০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

হাজার চুরাশির মা উপন্যাস রিভিউ

জারিন তাসনিম
  • প্রকাশ: ১০:১১:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জানুয়ারি ২০২২
  • / ১০৫৮৫ বার পড়া হয়েছে

হাজার চুরাশির মা উপন্যাসের রচয়িতা মহাশ্বেতা দেবী।

‘হাজার চুরাশির মা’ হলো ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত একটি তুমুল জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস। এই ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসটি লেখেন র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (Ramon Magsaysay Award) বিজয়ী ভারতীয় সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয় ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস। ১৯৯৬ সালে মহাশ্বেতা দেবী এই উপন্যাসটির জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা তার হাতে এই পুরস্কারটি তুলে দেন।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে কী আছে?

ভারতের অন্যতম প্রধান একটি রাজ্যের রাজধানী হলো কলকাতা। সত্তরের দশকে এই কলকাতায় নকশাল আন্দোলন সংঘটিত হয়। নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মহাশ্বেতা দেবি লেখেন ‘হাজার চুরাশির মা’। এই ‘হাজার চুরাশির মা’ হলো এমন একজন মায়ের গল্প যাঁর ছেলেকে তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র পাশবিকভাবে হত্যা করে। উপন্যাসে মায়ের চরিত্রটির নাম সুজাতা এবং তার ছেলের চরিত্রে আছে ব্রতী। উপন্যাসটিতে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হওয়া এক পুত্রকে নিয়ে মায়ের স্মৃতিচারণ।

ব্রতী ছিল একজন বিপ্লবী, যাকে হত্যা করা হয়। লাশকাটা ঘরে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪। তা থেকেই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রতী শ্রেণিশত্রু, রাষ্ট্রের সহকারী ও পার্টির অভ্যন্তরে প্রতি-বিপ্লবীদের ক্রমাগত নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল।

উপন্যাসের গল্পটি শুরু হয়েছে বিপ্লবী ব্রতীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। সুজাতা ব্রতীর জন্ম থেকে তার ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন। তার সঙ্গে ব্রতীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর দেখা হয় এবং তিনি ব্রতীর বিপ্লবী মানসিকতার বিচার করতে চেষ্টা করেন। সমগ্র উপন্যাসে তাকে একজন কঠোর মানসিকতার নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তার ছেলেকে ভুলে যান। কারণ, তার ছেলের মতো লোকেরা ‘ক্যানসারাস গ্রোথ অন দ্য বডি অফ ডেমোক্রেসি’।

হাজার চুরাশির মা উপন্যাসটি লিখেছেন মহাশ্বেতা দেবী।

বহু বছর পরে সুজাতা এই ভেবে শান্তি পান যে, রাজনৈতিক অশান্তিতে তার ছেলের মৃত্যু প্রায় কোনো ঘরকেই ছাড়েনি। ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে মানবিক কাহিনির সেই সব অন্য মুখগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেগুলির উৎস বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চার। যতদিন না কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে, ততদিন এই যুবসমাজকে নির্মমভাবে দমন করেছিল সরকার। তারপর কমিউনিস্ট সরকার তার বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করে।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

সুজাতা: প্রধান চরিত্র ও এক ‘আধুনিক’ কঠোর মানসিকতার মা।

ব্রতী: সুজাতার বিপ্লবী ছেলে।

দিব্যনাথ: সুজাতার স্বামী। ব্রতী যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করত, তাদের মতোই একজন ব্যক্তি।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র 

বলিউডে মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা’ অবলম্বন করে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালে পরিচালক গোবিন্দ নিহালনি হিন্দি ভাষায় ‘হাজার চৌরাসি কি মা’ (Hazaar Chaurasi Ki Maa) নামে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিল।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

জারিন তাসনিম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বাধীন লেখক।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

হাজার চুরাশির মা উপন্যাস রিভিউ

প্রকাশ: ১০:১১:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জানুয়ারি ২০২২

‘হাজার চুরাশির মা’ হলো ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত একটি তুমুল জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস। এই ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসটি লেখেন র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (Ramon Magsaysay Award) বিজয়ী ভারতীয় সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয় ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস। ১৯৯৬ সালে মহাশ্বেতা দেবী এই উপন্যাসটির জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা তার হাতে এই পুরস্কারটি তুলে দেন।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে কী আছে?

ভারতের অন্যতম প্রধান একটি রাজ্যের রাজধানী হলো কলকাতা। সত্তরের দশকে এই কলকাতায় নকশাল আন্দোলন সংঘটিত হয়। নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মহাশ্বেতা দেবি লেখেন ‘হাজার চুরাশির মা’। এই ‘হাজার চুরাশির মা’ হলো এমন একজন মায়ের গল্প যাঁর ছেলেকে তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র পাশবিকভাবে হত্যা করে। উপন্যাসে মায়ের চরিত্রটির নাম সুজাতা এবং তার ছেলের চরিত্রে আছে ব্রতী। উপন্যাসটিতে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হওয়া এক পুত্রকে নিয়ে মায়ের স্মৃতিচারণ।

ব্রতী ছিল একজন বিপ্লবী, যাকে হত্যা করা হয়। লাশকাটা ঘরে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪। তা থেকেই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রতী শ্রেণিশত্রু, রাষ্ট্রের সহকারী ও পার্টির অভ্যন্তরে প্রতি-বিপ্লবীদের ক্রমাগত নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল।

উপন্যাসের গল্পটি শুরু হয়েছে বিপ্লবী ব্রতীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। সুজাতা ব্রতীর জন্ম থেকে তার ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন। তার সঙ্গে ব্রতীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর দেখা হয় এবং তিনি ব্রতীর বিপ্লবী মানসিকতার বিচার করতে চেষ্টা করেন। সমগ্র উপন্যাসে তাকে একজন কঠোর মানসিকতার নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তার ছেলেকে ভুলে যান। কারণ, তার ছেলের মতো লোকেরা ‘ক্যানসারাস গ্রোথ অন দ্য বডি অফ ডেমোক্রেসি’।

হাজার চুরাশির মা উপন্যাসটি লিখেছেন মহাশ্বেতা দেবী।

বহু বছর পরে সুজাতা এই ভেবে শান্তি পান যে, রাজনৈতিক অশান্তিতে তার ছেলের মৃত্যু প্রায় কোনো ঘরকেই ছাড়েনি। ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে মানবিক কাহিনির সেই সব অন্য মুখগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেগুলির উৎস বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চার। যতদিন না কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে, ততদিন এই যুবসমাজকে নির্মমভাবে দমন করেছিল সরকার। তারপর কমিউনিস্ট সরকার তার বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করে।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

সুজাতা: প্রধান চরিত্র ও এক ‘আধুনিক’ কঠোর মানসিকতার মা।

ব্রতী: সুজাতার বিপ্লবী ছেলে।

দিব্যনাথ: সুজাতার স্বামী। ব্রতী যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করত, তাদের মতোই একজন ব্যক্তি।

‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র 

বলিউডে মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা’ অবলম্বন করে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালে পরিচালক গোবিন্দ নিহালনি হিন্দি ভাষায় ‘হাজার চৌরাসি কি মা’ (Hazaar Chaurasi Ki Maa) নামে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিল।