০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সমাজতন্ত্র কী? সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও অর্থনীতি

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০১:২০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ২২১৭৩ বার পড়া হয়েছে

সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ হলাে এমন এক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা এবং যার বিশেষত্ব নির্ভর করছে শােষণমুক্ত মানুষের সহযােগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ওপর এখানে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা থাকবে।

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিল ১৯১৭ সালে। সমাজতন্ত্রে বৈরি শ্রেণি নেই, কেননা কলকারখানা, ভূমি, সবই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সমাজতন্ত্রে শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হয়। শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। এই সমাজতন্ত্র আসলে কী?

সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা কী?

সমাজতন্ত্র’এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Socialism’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Socious’ থেকে উদ্ভূত। ল্যাটিন Socious শব্দের অর্থ হলাে সামাজিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, যার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ হলাে Public ownership of the means of production।

সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ হলাে এমন এক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা এবং যার বিশেষত্ব নির্ভর করছে শােষণমুক্ত মানুষের সহযােগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ওপর এখানে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা থাকবে।

সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ (Socialism) হলো এমন একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনীতির একটি সমবায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, এছাড়াও একই সাথে এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ ও আন্দোলন যার লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ এটি এমন একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদন হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।

সমাজতন্ত্র হলো সাম্যবাদী সমাজের প্রথম পর্যায়। উৎপাদনের উপায়ে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা হলো এর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমাজতন্ত্র ব্যক্তিগত মালিকানার উৎখাত ঘটায় এবং মানুষে মানুষে শোষণ, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বেকারত্বের বিলোপ ঘটায়, উন্মুক্ত করে উৎপাদনী শক্তির পরিকল্পিত বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের পূর্ণতর রূপদানের প্রান্তর। সমাজতন্ত্রের আমলে সামাজিক উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল জনগণের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতিটি লোকের সার্বিক বিকাশ সাধন। সমাজতন্ত্রের মুলনীতি হলো ‘প্রত্যেকে কাজ করবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রত্যেকে গ্রহণ করবে তার প্রয়োজন অনু্যায়ী।’

সমাজতন্ত্র দুই ধরনের, যথা: কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।

সমাজতন্ত্রের ব্যুৎপত্তি

সমাজতন্ত্র শব্দটির ব্যবহার এবং শব্দটির উল্লেখযোগ্যতার ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করে শব্দটির উৎপত্তি বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে দায়ী করা যেতে পারে। সোশালিজম (Socialism) শব্দটি ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন (১৭৭১-১৮৫৮) কো-অপারেটিভ ম্যাগাজিনে প্রথম ব্যবহার করেন। আধুনিককালে শব্দটির ব্যবহার ও সংজ্ঞা পাকাপোক্ত ১৬৮০’র বছরগুলোতে। সেই সময়ের আগে ব্যবহৃত সমবায়ী (co-operative), পারস্পরিক পন্থি (mutualist) এবং সঙ্ঘপন্থি (associationist) শব্দগুলোর পরিবর্তে সমাজতন্ত্র শব্দটি নানা লেখক ব্যবহার করেন।

সমাজতন্ত্রের ইতিহাস

সমাজতন্ত্রের ইতিহাসের উৎপত্তি ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এবং তার থেকে উদ্ভূত পরিবর্তনের ভেতরে নিহিত, যদিও এটি আগের আন্দোলন এবং ধারণা থেকেও বিভিন্ন ধারণা গ্রহণ করেছে। কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট ইস্তেহার বইটিতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কথাটি ব্যবহার করা হয়। বইটি ১৮৪৮ সালের সামান্য আগে লেখা হয় এবং বইটি পুরো ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ইউরোপে ১৯ শতকের শেষ তৃতীয়াংশে মার্কসবাদকে গ্রহণ করে সমাজ গণতান্ত্রিক দলগুলো উপরে আসতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক পার্টি যখন পার্টি ১৮৯৯ সালে কুইন্সল্যান্ড রাজ্য নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। সমাজতন্ত্রের জনক কার্ল মার্কস।

এছাড়া উনিশ শতকের কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্রিদের দ্বারা কল্পিত নানা ব্যবস্থাগুলো পরবর্তীকালে পরিণত হয়েছিলো বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের নানা তাত্ত্বিক উৎসে।

প্রথমদিকের সমাজতন্ত্র

প্রাচীনকাল থেকেই সমাজতান্ত্রিক মডেল এবং ধারনায় সাধারণ বা জনমালিকানা সমর্থন করা ছিল বা বিদ্যমান ছিল। এটা যদিও বিতর্কিতভাবে, দাবি করা হয়েছে যে শাস্ত্রীয় গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং এরিস্টটল, ফার্সি এজমালি আদি-সমাজতান্ত্রিক মাজদাক প্রমুখের সমাজতান্ত্রিক চিন্তার উপাদান রাজনীতিতে ছিল। তারা এজমালি সম্পত্তি এবং জন মঙ্গলকর ব্যবস্থার পক্ষ সমর্থন করেছিলেন। আবু যার আল-গিফারিকে ইসলামী সমাজতন্ত্রের একজন প্রধান পূর্বগামী হিসাবে অনেকেই কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন।

ফরাসি বিপ্লবের স্বল্পকাল সময়ের মধ্যেই ফ্রাসোয়া-নোয়েল ব্যাবুফ, এটিনে-গ্যাব্রিয়েল মোরেল, ফিলিপ বোনার্তি, এবং অগাস্ট ব্লাঙ্কিদের মত কর্মী ও তাত্ত্বিকগণ ফরাসি শ্রম ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রভাবিত করেছিলেন। ব্রিটেনে টমাস পেইন তার বই কৃষিভিত্তিক ন্যায়বিচারে কর আদায়কারীদেরকে গরিবদের চাহিদা অনুসারে প্রদানের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন; যখন চার্লস হল ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের জনগণের ওপর সভ্যতার প্রভাব লিখেছেন, সেই বইয়ে তিনি তার সময়ের দরিদ্রের উপর পুঁজিবাদের প্রভাবকে নিন্দামূলক হিসেবে চিত্রিত করেন। হলের বইটি টমাস স্পেন্সের কল্পলৌকিক প্রণালীসমূহকে প্রভাবিত করে।

প্যারিস কমিউন

প্যারিস কমিউন হচ্ছে ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত প্যারিস পরিচালনাকারী বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার। প্যারিসের মজুরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক শ্রেণির এই বিপ্লবী সরকার ৭৩ দিন টিকে থাকে। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজিত হওয়ার পরে প্যারিসে যে বিদ্রোহ হয় তাই হচ্ছে প্যারিস কমিউন। কমিউনের নির্বাচন ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত নির্বাচনে ২০,০০০ অধিবাসীর বিপরীতে একজন হিসেবে ৯২ সদস্যের একটি কমিউন কাউন্সিল নির্বাচিত করা হয়।

সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট

  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কলকারখানা, জমি সম্পদ এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ উৎপাদনের উপকরণের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত থাকবে।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ ও মুনাফা অর্জন নিষিদ্ধ। সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। ফলে সমাজে শ্রেণি বৈষম্য ও শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হবে।
  • এই অর্থব্যবস্থায় জাতীয় আয় বণ্টনের মূলনীতি হলঃ প্রত্যেকে তার নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। এভাবে আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতের মাধ্যমে সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা দেশ বা সমাজের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে করা হয়। অর্থাৎ সামাজিক কল্যাণ সাধনই এই এই অর্থ ব্যবস্থার মুল উদ্দ্যেশ্য।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিকদের শোষনের কোন সুযোগ থাকে না এবং প্রত্যেকেই সমান সমান সুবিধা ভোগ করে। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে মানুষের সকল মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, সাস্থ্য, যোগাযোগ প্রভৃতি সকল খাতে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে উন্নয়ন করা হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা মাফিক সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাই এই অর্থব্যবস্থায় বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত উপায়ে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিধায় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদনজনিত সঙ্কট দেখা দেয় না।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের মূল্য পুঁজিবাদের ন্যায় চাহিদা ও যোগানের ঘাত প্রতিঘাত অনুযায়ী আপনা আপনি নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কতৃপক্ষই দ্রব্যসামগ্রীর দাম নির্ধারন করে থাকে।
  • সমাজতান্ত্রিক সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল উপাদানগুলি হলও রাষ্ট্র, সমাজের নেতৃজনিত ও চালিকা শক্তি মার্কসবাদী লেনিনবাদী পার্টি, নানা সামাজিক সংগঠন ও মেহনতি কর্মী দল।

