০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অগ্নি বিমার উপাদান এবং অগ্নিজনিত ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ দাবি

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ০২:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৯৯২ বার পড়া হয়েছে

বিমা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

অগ্নি বিমার অপরিহার্য উপাদান (Essential Elements of Fire Insurance)

অগ্নি বিমা এক ধরনের ক্ষতিপূরণের চুক্তি। অগ্নি বিমা চুক্তির অনেকগুলো অপরিহার্য উপাদান আছে যা না থাকলে এটিকে অগ্নি বিমা চুক্তি বলা যাবে না।

অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদান

নিচে অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদানগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:

পক্ষ: অগ্নি বিমায় ২টি পক্ষ থাকবে- একটি বিমাগ্রহীতা ও অন্যটি বিমাকারী। যিনি তার সম্পদের ঝুঁকি অপরের নিকট হস্তান্তর করেন তিনিই বিমাগ্রহীতা। আর যে প্রতিষ্ঠান সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করে তাকে বিমাকারী বলে। 

প্রস্তাব: সাধারণত বিমা কোম্পানির মুদ্রিত ফরম পূরণ করে একজন বিমাগ্রহীতা তার সম্পদ অগ্নি বিমা করার জন্য লিখিতভাবে বিমাকারীকে প্রস্তাব করে। 

প্রস্তাব মূল্যায়ন: লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পর বিমাকারী কোম্পানি তাদের বিশেষজ্ঞ াধষঁবৎ দ্বারা সম্পত্তির মূল্যায়ন করে। ঝুঁকি গ্রহণ করা যায় কি না, করলে কি পরিমাণ প্রিমিয়াম ধার্য করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। 

স্বীকৃতি প্রস্তাব: প্রস্তাব পত্রটি বিচার বিশ্লেষণের পর বিমাকারী প্রস্তাব গ্রহণ করে বা বর্জন করে। যদি কোনো সময় উল্লেখ না থাকে তবে স্বীকৃতির সাথে সাথে তা কার্যকর হয়। 

পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব: বিমাকারী সাময়িকভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে থাকলে বিমাপত্র প্রদানের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ঝুঁকি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিমাগ্রহীতাকে একটি ঋণ স্বীকৃতিপত্র প্রদান করে। বিমাপত্র প্রদানের পূর্বেই যদি বিমাকৃত সম্পদের ক্ষতি হয়, তবে বিমা গ্রহীতা উক্ত ঋণ স্বীকৃতি পত্র প্রদর্শন বা দাখিল করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। 

বিমাপত্র প্রদান: বিমা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিমাকারী বিমা গ্রহীতাকে চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন শর্ত ও তথ্যাদি উল্লেখ করে বিমাপত্র প্রদান করে থাকে। অগ্নি বিমাপত্র সাধারণত এক বছরের জন্য হয়ে থাকে। 

অগ্নি বিমার বিশেষ উপাদান

নিচে অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদানের বাইরে আরও কিছু উপাদান আছে, এগুলোকে বিশেষ উপাদান বলে। নিচে বিশেষ উপাদানগুলো বর্ণনা করা হলো: 

১. বিমাযোগ্য স্বার্থ: বিমার বিষয়বস্তুর উপর বিমাগ্রহীতার যে আর্থিক স্বার্থ জড়িত থাকে তাকে বিমাযোগ্য স্বার্থ বলে। অন্যান্য বিমার ন্যায় অগ্নি বিমার ক্ষেত্রেও বিমাযোগ্য স্বার্থ অপরিহার্য। যেমন, বিমার বিষয়বস্তুটি দৃশ্যমান হতে হবে, এটা অবশ্যই বিমার বিষয়বস্তু হতে হবে এবং বিমার বিষয়বস্তুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 

নিচে বিমাযোগ্য স্বার্থের বিবরণ দেওয়া হলো : 

  • সম্পদের মালিকের সম্পদের উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে। তবে কখনও কখনও পূর্ণ মালিক বা মালিক না হয়েও বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকতে পারে। যেমন, কোনো আজীবন ভাড়াটের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উক্ত বাড়ির উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ বিদ্যমান।
  • প্রতিনিধির মালিকের সম্পদের উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • পাওনাদারের কাছে রক্ষিত দেনাদারের কোনো সম্পত্তির উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • বন্ধকী সম্পত্তির উপর বন্ধকগ্রহীতার বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • গচ্ছিত সম্পদের উপর গচ্ছিতগ্রহীতার বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে। 

২. চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস: অগ্নি বিমার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত বিশ্বাস একটি অপরিহার্য উপাদান। উভয়পক্ষকেই চুক্তি গঠন থেকে শুরু করে চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত এ বিশ্বাস রক্ষা করে চলতে হবে। যদি কোনো পক্ষ কোনো বিশ্বাস ভঙ্গ করে তবে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। উভয় পক্ষই চুক্তির বিষয়বস্তু ও চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি সঠিক ও পূর্ণভাবে প্রকাশ করবে। তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে তথ্য প্রকাশ করা হয় না : 

  • যে তথ্য ঝুঁকি হ্রাস করে,
  • যে সকল তথ্য স্বাভাবিকভাবে সকলের জানার কথা,
  • যে সকল তথ্য সরবরাহকৃত তথ্য থেকে জানা যায়,
  • যে সকল তথ্য সার্বজনীন; ও
  • যে সকল তথ্য সম্পর্কে চুক্তি অনুযায়ী প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। 

৩. ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিপূরণ অগ্নি বিমার অন্যতম উপাদান। বিমাকৃত বিষয়বস্তু আগুন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমাকারী বিমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। তবে ক্ষতিপূরণ পেতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে- 

  • ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়বস্তুটি বিমাকৃত হতে হবে;
  • ক্ষতি অবশ্যই বিমাকৃত কারণ দ্বারা হতে হবে; 
  • কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করা যাবে না। 

৪. স্থলাভিষিক্ততা: বিমাগ্রহীতাকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর যদি তৃতীয় পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় বা আদায় হয়ে থাকে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ বিক্রি করে কোনো টাকা পাওয়া যায়, তার মালিক বিমাগ্রহীতার স্থলে বিমাকারী হবেন। এই নীতিটি ক্ষতিপূরণ নীতির পরিপূরক। 

৫. প্রত্যক্ষ বা নিকটতম কারণ: বিষয়বস্তু আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমাকারী ক্ষতিপূরণ করে দেবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আগুন লাগার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। একজন বিমাকারী সাধারণ সব কারণগুলোর বিরুদ্ধে বিমা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আগুনে পোড়ার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে যে কারণটি কাজ করে সেটাই প্রকৃত কারণ।

অগ্নিজনিত ক্ষতি (Fire Perils)

অগ্নিজনিত ক্ষতির সংজ্ঞা 

অগ্নিকান্ডের ফলে সম্পদ ধ্বংসের ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তাকে অগ্নিজনিত ক্ষতি বলা হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি দুই ধরনের, যথা- প্রত্যক্ষ কারণ ও পরোক্ষ কারণ। 

প্রত্যক্ষ কারণসমূহ

১. অজ্ঞতা বা অনভিজ্ঞতা: অনেক সময় অজ্ঞতা বা অভিজ্ঞতার অভাবে আগুনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। ফলে অতি সহজে অগ্নিজনিত ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে, আর ব্যাপকতাও হয় অধিক পরিমাণে। 

২. অবহেলা ও অবজ্ঞা: অবহেলা ও অবজ্ঞার জন্য আমাদের অনেক অগ্নি ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। যেমন: যেখানে সেখানে দাহ্য জিনিস ফেলে রাখা, বিপদজনক জায়গায় ধূমপান, দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, ত্রুটিপূর্ণ সংরক্ষণ ইত্যাদি। 

৩. ত্রুটিপূর্ণ শক্তি ব্যবস্থা: যে সকল কারখানা গ্যাস, কয়লা বা বিদ্যুৎ-এর সাহায্যে পরিচালিত হয়, সেখানে অগ্নিকান্ড বেশি হয়। আমাদের দেশে পোষাক কারখানায় প্রায়ই বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন ধরে জানমালের ক্ষতি হয়ে থাকে। 

৪. বিপদজনক প্রক্রিয়া: অনেক কলকারখানা বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। এ ধরনের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

৫. অসতর্কতা: অজ্ঞতার চেয়েও অসতর্কতা অগ্নিকান্ডের জন্য আমাদের দেশে বেশি দায়ী। কারণ জেনেশুনে কারখানার যেখানে সেখানে দাহ্য পদার্থ ফেলে রাখা হয়। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে আমরা সতর্কতা বা নিয়ম কানুন মেনে চলি না, যার ফলে অনেক অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হয়। 

