০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

লাদাখের টাইগার হিল এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৬:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২
  • / ৯৫৭ বার পড়া হয়েছে

টাইগার হিল ও দ্রাস নদী, লাদাখ, ভারত

টাইগার হিল, লাদাখ

টাইগার হিল (The Tiger Hill) হলো ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের দ্রাস-কার্গিল (Drass-Kargil) অঞ্চলের একটি পর্বত। টাইগার হিলের অপর নাম গাংজ লা; এটি পয়েন্ট ৫০৬২ (Point 5062) নামেও পরিচিত। লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি হলো টাইগার হিল। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় পর্বতটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং-এ একই নাম অর্থাৎ টাইগার হিল নামে আরেকটি পর্বত রয়েছে। দার্জিলিং-এর টাইগার হিল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

কার্গিল টাইগার হিলের কৌশলগত গুরুত্ব

টাইগার হিল ভারতের লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হওয়ায়, এর উপর থেকে ১ডি ন্যাশনাল হাইওয়েতে নজর রাখা যায়। এই হাইওয়ে শ্রীনগরকে কার্গিলের সাথে যুক্ত করেছে এবং এটি কার্গিল সেক্টরের প্রধান পথ। টাইগার হিলের চূড়ায় অবস্থানরত যে-কোনো শত্রু এই অঞ্চলের প্রধান ভারতীয় ইউনিট ৫৬ ব্রিগেডের সদর দফতরের উপর প্রত্যক্ষ নজর রাখতে পারত। এছাড়াও শত্রুপক্ষ জাতীয় হাইওয়ের দুইদিকের ২৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আর্টিলারি ফায়ারও চালাতে পারত। যার ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ পথে ভারতীয় সৈন্যদের চলাচল এবং সরবরাহে বাধা ছিল। এছাড়াও টাইগার হিলের চূড়ার আশেপাশেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি পয়েন্ট ছিল।

টাইগার হিল যুদ্ধ ১৯৯৯

ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কার্গিল যুদ্ধ। দেশের সেনার শৌর্যের গাথা লিখেছে এই রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। সেই অধ্যায়েরই একটি প্রাসঙ্গিক দিক টাইগার হিল দখল। এই টাইগার হিল জম্মু ও কাশ্মীরের দ্রাস এলাকার একচি পয়েন্ট। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় এখান দিয়েও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে পাকিস্তান।

১৯৯৯ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং তাঁর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে স্থায়ী সমাধান বের করে আনার জন্য পাকিস্তানের লাহোর সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তারপরেই পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে  অনুপ্রবেশ করে।

যেহেতু পাকিস্তানের সৈন্যরা ভারতে অনুপ্রবেশ শুরু করেছিল তাই অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কারণে ভারতের জন্যে টাইগার হিলের দখল নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সেই চূড়াগুলি পুনরায় দখল করা। এই লক্ষ্যটি সামনে রেখেই ভারতীয় সেনারা প্রথমে দ্রাসের টাইগার হিল এবং টোলিং কমপ্লেক্সকে টার্গেট করে এবং পরে বাতালিক-তুরটক সাব-সেক্টর, আক্রমণ করে যা সিয়াচেন হিমবাহে যাতায়াত সহজ করেছিল।

আচমকা  ভারতের টাইগার হিল পুনরায় দখল  এবং একসাথে তিন দিক থেকে আক্রমণে ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ভারতের ১৮ জন গ্রেনেডিয়ার, ২ জন নাগা এবং ৮ জন শিখ সেনা পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য ১০০০ ফুট উচ্চতার খাড়া টাইগার হিলের চূড়ায় চড়াও হয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এই আক্রমণের আকস্মিকতায় বাকরূদ্ধ হয়ে যায় পাকিস্তান। ১৮ জন গ্রেনেডিয়ার টানা বারো ঘণ্টা ধরে দড়ি বেঁধে ১৬,৭০০ ফুট উঁচু খাঁড়া পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আক্রমণ করেন।

জুলাই ৩, ১৯৯৯ তারিখ শুরু হওয়া যুদ্ধ জুলাই ৮, ১৯৯৯ শেষ হয় ভারতের জয় লাভের মধ্য দিয়ে। সুতরাং, টাইগার হিলের দখল ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয় ভারত যা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের আরেকটি সহজ অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জয়।

