শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩

শূন্যপুরাণ পরিচিতি

শূন্যপুরাণ কাব্য রচনা করেন শ্রীযুত রামাই পণ্ডিত।

For all latest articles, follow on Google News

‘শূন্যপুরাণ’ হলো বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত একটি চম্পুকাব্য। মধ্যযুগের অন্যতম সেরা নিদর্শন ‘শূন্যপুরাণ’ রচনা করেন শ্রীযুত রামাই পণ্ডিত। ৫১টি অধ্যায় রয়েছে এই কাব্যে, যার প্রথম পাচঁটিতে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বর্ণনা করা রয়েছে।

‘শূন্যপুরাণ’কে বলা হয়ে থাকে ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ, রচয়িতা রামাই পণ্ডিত। রামাই পণ্ডিতের কাল মুসলিম বিজয়োত্তর তেরো শতক বলে অনুমান করা হয়। ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ বা ‘নিরঞ্জনের উষ্মা’ নামে ‘শূন্যপুরাণ’ কাব্যে একটি অংশ আছে যাতে ব্রাহ্মণ্য শাসনের পরিবর্তে মুসলিম শাসনের কথা বলা হয়।

মূল গ্রন্থে ধর্মপূজার যে বিবরণ আছে তাতে বৌদ্ধধর্মের শূন্যবাদ ও হিন্দু লোকধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে। বঙ্গে পালদের পতন ও সেনদের আবির্ভাবে বৌদ্ধমত ও ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের যুগসন্ধিক্ষণের ধর্মীয় চেতনা থেকে ধর্মপূজার উদ্ভব হয়। ‘শূন্যপুরাণ’-এর রচয়িতা রামাই পণ্ডিত এগুলোকে সংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।

এতে ধর্মদেবতা নিরঞ্জনের যে কল্পনা করা হয়েছে তা বৌদ্ধদের শূন্যবাদের অনুরূপ। সেতাই, নীলাই, কংসাই, রামাই ও গোসাঁই এই পঞ্চপণ্ডিত পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের প্রচ্ছন্ন রূপ। গ্রন্থের পরের ৪৬ টি অধ্যায়ে ধর্মপূজার রীতি-পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। ‘দেবীর মনঞি’ অধ্যায়ে হিন্দুদের অনুরূপ পশুবলির কথা আছে; কিন্তু বৌদ্ধধর্মে পশুবলি নিষিদ্ধ।

শূন্যপুরাণ কাব্যের শেষের দুটি অধ্যায়ে নাথদেবতার উল্লেখ আছে। এটিও প্রক্ষিপ্ত, কেননা নাথধর্ম ও ধর্মপূজা দুটি ভিন্ন ধর্ম। ধর্মপূজা পশ্চিমবঙ্গে এবং নাথধর্ম উত্তরবঙ্গে প্রচারিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শূন্যপুরাণ শিল্পকর্ম হিসেবে নয়, ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেয়ে আসছে।

আহমেদ মিন্টো
আহমেদ মিন্টো
মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