০১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ৯ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

লেখালেখি করে অনলাইনে আয় করা যায় কীভাবে?

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৯:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • / ১১২১ বার পড়া হয়েছে

লেখালেখি করে অনলাইনে আয় করা যায় কীভাবে? | Photo: Unsplash


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

লেখালেখি করে অনলাইনে আয় করুন ভারত, বাংলাদেশ বা যে-কোনো দেশ থেকে আপনি কি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন বা সময় পেলেই নিজের ফেইসবুক টাইমলাইনে বিভিন্ন ধরনের লেখা শেয়ার করেন, যেগুলোর মাধ্যমে অনেকেরই উপকার হয়ে থাকে? আপনার আইডিয়া এবং চিন্তাগুলি অন্যদের সাথে শেয়ার করে নিতে ভালোবাসেন তো?

আপনি চাইলেই এই লেখালেখির মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন খুব সহজেই। অনলাইনে লেখালেখি করে আয়ের সুযোগ রয়েছে অনেক। যেমন— আপনি চাইলে ব্লগ, নিবন্ধ, পণ্যের বিবরণ, পর্যালোচনা ইত্যাদি লিখতে পারেন।

কিন্তু কোথায় বা কিভাবে শুরু করবেন জানেন না?

বিশেষ কিছু জানার দরকার নেই। নিচে আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অপেক্ষা করছে, যার মাধ্যমে অল্পতেইন আপনি অনলাইন থেকে লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন।

আমি ধরে নিচ্ছি আপনি লেখালেখি এবং লেখালেখি করে অনলাইনে আয় সম্পর্কে খুবই অল্প জানেন। তবে নিচের লেখাটি পড়ে একবার শুরু করতে পারলেই সহজেই বুঝে যাবেন, আপনার সত্যিকার অর্থে কী করা উচিৎ। 

অনলাইনে লেখালেখি করে আয় করতে হলে কী কী লাগবে?

  • একটি কম্পিউটার (ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ) (শুরুতে লাগবে, পরে এটি ব্যবহার করতে না চাইলেও পারবেন)
  • একটি স্মার্টফোন (৪ জিবি র‍্যামের বেশি হলে ভালো)
  • আপনার দক্ষতা
  • আপনার ধৈর্য্য
  • অনুসন্ধিৎসু মন

কী লিখলে অনলাইনে আয় করা যায়?

আপনি যে-কোনো কিছু লিখেই আয় করতে পারবেন। তবে আপনি শুরু করবেন কোন ধরনের টপিক দিয়ে?

আপনি যে বিষয়ে সবচেয়ে দক্ষ, সে বিষয়ে লেখা শুরু করুন।

গল্প-উপন্যাস-বা ফিকশন লেখা বাদ দিন, তবে বিখ্যাত লেখকদের বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ করতে পারেন যদি আপনার সাহিত্যে আগ্রহ থাকে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— আপনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের বিষয় নিয়ে গুগল, বিং বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজছেন বা খুঁজেছেন সেগুলো সম্পর্কে নিজেই একটু কষ্ট করে ডেটা সংগ্রহ করে লিখতে পারেন।

আপনি যদি প্রযুক্তি (Technology), অর্থ (Money), আইন (Law), স্বাস্থ্য (Health) নিয়ে লিখতে পারেন তাহলে আপনার আয়ের পরিমাণ বেশি হবে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা (Education) নিয়েও লিখতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন হবে কারণ আয় কম হবে।

একটি ভালো আর্টিকেল বা নিবন্ধ লিখতে কীভাবে লেখা যায়?

ভালোর শেষ নেই। আপনার কাছে যেটি ভালো, সেটি আমার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। আপনার যেই লেখাটি বেশিরভাগ লোকের কাছে ভালো লাগবে, সেটি আপনার কাছে মূল্যহীন হতে পারে। সুতরাং, এই ভালো মন্দ নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই আপাতত। তবে যে বিষয়গুলো নিয়ে আপনার ভাবা বাধ্যতামূলক সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—

  • যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে ভালো করে জানুন, ভাসাভাসা জ্ঞান থাকা চলবে না।
  • ভালো মানের একটি টাইটেল বা শিরোনাম পছন্দ করুন, যাতে আপনার পুরো আর্টিকেল সম্পর্কে সবাই ধারণা পায়। এ ক্ষেত্রে আপনার সাহিত্যিক ভাবনাকে পরিহার করে; বাস্তবিক দিক থেকে ভাবুন; ভাবুন এই লেখাটি খুঁজে পেতে চাইলে আপনি কী লিখে খুঁজতেন। এটাই কী-ওয়ার্ড (keyword)।
  • সহজ করে লিখুন, যাতে যে-কেউ আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারে।
  • জটিল বাক্য লেখা থেকে যতটা দূরে থাকা যায় তত ভালো, তবে প্রয়োজনে অবশ্যই লিখবেন
  • আপনার টপিক বা বিষয়ের নাম লেখার মধ্যে বেশ কয়েকবার আনার চেষ্টা করুন। যেমন— আমার এই আর্টিকেলে বারবার উল্লেখ করেছি ‘লেখালেখি করে অনলাইনে আয়’। তবে অবশ্যই সামঞ্জস্য রেখেই কাজটি করতে হবে, তা না হলে পাঠক বিরক্ত হবে।
  • আপনি নিশ্চয়ই ইন্টারনেটে বা বইয়ে অনেক কিছুই পড়েছেন, সেখানে স্টাইলে ও ভাষার ক্ষেত্রে যা যা ভালো লেগেছে তা তা গ্রহণ করুন, যা ভালো লাগেনি তা বর্জন করুন।
  • সাব-হেডিং দিয়ে লিখুন। ঠিক যেভাবে আপনি ছোটোবেলায় ‘আমাদের বিদ্যালয়’, ‘বর্ষাকাল’, ‘মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ইত্যাদি রচনা লিখেছেন। বাকিটা ধীরেধীরে বুঝে যাবেন।
  • উপযুক্ত ছবি যুক্ত করুন।
  • উপাত্ত বা তথ্য কোন কোন জায়গা থেকে নিয়েছেন তা লেখার শেষে উল্লেখ করে দিন। আপনি চাইলে মূল লেখার মধ্যেও বলে দিতে পারেন। রেফারেন্স দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
  • লেখা শেষে বারবার চেক করুন। তবে চেক করার আগে অবশ্যই বিরতি নিন, এই বিরিতির সময় অন্য কাজ করুন।
  • ইংরেজিতে লিখুন, এতে অনলাইনে আয় ৮/১০ গুণ বেশি হবে। বাংলায় লিখলে বিরক্ত হবেন কারণ এতে আয় খুবই কম।

‘লিখলাম, কিন্তু আয় করব কীভাবে?’

এবার আসা যাক আসল পয়েন্টে। আপনার মুল্যবান লেখাটি কোথায় দিবে না কাকে দিবেন যারা আপনাকে টাকা দেবে? অনেক এজেন্সি আছে, প্ল্যাটফর্ম আছে যারা অন্যকে দিয়ে কোনো কিছু লিখিয়ে নেয়, বিনিময়ে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। কিন্তু আপনি তো জানেন না যে, কোথা থেকে বা কার থেকে বা কীভাবে আয় করা যায়। এখন করণীয় কী?

আপনার কাছে কি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হবে? পকেট খরচের জন্য বাবার থেকে বা মায়ের থেকে নেওয়া টাকা থেকে কিছু টাকাও বাঁচাতে পারেননি এখন পর্যন্ত? যদি আপনার কাছে এই পরিমাণের টাকা থাকে তাহলে এটাই আপনার পূঁজি।

এখন এই ৮০০ বা ৯০০ টাকা দিয়ে কী করবেন?

