০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব কী?

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ০১:০৪:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
  • / ৭৪৯৫০ বার পড়া হয়েছে

কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। | ছবি: Unsplash

প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের, যথা— সেবামূলক ও উৎপাদনমূলক। যে ধরনের প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তা সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এর শ্রমিক-কর্মী তথা মানব সম্পদ। এ শ্রমিক-কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে তাদের দ্বারা কখনো উত্তম কার্যফল আশা করা যায় না। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ যে সকল কাজ করে থাকেন সেগুলো মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করা। কর্মীদের প্রত্যাশা, চিন্তা-চেতনা, কাজের প্রকৃতি, কার্য পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করতে হয়, যাতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হতে পারে। কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। প্রেষণার ফলে কর্মী তার সকল আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনে ব্রতী হয়। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।

প্রেষণা কী (What Motivation Is)

প্রেষণা হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধিকতর কর্মপ্রচেষ্টা চালানোর ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা। মানুষ তার কর্মপ্রচেষ্টার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো কাজে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও প্ররোচিত হলে এ প্রক্রিয়াটি প্রেষণা হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকে। প্রেষণা মানুষের অন্তরে নিহিত একটি সুপ্ত শক্তি যা উজ্জীবিত হলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। অনুপ্রেষিত (motivated) ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, স্বীয় উদ্যোগে, অধিকতর দক্ষতার সাথে তার কার্য সম্পাদনে সচেষ্ট হয়। অভাব বা প্রয়োজনবোধ থেকেই প্রেষণার উদ্ভব। মানুষের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ হলে সে প্রেষিত (বা অনুপ্রেষিত) হয়েছে বলা যায়।

কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবস্থপনা বিশারদের মতে প্রেষণার সংজ্ঞা:

  • শারলেকার (S. A. Sherlekar) বলেছেন, “যে ব্যবস্থাপকীয় কার্যের সাহায্যে ব্যক্তিবর্গকে কার্য সম্পাদনে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও তাড়িত করা যায় তাকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a managerial function to inspire, encourage and impel people to take required action).
  • ওইরিখ ও কুঞ্জ (H. Weihrich & H. Koontzt) বলেছেন, “সব ধরনের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, প্রয়োজন এবং সমরূপ শক্তিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত সাধারণ পদবাচ্যকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a general term applying to an entire class of drives, desires, needs, wishes and similar forces).
  • Keith Daris এবং H. John W. Newstrom বলেছেন, “কাজের দিকে কর্মীকে ধাবিত করার শক্তিই হলো প্রেষণা”। (Motivation is the strength of the drive towards an action). 
  • মাইকেল জুসিয়াস (Michael Jucious)-এর মতে প্রেষণা হচ্ছে ব্যবস্থাপক কর্তৃক সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ যা কর্মীদেরকে নির্ধারিত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে উৎসাহিত ও প্রণোদিত করে। 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, প্রেষণা হলো এমন একটি ব্যবস্থাকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। কর্মী যাতে তার সর্বোচ্চ পরিপক্কতা (maximum maturity) প্রয়োগ করতে পারে, মূলতঃ প্রেষণা সেই কাজটি করে থাকে।

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Motivation)

কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ পরিপক্কতা প্রয়োগ করে আর সেটি করার ক্ষেত্রে প্রেষণা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। প্রেষণা এমন একটি প্রক্রিয়া যা শ্রমিক-কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে যৌক্তিক আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মীরা সর্বোচ্চ পরিপক্কতা প্রয়োগ করতে পারে। তাই এটি একদিকে কর্মীর মনোবল বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনশীলতার সাথে সম্পৃক্ত। প্রেষণা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত করে।

নিচে প্রেষণার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

  1. মনস্তাত্ত্বিক ধারণা: প্রেষণা সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। মানুষের ভিতরের কিছু প্রবণতা থেকে প্রেষণার তৈরি হয়। এটা একটি মানবিক শক্তি। বিশেষ চাহিদার কারণে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তৈরি হয়। প্রেষণা কর্মীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বাড়ায়। 
  2. মানবীয় উপাদানের সাথে সম্পৃক্ত: একটি প্রতিষ্ঠানে দু’ধরনের উপাদান থাকে। একটি মানবীয় কর্মী এবং অন্যটি বস্তুগত কলকব্জা। প্রেষণার বিষয় শুধু মানবীয় অর্থাৎ শ্রমিক-কর্মীর ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকে। তাদেরকেই অনুপ্রেরণা দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়। 
  3. ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার ধরন বদলায়। যেমন ধরুন, এক সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না। এটি আসার পর মানুষের কাছে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়ে গেল। কোনো কোম্পানি কর্মীদের একটি করে মোবাইল সেট উপহার হিসেবে দিল। এতে তারা অনুপ্রাণিত হলো। মোবাইল ফোন আসার পূর্বে হয়ত কোম্পানির প্রণোদনা দেওয়ার ধরন অন্য রকম ছিল। সুতরাং বরা যায়, প্রেষণা একটি অব্যাহৃত প্রক্রিয়া। শুরু করে কিছু সময় পর বন্ধ করে দিলে সেটি কার্যকর থাকবে না। 
  4. প্রেষণা লক্ষ্যকেন্দ্রিক: প্রেষণা সর্বদা উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক। একটি প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো কর্মীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা আদায় করা। প্রেষণা উদ্দেশ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রেষণা উদ্দেশ্য/লক্ষ্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়। 
  5. প্রেষণা অভাবের সাথে সম্পৃক্ত: প্রেষণা কর্মীদের অভাবের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রথমে অভাবের তাড়ণা আসবে; মানুষ সেটি পুরণ করার চেষ্টা করবে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতির একটি অভাব বোধ করবে। প্রতিষ্ঠান যদি তার এই অভাবটি পূরণ করে তাহলে সে অনুপ্রাণিত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যাবে। সুতরাং অভাবই হলো প্রেষণার ভিত্তি। 
  6. ইতিবাচক বা নেতিবাচক: X তত্ত্ব বা Y তত্ত্ব অনুযায়ী প্রেষণা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় রকম হতে পারে। প্রতিষ্ঠানে কাউকে পুরষ্কৃত করে কার্য উদ্ধার করা যায়— যা ইতিবাচক প্রেষণা। আবার কাউকে তিরস্কার করে কার্য উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে— এ ধরনের প্রেষণা নেতিবাচক। 
  7. কার্যশক্তি: প্রেষণা হলো কার্যশক্তি, যা মানুষকে কোনো কাজ করা বা না করা থেকে বিরত থাকতে অনুপ্রাণিত করে। এটি সরাসরি কর্মীর মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এতে সে কার্যসম্পদনে প্ররোচিত হয়। সুতরাং প্রেষণা প্রয়োগ করলে কর্মীর ভিতরে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। সুতরাং প্রেষণা কার্যশক্তির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 
  8. ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের সাথে সম্পৃক্ত: এ প্রেক্ষিতে একটি খনার বচন প্রযোজ্য। তা হল, যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট তাকে সেই ফুল দিয়েই পূজো করতে হয়। এখানে বোঝানো হয়েছে, প্রতিটা মানুষের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। ফলে ব্যক্তি ভেদে প্রেষণার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। তাই প্রেষণা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য দ্বারা পরিচালিত হয়। 
  9. আর্থিক বা অনার্থিক প্রক্রিয়া: প্রেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আর্থিক বা অনার্থিক উভয় প্রকৃতির হতে পারে। অনেক সময় কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রেষিত করতে হয়। আবার অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দিয়ে প্রেষিত করা হয়। 
  10. আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ: প্রেষণা একটি শক্তি যা মানুষের আচরণকে শক্তিশালী করে। প্রেষিত কর্মির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা কাজ করে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। | ছবি: Unsplash

প্রেষণার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা (Importance of Motivation) 

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানব সম্পদ। শ্রমিক-কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের প্রেষণাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রেষণা যে কোনো সংগঠনের জন্য নিম্নলিখিত গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বহন করে থাকে:

  1. উৎপাদন বৃদ্ধি (Increasing production): উপযুক্ত প্রেষণাদানের ফলে শ্রমিককর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই প্রেষণা ও উৎপাদনের সম্পর্ক নিম্নোক্ত সমীকরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়:

P = f (a×m)

যেখানে—

P = কর্ম-সম্পাদন (Performance)

f = অপেক্ষক (functions)

a = কার্যক্ষমতা (ability)

m = প্রেষণা (motivation )

  1. মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার (Proper use of human resources): প্রেষণা কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মী তার সকল প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত করে। এতে মানব শক্তির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। পরিশেষে প্রতিষ্ঠানে উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে।
  2. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency): কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষণা দেওয়া হলে কর্মীরা তাদের উপর প্রদত্ত দায়িত্ব পূর্ণমাত্রায় পালন করতে সচেষ্ট হয়। এতে কাজের প্রতি তাদের মমত্ব বাড়ে। প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ মনে করে কর্মীরা সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বিধায় তাদের সক্ষমতা ও কর্ম-অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।
  3. অপচয় হ্রাস (Reduction Wastage): প্রেষণা কর্মীদেরকে দক্ষতার সাথে কর্মসম্পাদনে প্রেষণা যোগায়। এতে কাজের ক্ষেত্রে সময় এবং সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়। 
  4. কর্মীদের চাকুরি ত্যাগের হার হ্রাস (Reduction of labour turnover): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক উপায়ে প্রেষিত করা হলে তারা সহজে উক্ত প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না। এতে প্রতিষ্ঠানে কর্মী-ঘূর্ণায়মানতা (labour turnover) হ্রাস পায়।
  5. শ্রমিক আন্দোলন হ্রাস (Reduction of labour movement): যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রেষণা কাম্য পর্যায়ে থাকে সে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ফলে উৎপাদন অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে।
  6. নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন (Proper implementation of direction): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রেষণা উঁচু মানের হলে ব্যবস্থাপকগণ সহজে তাদের দ্বারা নির্দেশ পালন করিয়ে নিতে পারেন। কারণ অনুপ্রেষিত কর্মীরা সহজে ব্যবস্থাপকের নির্দেশ পালন করে। 
  7. সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ (Proper maintenance of equipment): অনুপ্রেষিত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সম্পদ, যথা— যন্ত্রপাতি, কাগজপত্র, কম্পিউটার, টাইপরাইটার ও অন্যান্য মালামাল সঠিকভাবে সংরক্ষণে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে। 
  8. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি (Enhancement of organisation’s goodwill): কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজ করলে তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়নে সদা তৎপর থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পায়। 
  9. ব্যবস্থাপনা-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন (Development of management-labour relation): কর্মীদের প্রেষণা উঁচু মানের হলে তারা ব্যবস্থাপকদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এতে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।
  10. সৃজনশীলতার বিকাশ (Manifestation of creativity): কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজমান থাকলে তারা সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা বিকাশে উদ্যোগী হয়। তাদের নব নব ধারণা ও উন্নয়নমূলক চিন্তা প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। 
  11. সহজতর লক্ষ্য অর্জন (Easy attainment of goals): সর্বোপরি, অনুপ্রেষিত কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি পূর্ণমাত্রায় বজায় থাকে বিধায় তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। 

সুতরাং দেখা যায়, প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প-সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে; এ কারণেই জেলারম্যান (Gellerman) প্রেষণাকে ‘ব্যবস্থাপনার মজ্জা’ বলে অভিহিত করেছেন।

সারাংশ

প্রেষণা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থাকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানবসম্পদ তথা শ্রমিক-কর্মী। শ্রমিক-কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব কী?

প্রকাশ: ০১:০৪:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১

প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের, যথা— সেবামূলক ও উৎপাদনমূলক। যে ধরনের প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তা সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এর শ্রমিক-কর্মী তথা মানব সম্পদ। এ শ্রমিক-কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে তাদের দ্বারা কখনো উত্তম কার্যফল আশা করা যায় না। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ যে সকল কাজ করে থাকেন সেগুলো মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করা। কর্মীদের প্রত্যাশা, চিন্তা-চেতনা, কাজের প্রকৃতি, কার্য পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করতে হয়, যাতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হতে পারে। কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। প্রেষণার ফলে কর্মী তার সকল আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনে ব্রতী হয়। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।

প্রেষণা কী (What Motivation Is)

প্রেষণা হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধিকতর কর্মপ্রচেষ্টা চালানোর ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা। মানুষ তার কর্মপ্রচেষ্টার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো কাজে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও প্ররোচিত হলে এ প্রক্রিয়াটি প্রেষণা হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকে। প্রেষণা মানুষের অন্তরে নিহিত একটি সুপ্ত শক্তি যা উজ্জীবিত হলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। অনুপ্রেষিত (motivated) ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, স্বীয় উদ্যোগে, অধিকতর দক্ষতার সাথে তার কার্য সম্পাদনে সচেষ্ট হয়। অভাব বা প্রয়োজনবোধ থেকেই প্রেষণার উদ্ভব। মানুষের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ হলে সে প্রেষিত (বা অনুপ্রেষিত) হয়েছে বলা যায়।

কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবস্থপনা বিশারদের মতে প্রেষণার সংজ্ঞা:

  • শারলেকার (S. A. Sherlekar) বলেছেন, “যে ব্যবস্থাপকীয় কার্যের সাহায্যে ব্যক্তিবর্গকে কার্য সম্পাদনে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও তাড়িত করা যায় তাকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a managerial function to inspire, encourage and impel people to take required action).
  • ওইরিখ ও কুঞ্জ (H. Weihrich & H. Koontzt) বলেছেন, “সব ধরনের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, প্রয়োজন এবং সমরূপ শক্তিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত সাধারণ পদবাচ্যকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a general term applying to an entire class of drives, desires, needs, wishes and similar forces).
  • Keith Daris এবং H. John W. Newstrom বলেছেন, “কাজের দিকে কর্মীকে ধাবিত করার শক্তিই হলো প্রেষণা”। (Motivation is the strength of the drive towards an action). 
  • মাইকেল জুসিয়াস (Michael Jucious)-এর মতে প্রেষণা হচ্ছে ব্যবস্থাপক কর্তৃক সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ যা কর্মীদেরকে নির্ধারিত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে উৎসাহিত ও প্রণোদিত করে। 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, প্রেষণা হলো এমন একটি ব্যবস্থাকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। কর্মী যাতে তার সর্বোচ্চ পরিপক্কতা (maximum maturity) প্রয়োগ করতে পারে, মূলতঃ প্রেষণা সেই কাজটি করে থাকে।

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Motivation)

কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ পরিপক্কতা প্রয়োগ করে আর সেটি করার ক্ষেত্রে প্রেষণা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। প্রেষণা এমন একটি প্রক্রিয়া যা শ্রমিক-কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে যৌক্তিক আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মীরা সর্বোচ্চ পরিপক্কতা প্রয়োগ করতে পারে। তাই এটি একদিকে কর্মীর মনোবল বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনশীলতার সাথে সম্পৃক্ত। প্রেষণা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত করে।

নিচে প্রেষণার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

  1. মনস্তাত্ত্বিক ধারণা: প্রেষণা সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। মানুষের ভিতরের কিছু প্রবণতা থেকে প্রেষণার তৈরি হয়। এটা একটি মানবিক শক্তি। বিশেষ চাহিদার কারণে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তৈরি হয়। প্রেষণা কর্মীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বাড়ায়। 
  2. মানবীয় উপাদানের সাথে সম্পৃক্ত: একটি প্রতিষ্ঠানে দু’ধরনের উপাদান থাকে। একটি মানবীয় কর্মী এবং অন্যটি বস্তুগত কলকব্জা। প্রেষণার বিষয় শুধু মানবীয় অর্থাৎ শ্রমিক-কর্মীর ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকে। তাদেরকেই অনুপ্রেরণা দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়। 
  3. ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার ধরন বদলায়। যেমন ধরুন, এক সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না। এটি আসার পর মানুষের কাছে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়ে গেল। কোনো কোম্পানি কর্মীদের একটি করে মোবাইল সেট উপহার হিসেবে দিল। এতে তারা অনুপ্রাণিত হলো। মোবাইল ফোন আসার পূর্বে হয়ত কোম্পানির প্রণোদনা দেওয়ার ধরন অন্য রকম ছিল। সুতরাং বরা যায়, প্রেষণা একটি অব্যাহৃত প্রক্রিয়া। শুরু করে কিছু সময় পর বন্ধ করে দিলে সেটি কার্যকর থাকবে না। 
  4. প্রেষণা লক্ষ্যকেন্দ্রিক: প্রেষণা সর্বদা উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক। একটি প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো কর্মীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা আদায় করা। প্রেষণা উদ্দেশ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রেষণা উদ্দেশ্য/লক্ষ্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়। 
  5. প্রেষণা অভাবের সাথে সম্পৃক্ত: প্রেষণা কর্মীদের অভাবের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রথমে অভাবের তাড়ণা আসবে; মানুষ সেটি পুরণ করার চেষ্টা করবে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতির একটি অভাব বোধ করবে। প্রতিষ্ঠান যদি তার এই অভাবটি পূরণ করে তাহলে সে অনুপ্রাণিত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যাবে। সুতরাং অভাবই হলো প্রেষণার ভিত্তি। 
  6. ইতিবাচক বা নেতিবাচক: X তত্ত্ব বা Y তত্ত্ব অনুযায়ী প্রেষণা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় রকম হতে পারে। প্রতিষ্ঠানে কাউকে পুরষ্কৃত করে কার্য উদ্ধার করা যায়— যা ইতিবাচক প্রেষণা। আবার কাউকে তিরস্কার করে কার্য উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে— এ ধরনের প্রেষণা নেতিবাচক। 
  7. কার্যশক্তি: প্রেষণা হলো কার্যশক্তি, যা মানুষকে কোনো কাজ করা বা না করা থেকে বিরত থাকতে অনুপ্রাণিত করে। এটি সরাসরি কর্মীর মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এতে সে কার্যসম্পদনে প্ররোচিত হয়। সুতরাং প্রেষণা প্রয়োগ করলে কর্মীর ভিতরে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। সুতরাং প্রেষণা কার্যশক্তির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 
  8. ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের সাথে সম্পৃক্ত: এ প্রেক্ষিতে একটি খনার বচন প্রযোজ্য। তা হল, যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট তাকে সেই ফুল দিয়েই পূজো করতে হয়। এখানে বোঝানো হয়েছে, প্রতিটা মানুষের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। ফলে ব্যক্তি ভেদে প্রেষণার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। তাই প্রেষণা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য দ্বারা পরিচালিত হয়। 
  9. আর্থিক বা অনার্থিক প্রক্রিয়া: প্রেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আর্থিক বা অনার্থিক উভয় প্রকৃতির হতে পারে। অনেক সময় কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রেষিত করতে হয়। আবার অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দিয়ে প্রেষিত করা হয়। 
  10. আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ: প্রেষণা একটি শক্তি যা মানুষের আচরণকে শক্তিশালী করে। প্রেষিত কর্মির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা কাজ করে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। | ছবি: Unsplash

প্রেষণার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা (Importance of Motivation) 

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানব সম্পদ। শ্রমিক-কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের প্রেষণাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রেষণা যে কোনো সংগঠনের জন্য নিম্নলিখিত গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বহন করে থাকে:

  1. উৎপাদন বৃদ্ধি (Increasing production): উপযুক্ত প্রেষণাদানের ফলে শ্রমিককর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই প্রেষণা ও উৎপাদনের সম্পর্ক নিম্নোক্ত সমীকরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়:

P = f (a×m)

যেখানে—

P = কর্ম-সম্পাদন (Performance)

f = অপেক্ষক (functions)

a = কার্যক্ষমতা (ability)

m = প্রেষণা (motivation )

  1. মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার (Proper use of human resources): প্রেষণা কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মী তার সকল প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত করে। এতে মানব শক্তির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। পরিশেষে প্রতিষ্ঠানে উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে।
  2. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency): কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষণা দেওয়া হলে কর্মীরা তাদের উপর প্রদত্ত দায়িত্ব পূর্ণমাত্রায় পালন করতে সচেষ্ট হয়। এতে কাজের প্রতি তাদের মমত্ব বাড়ে। প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ মনে করে কর্মীরা সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বিধায় তাদের সক্ষমতা ও কর্ম-অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।
  3. অপচয় হ্রাস (Reduction Wastage): প্রেষণা কর্মীদেরকে দক্ষতার সাথে কর্মসম্পাদনে প্রেষণা যোগায়। এতে কাজের ক্ষেত্রে সময় এবং সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়। 
  4. কর্মীদের চাকুরি ত্যাগের হার হ্রাস (Reduction of labour turnover): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক উপায়ে প্রেষিত করা হলে তারা সহজে উক্ত প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না। এতে প্রতিষ্ঠানে কর্মী-ঘূর্ণায়মানতা (labour turnover) হ্রাস পায়।
  5. শ্রমিক আন্দোলন হ্রাস (Reduction of labour movement): যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রেষণা কাম্য পর্যায়ে থাকে সে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ফলে উৎপাদন অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে।
  6. নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন (Proper implementation of direction): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রেষণা উঁচু মানের হলে ব্যবস্থাপকগণ সহজে তাদের দ্বারা নির্দেশ পালন করিয়ে নিতে পারেন। কারণ অনুপ্রেষিত কর্মীরা সহজে ব্যবস্থাপকের নির্দেশ পালন করে। 
  7. সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ (Proper maintenance of equipment): অনুপ্রেষিত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সম্পদ, যথা— যন্ত্রপাতি, কাগজপত্র, কম্পিউটার, টাইপরাইটার ও অন্যান্য মালামাল সঠিকভাবে সংরক্ষণে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে। 
  8. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি (Enhancement of organisation’s goodwill): কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজ করলে তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়নে সদা তৎপর থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পায়। 
  9. ব্যবস্থাপনা-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন (Development of management-labour relation): কর্মীদের প্রেষণা উঁচু মানের হলে তারা ব্যবস্থাপকদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এতে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।
  10. সৃজনশীলতার বিকাশ (Manifestation of creativity): কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজমান থাকলে তারা সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা বিকাশে উদ্যোগী হয়। তাদের নব নব ধারণা ও উন্নয়নমূলক চিন্তা প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। 
  11. সহজতর লক্ষ্য অর্জন (Easy attainment of goals): সর্বোপরি, অনুপ্রেষিত কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি পূর্ণমাত্রায় বজায় থাকে বিধায় তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। 

সুতরাং দেখা যায়, প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প-সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে; এ কারণেই জেলারম্যান (Gellerman) প্রেষণাকে ‘ব্যবস্থাপনার মজ্জা’ বলে অভিহিত করেছেন।

সারাংশ

প্রেষণা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থাকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানবসম্পদ তথা শ্রমিক-কর্মী। শ্রমিক-কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।