সূত্র: ভারতের কিছু ওয়েবসাইট

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

লাদাখের টাইগার হিল এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ

প্রকাশ: ০৬:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

টাইগার হিল, লাদাখ

টাইগার হিল (The Tiger Hill) হলো ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের দ্রাস-কার্গিল (Drass-Kargil) অঞ্চলের একটি পর্বত। টাইগার হিলের অপর নাম গাংজ লা; এটি পয়েন্ট ৫০৬২ (Point 5062) নামেও পরিচিত। লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি হলো টাইগার হিল। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় পর্বতটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং-এ একই নাম অর্থাৎ টাইগার হিল নামে আরেকটি পর্বত রয়েছে। দার্জিলিং-এর টাইগার হিল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

কার্গিল টাইগার হিলের কৌশলগত গুরুত্ব

টাইগার হিল ভারতের লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হওয়ায়, এর উপর থেকে ১ডি ন্যাশনাল হাইওয়েতে নজর রাখা যায়। এই হাইওয়ে শ্রীনগরকে কার্গিলের সাথে যুক্ত করেছে এবং এটি কার্গিল সেক্টরের প্রধান পথ। টাইগার হিলের চূড়ায় অবস্থানরত যে-কোনো শত্রু এই অঞ্চলের প্রধান ভারতীয় ইউনিট ৫৬ ব্রিগেডের সদর দফতরের উপর প্রত্যক্ষ নজর রাখতে পারত। এছাড়াও শত্রুপক্ষ জাতীয় হাইওয়ের দুইদিকের ২৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আর্টিলারি ফায়ারও চালাতে পারত। যার ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ পথে ভারতীয় সৈন্যদের চলাচল এবং সরবরাহে বাধা ছিল। এছাড়াও টাইগার হিলের চূড়ার আশেপাশেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি পয়েন্ট ছিল।

টাইগার হিল যুদ্ধ ১৯৯৯

ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কার্গিল যুদ্ধ। দেশের সেনার শৌর্যের গাথা লিখেছে এই রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। সেই অধ্যায়েরই একটি প্রাসঙ্গিক দিক টাইগার হিল দখল। এই টাইগার হিল জম্মু ও কাশ্মীরের দ্রাস এলাকার একচি পয়েন্ট। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় এখান দিয়েও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে পাকিস্তান।

১৯৯৯ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং তাঁর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে স্থায়ী সমাধান বের করে আনার জন্য পাকিস্তানের লাহোর সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তারপরেই পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে  অনুপ্রবেশ করে।

যেহেতু পাকিস্তানের সৈন্যরা ভারতে অনুপ্রবেশ শুরু করেছিল তাই অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কারণে ভারতের জন্যে টাইগার হিলের দখল নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সেই চূড়াগুলি পুনরায় দখল করা। এই লক্ষ্যটি সামনে রেখেই ভারতীয় সেনারা প্রথমে দ্রাসের টাইগার হিল এবং টোলিং কমপ্লেক্সকে টার্গেট করে এবং পরে বাতালিক-তুরটক সাব-সেক্টর, আক্রমণ করে যা সিয়াচেন হিমবাহে যাতায়াত সহজ করেছিল।

আচমকা  ভারতের টাইগার হিল পুনরায় দখল  এবং একসাথে তিন দিক থেকে আক্রমণে ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ভারতের ১৮ জন গ্রেনেডিয়ার, ২ জন নাগা এবং ৮ জন শিখ সেনা পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য ১০০০ ফুট উচ্চতার খাড়া টাইগার হিলের চূড়ায় চড়াও হয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এই আক্রমণের আকস্মিকতায় বাকরূদ্ধ হয়ে যায় পাকিস্তান। ১৮ জন গ্রেনেডিয়ার টানা বারো ঘণ্টা ধরে দড়ি বেঁধে ১৬,৭০০ ফুট উঁচু খাঁড়া পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আক্রমণ করেন।

জুলাই ৩, ১৯৯৯ তারিখ শুরু হওয়া যুদ্ধ জুলাই ৮, ১৯৯৯ শেষ হয় ভারতের জয় লাভের মধ্য দিয়ে। সুতরাং, টাইগার হিলের দখল ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয় ভারত যা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের আরেকটি সহজ অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জয়।

সূত্র: ভারতের কিছু ওয়েবসাইট