সমাজতন্ত্রে অর্থনীতি

সমাজতন্ত্রের মূল ধারণাটি একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল যার ফলে উৎপাদনকে এমনভাবে সংগঠিত করা হয় যাতে পণ্যদ্রব্য সরাসরি পণ্য ও সেবার উৎপাদনের জন্য পরিচালিত হয় (বা ক্লাসিক্যাল এবং মার্কসীয় অর্থনীতিতে ব্যবহার-মূল্য): আর্থিক গণনা এবং পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক আইনগুলির বিরোধিতা করে শারীরিক ইউনিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সরাসরি বরাদ্দকরণ, প্রায়শই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধরনের সমাপ্তি যেমন, ভাড়া, সুদ, লাভ এবং অর্থ। একটি সম্পূর্ণরূপে উন্নত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে, উৎপাদন এবং ব্যালান্সিং ফ্যাক্টর আউটপুটগুলির সাথে ইনপুটগুলো প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে।

আগামী সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে টাকার ব্যবহার একটি বিতর্কিত বিষয়। কার্ল মার্কস, রবার্ট ওয়েন, পিয়েরে জোসেফ প্রুধোঁ, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ সমাজতন্ত্রীরা টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের শ্রম ভাউচারের কথা বলেছেন যার দ্বারা বিভিন্ন ভোগ্যদ্রব্য পাবার কথা এবং একই সাথে সেগুলো পুঁজিতে রূপান্তরিত হবে না।

 আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর Why Socialism? বইয়ে বলেছেন, “আমার মতে, বর্তমান কালের সংকটের মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। … … আমি নিশ্চিত, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই এই মন্দ দিকগুলো দূর করা যেতে পারে; সেইসঙ্গে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার যার উদ্দেশ্য হবে একটি সামাজিক লক্ষ্য স্থির করা। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানায় থাকবে সমাজ এবং উৎপাদনের ফল পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার হবে। একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি, যেটি সমাজের প্রয়োজনের জন্য উৎপাদনের সমন্বয় করবে, প্রত্যেক সমর্থ ব্যক্তির কর্মকে সমভাবে বিতরণ করবে এবং পুরুষ-নারী ও শিশু নির্বিশেষে জীবনধারণের উপায় সুনিশ্চিত করবে। সহজাত উৎকর্ষ এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তির শিক্ষা তার সামাজিক দায়বোধের চিন্তাভাবনা জাগাবে। বর্তমানে যে ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও সাফল্যের সোপান হিসেবে শিক্ষাকে তুলে ধরা হয়, উল্লেখিত ব্যবস্থা হবে তার বিপরীত।”

সমাজতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?

সমাজতন্ত্রের সুবিধা

শোষণের অনুপস্থিতি

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান সুবিধা হলো শোষণের অনুপস্থিতি। সমাজতন্ত্র শ্রমিকদের শোষণ না করার নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

সকলের অংশগ্রহণ

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের বা সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্যই সাধারণ কর্মী হিসেবে উৎপাদনকর্ম পরিচালনার উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে।

চাহদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা গ্রহণ

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, প্রত্যেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা গ্রহণ করে। এতে রাষ্ট্রের উন্নতি খুব দ্রুত হয় বলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যারা কথা বলেন তাদের বিশ্বাস। ফলস্বরূপ, সমাজে দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা লাভ করার সমান অধিকার রয়েছে।

বৈষম্য বিলুপ্ত

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র থেকে সকল ধরনের বৈষম্য দূরীভূত হয়। এছাড়া এমনও হয় যে, যদি এমন কোনো কর্মের আবির্ভাব হলো যা করা উচিত তবে তা করার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না; সেক্ষেত্রে ওই কাজটি করার জন্য উচ্চতর পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়।

সমাজতন্ত্রের অসুবিধা

সমবায় পুলিং-এর উপর নির্ভরশীলতা

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো যে-কোনো কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রত্যেককে সমবায় পুলিং-এর উপর নির্ভর করা। কোনো কর্মী সামর্থ্য থাকলেক কারও থেকে বেশি কর্ম করতে পারবে না যার মাধ্যমে সে অতিরিক্ত অর্থ পেতে পারে কারণ সমাজতন্ত্রে প্রতিযোগিতাকে ভালো চোখে দেখা হয় না।

প্রতিযোগিতা এবং উদ্ভাবনের অভাব

সমাজতন্ত্রের মতে, প্রতিযোগী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করার উপায় খুঁজে বের করে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো উদ্যোক্তা বা কর্মীকে পুরস্কৃত বা উৎসাহপ্রদানমূলক কোনো কিছু করা হয় না। সমাজতন্ত্রী লোকজনেরা মনে করেন যে, এভাবে উদ্যোক্তাকে বা অপেক্ষাকৃত বেশি সক্ষম কাউকে পুরস্কৃত করা বা প্রশংসা করা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুরুপ। ফলস্বরূপ, একটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদের মতো উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে না। আর এতে প্রতিযোগিতার অভাবে উদ্ভাবনী ক্ষমতা হ্রাস পায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ

  • গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
  • কিউবা প্রজাতন্ত্র
  • লাওস পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক
  • ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র

সমাজতন্ত্রের সাংবিধানিক রেফারেন্সভুক্ত দেশসমূহ

  • আলজেরিয়া
  • পর্তুগাল
  • বাংলাদেশ
  • ইরিত্রিয়া
  • গিনি বিসাউ
  • উত্তর কোরিয়া
  • নেপাল
  • নিকারাগুয়া
  • তানজানিয়া

সৌজন্যে: উইকিপিডিয়া

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

সমাজতন্ত্র কী? সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও অর্থনীতি

প্রকাশ: ০১:২০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিল ১৯১৭ সালে। সমাজতন্ত্রে বৈরি শ্রেণি নেই, কেননা কলকারখানা, ভূমি, সবই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সমাজতন্ত্রে শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হয়। শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। এই সমাজতন্ত্র আসলে কী?

সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা কী?

সমাজতন্ত্র’এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Socialism’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Socious’ থেকে উদ্ভূত। ল্যাটিন Socious শব্দের অর্থ হলাে সামাজিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, যার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ হলাে Public ownership of the means of production।

সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ হলাে এমন এক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা এবং যার বিশেষত্ব নির্ভর করছে শােষণমুক্ত মানুষের সহযােগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ওপর এখানে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা থাকবে।

সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ (Socialism) হলো এমন একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনীতির একটি সমবায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, এছাড়াও একই সাথে এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ ও আন্দোলন যার লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ এটি এমন একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদন হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।

সমাজতন্ত্র হলো সাম্যবাদী সমাজের প্রথম পর্যায়। উৎপাদনের উপায়ে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা হলো এর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমাজতন্ত্র ব্যক্তিগত মালিকানার উৎখাত ঘটায় এবং মানুষে মানুষে শোষণ, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বেকারত্বের বিলোপ ঘটায়, উন্মুক্ত করে উৎপাদনী শক্তির পরিকল্পিত বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের পূর্ণতর রূপদানের প্রান্তর। সমাজতন্ত্রের আমলে সামাজিক উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল জনগণের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতিটি লোকের সার্বিক বিকাশ সাধন। সমাজতন্ত্রের মুলনীতি হলো ‘প্রত্যেকে কাজ করবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রত্যেকে গ্রহণ করবে তার প্রয়োজন অনু্যায়ী।’

সমাজতন্ত্র দুই ধরনের, যথা: কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।