না, আমি আপনার কাছে কোনো অর্থ চাই না। আপনাকে যা করতে হবে তা নিচে থেকে দয়া করে পড়ে নিন—

একটি ডোমেইন কিনুন

স্থানীয় কোনো প্রোভাইডার থেকে একটি ডোমেইন কিনুন (.com হলে ভালো হয়)। ডোমেইন কেনার জন্য আপনি বিদেশের কোম্পানির কাছেও যেতে পারেন। তবে আপনার তো ডুয়্যাল কারেন্সি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই, তাই আমার পরামর্শ হলো— আপনি এই মুহূর্তে যেই দেশে আছেন সেই দেশের কোম্পানি থেকে কিনুন।

বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ডোমেইন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হলো—

  • হোস্টিং বাংলাদেশ (Hosting Bangladesh)
  • ওয়েবহোস্ট বাংলাদেশ (WebhostBD)
  • ভোল্টা হোস্ট বিডি (VoltahostBD)

(বাংলাদেশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমার কাজ হয়েছে তাই জানি, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। আপনি এদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে কল করবেন। আপনি প্রশ্ন করলে তারা আপনাকে বলে দিবে কী করতে হবে।)

ডোমেইন কিলনাম, এরপর কী করতে হবে?

চলে যান— https://www.blogger.com অ্যাড্রেসে।

এখান থেকে একটি ব্লগ তৈরি করুন।

কীভাবে ব্লগার থেকে ব্লগ তৈরি করতে হয় তা না জানলে ইউটিউবে খুঁজুন। প্রচুর ভিডিয়ো আছে।

ইউটিউবেত সার্চ বারে লিখুন ”How to create a blog on blogger’ অথবা ‘create blogspot’; এরকম কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেই এসে যাবে।

ব্লগ ক্রিয়েট হবার ওখানে আপনার ডোমেইন সেট করে দিন।

এর জন্য ইউটিউবে খুঁজুন, ‘How to set a custom domain on blogger’। বাংলা, ইংরেজি বা অন্য যে-কোনো ভাষায় এই ভিডিয়ো আছে।

(বি. দ্র.: আপনি যদি ডোমেইন কিনতে না চান তাহলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে কাস্টম ডোমেইন থাকার মানে হলো আপনি আপনার কাজে সিরিয়াস এবং আপনার পাঠকের কাছে একটি আস্থার মধ্যে থাকা। তাছাড়া নিজের একটি ওয়েব অ্যাড্রেস থাকার মধ্যেও একটি বিশেষ ভাব আছে।)

ব্লগ পোস্টিং

আপনি যে সকল লেখাগুলো লিখেছেন সেই লেখাগুলো ধীরেধীরে পোস্ট করুন সেখানে। কীভাবে পোস্ট করবেন তা ইউটিউবে দেখে নিতে পারে। খুঁজবেন ”how to post on blogger” অথবা “how to post on blogspot”। অবশ্য ” blogspot tutorial” লিখে সার্চ করলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানার বা বোঝার উপযোগী ভিডিয়ো পাবেন।

ব্লগের জন্য কপিরাইট ফ্রি ছবি কোথায় পাবেন?

আপনি নিজেই ছবি তুলতে পারেন বা Photoshop, Illustrator, PixelLab ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আর্ট করতে পারেন।

তবে সহজেই আপনি দারুণ সব ছবি পেয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে।

যে সকল ওয়েবসাইট থেকে আপনি ফ্রিতে ছবি নিবেন সেগুলো হলো—

এই তিন ওয়েবসাইট থেকে ছবি নিলে ক্রেডিট না দিলেও পারবেন। এছাড়াও আরও কিছু ওয়েবসাইট থেকে ছবি নিতে পারেন, সেগুলো ফ্রি হলেও ক্রেডিট দিতে হবে। তবে ছবি বা যে-কোনো কন্টেন্ট যেখান থেকেই নেন না কেন, তার ক্রেডিট দেওয়া এক ধরনের ভদ্রতা ও সম্মান দেখনো।

গুগল অ্যাডসেন্স (Google Adsense)

ব্লগে পোস্ট করার কিছু দিনের মাথায় আপনি অ্যাডসেন্স (Adsense)-এর অ্যাপ্রুভালের জন্য আবেদন করবেন। অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন

কত দিনের মাথায় অ্যাডসেন্স আবেদন করা উচিৎ?

এর ঠিক নেই। আপনি যখন খুশি তখনই অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভালের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আপনার ব্লগ/ওয়েবসাইট ভালো ভাবে সাজানোর আগে আবেদন করবেন না।

মোটামুটিভাবে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারেন।

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল দেয় কতদিনে?

