০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

জলবায়ু পরিবর্তন কী? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় কী?

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০১:৫৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১
  • / ২২১৭৭ বার পড়া হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তন: শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন, এ রকম হুশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বর্তমানে প্রচুর চর্চিত বিষয়গুলোর একটি হলো– জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেইঞ্জ (climate change)। এই নিবন্ধে খুবই সংক্ষেপে এবং সরলভাবে এই এই জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী প্রভাব পড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে কী করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

জলবায়ু এবং জলনায়ু পরিবর্তন কী?

কোনো একটি এলাকার বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন বা অবস্থা বিরাজমান থাকে তাকে জলবায়ু বলে। সাধারণভাবে কোনো এলাকা বা অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে বলা হয় জলবায়ু।

আবহাওয়ার এই দীর্ঘ সময়ের গড় অবস্থা বা ধরন বদলে যাওয়াকে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন।

যেমন: পৃথিবী গরম হয়ে পড়ছে এবং তার ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ; এটিই জলবায়ুর পরিবর্তন।

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি কী?

মানুষের ওপর প্রভাব

মানুষের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী প্রভাব পড়বে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যাবে মানুষের জীবন যাপন ধরন ও প্রক্রিয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথি পানির সঙ্কট তৈরি হবে এবং খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে; এর প্রভাব সরাসরি আমাদের ওপর অর্থাৎ মানুষের ওপর পড়বে।

কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে; এর ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া

জলবায়ুর পরিবর্তন হলে পৃথিবীতে অতিরিক্ত গরম পড়বে যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই দিকটির কারণেও মানুষের জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। ধনী দেশগুলোর তুলনায় গরীব দেশগুলোতে যে-কোনো ধরনের বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম থাকে বলে গরীব ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এত নেতিবাচক প্রভান বা চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।

পরিবেশের ওপর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন হলে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনই এই অবস্থাটি টের পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে; এতে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পানির নিচে নিমজ্জিত হবে যদি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো না যায় বা প্রতিরোধ না করা যায়।

আমরা জানি যে, সাইবেরিয়ার (Siberia) বা সাইবেরিয়ার মতো যে সকল অঞ্চলে রয়েছে, সেখানে মাটির সাথে জমে রয়েছে প্রচুর বরফ আর ওই বরফে আটকে আছে প্রচুর মিথেন (methane) নামের এক প্রকারের গ্যাস। ওই সকল অঞ্চলেত মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে।

প্রচুর পরিমাণে মিথেন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়লে এটি আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাসে (greenhouse gas) পরিণত হবে; ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এতে পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তন হলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।

প্রকৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

আবহাওয়ার প্রকৃতি বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাণী নিজেদের চিরচেনা বাসস্থান ছেড়ে নতুন কোনো জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে। তবে বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন এত দ্রুত হারে ঘটছে যে, অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার (polar bear) বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ (salmon fish) বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ (Coral reef) বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

কেন এই জলবায়ু পরিবর্তন?

  • প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার মানুষের কর্মকাণ্ডেই প্রধানত দায়ী।
  • মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।
  • বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।
  • বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে

কী ঘটবে ভবিষ্যতে?

শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন, এ রকম হুশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে, যেমন-

  • ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে।
  • ব্রাজিলের মতো দেশে ভয়ানক দাবানল দেখা যাবে।
  • সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।
  • বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
  • আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
  • অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার কী করছে?

বর্তমান শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোও এমনই সুপারিশ করেছে। প্রয়োজনীয় কাজে যেটুকু গ্যাস নিঃসরিত হবে তা অতিরিক্ত গাছ লাগানোর মত ব্যবস্থা নিয়ে ভারসাম্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন দেশ।

দেশগুলো যদি তা করতে পারে তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্রুত গতি কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর পরিণতি এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা কী করছেন?

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে, এতে এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ছে। জলবায়ু নিয়ে যা কিছু আমরা জানি, যতসব পদক্ষেপ ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে শুধু বিজ্ঞানীদের জন্যই। বিজ্ঞানীরা তাদের মতো করে কাজ করে চলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে তারাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কোনো একটি জায়গায় আবহাওয়ার চরম আচরণ যেমন অতিবৃষ্টি বা অতিরিক্ত গরমের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগাযোগ খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা এখন সমর্থ হচ্ছেন। ফলে, এধরনের চরম আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভবিষ্যতে সহজতর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সাধারণ মানুষ কী করতে পারে?

  • গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সাইকেল বা জনপরিবহনের ব্যবহার বাড়াতে পারে।
  • বাড়িতে যাতে গরম বা ঠাণ্ডা কম ঢোকে তার ব্যবস্থা নিতে পারে।
  • মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার কমাতে পারে।
  • বিমান ভ্রমণ কমাতে পারে।
  • বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারে।

আসুন আমরা সবাই মিলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন কী? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় কী?

