ব্যবহার করা হত।

সবথেকে মজার বিষয়, এইসব জিনিস পৃথিবীর এখনও কিছু প্রজাতি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর ছাল ও শরীরের অংশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

সভ্যতা যত এগিয়ে যাবে, ততই পুরনো হবে ফেলে আসা সময়ের বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু একটা একটা করে ইট গেঁথে যেমন ইমারত তৈরি হয়, তেমনি পেরিয়ে আসা সময়ের প্রতিটি আবিষ্কার তৈরি করবে ভবিষ্যতের চিকিৎসা পদ্ধতি।

সত্যিই- ‘জীবনের কড়ি কিছুই যাবেনা ফেলা।’