১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

আণবিক জীববিজ্ঞানের আলোকে স্তন ক্যানসার বিশ্লেষণ

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক
  • প্রকাশ: ১০:০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • / ৭৮৮ বার পড়া হয়েছে

ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সকলে এগিয়ে আসতে হবে | প্রতীকী চিত্র

ক্যানসার জটিল একটি রোগ। বিশ্বব্যাপী, স্তন ক্যানসার (Breast Cancer) মহিলাদের মধ্যে ক্যানসার-সম্পর্কিত মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এবং প্রতি বছরে প্রায় ১৪ লাখ নারী আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছেনা পুরুষরাও; তাদের আক্রান্তের সংখ্যা যদিও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বাংলাদেশেও নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রাধান্য অনেক বেশি। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যানসার রেজিস্ট্রি থেকে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের হার গত ১০ বছরে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬.৪ থেকে ৩০.১ শতাংশে।

হিস্টোপ্যাথলজিকাল বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্তন ক্যানসারকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর–পজিটিভ (ER+), HER2 রিসেপ্টর-পজিটিভ (HER2+) এবং ট্রিপল-নেগেটিভ (TN: ER, PR ও HER2 নেগেটিভ)। বিশ্বব্যাপী সমস্ত স্তন ক্যানসারের প্রায় ২০% হল TN ধরণের, অর্থাৎ এই ধরণটিতে এস্ট্রোজেন,  প্রোজেস্টেরন ও HER-2 রিসেপ্টরের অভাব রয়েছে। মানুষের স্তন ক্যানসার হওয়ার জন্য একাধিক কারণ রয়েছে: জিনগত, পরিবেশগত,  বিকিরণ (এক্স-রে, গামা রশ্মি, রেডন)জনিত, খাদ্যজনিত, রাসায়নিক দূষণ, দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান ইত্যাদি।

এছাড়া, সাম্প্রতিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দেখা গিয়েছে যে মুষ্টিমেয় কিছু ভাইরাস স্তন ক্যানসারের সাথেও জড়িত। এই ভাইরাসগুলি হল মাউস ম্যামারি টিউমার ভাইরাস (MMTV), বোভাইন লিউকেমিয়া ভাইরাস (রেট্রোভাইরাস), হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (ডিএনএ ভাইরাস) এবং ঈপ্সটিন-বার  ভাইরাস (ডিএনএ ভাইরাস)। MMTV-র মানব সংস্করণ হল হিউম্যান ম্যামারি টিউমার ভাইরাস (HMTV) বা হিউম্যান বিটা-রেট্রোভাইরাস (HBRV), যার মানুষের সাথে বসবাস প্রায় কয়েক হাজার বছরের। রেট্রোভাইরাসগুলোর একটি ইউনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ’ এনজাইমের সাহায্যে ভাইরাসগুলো তাদের আরএনএ জিনোম ডিএনএ অণুতে রূপান্তরিত হয়ে মানবজিনোমের সাথে মিশে যেতে পারে, এমনকি চিরকালের জন্য। এভাবেই, স্থায়ীভাবে মানব ডিএনএ মানচিত্রের তিন বিলিয়ন নিউক্লিওটাইডের মধ্যে ৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ভাইরাসের রূপান্তরিত-ডিএনএ, যা আমরা বহন করে চলেছি বংশপরম্পরায়। ওইসব বাহ্যিক ডিএনএ-ক্রমের মধ্যে লুকায়িত আছে ভাইরাসের নানান  অংকোজিন, যা স্তন ক্যানসারসহ বিভিন্ন ক্যানসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যি একটি ভয়াবহ চিত্র। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১০% স্তন ক্যানসার সরাসরি জিনগত  মিউটেশন বা পরিব্যক্তির কারণে হয়ে থাকলেও, বিজ্ঞানীদের নিকট এই মৌলিক বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সর্বাধিক। কারণ, পরিবেশগত যেসব ফ্যাক্টর স্তন ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত, বস্তুতঃ সেগুলো মানবজিনোমের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়েই তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই গুরুত্বের নিরিখে স্তন ক্যানসারের কারণ হিসেবে শুধুমাত্র জিনগত ব্যাপারটি নিয়েই আমার এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে।

দেহের যে-কোনো ধরণের ক্যানসারের মূলে রয়েছে কোষচক্রের সব সৃষ্টিছাড়া ঘটনাসমূহ। সেখানেই ক্যানসার উৎপত্তির রহস্য। মানুষের দেহে এপিথেলীয় বা আচ্ছাদনীয় কোষগুলোর (যেমন, ত্বকের বাইরেরতম স্তর) স্থায়িত্ব বেশ কম, তাই সেগুলো গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। তবে, দেহের বিশেষ কিছু কোষ, যেমন স্নায়ুকোষ বা নিউরন অথবা কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো অনন্তকাল অতিবাহিত করে কোষ চক্রের G0 বা বিশ্রামাবস্থায় (ছবি দেখুন)। তাদের আর বিভাজন হয় না। তাই, সেখানকার কোষগুলোর ক্ষয়প্রাপ্তিতে বা মৃত্যুতে তাদের নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবার সম্ভাবনা আর নেই। সাধারণত কোষ বিভাজনের জন্য একটি সূত্রপাতের প্রয়োজন- হতে পারে সেটি কোষের কোনো বাহ্যিক ঘটনা (যেমন আঘাত পাওয়া, পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি), কোষের অপমৃত্যু, উদ্দীপনা বা কোনো হরমোনের তাগাদা। একটি কোষ যখন মৃত্যুর কাছাকাছি আসে, তখন গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে পড়শী কোষগুলোকে তাগাদা দেয়, যেন তারা দ্রুততার সাথে কোষ বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। বলা বাহুল্য, একটি কোষচক্র সম্পন্ন করতে তো প্রায় ২৪ ঘণ্টা লেগেই যায় (অবশ্য এ তথ্যটি উদ্ধৃত হয়েছে সেল কালচার গবেষণা থেকে)। সৃষ্টি হয় নতুন কোষের, প্রতিস্থাপিত করে পুরোনোদের। কিন্তু কোষ বিভাজন যখন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত, তখনই সৃষ্টি হয় টিউমার পিন্ড ও ক্যানসারের। পুরুষ ও স্ত্রীর স্তনের কোষগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই, ক্যানসারের জিনগত কারণসমূহ বিস্তারিত বর্ণনার আগে কোষচক্র ও অ্যাপোপ্টোসিস সমন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

কোষ চক্র (Cell Cycle)

কোষ চক্র হল চার-পর্যায়ের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোষটি আকারে বৃদ্ধি পায় (G1 পর্যায়), তার ডিএনএ অনুলিপিত হয় (ডিএনএ সংশ্লেষণ বা S পর্যায়), বিভাজনের জন্য প্রস্তুতিকরণ (G2 পর্যায়) এবং অবশেষে বিভাজন (মাইটোসিস বা M পর্যায়)। G1, S ও G2 পর্যায়গুলো একত্রে ইন্টারফেজ হিসেবে ধরা হয়, যা কোষ বিভাজনের মধ্যবর্তী সময়টাকে বোঝায়। সাইক্লিন-নির্ভর প্রোটিন কাইনেজ (যেমন, Cdk4) একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম যা সাইক্লিন প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে কোষচক্রের অগ্রগতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। একটি কোষ যেসব উদ্দীপনা ও প্রতিরোধমূলক বার্তা পায় তার ভিত্তিতে কোষটি সিদ্ধান্ত নেয় যে এটি কোষচক্রে প্রবেশ করবে এবং বিভক্ত হবে কিনা। 

যে সমস্ত প্রোটিন কোষ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে তারা চারটি গ্রুপে শ্রেণীবদ্ধ- যেমন, গ্রোথ ফ্যাক্টর, গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর, সিগন্যাল ট্রান্সডিউসার এবং জিন-নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন, অর্থাৎ ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর। গ্রোথ ফ্যাক্টরের বাঁধনে একটি উদ্দীপনামূলক সংকেত গ্রোথ-রিসেপ্টরকে সাময়িকভাবে সক্রিয় করে তোলে, যা নির্দিষ্ট সংকেত সংবহনের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরগুলোকে সক্রিয় ও উজ্জীবিত করে। ফলে, নিউক্লিয়াসের মধ্যে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরগুলো প্রোটো-অঙ্কোজিন (যেমন Myc, Ras, Src, Fos, HER2)-সহ কোষ-বিভাজনে জড়িত জিনগুলোর প্রতিলিপন (ট্রান্সক্রিপশন) প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং  তাদের mRNA-গুলোর জেনেটিক কোড অনুযায়ী সংশ্লেষিত হয় প্রোটিন। সিডিকে (Cdk) সেসব প্রোটিনগুলোকে ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে সক্রিয় করে। প্রোটো-অঙ্কোজিন হল একটি স্বাভাবিক জিন যা মিউটেশন বা বর্ধিত অভিব্যক্তির কারণে পরিণত হতে পারে একটি অঙ্কোজিনে, যা ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রায় ৪০টির মত প্রোটো-অঙ্কোজিন অদ্যাবধি চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি প্রোটো-অঙ্কোজিনের মিউটেশন সরাসরি বিভিন্ন ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে। ERBB2 বা HER2-সহ বেশ কিছু প্রোটো-অঙ্কোজিন স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী।

কোষচক্রের প্রতিটি পর্যায় যাতে করে সঠিকভাবে অগ্রসর হয় তা নিশ্চিত করতে কোষগুলো বিশেষ কিছু প্রোটিন এবং চেকপয়েন্ট সিগন্যালিং সিস্টেম ব্যবহার করে (ছবি দেখুন)। G1-পর্ব এবং G2-পর্বের চেকপয়েন্টগুলো S-পর্বের আগে ও পরে ডিএনএ সংশ্লেষণের কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা মূল্যায়ন করা হয়। একইভাবে, আরও একটি চেকপয়েন্ট আছে M-দশায়, যা মাইটোসিসের সময় নিশ্চিত করে যে ক্রোমোজোমগুলো অ্যানাফেজ পর্যায়ে আলাদা হওয়ার আগে কোষের স্পিন্ডল ফাইবারগুলো মেটাফেজে সঠিকভাবে সারিবদ্ধ হয়েছে কিনা।

যদি কোনো স্তরে এই চেকপয়েন্টগুলোতে ডিএনএ-র ক্ষতি বা স্পিন্ডল গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তবে কোষটি আর অগ্রসর হয় না— ‘প্রোগ্রামড সেল-ডেথ’ বা ‘অ্যাপোপটোসিস’ (apoptosis) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোষটির অপমৃত্যু হয়। তবে, ওইসব চেকপয়েন্টগুলোতে জড়িত প্রোটিনসমূহ স্বয়ং মিউটেটেড বা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কোষচক্র হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত, কোষগুলো বারবার বিভাজিত হতে থাকে, অবশেষে রূপ নেয় ক্যানসারে। উদাহরণস্বরূপ, G2 চেকপয়েন্ট প্রধানত টিউমার প্রোটিন p53 দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ-গুলোকে মেরামত করে p53, অথবা উদ্দীপিত করে কোষের অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে। মিউটেশনের ফলে যদি p53 স্বয়ং অকার্যকর বা পরিবর্তিত হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ-সহ কোষগুলো কোষচক্রের মাধ্যমে অগ্রসর হতে থাকে, যা ক্যানসার বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।

অনুরূপভাবে, আরও একটি টিউমার-দমনকারী জিন BRCA (ব্রেস্ট ক্যানসার জিন)1 এর মিউটেশন বা ঘাটতি  S-ফেজ চেকপয়েন্ট, G2/M চেকপয়েন্ট, স্পিন্ডল চেকপয়েন্ট এবং সেন্ট্রোজোম ডুপ্লিকেশনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে, যা স্তনে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কোষচক্রের বিভিন্ন পর্যায়

অ্যাপোপ্টোসিস (Apoptosis)

দেহে অপ্রয়োজননীয় কোষগুলো জীবের জন্য হুমকিস্বরূপ, ফলে সেগুলো এক নিয়ন্ত্রিত কোষ-আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়, যা ‘পরিকল্পিত কোষ মৃত্যু’ বা অ্যাপোপ্টোসিস নামে পরিচিত। এই কোষপতন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজমীয় ডিএনএ টুকরো টুকরো হয়ে যায়, কোষটি মারা যায়।

অ্যাপোপ্টোসিসের কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি কোষ মারা যায়, যা প্রতিস্থাপিত হয় নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে। অ্যাপোপ্টোসিস একটি জিন-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। ডিএনএ যখন কোনো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা কোষচক্র চলাকালীন ডিএনএ সংশ্লেষণে বড়ো রকমের ক্ষতি দেখা দেয়, তখন সেই কোষটির নিজস্ব জিন বা প্রোটিন থেকে নিজেকে ধ্বংস করার জন্য একটি সংকেত পায়।

বিসিএল-২ (Bcl-2) প্রোটিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ও মাইটোকন্ড্রিয়ায় সৃষ্ট ‘সাইটোক্রোম সি’ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, পড়শী কোষ থেকে আগত সংকেতের কারণেও  অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা ঘটে। ভিটামিন সি-ও অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ার একটি উদ্দীপক। এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ক্যাস্পেজ পরিবারের এক সারি প্রোটিয়েজ উৎসেচক সক্রিয় হয়ে কোষের এই ধরণের মৃত্যু ঘটায়।

স্তন-টিউমার বৃদ্ধিতে অবারিত কোষ বিভাজনের সুযোগ পেতে HER2 (হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর-২)-নামক একটি প্রোটিন ‘সাইটোক্রোম সি অক্সিডেজ’-কে বাধা দিয়ে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে অবদমিত করতে দেখা গিয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়া বা অপর্যাপ্ত কোষপতন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

কোষের বেশ কিছু জিন কোষ চক্রের নিয়ন্ত্রণে বা কোষের বৃদ্ধিতে মূলত দায়ী। তাদের মিউটেশনের কারণেই কোষ-বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। এসব জিনগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: অঙ্কোজিন ও টিউমার-দমনকারী জিন।

অঙ্কোজিন (Oncogene)

অঙ্কোজিন বলতে এমন একটি জিন বা বংশাণুকে বোঝায়, যার ডিএনএ-তে মিউটেশনের কারণে ক্যানসার সৃষ্টির সম্ভাবনা রাখে। স্বাভাবিক অবস্থায় অঙ্কোজিনকে বলা হয় প্রাক- বা প্রোটো-অঙ্কোজিন, যা  নিয়মিত কোষ-বিভাজন, কোষ-বৃদ্ধি ও অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

দেহের বহু কোষের মৃত্যু অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ায় ঘটে।  কিন্তু ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে একটি অঙ্কোজিন অ্যাপোপটোটিক কোষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে ও তাদের ক্রমাগত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। কিন্তু, কার্সিনোজেন ও বিকিরণজনিত মিউটেশন বা বর্ধিত অভিব্যক্তির কারণে একটি প্রোটো-অঙ্কোজিন অঙ্কোজিনে রূপান্তরিত হতে পারে। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো অঙ্কোজিনকে মানবদেহের ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিউটেশন ছাড়াও জিন দ্বিগুণিকরন (জিনের অনুরূপ কপি তৈরি করা) ও ক্রোমোজোমীয় পরা-স্থানান্তর (chromosomal translocation) প্রোটো-অঙ্কোজিনকে অঙ্কোজিনে রূপান্তর করতে পারে।

HER2 গ্রোথ-রিসেপ্টর জিনের দ্বিগুণিকরণ এবং c-Myc জিনের অতিমাত্রায় প্রকাশ যথাক্রমে ৩০% ও ৮০% স্তন ক্যানসারের সাথে সম্পর্কিত। অধিকন্তু, কোষের Bcl2 (B-cell lymphoma 2) প্রোটো-অংকোজিন অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মিউটেশন স্তন ক্যানসারসহ বেশ কয়েকটি ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মানুষের স্তন ক্যানসার অনেকগুলো অঙ্কোজিন (ErbB2, PIK3CA) এবং টিউমার দমনকারী জিন (TP53, বিআরসিএ ১/২, RB1, PTEN) গুলোর জিনতাত্ত্বিক মিউটেশনের সাথে যুক্ত। কিছু অঙ্কোজিন তৈরি করে প্রোটিন-কাইনেজ এনজাইম (যেমন, RAF, ERK), যা ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে টিউমার-সাপ্রেশর-জিনদের অবদমিত করে। আগেই উল্লেখ করেছি স্তন ক্যানসার সৃষ্টিতে HER2 ও Myc উভয়ই অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, তাই এই দুটো অঙ্কোজিনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন মনে করছি।

c-Myc

Myc হলো প্রোটো-অনকোজিনের একটি পরিবার যা  ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর হিসেবে ও Max প্রোটিনের সাথে জুটি বেঁধে মানবজিনোমের প্রায় ১৫% জিনসমূহের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে সাইক্লিন, Cdk4 ও নিউক্লিওটাইড বিপাক সংশ্লিষ্ট জিনসমূহ। ওই জিনগুলোর প্রমোটর (promoter) অঞ্চলে নির্দিষ্ট একটি ক্রমের (CACGTG/ই-বক্স) সাথে যুক্ত হয় c-Myc/Max। Myc-পরিবারের তিনটি সদস্যের মধ্যে (c-myc, l-myc ও n-myc) স্তন-ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসার সৃষ্টিতে  c-myc জিনের ভূমিকা অনেক বেশি, কারণ স্তন-টিউমারে এই জিনটির অতিমাত্রায় প্রকাশ স্তন ক্যানসারের অন্যতম একটি কারণ। তাই, মানবজিনোমের ৮ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত c-Myc নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন। স্বাভাবিক অবস্থায় কোষীয় বিস্তার, পার্থক্য ও অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার সাথে c-Myc প্রোটিন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে, ত্রুটিপূর্ণ/মিউটেটেড c-Myc জিন বা এর অতিমাত্রায় প্রকাশ কোষচক্রকে করে অনিয়ন্ত্রিত। 