প্রকাশ: ০১:৫৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

বর্তমানে প্রচুর চর্চিত বিষয়গুলোর একটি হলো– জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেইঞ্জ (climate change)। এই নিবন্ধে খুবই সংক্ষেপে এবং সরলভাবে এই এই জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী প্রভাব পড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে কী করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

জলবায়ু এবং জলনায়ু পরিবর্তন কী?

কোনো একটি এলাকার বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন বা অবস্থা বিরাজমান থাকে তাকে জলবায়ু বলে। সাধারণভাবে কোনো এলাকা বা অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে বলা হয় জলবায়ু।

আবহাওয়ার এই দীর্ঘ সময়ের গড় অবস্থা বা ধরন বদলে যাওয়াকে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন।

যেমন: পৃথিবী গরম হয়ে পড়ছে এবং তার ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ; এটিই জলবায়ুর পরিবর্তন।

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি কী?

মানুষের ওপর প্রভাব

মানুষের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী প্রভাব পড়বে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যাবে মানুষের জীবন যাপন ধরন ও প্রক্রিয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথি পানির সঙ্কট তৈরি হবে এবং খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে; এর প্রভাব সরাসরি আমাদের ওপর অর্থাৎ মানুষের ওপর পড়বে।

কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে; এর ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া

জলবায়ুর পরিবর্তন হলে পৃথিবীতে অতিরিক্ত গরম পড়বে যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই দিকটির কারণেও মানুষের জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। ধনী দেশগুলোর তুলনায় গরীব দেশগুলোতে যে-কোনো ধরনের বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম থাকে বলে গরীব ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এত নেতিবাচক প্রভান বা চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।

পরিবেশের ওপর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন হলে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনই এই অবস্থাটি টের পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে; এতে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পানির নিচে নিমজ্জিত হবে যদি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো না যায় বা প্রতিরোধ না করা যায়।

আমরা জানি যে, সাইবেরিয়ার (Siberia) বা সাইবেরিয়ার মতো যে সকল অঞ্চলে রয়েছে, সেখানে মাটির সাথে জমে রয়েছে প্রচুর বরফ আর ওই বরফে আটকে আছে প্রচুর মিথেন (methane) নামের এক প্রকারের গ্যাস। ওই সকল অঞ্চলেত মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে।

প্রচুর পরিমাণে মিথেন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়লে এটি আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাসে (greenhouse gas) পরিণত হবে; ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এতে পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তন হলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।

প্রকৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

আবহাওয়ার প্রকৃতি বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাণী নিজেদের চিরচেনা বাসস্থান ছেড়ে নতুন কোনো জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে। তবে বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন এত দ্রুত হারে ঘটছে যে, অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার (polar bear) বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ (salmon fish) বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ (Coral reef) বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

কেন এই জলবায়ু পরিবর্তন?

  • প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার মানুষের কর্মকাণ্ডেই প্রধানত দায়ী।
  • মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।
  • বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।
  • বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে

কী ঘটবে ভবিষ্যতে?

শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন, এ রকম হুশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে, যেমন-

  • ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে।
  • ব্রাজিলের মতো দেশে ভয়ানক দাবানল দেখা যাবে।
  • সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।
  • বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
  • আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
  • অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার কী করছে?

বর্তমান শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোও এমনই সুপারিশ করেছে। প্রয়োজনীয় কাজে যেটুকু গ্যাস নিঃসরিত হবে তা অতিরিক্ত গাছ লাগানোর মত ব্যবস্থা নিয়ে ভারসাম্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন দেশ।

দেশগুলো যদি তা করতে পারে তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্রুত গতি কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর পরিণতি এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা কী করছেন?

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে, এতে এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ছে। জলবায়ু নিয়ে যা কিছু আমরা জানি, যতসব পদক্ষেপ ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে শুধু বিজ্ঞানীদের জন্যই। বিজ্ঞানীরা তাদের মতো করে কাজ করে চলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে তারাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কোনো একটি জায়গায় আবহাওয়ার চরম আচরণ যেমন অতিবৃষ্টি বা অতিরিক্ত গরমের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগাযোগ খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা এখন সমর্থ হচ্ছেন। ফলে, এধরনের চরম আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভবিষ্যতে সহজতর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সাধারণ মানুষ কী করতে পারে?

  • গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সাইকেল বা জনপরিবহনের ব্যবহার বাড়াতে পারে।
  • বাড়িতে যাতে গরম বা ঠাণ্ডা কম ঢোকে তার ব্যবস্থা নিতে পারে।
  • মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার কমাতে পারে।
  • বিমান ভ্রমণ কমাতে পারে।
  • বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারে।

আসুন আমরা সবাই মিলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করি।