সমাজতন্ত্রের ব্যুৎপত্তি

সমাজতন্ত্র শব্দটির ব্যবহার এবং শব্দটির উল্লেখযোগ্যতার ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করে শব্দটির উৎপত্তি বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে দায়ী করা যেতে পারে। সোশালিজম (Socialism) শব্দটি ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন (১৭৭১-১৮৫৮) কো-অপারেটিভ ম্যাগাজিনে প্রথম ব্যবহার করেন। আধুনিককালে শব্দটির ব্যবহার ও সংজ্ঞা পাকাপোক্ত ১৬৮০’র বছরগুলোতে। সেই সময়ের আগে ব্যবহৃত সমবায়ী (co-operative), পারস্পরিক পন্থি (mutualist) এবং সঙ্ঘপন্থি (associationist) শব্দগুলোর পরিবর্তে সমাজতন্ত্র শব্দটি নানা লেখক ব্যবহার করেন।

সমাজতন্ত্রের ইতিহাস

সমাজতন্ত্রের ইতিহাসের উৎপত্তি ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এবং তার থেকে উদ্ভূত পরিবর্তনের ভেতরে নিহিত, যদিও এটি আগের আন্দোলন এবং ধারণা থেকেও বিভিন্ন ধারণা গ্রহণ করেছে। কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট ইস্তেহার বইটিতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কথাটি ব্যবহার করা হয়। বইটি ১৮৪৮ সালের সামান্য আগে লেখা হয় এবং বইটি পুরো ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ইউরোপে ১৯ শতকের শেষ তৃতীয়াংশে মার্কসবাদকে গ্রহণ করে সমাজ গণতান্ত্রিক দলগুলো উপরে আসতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক পার্টি যখন পার্টি ১৮৯৯ সালে কুইন্সল্যান্ড রাজ্য নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। সমাজতন্ত্রের জনক কার্ল মার্কস।

এছাড়া উনিশ শতকের কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্রিদের দ্বারা কল্পিত নানা ব্যবস্থাগুলো পরবর্তীকালে পরিণত হয়েছিলো বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের নানা তাত্ত্বিক উৎসে।

প্রথমদিকের সমাজতন্ত্র

প্রাচীনকাল থেকেই সমাজতান্ত্রিক মডেল এবং ধারনায় সাধারণ বা জনমালিকানা সমর্থন করা ছিল বা বিদ্যমান ছিল। এটা যদিও বিতর্কিতভাবে, দাবি করা হয়েছে যে শাস্ত্রীয় গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং এরিস্টটল, ফার্সি এজমালি আদি-সমাজতান্ত্রিক মাজদাক প্রমুখের সমাজতান্ত্রিক চিন্তার উপাদান রাজনীতিতে ছিল। তারা এজমালি সম্পত্তি এবং জন মঙ্গলকর ব্যবস্থার পক্ষ সমর্থন করেছিলেন। আবু যার আল-গিফারিকে ইসলামী সমাজতন্ত্রের একজন প্রধান পূর্বগামী হিসাবে অনেকেই কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন।

ফরাসি বিপ্লবের স্বল্পকাল সময়ের মধ্যেই ফ্রাসোয়া-নোয়েল ব্যাবুফ, এটিনে-গ্যাব্রিয়েল মোরেল, ফিলিপ বোনার্তি, এবং অগাস্ট ব্লাঙ্কিদের মত কর্মী ও তাত্ত্বিকগণ ফরাসি শ্রম ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রভাবিত করেছিলেন। ব্রিটেনে টমাস পেইন তার বই কৃষিভিত্তিক ন্যায়বিচারে কর আদায়কারীদেরকে গরিবদের চাহিদা অনুসারে প্রদানের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন; যখন চার্লস হল ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের জনগণের ওপর সভ্যতার প্রভাব লিখেছেন, সেই বইয়ে তিনি তার সময়ের দরিদ্রের উপর পুঁজিবাদের প্রভাবকে নিন্দামূলক হিসেবে চিত্রিত করেন। হলের বইটি টমাস স্পেন্সের কল্পলৌকিক প্রণালীসমূহকে প্রভাবিত করে।

প্যারিস কমিউন

প্যারিস কমিউন হচ্ছে ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত প্যারিস পরিচালনাকারী বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার। প্যারিসের মজুরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক শ্রেণির এই বিপ্লবী সরকার ৭৩ দিন টিকে থাকে। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজিত হওয়ার পরে প্যারিসে যে বিদ্রোহ হয় তাই হচ্ছে প্যারিস কমিউন। কমিউনের নির্বাচন ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত নির্বাচনে ২০,০০০ অধিবাসীর বিপরীতে একজন হিসেবে ৯২ সদস্যের একটি কমিউন কাউন্সিল নির্বাচিত করা হয়।

সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট

  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কলকারখানা, জমি সম্পদ এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ উৎপাদনের উপকরণের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত থাকবে।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ ও মুনাফা অর্জন নিষিদ্ধ। সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। ফলে সমাজে শ্রেণি বৈষম্য ও শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হবে।
  • এই অর্থব্যবস্থায় জাতীয় আয় বণ্টনের মূলনীতি হলঃ প্রত্যেকে তার নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। এভাবে আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতের মাধ্যমে সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা দেশ বা সমাজের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে করা হয়। অর্থাৎ সামাজিক কল্যাণ সাধনই এই এই অর্থ ব্যবস্থার মুল উদ্দ্যেশ্য।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিকদের শোষনের কোন সুযোগ থাকে না এবং প্রত্যেকেই সমান সমান সুবিধা ভোগ করে। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে মানুষের সকল মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, সাস্থ্য, যোগাযোগ প্রভৃতি সকল খাতে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে উন্নয়ন করা হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা মাফিক সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাই এই অর্থব্যবস্থায় বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না।
  • এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত উপায়ে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিধায় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদনজনিত সঙ্কট দেখা দেয় না।
  • সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের মূল্য পুঁজিবাদের ন্যায় চাহিদা ও যোগানের ঘাত প্রতিঘাত অনুযায়ী আপনা আপনি নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কতৃপক্ষই দ্রব্যসামগ্রীর দাম নির্ধারন করে থাকে।
  • সমাজতান্ত্রিক সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল উপাদানগুলি হলও রাষ্ট্র, সমাজের নেতৃজনিত ও চালিকা শক্তি মার্কসবাদী লেনিনবাদী পার্টি, নানা সামাজিক সংগঠন ও মেহনতি কর্মী দল।

সমাজতন্ত্রে অর্থনীতি

সমাজতন্ত্রের মূল ধারণাটি একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল যার ফলে উৎপাদনকে এমনভাবে সংগঠিত করা হয় যাতে পণ্যদ্রব্য সরাসরি পণ্য ও সেবার উৎপাদনের জন্য পরিচালিত হয় (বা ক্লাসিক্যাল এবং মার্কসীয় অর্থনীতিতে ব্যবহার-মূল্য): আর্থিক গণনা এবং পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক আইনগুলির বিরোধিতা করে শারীরিক ইউনিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সরাসরি বরাদ্দকরণ, প্রায়শই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধরনের সমাপ্তি যেমন, ভাড়া, সুদ, লাভ এবং অর্থ। একটি সম্পূর্ণরূপে উন্নত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে, উৎপাদন এবং ব্যালান্সিং ফ্যাক্টর আউটপুটগুলির সাথে ইনপুটগুলো প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে।

আগামী সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে টাকার ব্যবহার একটি বিতর্কিত বিষয়। কার্ল মার্কস, রবার্ট ওয়েন, পিয়েরে জোসেফ প্রুধোঁ, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ সমাজতন্ত্রীরা টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের শ্রম ভাউচারের কথা বলেছেন যার দ্বারা বিভিন্ন ভোগ্যদ্রব্য পাবার কথা এবং একই সাথে সেগুলো পুঁজিতে রূপান্তরিত হবে না।

 আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর Why Socialism? বইয়ে বলেছেন, “আমার মতে, বর্তমান কালের সংকটের মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। … … আমি নিশ্চিত, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই এই মন্দ দিকগুলো দূর করা যেতে পারে; সেইসঙ্গে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার যার উদ্দেশ্য হবে একটি সামাজিক লক্ষ্য স্থির করা। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানায় থাকবে সমাজ এবং উৎপাদনের ফল পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার হবে। একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি, যেটি সমাজের প্রয়োজনের জন্য উৎপাদনের সমন্বয় করবে, প্রত্যেক সমর্থ ব্যক্তির কর্মকে সমভাবে বিতরণ করবে এবং পুরুষ-নারী ও শিশু নির্বিশেষে জীবনধারণের উপায় সুনিশ্চিত করবে। সহজাত উৎকর্ষ এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তির শিক্ষা তার সামাজিক দায়বোধের চিন্তাভাবনা জাগাবে। বর্তমানে যে ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও সাফল্যের সোপান হিসেবে শিক্ষাকে তুলে ধরা হয়, উল্লেখিত ব্যবস্থা হবে তার বিপরীত।”

সমাজতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?

সমাজতন্ত্রের সুবিধা

শোষণের অনুপস্থিতি

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান সুবিধা হলো শোষণের অনুপস্থিতি। সমাজতন্ত্র শ্রমিকদের শোষণ না করার নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

সকলের অংশগ্রহণ

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের বা সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্যই সাধারণ কর্মী হিসেবে উৎপাদনকর্ম পরিচালনার উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে।

চাহদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা গ্রহণ

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, প্রত্যেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা গ্রহণ করে। এতে রাষ্ট্রের উন্নতি খুব দ্রুত হয় বলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যারা কথা বলেন তাদের বিশ্বাস। ফলস্বরূপ, সমাজে দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা লাভ করার সমান অধিকার রয়েছে।

বৈষম্য বিলুপ্ত

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র থেকে সকল ধরনের বৈষম্য দূরীভূত হয়। এছাড়া এমনও হয় যে, যদি এমন কোনো কর্মের আবির্ভাব হলো যা করা উচিত তবে তা করার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না; সেক্ষেত্রে ওই কাজটি করার জন্য উচ্চতর পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়।

সমাজতন্ত্রের অসুবিধা

সমবায় পুলিং-এর উপর নির্ভরশীলতা

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো যে-কোনো কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রত্যেককে সমবায় পুলিং-এর উপর নির্ভর করা। কোনো কর্মী সামর্থ্য থাকলেক কারও থেকে বেশি কর্ম করতে পারবে না যার মাধ্যমে সে অতিরিক্ত অর্থ পেতে পারে কারণ সমাজতন্ত্রে প্রতিযোগিতাকে ভালো চোখে দেখা হয় না।

প্রতিযোগিতা এবং উদ্ভাবনের অভাব

সমাজতন্ত্রের মতে, প্রতিযোগী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করার উপায় খুঁজে বের করে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো উদ্যোক্তা বা কর্মীকে পুরস্কৃত বা উৎসাহপ্রদানমূলক কোনো কিছু করা হয় না। সমাজতন্ত্রী লোকজনেরা মনে করেন যে, এভাবে উদ্যোক্তাকে বা অপেক্ষাকৃত বেশি সক্ষম কাউকে পুরস্কৃত করা বা প্রশংসা করা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুরুপ। ফলস্বরূপ, একটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদের মতো উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে না। আর এতে প্রতিযোগিতার অভাবে উদ্ভাবনী ক্ষমতা হ্রাস পায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ

  • গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
  • কিউবা প্রজাতন্ত্র
  • লাওস পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক
  • ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র

সমাজতন্ত্রের সাংবিধানিক রেফারেন্সভুক্ত দেশসমূহ

  • আলজেরিয়া
  • পর্তুগাল
  • বাংলাদেশ
  • ইরিত্রিয়া
  • গিনি বিসাউ
  • উত্তর কোরিয়া
  • নেপাল
  • নিকারাগুয়া
  • তানজানিয়া

সৌজন্যে: উইকিপিডিয়া