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল কেউ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেও পেয়েছে আবার কেউ ১ দিন, ২ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিনেও পেয়েছেন। কেউ আবার ৩ মাস পরেও পেয়েছেন। কেউ কেউ কখনোই পাননি।

যা কিছু করা যাবে না

লেখালেখি করে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে চাইলে শুরুতেই যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে তা হলো— অন্যকে কপি করা যাবে না। অন্যের লেখা কপি করলে আপনার ব্লগও হারিয়ে ফেলতে পারেন।

তবে আপনি চাইলে রেফারেন্স দিয়ে (হাইপারলিংক দিয়ে) অল্প কিছু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কপি করতে পারে। হাইপারলিংক বা ন্যূনতম রেফারেন্স বা ঋণস্বীকার না করলে বিপদে পড়বেন, এটা নিশ্চিত। রেফারেন্স দিয়ে কোনো কিছু কপি করা সবাই অ্যালাউ করে, তার মানে এ নয় যে, আপনি সরাসরি সব কিছুই কপি করবেন। আপনি যখন একটি আর্টিকেলের পুরোটা কপি করবেন তখন সেটা অন্যায়। তবে যে সকল লোকজন ৬০ বছর আগে মারা গেছেন, তাদের লেখা কপি কর‍তে পারেন— সেক্ষেত্রেও ক্রেডিট দিতে হবে।

কপি করার টেনডেন্সি থাকলে আপনি লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন না। আর অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভালের আগে তো কপি করাই যাবে না, এ ক্ষেত্রে অ্যাপ্রুভাল পাবেন না।

আরও কিছু কথা

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পেলে ন্যুনতম ১০০ ডলার হলেই তা আপনি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এর আগে আপনার ঠিকানা ভেরিফাই করতে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে চিঠি আসবে, সেই চিঠিতে একটি পিন কোড থাকবে। ওই কোড দিয়ে অ্যাড্রেস ভেরিফাই করে নিতে হবে।

রোর, মিডিয়াম বা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমেও ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা যায়, তবে এখানে শুধু গুগলের ব্লগস্পট ও অ্যাডসেন্স নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন, বিশ্লেষণ টিম আপনার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

লেখালেখি করে অনলাইনে আয় করা যায় কীভাবে?

প্রকাশ: ০৯:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

লেখালেখি করে অনলাইনে আয় করুন ভারত, বাংলাদেশ বা যে-কোনো দেশ থেকে আপনি কি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন বা সময় পেলেই নিজের ফেইসবুক টাইমলাইনে বিভিন্ন ধরনের লেখা শেয়ার করেন, যেগুলোর মাধ্যমে অনেকেরই উপকার হয়ে থাকে? আপনার আইডিয়া এবং চিন্তাগুলি অন্যদের সাথে শেয়ার করে নিতে ভালোবাসেন তো?

আপনি চাইলেই এই লেখালেখির মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন খুব সহজেই। অনলাইনে লেখালেখি করে আয়ের সুযোগ রয়েছে অনেক। যেমন— আপনি চাইলে ব্লগ, নিবন্ধ, পণ্যের বিবরণ, পর্যালোচনা ইত্যাদি লিখতে পারেন।

কিন্তু কোথায় বা কিভাবে শুরু করবেন জানেন না?

বিশেষ কিছু জানার দরকার নেই। নিচে আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অপেক্ষা করছে, যার মাধ্যমে অল্পতেইন আপনি অনলাইন থেকে লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন।

আমি ধরে নিচ্ছি আপনি লেখালেখি এবং লেখালেখি করে অনলাইনে আয় সম্পর্কে খুবই অল্প জানেন। তবে নিচের লেখাটি পড়ে একবার শুরু করতে পারলেই সহজেই বুঝে যাবেন, আপনার সত্যিকার অর্থে কী করা উচিৎ। 

অনলাইনে লেখালেখি করে আয় করতে হলে কী কী লাগবে?

  • একটি কম্পিউটার (ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ) (শুরুতে লাগবে, পরে এটি ব্যবহার করতে না চাইলেও পারবেন)
  • একটি স্মার্টফোন (৪ জিবি র‍্যামের বেশি হলে ভালো)
  • আপনার দক্ষতা
  • আপনার ধৈর্য্য
  • অনুসন্ধিৎসু মন

কী লিখলে অনলাইনে আয় করা যায়?