এছাড়া, আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। ডিএনএ অণুর ৩’ প্রান্তে ‘টেলোমেয়ার’ অঞ্চলটির সংশ্লেষণ কোষচক্র বা কোষ বিভাজন চলাকালীন ডিএনএ সংশ্লেষণের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ডিএনএ পলিমেরেজের অপারগতায়, এই কাজটি সম্পন্ন করে একটি মানব-TERT (টেলোমেরেজ রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ) এনজাইম।  বিস্ময়কর হল, hTERT জিনটি নিয়ন্ত্রিত হয় c-Myc দ্বারা, যার অতিমাত্রায় প্রকাশ টেলোমেরেজ এনজাইমটিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে- ফলে, কোষগুলোকে দেয় অমর্ত্যের বৈশিষ্ট্য, জন্ম দেয় ক্যানসারের। সে কারণেই, ক্যানসার-বিরোধী ওষুধ হিসেবে অনুমোদিত হয়েছে hTERT ভ্যাকসিন।

HER2

এটি একটি রিসেপ্টর প্রোটিন। এই রিসেপ্টরগুলি এপিথেলীয় কোষের বৃদ্ধি এবং পার্থক্য নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। এটি একটি প্রোটো-অঙ্কোজিন এবং ERBB পরিবারের একটি প্রোটিন। এই পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো HER2 রিসেপ্টর সরাসরি তার লাইগ্যান্ড বা উদ্দীপককে আবদ্ধ করে না। অথচ, এই পরিবারের চারটি সদস্যের যে-কোনো একটির সাথে জুটি বেঁধে HER2 নিজেকেই সক্রিয় করে তোলে। যখন HER2 প্রোটিনের ঘনত্ব বেশি থাকে, তখন HER2/HER2 একত্রে হলেও প্রোটিনটি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। HER2 অঙ্কোজিনের মিউটেশন বা অতিমাত্রায় অভিব্যক্তি আক্রমনাত্মক ধরনের স্তন ক্যানসারের বিকাশ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। HER2 জিনের মিউটেশন বা তার অতিমাত্রায় প্রকাশ (HER2-পজিটিভ) প্রায়  ২০-৩০% স্তন  ক্যানসারের কারণ। এছাড়াও, অন্যান্য এডিনোকার্সিসোমা, যেমন ডিম্বাশয়, এন্ডোমেট্রিয়াম, জরায়ুর পাশাপাশি ফুসফুস, খাদ্যনালী, গ্যাস্ট্রিক এবং মূত্রাশয় ক্যানসারেও HER2 রিসেপ্টরগুলির ভূমিকা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, HER2 রিসেপ্টরের জন্য কোন লাইগ্যান্ড  আদপে সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। দেখা গিয়েছে, HER2 পরিবারের দুটো প্রোটিন জুটি বেঁধে (ডাইমেরাইজেশন) রিসেপ্টরগুলো অটোফসফোরিলেশনের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরণের সংকেতপথের সূত্রপাত সৃষ্টি করে। HER2-উদ্দীপ্ত সক্রিয় সিগন্যালিং পথগুলোর মধ্যে রয়েছে: মাইটোজেন-অ্যাক্টিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ (MAPK), ফসফোইনোসিটাইড 3-কাইনেজ  (PI3K/Akt), ফসফোলাইপেজ সি γ, প্রোটিন কাইনেজ সি (PKC), সিগন্যাল ট্রান্সডুসার এবং ট্রান্সক্রিপশন-অ্যাক্টিভেটর (STAT)। সংক্ষেপে বলতে গেলে, HER2 বা ERBB পরিবারের  উদ্দীপনার মাধ্যমে কোষে এক বিশেষ ধরণের সংকেতের সঞ্চার হয়, যা কোষের বিস্তার, এনজিওজেনেসিস, কোষের গতিশীলতা ও মেটাস্ট্যাসিস প্রক্রিয়াগুলোকে উৎসাহিত করে এবং অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকেও প্রতিহত করে (যা আগেই উল্লেখ করেছি)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রোটিনটি স্তন ক্যানসার সনাক্তকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োমার্কার হয়ে উঠেছে। HER2 জিন ও প্রোটিনটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে প্রচুর এবং উঁচু মানের জার্নালে HER2-স্তনক্যানসার-সংক্রান্ত প্রকাশনার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে (pubmed.ncbi.nlm.nih.gov), যা ইঙ্গিত করে স্তন ক্যানসারে এই জিন বা প্রোটিনটির গুরুত্ব।

চিকিৎসা ব্যবস্থায়, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ট্রাস্টুজুমাব (Trastuzumab) HER2 এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। HER2 এর সাথে বাঁধনের ফলে ট্রাস্টুজুমাব p27 প্রোটিনের বৃদ্ধি ঘটে, যার মাধ্যমে কোষের বিস্তার হয় বাধাগ্রস্থ। p27 বা সাইক্লিন-নির্ভর কাইনেজ ইনহিবিটর 1B হল একটি প্রতিরোধক, যা সাইক্লিন E -Cdk 2 অথবা সাইক্লিন D -Cdk 4 কমপ্লেক্সের সাথে আবদ্ধ হয়ে বাধা দেয় G1 কোষ চক্রের অগ্রগতি। আরেকটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, পার্টুজুমাব (Pertuzumab), যা HER2/HER3 রিসেপ্টরগুলোর একত্রীকরণে বাধা দেয়৷ উপরন্তু, NeuVax (Galena Biopharma) হল একটি পেপটাইড-ভিত্তিক ইমিউনোথেরাপি, যা ইমিউন সিস্টেমের ‘টি কোষ’কে নির্দেশ দেয় HER2-উৎপাদনকারী ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে। এই ধরণের নেতিবাচক ইমিউন নিয়ন্ত্রণকে বাধা দিয়ে ক্যানসার থেরাপি আবিষ্কার করেছিলেন জেমস পি অ্যালিসন এবং তাসুকু হোনজো। জেমস অ্যালিসন প্রথম টি-কোষ অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর কমপ্লেক্স প্রোটিনকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারা নোবেলও পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে। 

টিউমার-দমনকারী জিন (Tumor suppressor gene)

টিউমার-দমনকারী জিন হল সেই-সব জিন যাদের কার্যকারিতা হারানোর ফলে কোষের ম্যালিগন্যান্সি বৃদ্ধি পায়। কোষে টিউমার-দমনকারী জিনের কাজ হচ্ছে মূলত DNA মেরামত, DNA-র সুরক্ষা, কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। স্তন ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে টিউমার-দমনকারী জিনগুলোর মধ্যে অনেক আলোচিত জিন হচ্ছে BRCA1 (বিআরসিএ ১) ও BRCA2 (বিআরসিএ ২) এবং p53। এছাড়াও, p27, PTEN ও কোষচক্র-চেকপয়েন্ট কাইনেজ (CHK2), রেটিনোব্লাটোমা Rb জিনগুলোর মিউটেশন স্তন ক্যানসারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। p53-কে জিনোম স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষার অভিভাবক বলা হয়।

BRCA জিন

বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ জিন দুটো যথাক্রমে মানুষের স্তন ক্যানসারে বিআরসিএ টাইপ ১ ও বিআরসিএ টাইপ ২ প্রোটিন তৈরি করে, যা নিখুঁতভাবে কোষচক্রের S-পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ডিএনএ দ্বিসূত্রক-ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করে। ডিএনএ মেরামতের জন্য CHK2, RAD50 ও RAD51 (ডিএনএ রিকম্বিনেজ), FANCD2 (Fanconi anemia group D2 protein) এবং ATM (Ataxia telengiectasia mutated) প্রোটিনগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। মোটের ওপর, স্বাভাবিক অবস্থায় বিআরসিএ নির্দেশনা কোষীয় ও  জিনোম স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিআরসিএ মিউটেশন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। যেমন, বিআরসিএ-১ জিনের দুটি চিহ্নিত মিউটেশন, 85delAG ও 5382insC, স্তন ক্যানসার সৃষ্টিতে মূলত দায়ী। এই মিউটেশনগুলোর উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর আগে।

তবে, বিআরসিএ জিন-দুটোর মিউটেশন অঞ্চল বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে এই সংক্রান্ত কোনো গবেষণা আছে কিনা আমার জানা নেই। বলা বাহুল্য, বিআরসিএ ১/২ জিন-দুটোর যেকোনো ক্ষতিকারক মিউটেশন বিআরসিএ ১/২ জিন বা তাদের প্রোটিনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, ফলে ডিএনএ-র ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করা সম্ভব হয় না। এই মিউটেশনগুলো স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্তন ক্যানসার ছাড়াও বিআরসিএ ১/২ জিন-মিউটেশন ডিম্বাশয় ও প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণও হতে পারে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ATM একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন/প্রোটিন। এই প্রোটিনটি একটি সেরিন/থ্রিওনিন কাইনেজ (এনজাইম), যা ডিএনএ মেরামতের সঙ্গে জড়িত প্রোটিন (p53, CHK2, বিআরসিএ1)দের ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে সক্রিয় করে। স্বয়ং এই জিনটির মিউটেশনের ফলে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা আরও ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।

বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ জিন দুটো যথাক্রমে মানুষের স্তন ক্যানসারে বিআরসিএ টাইপ ১ ও বিআরসিএ টাইপ ২ প্রোটিন তৈরি করে, যা নিখুঁতভাবে কোষচক্রের S-পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ডিএনএ দ্বিসূত্রক-ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করে।

জিন মিউটেশনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই, পরিবর্তিত  বিআরসিএ ১/২ জিন একটি কার্যকর প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয় না, ফলে কোষ বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। 

বিআরসিএ  ১/২ জিনগুলোর অতিরিক্ত প্রকাশ যেমন স্তন ক্যানসারের কারণ, তেমনি এদের ঘাটতিও স্তন ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। বিআরসিএ ১ জিনের মিউটেশন ছাড়া আরও একটি বড়ো কারণ হচ্ছে এই জিনটির প্রমোটর (promoter) অঞ্চলে অতিরিক্ত মিথিলেশন (CH3 গ্রুপের সংযোজন) হওয়ায় জিনগুলোর অভিব্যক্তি কমে যায়, ফলে তাদের প্রোটিনগুলোর প্রাপ্যতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। উপরন্তু, বিআরসিএ জিনের স্বাভাবিক প্রকাশের জন্য তাদের প্রমোটর অঞ্চলের একটি  নিউক্লিওটাইড ক্রম বা N-box (CACNAG) খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একটি ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর GABP (GA-Binding Protein) যুক্ত হয়। এই বক্সটিতে মিউটেশনের কারণেও জিএডিপি প্রোটিনটি যুক্ত হতে না পারায় বিআরসিএ জিনের প্রকাশ হ্রাস পায়। 

বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা লক্ষ্য করেছেন, অর্থাৎ স্তনের টিউমারে MMTV রেট্রোভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এবং এপষ্টিন-বার ভাইরাস (EPV)গুলোর উপস্থিতি। তাদের বৃদ্ধির জন্যও যেহেতু স্তন কোষের জিএডিপি ব্যবহৃত, তাই স্বয়ং স্তন কোষগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এই প্রোটিনটির প্রাপ্যতাও প্রতিযোগিতার কারণে কমে আসে। স্তন ক্যানসারের টার্গেটেড থেরাপি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ কর্তৃক বিআরসিএ ১/২- মিউট্যান্ট কোষগুলিকে প্রতিহত করতে অনুমোদন পেলো ওলাপ্যারিব অ্যান্টিবডি। এছাড়া, স্তন ক্যানসার কোষের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল বলেও অনেকে মনে করেন।

টিউমার প্রোটিন TP53/p53

মানব ১৭ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত p53 একটি গুরুত্বপূর্ণ টিউমার-দমনকারী জিন, যার কোডকৃত প্রোটিন ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর হিসেবে ডিএনএ অণুর সাথে আবদ্ধ হয়ে p21 (WAF1)-সহ বিভিন্ন জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। p21 হল টিউমার দমনে একটি মধ্যস্থতাকারী প্রোটিন। p53 কে ‘জিনোমের অভিভাবক’ হিসেবে দেখা হয়, কারণ বিভিন্ন জিনের মিউটেশন প্রতিরোধ ক’রে জিনোম স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে এর  ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম। 

কোষ চক্র অগ্রগতিতে জড়িত এমন সব জিনের মিউটেশনকে রোধ ক’রে দেহে বিভিন্ন ক্যানসার গঠনে বাধা দেয়। অ্যাপোপটোসিস ও জিনোম স্থিতিশীলতার মাধ্যমে p53 কোষ চক্রের নিয়ন্ত্রণ বা অগ্রগতিতে মূল ভূমিকা পালন করে। কোষ চক্র চলাকালীন ডিএনএ ভাঙ্গন দেখা দিলে সক্রিয় হয়ে ওঠে p53 প্রোটিন বেশ কিছু কাইনেজ (MAPK, CHK1, CHK2) এনজাইম দ্বারা ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে। ফলশ্রুতিতে, p53 প্রোটিনের মাধ্যমে সক্রিয় হয় p21 প্রোটিন ও ডিএনএ মেরামতকারী প্রোটিনসমূহ। ডিএনএ মেরামত না হওয়া পর্যন্ত p21 প্রোটিন G1/S চেকপয়েন্টে সাইক্লিন-সিডিকে (CDK)-কমপ্লেক্সকে প্রতিহত ক’রে কোষ চক্রকে ধরে রাখে। মেরামতে ব্যর্থ হলে p53 কোষটিকে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষটির মৃত্যু ঘটায়।

এছাড়াও, p53 নিয়ন্ত্রণ করে VEGF (vascular endothelial growth factor)-নির্ভর এনজিওজেনেসিস। তবে, দুৰ্ভাগ্যজনকবশতঃ স্বয়ং p53 জিনটির মিউটেশনের ফলে পরিবর্তিত ও অকার্যকর p53 প্রোটিন ক্যানসার দমন করার ক্ষমতা হারায়, কোষগুলো হারায় অ্যাপোপটোসিসের বৈশিষ্ট্য ও ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ-সহ কোষ বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। সৃষ্টি হয় ক্যানসারের। ER+ ও HER+ স্তনের ক্যানসারকোষগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশে দেখা গিয়েছে মিউট্যান্ট-p53 (mtp53) জিনের উপস্থিতি, যেখানে TN-নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের কোষগুলিতে এই মিউট্যান্ট জিনের উপস্থিতি প্রায় ৮০ শতাংশ, যা ইঙ্গিত করে p53 প্রোটিনের গুরুত্ব। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে, মিউটেটেড p53 জিন/প্রোটিন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি থেরাপিউটিক লক্ষ্য। বিজ্ঞানীদের কিছু রাসায়নিক যৌগ উদ্ভাবনের মাধ্যমে mtp53 প্রোটিনকে তার কার্যকরী সাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, ফলে তার দমনকারী কার্যকলাপ পুনরুদ্ধার হয়েছে, সাথে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে ক্যানসার-বৃদ্ধির হ্রাস।

উপসংহার

বিশ্বজুড়েই স্তন ক্যানসার নারীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে বিবেচ্য। স্তন ক্যানসার সৃষ্টির মুলে রয়েছে কোষচক্রের সাথে জড়িত বেশ কিছু জিনের মিউটেশন, যার মধ্যে অনেক আলোচিত কয়েকটি জিন/প্রোটিন বর্ণিত হয়েছে এই প্রবন্ধে। স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায় তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতিও হয়েছে ইতোমধ্যে, যদিও সনাতনী ব্যবস্থায় সার্জারি, রেডিয়োথেরাপি, কেমোথেরাপি, অ্যান্টিবডি থেরাপি ও হরমোন থেরাপি (এস্ট্রোজেন/এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর-সম্পর্কিত) ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির সংমিশ্রণে বিশ্বব্যাপী এখনও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যদিও, এস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন-HER2 এই তিনটি হরমোন রিসেপ্টরের অভাব TN-ধরণের স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বিভিন্ন থেরাপির সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে। তবে, চিকিৎসকদের ধারণা স্তন ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। বাংলাদেশেও এই রোগের উন্নতমানের চিকিৎসা হচ্ছে। বর্তমানে, ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড রেডিয়োথেরাপি’ নামক একটি আধুনিক চিকিৎসা স্তন ক্যানসার নিরাময়ে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মাত্র এক সপ্তাহে এই থেরাপি শেষ করা সম্ভব। জানা যায়, এই পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সামান্য। বাংলাদেদেশের বিভিন্ন ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতেও হয়তো এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালেও এই আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের। নিঃসন্দেহে এই পদ্ধতিটি আশার আলো দেখাচ্ছে। সারা বিশ্বে অক্টোবর মাস ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা বা গোলাপী ফিতার মাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশও প্রয়োজন এই রোগটি সমন্ধে বিশেষকরে নারীদের আরও বেশি সচেতন হবার। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর একটি জীবনযাপন প্রক্রিয়া বেছে নেয়াটাই উত্তম।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক: সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

আণবিক জীববিজ্ঞানের আলোকে স্তন ক্যানসার বিশ্লেষণ

প্রকাশ: ১০:০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

ক্যানসার জটিল একটি রোগ। বিশ্বব্যাপী, স্তন ক্যানসার (Breast Cancer) মহিলাদের মধ্যে ক্যানসার-সম্পর্কিত মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এবং প্রতি বছরে প্রায় ১৪ লাখ নারী আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছেনা পুরুষরাও; তাদের আক্রান্তের সংখ্যা যদিও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বাংলাদেশেও নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রাধান্য অনেক বেশি। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যানসার রেজিস্ট্রি থেকে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের হার গত ১০ বছরে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬.৪ থেকে ৩০.১ শতাংশে।

হিস্টোপ্যাথলজিকাল বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্তন ক্যানসারকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর–পজিটিভ (ER+), HER2 রিসেপ্টর-পজিটিভ (HER2+) এবং ট্রিপল-নেগেটিভ (TN: ER, PR ও HER2 নেগেটিভ)। বিশ্বব্যাপী সমস্ত স্তন ক্যানসারের প্রায় ২০% হল TN ধরণের, অর্থাৎ এই ধরণটিতে এস্ট্রোজেন,  প্রোজেস্টেরন ও HER-2 রিসেপ্টরের অভাব রয়েছে। মানুষের স্তন ক্যানসার হওয়ার জন্য একাধিক কারণ রয়েছে: জিনগত, পরিবেশগত,  বিকিরণ (এক্স-রে, গামা রশ্মি, রেডন)জনিত, খাদ্যজনিত, রাসায়নিক দূষণ, দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান ইত্যাদি।

এছাড়া, সাম্প্রতিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দেখা গিয়েছে যে মুষ্টিমেয় কিছু ভাইরাস স্তন ক্যানসারের সাথেও জড়িত। এই ভাইরাসগুলি হল মাউস ম্যামারি টিউমার ভাইরাস (MMTV), বোভাইন লিউকেমিয়া ভাইরাস (রেট্রোভাইরাস), হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (ডিএনএ ভাইরাস) এবং ঈপ্সটিন-বার  ভাইরাস (ডিএনএ ভাইরাস)। MMTV-র মানব সংস্করণ হল হিউম্যান ম্যামারি টিউমার ভাইরাস (HMTV) বা হিউম্যান বিটা-রেট্রোভাইরাস (HBRV), যার মানুষের সাথে বসবাস প্রায় কয়েক হাজার বছরের। রেট্রোভাইরাসগুলোর একটি ইউনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ’ এনজাইমের সাহায্যে ভাইরাসগুলো তাদের আরএনএ জিনোম ডিএনএ অণুতে রূপান্তরিত হয়ে মানবজিনোমের সাথে মিশে যেতে পারে, এমনকি চিরকালের জন্য। এভাবেই, স্থায়ীভাবে মানব ডিএনএ মানচিত্রের তিন বিলিয়ন নিউক্লিওটাইডের মধ্যে ৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ভাইরাসের রূপান্তরিত-ডিএনএ, যা আমরা বহন করে চলেছি বংশপরম্পরায়। ওইসব বাহ্যিক ডিএনএ-ক্রমের মধ্যে লুকায়িত আছে ভাইরাসের নানান  অংকোজিন, যা স্তন ক্যানসারসহ বিভিন্ন ক্যানসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যি একটি ভয়াবহ চিত্র। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১০% স্তন ক্যানসার সরাসরি জিনগত  মিউটেশন বা পরিব্যক্তির কারণে হয়ে থাকলেও, বিজ্ঞানীদের নিকট এই মৌলিক বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সর্বাধিক। কারণ, পরিবেশগত যেসব ফ্যাক্টর স্তন ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত, বস্তুতঃ সেগুলো মানবজিনোমের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়েই তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই গুরুত্বের নিরিখে স্তন ক্যানসারের কারণ হিসেবে শুধুমাত্র জিনগত ব্যাপারটি নিয়েই আমার এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে।

দেহের যে-কোনো ধরণের ক্যানসারের মূলে রয়েছে কোষচক্রের সব সৃষ্টিছাড়া ঘটনাসমূহ। সেখানেই ক্যানসার উৎপত্তির রহস্য। মানুষের দেহে এপিথেলীয় বা আচ্ছাদনীয় কোষগুলোর (যেমন, ত্বকের বাইরেরতম স্তর) স্থায়িত্ব বেশ কম, তাই সেগুলো গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। তবে, দেহের বিশেষ কিছু কোষ, যেমন স্নায়ুকোষ বা নিউরন অথবা কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো অনন্তকাল অতিবাহিত করে কোষ চক্রের G0 বা বিশ্রামাবস্থায় (ছবি দেখুন)। তাদের আর বিভাজন হয় না। তাই, সেখানকার কোষগুলোর ক্ষয়প্রাপ্তিতে বা মৃত্যুতে তাদের নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবার সম্ভাবনা আর নেই। সাধারণত কোষ বিভাজনের জন্য একটি সূত্রপাতের প্রয়োজন- হতে পারে সেটি কোষের কোনো বাহ্যিক ঘটনা (যেমন আঘাত পাওয়া, পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি), কোষের অপমৃত্যু, উদ্দীপনা বা কোনো হরমোনের তাগাদা। একটি কোষ যখন মৃত্যুর কাছাকাছি আসে, তখন গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে পড়শী কোষগুলোকে তাগাদা দেয়, যেন তারা দ্রুততার সাথে কোষ বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। বলা বাহুল্য, একটি কোষচক্র সম্পন্ন করতে তো প্রায় ২৪ ঘণ্টা লেগেই যায় (অবশ্য এ তথ্যটি উদ্ধৃত হয়েছে সেল কালচার গবেষণা থেকে)। সৃষ্টি হয় নতুন কোষের, প্রতিস্থাপিত করে পুরোনোদের। কিন্তু কোষ বিভাজন যখন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত, তখনই সৃষ্টি হয় টিউমার পিন্ড ও ক্যানসারের। পুরুষ ও স্ত্রীর স্তনের কোষগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই, ক্যানসারের জিনগত কারণসমূহ বিস্তারিত বর্ণনার আগে কোষচক্র ও অ্যাপোপ্টোসিস সমন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

কোষ চক্র (Cell Cycle)

কোষ চক্র হল চার-পর্যায়ের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোষটি আকারে বৃদ্ধি পায় (G1 পর্যায়), তার ডিএনএ অনুলিপিত হয় (ডিএনএ সংশ্লেষণ বা S পর্যায়), বিভাজনের জন্য প্রস্তুতিকরণ (G2 পর্যায়) এবং অবশেষে বিভাজন (মাইটোসিস বা M পর্যায়)। G1, S ও G2 পর্যায়গুলো একত্রে ইন্টারফেজ হিসেবে ধরা হয়, যা কোষ বিভাজনের মধ্যবর্তী সময়টাকে বোঝায়। সাইক্লিন-নির্ভর প্রোটিন কাইনেজ (যেমন, Cdk4) একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম যা সাইক্লিন প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে কোষচক্রের অগ্রগতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। একটি কোষ যেসব উদ্দীপনা ও প্রতিরোধমূলক বার্তা পায় তার ভিত্তিতে কোষটি সিদ্ধান্ত নেয় যে এটি কোষচক্রে প্রবেশ করবে এবং বিভক্ত হবে কিনা। 

যে সমস্ত প্রোটিন কোষ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে তারা চারটি গ্রুপে শ্রেণীবদ্ধ- যেমন, গ্রোথ ফ্যাক্টর, গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর, সিগন্যাল ট্রান্সডিউসার এবং জিন-নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন, অর্থাৎ ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর। গ্রোথ ফ্যাক্টরের বাঁধনে একটি উদ্দীপনামূলক সংকেত গ্রোথ-রিসেপ্টরকে সাময়িকভাবে সক্রিয় করে তোলে, যা নির্দিষ্ট সংকেত সংবহনের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরগুলোকে সক্রিয় ও উজ্জীবিত করে। ফলে, নিউক্লিয়াসের মধ্যে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরগুলো প্রোটো-অঙ্কোজিন (যেমন Myc, Ras, Src, Fos, HER2)-সহ কোষ-বিভাজনে জড়িত জিনগুলোর প্রতিলিপন (ট্রান্সক্রিপশন) প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং  তাদের mRNA-গুলোর জেনেটিক কোড অনুযায়ী সংশ্লেষিত হয় প্রোটিন। সিডিকে (Cdk) সেসব প্রোটিনগুলোকে ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে সক্রিয় করে। প্রোটো-অঙ্কোজিন হল একটি স্বাভাবিক জিন যা মিউটেশন বা বর্ধিত অভিব্যক্তির কারণে পরিণত হতে পারে একটি অঙ্কোজিনে, যা ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রায় ৪০টির মত প্রোটো-অঙ্কোজিন অদ্যাবধি চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি প্রোটো-অঙ্কোজিনের মিউটেশন সরাসরি বিভিন্ন ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে। ERBB2 বা HER2-সহ বেশ কিছু প্রোটো-অঙ্কোজিন স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী।

