০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

প্রথমবারের মতো মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক কণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৩:৪৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে

মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন | প্রতীকী চিত্র

মায়ের বুকের দুধে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক (অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) শনাক্ত করেছেন ইতালির বিজ্ঞানীরা। এতে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে তারা মনে করেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক জনিত ঝুঁকির তুলনায় শিশুর জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা বেশি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

সম্প্রতি পলিমারস সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। মায়ের বুকের দুধে যে সব মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে-পলিথিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপিলিন। ২০২০ সালে ইতালি বিজ্ঞানীদের এ দলটিই মানুষের গর্ভফুলে প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেছিলেন। মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো যে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা। এগুলোর দৈর্ঘ্য ৫ মিলিমিটারেরও কম। গবেষণার অংশ হিসেবে ইতালিতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৩৪ জন মায়ের বুকের দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সন্তান জন্মদানের এক সপ্তাহ পরই মায়েরা নমুনা দিয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ মায়ের দুধের নমুনার মধ্যেই মাইক্রোস্কপিক প্লাস্টিক কণার অস্তিত্ব আছে। গবেষকেরা বলেছেন, রাসায়নিক দূষণের কারণে নবজাতকরা ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় মানব কোষ, পরীক্ষাগারে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত প্রাণী এবং সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে প্লাস্টিক কণার বিষাক্ত প্রভাব পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে জীবিত মানুষের দেহের ওপর এর প্রভাব এখনও অজানা। আর নতুন গবেষণাটির মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা মাইক্রোপ্লাস্টিক জনিত ঝুঁকির বিষয়টি এবার সামনে নিয়ে এসেছেন। গবেষণায় অংশ নেয়া মায়েদের খাবারের ধরন, প্লাস্টিকের মোড়কজাত পানীয় পান ও সামুদ্রিক খাবার গ্রহণ, প্লাস্টিকের মোড়কজাত প্রসাধনীর ব্যবহারসংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে বুকের দুধে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির সঙ্গে এগুলোর কোনো ধরনের সংযোগ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মানুষকে অনিবার্যভাবেই পরিবেশজুড়ে বিদ্যমান প্লাস্টিক কণার সংস্পর্শে আসতে হয়। ইতালির পলিটেকনিকা দেল মারচে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভ্যালেন্তিনা নোতারস্তেফানো বলেন, বুকের দুধে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নবজাতকদের জন্য আমাদের উদ্বেগ বেড়েছে। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় ও স্তন্য পানের সময়ে কীভাবে এগুলোর সংস্পর্শ কমানো যায়, তা বের করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভ্যালেন্তিনা নোতারস্তেফানো আরও বলেন, এ কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে প্লাস্টিক কণার অপকারিতার চেয়ে সন্তানকে স্তন্য পান করানোর উপকারিতা অনেক বেশি। আমাদের গবেষণাগুলোর মানে এ নয় যে, শিশুদের বুকের দুধ দেয়া কমিয়ে দিতে হবে। বরং দূষণ কমাতে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের চাপ বাড়াতে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্লাস্টিকজাত খাবার ও পানীয়, প্লাস্টিকে থাকা প্রসাধনী ও টুথপেস্ট এবং সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিজ্ঞানী।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

প্রথমবারের মতো মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক কণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ: ০৩:৪৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২

মায়ের বুকের দুধে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক (অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) শনাক্ত করেছেন ইতালির বিজ্ঞানীরা। এতে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে তারা মনে করেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক জনিত ঝুঁকির তুলনায় শিশুর জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা বেশি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

সম্প্রতি পলিমারস সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। মায়ের বুকের দুধে যে সব মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে-পলিথিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপিলিন। ২০২০ সালে ইতালি বিজ্ঞানীদের এ দলটিই মানুষের গর্ভফুলে প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেছিলেন। মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো যে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা। এগুলোর দৈর্ঘ্য ৫ মিলিমিটারেরও কম। গবেষণার অংশ হিসেবে ইতালিতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৩৪ জন মায়ের বুকের দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সন্তান জন্মদানের এক সপ্তাহ পরই মায়েরা নমুনা দিয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ মায়ের দুধের নমুনার মধ্যেই মাইক্রোস্কপিক প্লাস্টিক কণার অস্তিত্ব আছে। গবেষকেরা বলেছেন, রাসায়নিক দূষণের কারণে নবজাতকরা ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় মানব কোষ, পরীক্ষাগারে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত প্রাণী এবং সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে প্লাস্টিক কণার বিষাক্ত প্রভাব পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে জীবিত মানুষের দেহের ওপর এর প্রভাব এখনও অজানা। আর নতুন গবেষণাটির মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা মাইক্রোপ্লাস্টিক জনিত ঝুঁকির বিষয়টি এবার সামনে নিয়ে এসেছেন। গবেষণায় অংশ নেয়া মায়েদের খাবারের ধরন, প্লাস্টিকের মোড়কজাত পানীয় পান ও সামুদ্রিক খাবার গ্রহণ, প্লাস্টিকের মোড়কজাত প্রসাধনীর ব্যবহারসংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে বুকের দুধে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির সঙ্গে এগুলোর কোনো ধরনের সংযোগ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মানুষকে অনিবার্যভাবেই পরিবেশজুড়ে বিদ্যমান প্লাস্টিক কণার সংস্পর্শে আসতে হয়। ইতালির পলিটেকনিকা দেল মারচে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভ্যালেন্তিনা নোতারস্তেফানো বলেন, বুকের দুধে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নবজাতকদের জন্য আমাদের উদ্বেগ বেড়েছে। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় ও স্তন্য পানের সময়ে কীভাবে এগুলোর সংস্পর্শ কমানো যায়, তা বের করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভ্যালেন্তিনা নোতারস্তেফানো আরও বলেন, এ কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে প্লাস্টিক কণার অপকারিতার চেয়ে সন্তানকে স্তন্য পান করানোর উপকারিতা অনেক বেশি। আমাদের গবেষণাগুলোর মানে এ নয় যে, শিশুদের বুকের দুধ দেয়া কমিয়ে দিতে হবে। বরং দূষণ কমাতে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের চাপ বাড়াতে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্লাস্টিকজাত খাবার ও পানীয়, প্লাস্টিকে থাকা প্রসাধনী ও টুথপেস্ট এবং সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিজ্ঞানী।