আপনি যে-কোনো কিছু লিখেই আয় করতে পারবেন। তবে আপনি শুরু করবেন কোন ধরনের টপিক দিয়ে?

আপনি যে বিষয়ে সবচেয়ে দক্ষ, সে বিষয়ে লেখা শুরু করুন।

গল্প-উপন্যাস-বা ফিকশন লেখা বাদ দিন, তবে বিখ্যাত লেখকদের বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ করতে পারেন যদি আপনার সাহিত্যে আগ্রহ থাকে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— আপনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের বিষয় নিয়ে গুগল, বিং বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজছেন বা খুঁজেছেন সেগুলো সম্পর্কে নিজেই একটু কষ্ট করে ডেটা সংগ্রহ করে লিখতে পারেন।

আপনি যদি প্রযুক্তি (Technology), অর্থ (Money), আইন (Law), স্বাস্থ্য (Health) নিয়ে লিখতে পারেন তাহলে আপনার আয়ের পরিমাণ বেশি হবে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা (Education) নিয়েও লিখতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন হবে কারণ আয় কম হবে।

একটি ভালো আর্টিকেল বা নিবন্ধ লিখতে কীভাবে লেখা যায়?

ভালোর শেষ নেই। আপনার কাছে যেটি ভালো, সেটি আমার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। আপনার যেই লেখাটি বেশিরভাগ লোকের কাছে ভালো লাগবে, সেটি আপনার কাছে মূল্যহীন হতে পারে। সুতরাং, এই ভালো মন্দ নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই আপাতত। তবে যে বিষয়গুলো নিয়ে আপনার ভাবা বাধ্যতামূলক সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—

  • যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে ভালো করে জানুন, ভাসাভাসা জ্ঞান থাকা চলবে না।
  • ভালো মানের একটি টাইটেল বা শিরোনাম পছন্দ করুন, যাতে আপনার পুরো আর্টিকেল সম্পর্কে সবাই ধারণা পায়। এ ক্ষেত্রে আপনার সাহিত্যিক ভাবনাকে পরিহার করে; বাস্তবিক দিক থেকে ভাবুন; ভাবুন এই লেখাটি খুঁজে পেতে চাইলে আপনি কী লিখে খুঁজতেন। এটাই কী-ওয়ার্ড (keyword)।
  • সহজ করে লিখুন, যাতে যে-কেউ আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারে।
  • জটিল বাক্য লেখা থেকে যতটা দূরে থাকা যায় তত ভালো, তবে প্রয়োজনে অবশ্যই লিখবেন
  • আপনার টপিক বা বিষয়ের নাম লেখার মধ্যে বেশ কয়েকবার আনার চেষ্টা করুন। যেমন— আমার এই আর্টিকেলে বারবার উল্লেখ করেছি ‘লেখালেখি করে অনলাইনে আয়’। তবে অবশ্যই সামঞ্জস্য রেখেই কাজটি করতে হবে, তা না হলে পাঠক বিরক্ত হবে।
  • আপনি নিশ্চয়ই ইন্টারনেটে বা বইয়ে অনেক কিছুই পড়েছেন, সেখানে স্টাইলে ও ভাষার ক্ষেত্রে যা যা ভালো লেগেছে তা তা গ্রহণ করুন, যা ভালো লাগেনি তা বর্জন করুন।
  • সাব-হেডিং দিয়ে লিখুন। ঠিক যেভাবে আপনি ছোটোবেলায় ‘আমাদের বিদ্যালয়’, ‘বর্ষাকাল’, ‘মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ইত্যাদি রচনা লিখেছেন। বাকিটা ধীরেধীরে বুঝে যাবেন।
  • উপযুক্ত ছবি যুক্ত করুন।
  • উপাত্ত বা তথ্য কোন কোন জায়গা থেকে নিয়েছেন তা লেখার শেষে উল্লেখ করে দিন। আপনি চাইলে মূল লেখার মধ্যেও বলে দিতে পারেন। রেফারেন্স দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
  • লেখা শেষে বারবার চেক করুন। তবে চেক করার আগে অবশ্যই বিরতি নিন, এই বিরিতির সময় অন্য কাজ করুন।
  • ইংরেজিতে লিখুন, এতে অনলাইনে আয় ৮/১০ গুণ বেশি হবে। বাংলায় লিখলে বিরক্ত হবেন কারণ এতে আয় খুবই কম।

‘লিখলাম, কিন্তু আয় করব কীভাবে?’

এবার আসা যাক আসল পয়েন্টে। আপনার মুল্যবান লেখাটি কোথায় দিবে না কাকে দিবেন যারা আপনাকে টাকা দেবে? অনেক এজেন্সি আছে, প্ল্যাটফর্ম আছে যারা অন্যকে দিয়ে কোনো কিছু লিখিয়ে নেয়, বিনিময়ে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। কিন্তু আপনি তো জানেন না যে, কোথা থেকে বা কার থেকে বা কীভাবে আয় করা যায়। এখন করণীয় কী?

আপনার কাছে কি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হবে? পকেট খরচের জন্য বাবার থেকে বা মায়ের থেকে নেওয়া টাকা থেকে কিছু টাকাও বাঁচাতে পারেননি এখন পর্যন্ত? যদি আপনার কাছে এই পরিমাণের টাকা থাকে তাহলে এটাই আপনার পূঁজি।

এখন এই ৮০০ বা ৯০০ টাকা দিয়ে কী করবেন?

না, আমি আপনার কাছে কোনো অর্থ চাই না। আপনাকে যা করতে হবে তা নিচে থেকে দয়া করে পড়ে নিন—

একটি ডোমেইন কিনুন

স্থানীয় কোনো প্রোভাইডার থেকে একটি ডোমেইন কিনুন (.com হলে ভালো হয়)। ডোমেইন কেনার জন্য আপনি বিদেশের কোম্পানির কাছেও যেতে পারেন। তবে আপনার তো ডুয়্যাল কারেন্সি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই, তাই আমার পরামর্শ হলো— আপনি এই মুহূর্তে যেই দেশে আছেন সেই দেশের কোম্পানি থেকে কিনুন।

বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ডোমেইন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হলো—

  • হোস্টিং বাংলাদেশ (Hosting Bangladesh)
  • ওয়েবহোস্ট বাংলাদেশ (WebhostBD)
  • ভোল্টা হোস্ট বিডি (VoltahostBD)

(বাংলাদেশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমার কাজ হয়েছে তাই জানি, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। আপনি এদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে কল করবেন। আপনি প্রশ্ন করলে তারা আপনাকে বলে দিবে কী করতে হবে।)

ডোমেইন কিলনাম, এরপর কী করতে হবে?

চলে যান— https://www.blogger.com অ্যাড্রেসে।

এখান থেকে একটি ব্লগ তৈরি করুন।

কীভাবে ব্লগার থেকে ব্লগ তৈরি করতে হয় তা না জানলে ইউটিউবে খুঁজুন। প্রচুর ভিডিয়ো আছে।

ইউটিউবেত সার্চ বারে লিখুন ”How to create a blog on blogger’ অথবা ‘create blogspot’; এরকম কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেই এসে যাবে।

ব্লগ ক্রিয়েট হবার ওখানে আপনার ডোমেইন সেট করে দিন।

এর জন্য ইউটিউবে খুঁজুন, ‘How to set a custom domain on blogger’। বাংলা, ইংরেজি বা অন্য যে-কোনো ভাষায় এই ভিডিয়ো আছে।

(বি. দ্র.: আপনি যদি ডোমেইন কিনতে না চান তাহলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে কাস্টম ডোমেইন থাকার মানে হলো আপনি আপনার কাজে সিরিয়াস এবং আপনার পাঠকের কাছে একটি আস্থার মধ্যে থাকা। তাছাড়া নিজের একটি ওয়েব অ্যাড্রেস থাকার মধ্যেও একটি বিশেষ ভাব আছে।)

ব্লগ পোস্টিং

আপনি যে সকল লেখাগুলো লিখেছেন সেই লেখাগুলো ধীরেধীরে পোস্ট করুন সেখানে। কীভাবে পোস্ট করবেন তা ইউটিউবে দেখে নিতে পারে। খুঁজবেন ”how to post on blogger” অথবা “how to post on blogspot”। অবশ্য ” blogspot tutorial” লিখে সার্চ করলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানার বা বোঝার উপযোগী ভিডিয়ো পাবেন।

ব্লগের জন্য কপিরাইট ফ্রি ছবি কোথায় পাবেন?

