বায়ু প্রবাহ, বায়ু প্রবাহের নিয়ম এবং বায়ু প্রবাহের প্রভাব
- প্রকাশ: ১২:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২
- / ৩১৬৭ বার পড়া হয়েছে
উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর নিয়মিত চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে। এখানে বায়ু প্রবাহের সংজ্ঞা, নিয়ম ও বায়ু প্রবাহের প্রভাব সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
বায়ুপ্রবাহ কী?
বায়ুর চলাচল নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং বায়ু সবসময়ই একস্থান হতে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়, ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরাল অর্থাৎ আনুভূমিকভাবে বায়ুর এ সঞ্চালনকে বলা হয় বায়ুপ্রবাহ। বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের কারণ।
বায়ু পরিচালিত হবার নিয়ম কী কী?
বায়ু সাধারণত কয়েকটি বিশেষ নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়-
- নিম্নচাপমণ্ডলের উত্তপ্ত ও হালকা বায়ু যখন উপরে উঠে যায় তখন বায়ুমণ্ডলে চাপের অসমতা সৃষ্টি হয়। ফলে উচ্চ তাপমণ্ডল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু সবর্দা নিম্নচাপমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়।
- পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তনশীল এবং নিরক্ষরেখা থেকে মেরূ অঞ্চলের দিকে আবর্তনের কারণে গতিবেগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
বায়ু প্রবাহের প্রভাবসমূহ কী
- বায়ু এক প্রকার গতিশীল শক্তি যা পৃথিবীপৃষ্ঠ, তার আশেপাশে ও উর্ধ্বে সর্বদা প্রবাহমান।
- বায়ুমণ্ডলে নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান ও অন্যান্য উপাাদনসমূহের ঘনত্বের সমন্বয়ে বায়ু একটি অনন্য প্রাকৃতিক শক্তি।
- বায়ুপ্রবাহের নানা গতি ও প্রকৃতির জন্য প্রবল বাতাস, ঝড়, হারিকেন, টাইফুন, হাওয়া, বজ্রঝড় ইত্যাদি আবহাওয়ার অবস্থা দৃশ্যমান হয়।
- এছাড়াও মানব সভ্যতার বিকাশ, ইতিহাস ও যুদ্ধ-বিগ্রহ, ক্ষমতার উৎস নির্ধারণ করা, পরিবহন, চিত্তবিনোদন, দৈনন্দিন জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ইত্যাদির অগ্রগতিতে বায়ুপ্রবাহের প্রভাব সীমাহীন।
- বায়ুপ্রবাহের জন্যই ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা সৃষ্টি, জমির উর্বরতার হ্রাস-বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয়, জমির গঠন, বাস্তুসংস্থানের সক্রিয়তা, পানিচক্র বা খাদ্য চক্রের মত প্রক্রিয়ার স্বাভাবিকতা রক্ষা ইত্যাদিতে পরিবর্তন ঘটে।
- বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, ঘনত্ব ইত্যাদির কারণে বায়ুপ্রবাহ প্রভাবিত হয়। বায়ুপ্রবাহের কারনেই আকাশ ও মহাকাশযান সমূহ সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। এই বায়ুপ্রবাহের ধরনের ভিন্নরূপের কারণে (ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী) পৃথিবীর সুমেরূ ও কুমেরূ বৃত্তে আবহাওয়া ও জলবায়ুতে পার্থক্য তৈরি হয়।
- একেক স্থানের বায়ুপ্রবাহের একেক মাত্রার জলীয়বাষ্পের উপস্থিতির কারণেই বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশার মত ইত্যাদি আবহাওয়ার অবস্থারও তারতম্য দেখা যায়। সূর্যের তাপ বিকিরণ, তাপ বিচ্ছুরন ও জমি বা মাটির তাপ শোষণ ক্ষমতাকেও এই বায়ুপ্রবাহ প্রভাবিত করে। যেমন— উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্র হাওয়া ও ভূমির তাপ শোষণক্ষমতায় বায়ু গুরূত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।
- বায়ুপ্রবাহের কারণে নানারকম নৌযান, আকাশযান, যুদ্ধবিমান, মহাকাশযান পরিবহনের গতি নির্ধারিত হয়। বায়ুপ্রবাহের শক্তি দ্বারাই বায়ু ঘূর্ণনযন্ত্র চালিত হয়। ফলে পৃথিবীব্যাপি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এছাড়াও বায়ুপ্রবাহের শক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যবহনকারী বিশাল জাহাজের পাওয়ার বা চলার শক্তি প্রদান করা হয়। বায়ুপ্রবাহের কারণেই বেশ কিছু জনপ্রিয় খেলা যেমন— ঘুড়ি ওড়ানো, স্নোকাইটিং, ঘুড়ি সাফিং ইত্যাদি সারা পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে।
- এছাড়াও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভূমিক্ষয়ের একটি বড় কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ। বায়ুপ্রবাহের প্রভাবেই ছোট বালুকণা ও ধূলিকণা বায়ুসঞ্চালন দ্বারা একস্থান থেকে আরেক স্থানে প্রবাহিত হয়।
- গাছের পরাগায়নের জন্যও বায়ুপ্রবাহ গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়ু যখন প্রবাহিত হয় তখন বাতাসের সাথে ভেসে যাওয়া গাছের বীজ একস্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তরিত হয় আর এভাবেই বহু গাছপালা গজিয়ে উঠে।। গাছের চারা বৃদ্ধিতেও এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাব সীমাহীন। কোনো কোনো উপকূলীয় ও পার্বত্য অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের কারণে গাছের চারার বৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে।
- পোকামাকড়ের পরিবহন, প্রাণি ও জীবজগতের খাদ্যশৃংখলা রক্ষা, জীবনধারণ এবং শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করায় বায়ুপ্রবাহ গুরূত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
সুতরাং মানবিক ও প্রাকৃতিক উভয় ক্ষেেত্র বায়ুপ্রবাহের প্রভাব সীমাহীন।
সারাংশ
ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরাল অর্থাৎ আনুভূমিকভাবে বায়ুর সঞ্চালন হওয়াকেই বলা হয় বায়ুপ্রবাহ। প্রাকৃতিক জীবনে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের জীবনধারণের পাশাপাশি ভূ-প্রাকৃতিক গঠন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয়, ধূলিকণা স্থানান্তর, শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টিতে বায়ুপ্রবাহের ভূমিকা গুরূত্বপূর্ণ। মানবজীবনে নানাপ্রকার অগ্রগতি, সভ্যতার বিকাশে এই বায়ুপ্রবাহ অসামান্য অবদান রাখে।