কোষচক্রের প্রতিটি পর্যায় যাতে করে সঠিকভাবে অগ্রসর হয় তা নিশ্চিত করতে কোষগুলো বিশেষ কিছু প্রোটিন এবং চেকপয়েন্ট সিগন্যালিং সিস্টেম ব্যবহার করে (ছবি দেখুন)। G1-পর্ব এবং G2-পর্বের চেকপয়েন্টগুলো S-পর্বের আগে ও পরে ডিএনএ সংশ্লেষণের কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা মূল্যায়ন করা হয়। একইভাবে, আরও একটি চেকপয়েন্ট আছে M-দশায়, যা মাইটোসিসের সময় নিশ্চিত করে যে ক্রোমোজোমগুলো অ্যানাফেজ পর্যায়ে আলাদা হওয়ার আগে কোষের স্পিন্ডল ফাইবারগুলো মেটাফেজে সঠিকভাবে সারিবদ্ধ হয়েছে কিনা।

যদি কোনো স্তরে এই চেকপয়েন্টগুলোতে ডিএনএ-র ক্ষতি বা স্পিন্ডল গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তবে কোষটি আর অগ্রসর হয় না— ‘প্রোগ্রামড সেল-ডেথ’ বা ‘অ্যাপোপটোসিস’ (apoptosis) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোষটির অপমৃত্যু হয়। তবে, ওইসব চেকপয়েন্টগুলোতে জড়িত প্রোটিনসমূহ স্বয়ং মিউটেটেড বা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কোষচক্র হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত, কোষগুলো বারবার বিভাজিত হতে থাকে, অবশেষে রূপ নেয় ক্যানসারে। উদাহরণস্বরূপ, G2 চেকপয়েন্ট প্রধানত টিউমার প্রোটিন p53 দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ-গুলোকে মেরামত করে p53, অথবা উদ্দীপিত করে কোষের অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে। মিউটেশনের ফলে যদি p53 স্বয়ং অকার্যকর বা পরিবর্তিত হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ-সহ কোষগুলো কোষচক্রের মাধ্যমে অগ্রসর হতে থাকে, যা ক্যানসার বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।

অনুরূপভাবে, আরও একটি টিউমার-দমনকারী জিন BRCA (ব্রেস্ট ক্যানসার জিন)1 এর মিউটেশন বা ঘাটতি  S-ফেজ চেকপয়েন্ট, G2/M চেকপয়েন্ট, স্পিন্ডল চেকপয়েন্ট এবং সেন্ট্রোজোম ডুপ্লিকেশনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে, যা স্তনে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কোষচক্রের বিভিন্ন পর্যায়

অ্যাপোপ্টোসিস (Apoptosis)

দেহে অপ্রয়োজননীয় কোষগুলো জীবের জন্য হুমকিস্বরূপ, ফলে সেগুলো এক নিয়ন্ত্রিত কোষ-আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়, যা ‘পরিকল্পিত কোষ মৃত্যু’ বা অ্যাপোপ্টোসিস নামে পরিচিত। এই কোষপতন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজমীয় ডিএনএ টুকরো টুকরো হয়ে যায়, কোষটি মারা যায়।

অ্যাপোপ্টোসিসের কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি কোষ মারা যায়, যা প্রতিস্থাপিত হয় নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে। অ্যাপোপ্টোসিস একটি জিন-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। ডিএনএ যখন কোনো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা কোষচক্র চলাকালীন ডিএনএ সংশ্লেষণে বড়ো রকমের ক্ষতি দেখা দেয়, তখন সেই কোষটির নিজস্ব জিন বা প্রোটিন থেকে নিজেকে ধ্বংস করার জন্য একটি সংকেত পায়।

বিসিএল-২ (Bcl-2) প্রোটিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ও মাইটোকন্ড্রিয়ায় সৃষ্ট ‘সাইটোক্রোম সি’ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, পড়শী কোষ থেকে আগত সংকেতের কারণেও  অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা ঘটে। ভিটামিন সি-ও অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ার একটি উদ্দীপক। এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ক্যাস্পেজ পরিবারের এক সারি প্রোটিয়েজ উৎসেচক সক্রিয় হয়ে কোষের এই ধরণের মৃত্যু ঘটায়।

স্তন-টিউমার বৃদ্ধিতে অবারিত কোষ বিভাজনের সুযোগ পেতে HER2 (হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর-২)-নামক একটি প্রোটিন ‘সাইটোক্রোম সি অক্সিডেজ’-কে বাধা দিয়ে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে অবদমিত করতে দেখা গিয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়া বা অপর্যাপ্ত কোষপতন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

কোষের বেশ কিছু জিন কোষ চক্রের নিয়ন্ত্রণে বা কোষের বৃদ্ধিতে মূলত দায়ী। তাদের মিউটেশনের কারণেই কোষ-বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। এসব জিনগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: অঙ্কোজিন ও টিউমার-দমনকারী জিন।

অঙ্কোজিন (Oncogene)

অঙ্কোজিন বলতে এমন একটি জিন বা বংশাণুকে বোঝায়, যার ডিএনএ-তে মিউটেশনের কারণে ক্যানসার সৃষ্টির সম্ভাবনা রাখে। স্বাভাবিক অবস্থায় অঙ্কোজিনকে বলা হয় প্রাক- বা প্রোটো-অঙ্কোজিন, যা  নিয়মিত কোষ-বিভাজন, কোষ-বৃদ্ধি ও অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

দেহের বহু কোষের মৃত্যু অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ায় ঘটে।  কিন্তু ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে একটি অঙ্কোজিন অ্যাপোপটোটিক কোষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে ও তাদের ক্রমাগত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। কিন্তু, কার্সিনোজেন ও বিকিরণজনিত মিউটেশন বা বর্ধিত অভিব্যক্তির কারণে একটি প্রোটো-অঙ্কোজিন অঙ্কোজিনে রূপান্তরিত হতে পারে। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো অঙ্কোজিনকে মানবদেহের ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিউটেশন ছাড়াও জিন দ্বিগুণিকরন (জিনের অনুরূপ কপি তৈরি করা) ও ক্রোমোজোমীয় পরা-স্থানান্তর (chromosomal translocation) প্রোটো-অঙ্কোজিনকে অঙ্কোজিনে রূপান্তর করতে পারে।

HER2 গ্রোথ-রিসেপ্টর জিনের দ্বিগুণিকরণ এবং c-Myc জিনের অতিমাত্রায় প্রকাশ যথাক্রমে ৩০% ও ৮০% স্তন ক্যানসারের সাথে সম্পর্কিত। অধিকন্তু, কোষের Bcl2 (B-cell lymphoma 2) প্রোটো-অংকোজিন অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মিউটেশন স্তন ক্যানসারসহ বেশ কয়েকটি ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মানুষের স্তন ক্যানসার অনেকগুলো অঙ্কোজিন (ErbB2, PIK3CA) এবং টিউমার দমনকারী জিন (TP53, বিআরসিএ ১/২, RB1, PTEN) গুলোর জিনতাত্ত্বিক মিউটেশনের সাথে যুক্ত। কিছু অঙ্কোজিন তৈরি করে প্রোটিন-কাইনেজ এনজাইম (যেমন, RAF, ERK), যা ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে টিউমার-সাপ্রেশর-জিনদের অবদমিত করে। আগেই উল্লেখ করেছি স্তন ক্যানসার সৃষ্টিতে HER2 ও Myc উভয়ই অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, তাই এই দুটো অঙ্কোজিনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন মনে করছি।

c-Myc

Myc হলো প্রোটো-অনকোজিনের একটি পরিবার যা  ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর হিসেবে ও Max প্রোটিনের সাথে জুটি বেঁধে মানবজিনোমের প্রায় ১৫% জিনসমূহের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে সাইক্লিন, Cdk4 ও নিউক্লিওটাইড বিপাক সংশ্লিষ্ট জিনসমূহ। ওই জিনগুলোর প্রমোটর (promoter) অঞ্চলে নির্দিষ্ট একটি ক্রমের (CACGTG/ই-বক্স) সাথে যুক্ত হয় c-Myc/Max। Myc-পরিবারের তিনটি সদস্যের মধ্যে (c-myc, l-myc ও n-myc) স্তন-ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসার সৃষ্টিতে  c-myc জিনের ভূমিকা অনেক বেশি, কারণ স্তন-টিউমারে এই জিনটির অতিমাত্রায় প্রকাশ স্তন ক্যানসারের অন্যতম একটি কারণ। তাই, মানবজিনোমের ৮ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত c-Myc নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন। স্বাভাবিক অবস্থায় কোষীয় বিস্তার, পার্থক্য ও অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার সাথে c-Myc প্রোটিন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে, ত্রুটিপূর্ণ/মিউটেটেড c-Myc জিন বা এর অতিমাত্রায় প্রকাশ কোষচক্রকে করে অনিয়ন্ত্রিত। 

এছাড়া, আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। ডিএনএ অণুর ৩’ প্রান্তে ‘টেলোমেয়ার’ অঞ্চলটির সংশ্লেষণ কোষচক্র বা কোষ বিভাজন চলাকালীন ডিএনএ সংশ্লেষণের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ডিএনএ পলিমেরেজের অপারগতায়, এই কাজটি সম্পন্ন করে একটি মানব-TERT (টেলোমেরেজ রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ) এনজাইম।  বিস্ময়কর হল, hTERT জিনটি নিয়ন্ত্রিত হয় c-Myc দ্বারা, যার অতিমাত্রায় প্রকাশ টেলোমেরেজ এনজাইমটিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে- ফলে, কোষগুলোকে দেয় অমর্ত্যের বৈশিষ্ট্য, জন্ম দেয় ক্যানসারের। সে কারণেই, ক্যানসার-বিরোধী ওষুধ হিসেবে অনুমোদিত হয়েছে hTERT ভ্যাকসিন।

HER2

এটি একটি রিসেপ্টর প্রোটিন। এই রিসেপ্টরগুলি এপিথেলীয় কোষের বৃদ্ধি এবং পার্থক্য নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। এটি একটি প্রোটো-অঙ্কোজিন এবং ERBB পরিবারের একটি প্রোটিন। এই পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো HER2 রিসেপ্টর সরাসরি তার লাইগ্যান্ড বা উদ্দীপককে আবদ্ধ করে না। অথচ, এই পরিবারের চারটি সদস্যের যে-কোনো একটির সাথে জুটি বেঁধে HER2 নিজেকেই সক্রিয় করে তোলে। যখন HER2 প্রোটিনের ঘনত্ব বেশি থাকে, তখন HER2/HER2 একত্রে হলেও প্রোটিনটি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। HER2 অঙ্কোজিনের মিউটেশন বা অতিমাত্রায় অভিব্যক্তি আক্রমনাত্মক ধরনের স্তন ক্যানসারের বিকাশ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। HER2 জিনের মিউটেশন বা তার অতিমাত্রায় প্রকাশ (HER2-পজিটিভ) প্রায়  ২০-৩০% স্তন  ক্যানসারের কারণ। এছাড়াও, অন্যান্য এডিনোকার্সিসোমা, যেমন ডিম্বাশয়, এন্ডোমেট্রিয়াম, জরায়ুর পাশাপাশি ফুসফুস, খাদ্যনালী, গ্যাস্ট্রিক এবং মূত্রাশয় ক্যানসারেও HER2 রিসেপ্টরগুলির ভূমিকা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, HER2 রিসেপ্টরের জন্য কোন লাইগ্যান্ড  আদপে সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। দেখা গিয়েছে, HER2 পরিবারের দুটো প্রোটিন জুটি বেঁধে (ডাইমেরাইজেশন) রিসেপ্টরগুলো অটোফসফোরিলেশনের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরণের সংকেতপথের সূত্রপাত সৃষ্টি করে। HER2-উদ্দীপ্ত সক্রিয় সিগন্যালিং পথগুলোর মধ্যে রয়েছে: মাইটোজেন-অ্যাক্টিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ (MAPK), ফসফোইনোসিটাইড 3-কাইনেজ  (PI3K/Akt), ফসফোলাইপেজ সি γ, প্রোটিন কাইনেজ সি (PKC), সিগন্যাল ট্রান্সডুসার এবং ট্রান্সক্রিপশন-অ্যাক্টিভেটর (STAT)। সংক্ষেপে বলতে গেলে, HER2 বা ERBB পরিবারের  উদ্দীপনার মাধ্যমে কোষে এক বিশেষ ধরণের সংকেতের সঞ্চার হয়, যা কোষের বিস্তার, এনজিওজেনেসিস, কোষের গতিশীলতা ও মেটাস্ট্যাসিস প্রক্রিয়াগুলোকে উৎসাহিত করে এবং অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকেও প্রতিহত করে (যা আগেই উল্লেখ করেছি)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রোটিনটি স্তন ক্যানসার সনাক্তকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োমার্কার হয়ে উঠেছে। HER2 জিন ও প্রোটিনটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে প্রচুর এবং উঁচু মানের জার্নালে HER2-স্তনক্যানসার-সংক্রান্ত প্রকাশনার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে (pubmed.ncbi.nlm.nih.gov), যা ইঙ্গিত করে স্তন ক্যানসারে এই জিন বা প্রোটিনটির গুরুত্ব।

চিকিৎসা ব্যবস্থায়, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ট্রাস্টুজুমাব (Trastuzumab) HER2 এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। HER2 এর সাথে বাঁধনের ফলে ট্রাস্টুজুমাব p27 প্রোটিনের বৃদ্ধি ঘটে, যার মাধ্যমে কোষের বিস্তার হয় বাধাগ্রস্থ। p27 বা সাইক্লিন-নির্ভর কাইনেজ ইনহিবিটর 1B হল একটি প্রতিরোধক, যা সাইক্লিন E -Cdk 2 অথবা সাইক্লিন D -Cdk 4 কমপ্লেক্সের সাথে আবদ্ধ হয়ে বাধা দেয় G1 কোষ চক্রের অগ্রগতি। আরেকটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, পার্টুজুমাব (Pertuzumab), যা HER2/HER3 রিসেপ্টরগুলোর একত্রীকরণে বাধা দেয়৷ উপরন্তু, NeuVax (Galena Biopharma) হল একটি পেপটাইড-ভিত্তিক ইমিউনোথেরাপি, যা ইমিউন সিস্টেমের ‘টি কোষ’কে নির্দেশ দেয় HER2-উৎপাদনকারী ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে। এই ধরণের নেতিবাচক ইমিউন নিয়ন্ত্রণকে বাধা দিয়ে ক্যানসার থেরাপি আবিষ্কার করেছিলেন জেমস পি অ্যালিসন এবং তাসুকু হোনজো। জেমস অ্যালিসন প্রথম টি-কোষ অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর কমপ্লেক্স প্রোটিনকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারা নোবেলও পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে। 

টিউমার-দমনকারী জিন (Tumor suppressor gene)

টিউমার-দমনকারী জিন হল সেই-সব জিন যাদের কার্যকারিতা হারানোর ফলে কোষের ম্যালিগন্যান্সি বৃদ্ধি পায়। কোষে টিউমার-দমনকারী জিনের কাজ হচ্ছে মূলত DNA মেরামত, DNA-র সুরক্ষা, কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। স্তন ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে টিউমার-দমনকারী জিনগুলোর মধ্যে অনেক আলোচিত জিন হচ্ছে BRCA1 (বিআরসিএ ১) ও BRCA2 (বিআরসিএ ২) এবং p53। এছাড়াও, p27, PTEN ও কোষচক্র-চেকপয়েন্ট কাইনেজ (CHK2), রেটিনোব্লাটোমা Rb জিনগুলোর মিউটেশন স্তন ক্যানসারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। p53-কে জিনোম স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষার অভিভাবক বলা হয়।

BRCA জিন

বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ জিন দুটো যথাক্রমে মানুষের স্তন ক্যানসারে বিআরসিএ টাইপ ১ ও বিআরসিএ টাইপ ২ প্রোটিন তৈরি করে, যা নিখুঁতভাবে কোষচক্রের S-পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ডিএনএ দ্বিসূত্রক-ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করে। ডিএনএ মেরামতের জন্য CHK2, RAD50 ও RAD51 (ডিএনএ রিকম্বিনেজ), FANCD2 (Fanconi anemia group D2 protein) এবং ATM (Ataxia telengiectasia mutated) প্রোটিনগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। মোটের ওপর, স্বাভাবিক অবস্থায় বিআরসিএ নির্দেশনা কোষীয় ও  জিনোম স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিআরসিএ মিউটেশন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। যেমন, বিআরসিএ-১ জিনের দুটি চিহ্নিত মিউটেশন, 85delAG ও 5382insC, স্তন ক্যানসার সৃষ্টিতে মূলত দায়ী। এই মিউটেশনগুলোর উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর আগে।

তবে, বিআরসিএ জিন-দুটোর মিউটেশন অঞ্চল বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে এই সংক্রান্ত কোনো গবেষণা আছে কিনা আমার জানা নেই। বলা বাহুল্য, বিআরসিএ ১/২ জিন-দুটোর যেকোনো ক্ষতিকারক মিউটেশন বিআরসিএ ১/২ জিন বা তাদের প্রোটিনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, ফলে ডিএনএ-র ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করা সম্ভব হয় না। এই মিউটেশনগুলো স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্তন ক্যানসার ছাড়াও বিআরসিএ ১/২ জিন-মিউটেশন ডিম্বাশয় ও প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণও হতে পারে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ATM একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন/প্রোটিন। এই প্রোটিনটি একটি সেরিন/থ্রিওনিন কাইনেজ (এনজাইম), যা ডিএনএ মেরামতের সঙ্গে জড়িত প্রোটিন (p53, CHK2, বিআরসিএ1)দের ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে সক্রিয় করে। স্বয়ং এই জিনটির মিউটেশনের ফলে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা আরও ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।

বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ জিন দুটো যথাক্রমে মানুষের স্তন ক্যানসারে বিআরসিএ টাইপ ১ ও বিআরসিএ টাইপ ২ প্রোটিন তৈরি করে, যা নিখুঁতভাবে কোষচক্রের S-পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ডিএনএ দ্বিসূত্রক-ভাঙ্গনগুলোকে মেরামত করে।

জিন মিউটেশনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই, পরিবর্তিত  বিআরসিএ ১/২ জিন একটি কার্যকর প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয় না, ফলে কোষ বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। 

বিআরসিএ  ১/২ জিনগুলোর অতিরিক্ত প্রকাশ যেমন স্তন ক্যানসারের কারণ, তেমনি এদের ঘাটতিও স্তন ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। বিআরসিএ ১ জিনের মিউটেশন ছাড়া আরও একটি বড়ো কারণ হচ্ছে এই জিনটির প্রমোটর (promoter) অঞ্চলে অতিরিক্ত মিথিলেশন (CH3 গ্রুপের সংযোজন) হওয়ায় জিনগুলোর অভিব্যক্তি কমে যায়, ফলে তাদের প্রোটিনগুলোর প্রাপ্যতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। উপরন্তু, বিআরসিএ জিনের স্বাভাবিক প্রকাশের জন্য তাদের প্রমোটর অঞ্চলের একটি  নিউক্লিওটাইড ক্রম বা N-box (CACNAG) খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একটি ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর GABP (GA-Binding Protein) যুক্ত হয়। এই বক্সটিতে মিউটেশনের কারণেও জিএডিপি প্রোটিনটি যুক্ত হতে না পারায় বিআরসিএ জিনের প্রকাশ হ্রাস পায়। 

বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনা লক্ষ্য করেছেন, অর্থাৎ স্তনের টিউমারে MMTV রেট্রোভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এবং এপষ্টিন-বার ভাইরাস (EPV)গুলোর উপস্থিতি। তাদের বৃদ্ধির জন্যও যেহেতু স্তন কোষের জিএডিপি ব্যবহৃত, তাই স্বয়ং স্তন কোষগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এই প্রোটিনটির প্রাপ্যতাও প্রতিযোগিতার কারণে কমে আসে। স্তন ক্যানসারের টার্গেটেড থেরাপি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ কর্তৃক বিআরসিএ ১/২- মিউট্যান্ট কোষগুলিকে প্রতিহত করতে অনুমোদন পেলো ওলাপ্যারিব অ্যান্টিবডি। এছাড়া, স্তন ক্যানসার কোষের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল বলেও অনেকে মনে করেন।

টিউমার প্রোটিন TP53/p53

মানব ১৭ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত p53 একটি গুরুত্বপূর্ণ টিউমার-দমনকারী জিন, যার কোডকৃত প্রোটিন ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর হিসেবে ডিএনএ অণুর সাথে আবদ্ধ হয়ে p21 (WAF1)-সহ বিভিন্ন জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। p21 হল টিউমার দমনে একটি মধ্যস্থতাকারী প্রোটিন। p53 কে ‘জিনোমের অভিভাবক’ হিসেবে দেখা হয়, কারণ বিভিন্ন জিনের মিউটেশন প্রতিরোধ ক’রে জিনোম স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে এর  ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম। 

কোষ চক্র অগ্রগতিতে জড়িত এমন সব জিনের মিউটেশনকে রোধ ক’রে দেহে বিভিন্ন ক্যানসার গঠনে বাধা দেয়। অ্যাপোপটোসিস ও জিনোম স্থিতিশীলতার মাধ্যমে p53 কোষ চক্রের নিয়ন্ত্রণ বা অগ্রগতিতে মূল ভূমিকা পালন করে। কোষ চক্র চলাকালীন ডিএনএ ভাঙ্গন দেখা দিলে সক্রিয় হয়ে ওঠে p53 প্রোটিন বেশ কিছু কাইনেজ (MAPK, CHK1, CHK2) এনজাইম দ্বারা ফসফোরিলেশনের মাধ্যমে। ফলশ্রুতিতে, p53 প্রোটিনের মাধ্যমে সক্রিয় হয় p21 প্রোটিন ও ডিএনএ মেরামতকারী প্রোটিনসমূহ। ডিএনএ মেরামত না হওয়া পর্যন্ত p21 প্রোটিন G1/S চেকপয়েন্টে সাইক্লিন-সিডিকে (CDK)-কমপ্লেক্সকে প্রতিহত ক’রে কোষ চক্রকে ধরে রাখে। মেরামতে ব্যর্থ হলে p53 কোষটিকে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষটির মৃত্যু ঘটায়।

এছাড়াও, p53 নিয়ন্ত্রণ করে VEGF (vascular endothelial growth factor)-নির্ভর এনজিওজেনেসিস। তবে, দুৰ্ভাগ্যজনকবশতঃ স্বয়ং p53 জিনটির মিউটেশনের ফলে পরিবর্তিত ও অকার্যকর p53 প্রোটিন ক্যানসার দমন করার ক্ষমতা হারায়, কোষগুলো হারায় অ্যাপোপটোসিসের বৈশিষ্ট্য ও ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ-সহ কোষ বিভাজন হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত। সৃষ্টি হয় ক্যানসারের। ER+ ও HER+ স্তনের ক্যানসারকোষগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশে দেখা গিয়েছে মিউট্যান্ট-p53 (mtp53) জিনের উপস্থিতি, যেখানে TN-নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের কোষগুলিতে এই মিউট্যান্ট জিনের উপস্থিতি প্রায় ৮০ শতাংশ, যা ইঙ্গিত করে p53 প্রোটিনের গুরুত্ব। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে, মিউটেটেড p53 জিন/প্রোটিন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি থেরাপিউটিক লক্ষ্য। বিজ্ঞানীদের কিছু রাসায়নিক যৌগ উদ্ভাবনের মাধ্যমে mtp53 প্রোটিনকে তার কার্যকরী সাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, ফলে তার দমনকারী কার্যকলাপ পুনরুদ্ধার হয়েছে, সাথে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে ক্যানসার-বৃদ্ধির হ্রাস।

উপসংহার

বিশ্বজুড়েই স্তন ক্যানসার নারীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে বিবেচ্য। স্তন ক্যানসার সৃষ্টির মুলে রয়েছে কোষচক্রের সাথে জড়িত বেশ কিছু জিনের মিউটেশন, যার মধ্যে অনেক আলোচিত কয়েকটি জিন/প্রোটিন বর্ণিত হয়েছে এই প্রবন্ধে। স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায় তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতিও হয়েছে ইতোমধ্যে, যদিও সনাতনী ব্যবস্থায় সার্জারি, রেডিয়োথেরাপি, কেমোথেরাপি, অ্যান্টিবডি থেরাপি ও হরমোন থেরাপি (এস্ট্রোজেন/এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর-সম্পর্কিত) ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির সংমিশ্রণে বিশ্বব্যাপী এখনও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যদিও, এস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন-HER2 এই তিনটি হরমোন রিসেপ্টরের অভাব TN-ধরণের স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বিভিন্ন থেরাপির সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে। তবে, চিকিৎসকদের ধারণা স্তন ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। বাংলাদেশেও এই রোগের উন্নতমানের চিকিৎসা হচ্ছে। বর্তমানে, ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড রেডিয়োথেরাপি’ নামক একটি আধুনিক চিকিৎসা স্তন ক্যানসার নিরাময়ে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মাত্র এক সপ্তাহে এই থেরাপি শেষ করা সম্ভব। জানা যায়, এই পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সামান্য। বাংলাদেদেশের বিভিন্ন ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতেও হয়তো এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালেও এই আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের। নিঃসন্দেহে এই পদ্ধতিটি আশার আলো দেখাচ্ছে। সারা বিশ্বে অক্টোবর মাস ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা বা গোলাপী ফিতার মাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশও প্রয়োজন এই রোগটি সমন্ধে বিশেষকরে নারীদের আরও বেশি সচেতন হবার। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর একটি জীবনযাপন প্রক্রিয়া বেছে নেয়াটাই উত্তম।