আপনি নিজেই ছবি তুলতে পারেন বা Photoshop, Illustrator, PixelLab ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আর্ট করতে পারেন।

তবে সহজেই আপনি দারুণ সব ছবি পেয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে।

যে সকল ওয়েবসাইট থেকে আপনি ফ্রিতে ছবি নিবেন সেগুলো হলো—

এই তিন ওয়েবসাইট থেকে ছবি নিলে ক্রেডিট না দিলেও পারবেন। এছাড়াও আরও কিছু ওয়েবসাইট থেকে ছবি নিতে পারেন, সেগুলো ফ্রি হলেও ক্রেডিট দিতে হবে। তবে ছবি বা যে-কোনো কন্টেন্ট যেখান থেকেই নেন না কেন, তার ক্রেডিট দেওয়া এক ধরনের ভদ্রতা ও সম্মান দেখনো।

গুগল অ্যাডসেন্স (Google Adsense)

ব্লগে পোস্ট করার কিছু দিনের মাথায় আপনি অ্যাডসেন্স (Adsense)-এর অ্যাপ্রুভালের জন্য আবেদন করবেন। অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন

কত দিনের মাথায় অ্যাডসেন্স আবেদন করা উচিৎ?

এর ঠিক নেই। আপনি যখন খুশি তখনই অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভালের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আপনার ব্লগ/ওয়েবসাইট ভালো ভাবে সাজানোর আগে আবেদন করবেন না।

মোটামুটিভাবে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারেন।

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল দেয় কতদিনে?

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল কেউ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেও পেয়েছে আবার কেউ ১ দিন, ২ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিনেও পেয়েছেন। কেউ আবার ৩ মাস পরেও পেয়েছেন। কেউ কেউ কখনোই পাননি।

যা কিছু করা যাবে না

লেখালেখি করে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে চাইলে শুরুতেই যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে তা হলো— অন্যকে কপি করা যাবে না। অন্যের লেখা কপি করলে আপনার ব্লগও হারিয়ে ফেলতে পারেন।

তবে আপনি চাইলে রেফারেন্স দিয়ে (হাইপারলিংক দিয়ে) অল্প কিছু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কপি করতে পারে। হাইপারলিংক বা ন্যূনতম রেফারেন্স বা ঋণস্বীকার না করলে বিপদে পড়বেন, এটা নিশ্চিত। রেফারেন্স দিয়ে কোনো কিছু কপি করা সবাই অ্যালাউ করে, তার মানে এ নয় যে, আপনি সরাসরি সব কিছুই কপি করবেন। আপনি যখন একটি আর্টিকেলের পুরোটা কপি করবেন তখন সেটা অন্যায়। তবে যে সকল লোকজন ৬০ বছর আগে মারা গেছেন, তাদের লেখা কপি কর‍তে পারেন— সেক্ষেত্রেও ক্রেডিট দিতে হবে।

কপি করার টেনডেন্সি থাকলে আপনি লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন না। আর অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভালের আগে তো কপি করাই যাবে না, এ ক্ষেত্রে অ্যাপ্রুভাল পাবেন না।

আরও কিছু কথা

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পেলে ন্যুনতম ১০০ ডলার হলেই তা আপনি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এর আগে আপনার ঠিকানা ভেরিফাই করতে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে চিঠি আসবে, সেই চিঠিতে একটি পিন কোড থাকবে। ওই কোড দিয়ে অ্যাড্রেস ভেরিফাই করে নিতে হবে।

রোর, মিডিয়াম বা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমেও ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা যায়, তবে এখানে শুধু গুগলের ব্লগস্পট ও অ্যাডসেন্স নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন, বিশ্লেষণ টিম আপনার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবে।