২৪ সেপ্টেম্বর: মীনা দিবস
- প্রকাশ: ১০:৪৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ২৬২৬ বার পড়া হয়েছে
২৪ সেপ্টেম্বর ‘মীনা দিবস’। বিদ্যালয়ে যেতে সক্ষম শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ এবং ঝরেপড়া রোধের অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্বে পালিত হয় ইউনিসেফের ঘোষিত দিবসটি।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উন্নয়নের পাশাপাশি বাল্য বিয়ে, পরিবারে অসম খাদ্য বণ্টন, শিশুশ্রম রোধ প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন করা ও কার্যকর বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ‘মীনা’ চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মীনা শিশু-কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় বাংলা কার্টুন। এ কার্টুন ছবিটি তৈরি করেছে ইউনিসেফ।
কার্টুনের মূল চরিত্র মীনা আট বছর বয়সের কন্যাশিশু। সে তার পরিবারের সঙ্গে একটি ছোট গ্রামে বাস করে। এ চরিত্রের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার চিত্র ফুটে ওঠে। মীনা কার্টুনে একটি পরিবারের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে মীনা সময়মতো স্কুলে যায়, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে এবং পরিবারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। মীনা চরিত্রটি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল তথা দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েশিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি বালিকা চরিত্র। ১৯৯৮ সাল থেকে দেশব্যাপী মীনা দিবস উদযাপন করছে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। প্রতি বছর ২৪ সেপ্টেম্বর দিবসটি উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর মীনা দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি, মীনাবিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ হয়।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল ছিল মেয়ে শিশুর দশক। একটি এনিমেটেড চলচ্চিত্র সিরিজ তৈরি করে তার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়ে, তাদের পরিবার ও কমিউনিটিকে আনন্দ দেওয়া ও উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে এই দশক উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউনিসেফ। মীনা হল এই সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
এই চরিত্র উপযোগী নাম ও চেহারা ঠিক করতে অনেকগুলো গবেষণা করা হয়েছিল। আমরা আজকে যে মীনাকে চিনি, তার এই চেহারা ঠিক করার আগে চার দেশের শিল্পীরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মেয়েদের চেহারা উপজীব্য করে কয়েক ডজন ছবি এঁকেছিলেন।বাংলাদেশে ইউনিসেফের বড় অর্জনগুলোর একটি ‘মীনা’।
প্রথম দিকের পর্বগুলো নির্মাণের সময় মীনার পোশাক এবং তার জীবনাচরণ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে ১০ হাজারেরও বেশি শিশুর মতামত নেয় ইউনিসেফ। দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই মীনা নামটি খুব পরিচিত।বাংলাদেশে শহরের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিশু এবং গ্রামের ৮১ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মীনাকে চেনে।
মীনা প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর নয় বছরের একটি মেয়ে, যে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। হোক তা তার স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে অথবা শিশুদেও বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। শিশুদের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান বিষয়গুলো সামাল দিতে পারার কারণে মীনা চরিত্রটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিবার ও কমিউনিটির সদস্যদের কেন্দ্র করে মীনা, তার ভাই রাজু ও তার পোষা টিয়া মিঠুর রোমাঞ্চকর নানা কর্মকা- নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সিরিজের গল্পগুলো।বাংলাদেশেই প্রথম মীনা সম্প্রচারিত হয়, যেখানে স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটির সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘মুরগিগুলো গুনে রাখো’ শিরোনামে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে’ সম্প্রচার হয়েছিল এর প্রথম পর্ব।
২৫ বছর পরেও মীনা আছে এবং ক্রমশ বড় হচ্ছে। প্রথম দিকের বিষয়গুলো এখনও প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর।
এরপর থেকে টেলিভিশনে ২৬ পর্বের পাশাপাশি রেডিও অনুষ্ঠান, কমিক ও বইয়ে এসেছে মীনা। প্রতিবছর ইউনিসেফ মীনার নতুন গল্প প্রকাশ করে, যা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের শিশু ও বয়স্করা পড়ে ও দেখে।মীনা পর্বগুলি স্থানীয় ভাষায় অনুবাদের পাশাপাশি লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামেও তা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
মানুষ কোন গল্পগুলো শুনতে চায় তা বের করতে ইউনিসেফ শিশুদের মতামত নিয়ে আসছে এবং এটা তাদের প্রত্যাশা পূরণের একটি পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করছে।
লিঙ্গ, শিশু অধিকার, শিক্ষা, সুরক্ষা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসাবে মীনাকে ব্যবহার করা হয়। মীনার গল্পগুলোতে মেয়েদের সমান অধিকার, ভালোবাসা, সেবা ও মর্যাদা অর্জনের জন্য সব প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াইরত একটি মেয়ের অনেক ইতিবাচক ভাবমূ্র্তি তুলে ধরা হয়।সৃষ্টিশীল ও চমকপ্রদ গল্পে আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর উপস্থাপনে নানা সামাজিক সংকট তুলে ধরা হয়।
মূল বিষয়বস্তগুলো ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, নেপালি ও উর্দু- এই পাঁচটি ভাষায় করা হয়। এগুলোই আবার অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ভাষা এবং ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত বা টেলিভিশন পর্বে কণ্ঠ দেওয়া হয়।
মীনার কমিউনিকেশন প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে কমিক বই, এনিমেটেড ফিল্ম, পোস্টার, আলোচনা, শিক্ষকদের গাইড এবং রেডিও সিরিজ (বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মিত)।
মীনার ভক্ত এখন দ্বিতীয় প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিমেটেড চলচ্চিত্রই হল মীনার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম, যেখানে একদল চরিত্র এবং একগুচ্ছ গল্প মানুষের সামনে চলে আসে। তা দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগায় এবং একটি নতুন পথে দর্শককে নিয়ে যায়। গল্পের মূল অংশজীবনের কাছে চলে আসে, দর্শকদের কল্পনা ও মনোযোগকে আকৃষ্ট করে এবং সৃষ্টিশীল ফোকাস প্রদান করে।
সংবাদমাধ্যমে শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাতে আরও ভালো হয় সেলক্ষ্যে সাংবাদিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০০৫ সালে মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড চালু করে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ইউনিসেফ একটি সরাসরি রেডিও শো শুরু করে যেখানে মীনা, মিঠু ও রাজুকে উপস্থাপক হিসাবে দেখানো হয়। এক ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান চলাকালেই সারাদেশ থেকে প্রায় এক হাজার শিশুর ফোন আসে। ২০১৬ সালে ইউনিসেফের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ একটি ব্যয়বিহীন অ্যাপ হিসাবে ‘মীনা গেম’ চালূ করেছে এবং আট লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যেই এটি ডাউনলোড করেছে।
শিশুদের জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে আনন্দদায়ক উপায়ে নিজেদের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলো শিখতে পারে তারা।
অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের এই যুগে ‘ডিজিটাল ফুটিং’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। এই প্ল্যাটফর্মটি যাতে মানুষের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ করতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।