৬. অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার অভাব: আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। ঝুঁকির কথা জানা সত্বেও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়না বিধায় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় ব্যাপক অগ্নিক্ষতি হয়ে থাকে। এ কারণে বর্তমানে আমাদের দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। 

৭. শত্রু কর্তৃক অগ্নিসংযোগ: অনেক সময় শত্রুতাবশত ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদ বা শিল্প কারখানায় অগ্নি সংযোগ ঘটান হয়। এজন্য অচেনা লোকদের যাতায়াত বন্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ করতে হয়। 

পরোক্ষ কারণসমূহ

অগ্নিকান্ডের পরোক্ষ কারণগুলো প্রত্যক্ষভাবে অগ্নিকান্ড ঘটায় না বটে, তবে অগ্নিক্ষতির ব্যাপকতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিচে অগ্নিক্ষতির পরোক্ষ কারণগুলো বর্ণনা করা হলো: 

১. ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাঠামো: প্রতিষ্ঠানের ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাঠামো অগ্নি ঝুঁকি বাড়ায় ও এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। পণ্যের প্রকৃতি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে উপযুক্ত উপকরণ দ্বারা কারখানা-গৃহ নির্মাণ না করলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

২. পিঠাপিঠি অবস্থান: প্রতিষ্ঠানের দালানগুলো যদি খুব কাছাকাছি অবস্থিত হয় তবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে অগ্নিক্ষতি ব্যাপক হয়। তাই দালানগুলো নিরাপদ দূরত্বে নির্মিত হওয়া উচিৎ। 

৩. প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি: প্রতিষ্ঠান কি কাজে ব্যবহৃত হয় তার উপরও অগ্নিক্ষতির ব্যাপকতা নির্ভর করে। সাধারনত, বাড়ি থেকে শিল্প কারখানায় অগ্নিক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। পুরানো ঢাকায় এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড বেশি হয়। 

৪. দাহ্য পদার্থ গুদামজাতকরণ দাহ্যবস্তু গুদামজাত করা থাকলে যে-কোনো সময় আগুন লাগতে পারে। 

৫. সম্পদের ইচ্ছাকৃত ধ্বংস: অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট সম্পত্তি ধ্বংস করার সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। 

৬. ভবন ধ্বসে পড়া: অনেক সময় পুরান দালান কোঠা বা ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাজের কারণে হঠাৎ দালান ধ্বসে পড়ে অগ্নিকান্ড ঘটাতে পারে ও তা ব্যাপক আকারে হতে পারে। 

এছাড়াও অগ্নি বিস্তার, কলকারখানা বা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া, তাপ উদ্গিরণ ইত্যাদি কারণে অগ্নিজনিত ক্ষতি হতে পারে।

অগ্নি বিমায় ক্ষতিপূরণ দাবি ও মীমাংসা পদ্ধতি

ক্ষতিপূরণ দাবি

অনেক সময় বিমাগ্রহীতা জানেন না বিমাকৃত কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বা গ্রাহক সেবার মান কেমন। এসব না জানার কারণে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকাংশ গ্রাহককে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।

কোম্পানিগুলো সাধারণত অগ্নি বিমা দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে জরিপকারী নিয়োগ করে। এক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ করতে গ্রাহককে সচেতন থাকতে হয়। কেননা দাবিটি নিষ্পত্তি করার জন্য বিমা কোম্পানি নানান কৌশল অবলম্বন করে। সঠিকভাবে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো: 

অগ্নি বিমা থেকে সুবিধা পেতে প্রত্যেক গ্রাহককে অগ্নি বিমা পলিসি করার সময় থেকেই সচেতন থাকা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো, বিমা চুক্তিতে প্রয়োজনীয় সব বিষয় আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। সেগুলো অবশ্যই দেখে-বুঝে নিতে হবে। যেমন, তার কি ধরণের কভারেজ আছে, কি কি বিষয় কভারেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাবি উত্থাপনের শর্তগুলো কী, কত দিনের মধ্যে দাবি উত্থাপন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় বুঝে নেয়ার পর তাকে নিশ্চিত হতে হবে, পলিসির প্রিমিয়ামের টাকা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হলো কি না। এক্ষেত্রে পলিসি করার জন্য কোনো ব্যক্তির হাতে প্রিমিয়ামের টাকা না দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা করা উচিত। 

বিমা কোম্পানির অ্যাডজাস্টার বা সমন্বয়কারীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে রেকর্ড রাখুন। এসব রেকর্ডের পৃথক ফাইল করুন। যখন কোনো তথ্য বা নথি অ্যাডজাস্টারের কাছে জমা দেবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিটি নথির অনুলিপি সংগ্রহ করুন। 

বিমাচুক্তি চূড়ান্ত বিশ্বাসের চুক্তি। তাই চুক্তিভুক্ত দুটি পক্ষের যে কেউ যদি মিথ্যার আশ্রয় নেয় তবে চুক্তি বাতিলযোগ্য। 

বিমাপত্রে যে সকল তথ্য চাওয়া হয় তার মধ্যে বিমাকৃত সম্পত্তি পূর্বে বিমা করা হয়েছে কিনা, বিমা গ্রহীতার কখনো লোকসান হয়েছে কিনা, কোনো বিমা কোম্পানি উক্ত সম্পত্তি বিমা করতে বা নবায়ন করতে অস্বীকার করেছে কিনা ইত্যাদি 

প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিলে বা মিথ্যা বর্ণনার আশ্রয় নিলে চূড়ান্ত বিশ্বাস ভঙ্গ হয় এবং বিমা বাতিলযোগ্য হয়। ফলে বিমাকারী বিমা দাবী অস্বীকার করতে পারে। 

অগ্নিজনিত কারণে ক্ষতিসাধন হলে যে নিয়মে দাবী উত্থাপন করতে হয় তা এখানে উল্লেখ করা হলো:

  • ক্ষতি হওয়ার সাথে সাথে বিমাগ্রহীতা বিমাকারীকে বিলম্ব না করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানাবে;
  • ক্ষতি সংঘটিত হবার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ লিখিতভাবে বিমাকারীকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ বিমাগ্রহীতা বহন করবে।
  • বিমাকারী চাইলে বিমাগ্রহীতাকে দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও তথ্যাদিসহ একটি সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা পেশ করতে হবে।
  • বিমাকারী বা তার প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংশপ্রাপ্ত সম্পদের দখল নিতে পারবে বা যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে প্রবেশ করতে পারবে;
  • বিমাকারী বিমাকৃত সম্পত্তির দখল নিতে পারবে এবং সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহণ করতে পারবে;
  • বিমাকারী যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের দখল বজায় রাখতে এবং ব্যবহার করতে পারবে। 

বিমাকারী ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের ভবিষ্যৎ ক্ষতি কমাতে তার অধিকার সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করতে পারেন। আরও উল্লেখ্য যে, বিমা গ্রহীতা এ ধরনের কাজে বাধা দান করলে বিমাকারী বিমাগ্রহীতার অধিকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

অনেক সময় একই সম্পত্তি একাধিক বিমাকারীর নিকট বিমা করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি হলে সকল বিমাকারীকে অনুপাতিক হারে ক্ষতি প্রদানে অংশগ্রহণ করতে হয়। একাধিক বিমাকারীর সাথে বিমা করা হলে সহবিমাকারীগণ ক্ষতির অংশ আনুপাতিক হারে পূরণ করে দিবে। বিমাকৃত সম্পত্তির মোট বিমাকৃত অর্থের সাথে সব ক’টি বিমাপত্রের বিমাকৃত অর্থের যে অনুপাত হয় সব ক্ষতিকে সে অনুপাতে ভাগ করলে প্রত্যেক বিমাকারীর ক্ষতির অংশ বের হয়ে যায়।

অগ্নি বিমাপত্রে যেসব শব্দ থাকে

একটি আদর্শ অগ্নি বিমাপত্রে যে সকল ব্যক্ত শর্ত ও শব্দাবলি থাকে বা ব্যবহৃত হয় তা হলো মিথ্যা বর্ণনাযুক্ত রদবদল, বর্জনসমূহ, বিমাদাবী, প্রতারণা, পুনঃস্থাপন, অগ্নিকান্ডের পর বিমাকারীর অধিকার, অংশগ্রহণ বন্টনগড়, স্থলাভিষিক্ততা, বিমাকৃত সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিলি শর্তাবলি, সালিসি, ক্রেতার স্বার্থ ধারা, ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি।

আর অব্যক্ত উহ্য শর্তাবলী হলো, সম্পত্তিরবিদ্যমানতা, বিমাকৃত সম্পত্তি, বিমাযোগ্য স্বার্থ, চূড়ান্ত বিশ্বাস, সনাক্ততা প্রভৃতি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

অগ্নি বিমার উপাদান এবং অগ্নিজনিত ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ দাবি

প্রকাশ: ০২:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অগ্নি বিমার অপরিহার্য উপাদান (Essential Elements of Fire Insurance)

অগ্নি বিমা এক ধরনের ক্ষতিপূরণের চুক্তি। অগ্নি বিমা চুক্তির অনেকগুলো অপরিহার্য উপাদান আছে যা না থাকলে এটিকে অগ্নি বিমা চুক্তি বলা যাবে না।

অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদান

নিচে অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদানগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:

পক্ষ: অগ্নি বিমায় ২টি পক্ষ থাকবে- একটি বিমাগ্রহীতা ও অন্যটি বিমাকারী। যিনি তার সম্পদের ঝুঁকি অপরের নিকট হস্তান্তর করেন তিনিই বিমাগ্রহীতা। আর যে প্রতিষ্ঠান সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করে তাকে বিমাকারী বলে। 

প্রস্তাব: সাধারণত বিমা কোম্পানির মুদ্রিত ফরম পূরণ করে একজন বিমাগ্রহীতা তার সম্পদ অগ্নি বিমা করার জন্য লিখিতভাবে বিমাকারীকে প্রস্তাব করে। 

প্রস্তাব মূল্যায়ন: লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পর বিমাকারী কোম্পানি তাদের বিশেষজ্ঞ াধষঁবৎ দ্বারা সম্পত্তির মূল্যায়ন করে। ঝুঁকি গ্রহণ করা যায় কি না, করলে কি পরিমাণ প্রিমিয়াম ধার্য করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। 

স্বীকৃতি প্রস্তাব: প্রস্তাব পত্রটি বিচার বিশ্লেষণের পর বিমাকারী প্রস্তাব গ্রহণ করে বা বর্জন করে। যদি কোনো সময় উল্লেখ না থাকে তবে স্বীকৃতির সাথে সাথে তা কার্যকর হয়। 

পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব: বিমাকারী সাময়িকভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে থাকলে বিমাপত্র প্রদানের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ঝুঁকি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিমাগ্রহীতাকে একটি ঋণ স্বীকৃতিপত্র প্রদান করে। বিমাপত্র প্রদানের পূর্বেই যদি বিমাকৃত সম্পদের ক্ষতি হয়, তবে বিমা গ্রহীতা উক্ত ঋণ স্বীকৃতি পত্র প্রদর্শন বা দাখিল করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। 

বিমাপত্র প্রদান: বিমা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিমাকারী বিমা গ্রহীতাকে চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন শর্ত ও তথ্যাদি উল্লেখ করে বিমাপত্র প্রদান করে থাকে। অগ্নি বিমাপত্র সাধারণত এক বছরের জন্য হয়ে থাকে। 

অগ্নি বিমার বিশেষ উপাদান

নিচে অগ্নি বিমার সাধারণ উপাদানের বাইরে আরও কিছু উপাদান আছে, এগুলোকে বিশেষ উপাদান বলে। নিচে বিশেষ উপাদানগুলো বর্ণনা করা হলো: 

১. বিমাযোগ্য স্বার্থ: বিমার বিষয়বস্তুর উপর বিমাগ্রহীতার যে আর্থিক স্বার্থ জড়িত থাকে তাকে বিমাযোগ্য স্বার্থ বলে। অন্যান্য বিমার ন্যায় অগ্নি বিমার ক্ষেত্রেও বিমাযোগ্য স্বার্থ অপরিহার্য। যেমন, বিমার বিষয়বস্তুটি দৃশ্যমান হতে হবে, এটা অবশ্যই বিমার বিষয়বস্তু হতে হবে এবং বিমার বিষয়বস্তুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 

নিচে বিমাযোগ্য স্বার্থের বিবরণ দেওয়া হলো : 

  • সম্পদের মালিকের সম্পদের উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে। তবে কখনও কখনও পূর্ণ মালিক বা মালিক না হয়েও বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকতে পারে। যেমন, কোনো আজীবন ভাড়াটের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উক্ত বাড়ির উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ বিদ্যমান।
  • প্রতিনিধির মালিকের সম্পদের উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • পাওনাদারের কাছে রক্ষিত দেনাদারের কোনো সম্পত্তির উপর বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • বন্ধকী সম্পত্তির উপর বন্ধকগ্রহীতার বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে।
  • গচ্ছিত সম্পদের উপর গচ্ছিতগ্রহীতার বিমাযোগ্য স্বার্থ থাকে। 

২. চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস: অগ্নি বিমার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত বিশ্বাস একটি অপরিহার্য উপাদান। উভয়পক্ষকেই চুক্তি গঠন থেকে শুরু করে চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত এ বিশ্বাস রক্ষা করে চলতে হবে। যদি কোনো পক্ষ কোনো বিশ্বাস ভঙ্গ করে তবে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। উভয় পক্ষই চুক্তির বিষয়বস্তু ও চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি সঠিক ও পূর্ণভাবে প্রকাশ করবে। তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে তথ্য প্রকাশ করা হয় না : 

  • যে তথ্য ঝুঁকি হ্রাস করে,
  • যে সকল তথ্য স্বাভাবিকভাবে সকলের জানার কথা,
  • যে সকল তথ্য সরবরাহকৃত তথ্য থেকে জানা যায়,
  • যে সকল তথ্য সার্বজনীন; ও
  • যে সকল তথ্য সম্পর্কে চুক্তি অনুযায়ী প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। 

৩. ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিপূরণ অগ্নি বিমার অন্যতম উপাদান। বিমাকৃত বিষয়বস্তু আগুন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমাকারী বিমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। তবে ক্ষতিপূরণ পেতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে- 

  • ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়বস্তুটি বিমাকৃত হতে হবে;
  • ক্ষতি অবশ্যই বিমাকৃত কারণ দ্বারা হতে হবে; 
  • কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করা যাবে না। 

৪. স্থলাভিষিক্ততা: বিমাগ্রহীতাকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর যদি তৃতীয় পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় বা আদায় হয়ে থাকে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ বিক্রি করে কোনো টাকা পাওয়া যায়, তার মালিক বিমাগ্রহীতার স্থলে বিমাকারী হবেন। এই নীতিটি ক্ষতিপূরণ নীতির পরিপূরক। 

৫. প্রত্যক্ষ বা নিকটতম কারণ: বিষয়বস্তু আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমাকারী ক্ষতিপূরণ করে দেবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আগুন লাগার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। একজন বিমাকারী সাধারণ সব কারণগুলোর বিরুদ্ধে বিমা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আগুনে পোড়ার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে যে কারণটি কাজ করে সেটাই প্রকৃত কারণ।

অগ্নিজনিত ক্ষতি (Fire Perils)

অগ্নিজনিত ক্ষতির সংজ্ঞা 

অগ্নিকান্ডের ফলে সম্পদ ধ্বংসের ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তাকে অগ্নিজনিত ক্ষতি বলা হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি দুই ধরনের, যথা- প্রত্যক্ষ কারণ ও পরোক্ষ কারণ। 

প্রত্যক্ষ কারণসমূহ

১. অজ্ঞতা বা অনভিজ্ঞতা: অনেক সময় অজ্ঞতা বা অভিজ্ঞতার অভাবে আগুনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। ফলে অতি সহজে অগ্নিজনিত ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে, আর ব্যাপকতাও হয় অধিক পরিমাণে। 

২. অবহেলা ও অবজ্ঞা: অবহেলা ও অবজ্ঞার জন্য আমাদের অনেক অগ্নি ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। যেমন: যেখানে সেখানে দাহ্য জিনিস ফেলে রাখা, বিপদজনক জায়গায় ধূমপান, দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, ত্রুটিপূর্ণ সংরক্ষণ ইত্যাদি। 

৩. ত্রুটিপূর্ণ শক্তি ব্যবস্থা: যে সকল কারখানা গ্যাস, কয়লা বা বিদ্যুৎ-এর সাহায্যে পরিচালিত হয়, সেখানে অগ্নিকান্ড বেশি হয়। আমাদের দেশে পোষাক কারখানায় প্রায়ই বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন ধরে জানমালের ক্ষতি হয়ে থাকে। 

৪. বিপদজনক প্রক্রিয়া: অনেক কলকারখানা বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। এ ধরনের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

৫. অসতর্কতা: অজ্ঞতার চেয়েও অসতর্কতা অগ্নিকান্ডের জন্য আমাদের দেশে বেশি দায়ী। কারণ জেনেশুনে কারখানার যেখানে সেখানে দাহ্য পদার্থ ফেলে রাখা হয়। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে আমরা সতর্কতা বা নিয়ম কানুন মেনে চলি না, যার ফলে অনেক অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হয়। 

৬. অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার অভাব: আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। ঝুঁকির কথা জানা সত্বেও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়না বিধায় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় ব্যাপক অগ্নিক্ষতি হয়ে থাকে। এ কারণে বর্তমানে আমাদের দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। 

৭. শত্রু কর্তৃক অগ্নিসংযোগ: অনেক সময় শত্রুতাবশত ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদ বা শিল্প কারখানায় অগ্নি সংযোগ ঘটান হয়। এজন্য অচেনা লোকদের যাতায়াত বন্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ করতে হয়। 

পরোক্ষ কারণসমূহ

অগ্নিকান্ডের পরোক্ষ কারণগুলো প্রত্যক্ষভাবে অগ্নিকান্ড ঘটায় না বটে, তবে অগ্নিক্ষতির ব্যাপকতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিচে অগ্নিক্ষতির পরোক্ষ কারণগুলো বর্ণনা করা হলো: 

১. ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাঠামো: প্রতিষ্ঠানের ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাঠামো অগ্নি ঝুঁকি বাড়ায় ও এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। পণ্যের প্রকৃতি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে উপযুক্ত উপকরণ দ্বারা কারখানা-গৃহ নির্মাণ না করলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

২. পিঠাপিঠি অবস্থান: প্রতিষ্ঠানের দালানগুলো যদি খুব কাছাকাছি অবস্থিত হয় তবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে অগ্নিক্ষতি ব্যাপক হয়। তাই দালানগুলো নিরাপদ দূরত্বে নির্মিত হওয়া উচিৎ। 

৩. প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি: প্রতিষ্ঠান কি কাজে ব্যবহৃত হয় তার উপরও অগ্নিক্ষতির ব্যাপকতা নির্ভর করে। সাধারনত, বাড়ি থেকে শিল্প কারখানায় অগ্নিক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। পুরানো ঢাকায় এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড বেশি হয়। 

৪. দাহ্য পদার্থ গুদামজাতকরণ দাহ্যবস্তু গুদামজাত করা থাকলে যে-কোনো সময় আগুন লাগতে পারে। 

৫. সম্পদের ইচ্ছাকৃত ধ্বংস: অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট সম্পত্তি ধ্বংস করার সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। 

৬. ভবন ধ্বসে পড়া: অনেক সময় পুরান দালান কোঠা বা ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাজের কারণে হঠাৎ দালান ধ্বসে পড়ে অগ্নিকান্ড ঘটাতে পারে ও তা ব্যাপক আকারে হতে পারে। 

এছাড়াও অগ্নি বিস্তার, কলকারখানা বা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া, তাপ উদ্গিরণ ইত্যাদি কারণে অগ্নিজনিত ক্ষতি হতে পারে।

অগ্নি বিমায় ক্ষতিপূরণ দাবি ও মীমাংসা পদ্ধতি

ক্ষতিপূরণ দাবি

অনেক সময় বিমাগ্রহীতা জানেন না বিমাকৃত কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বা গ্রাহক সেবার মান কেমন। এসব না জানার কারণে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকাংশ গ্রাহককে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।

কোম্পানিগুলো সাধারণত অগ্নি বিমা দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে জরিপকারী নিয়োগ করে। এক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ করতে গ্রাহককে সচেতন থাকতে হয়। কেননা দাবিটি নিষ্পত্তি করার জন্য বিমা কোম্পানি নানান কৌশল অবলম্বন করে। সঠিকভাবে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো: 

অগ্নি বিমা থেকে সুবিধা পেতে প্রত্যেক গ্রাহককে অগ্নি বিমা পলিসি করার সময় থেকেই সচেতন থাকা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো, বিমা চুক্তিতে প্রয়োজনীয় সব বিষয় আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। সেগুলো অবশ্যই দেখে-বুঝে নিতে হবে। যেমন, তার কি ধরণের কভারেজ আছে, কি কি বিষয় কভারেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাবি উত্থাপনের শর্তগুলো কী, কত দিনের মধ্যে দাবি উত্থাপন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় বুঝে নেয়ার পর তাকে নিশ্চিত হতে হবে, পলিসির প্রিমিয়ামের টাকা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হলো কি না। এক্ষেত্রে পলিসি করার জন্য কোনো ব্যক্তির হাতে প্রিমিয়ামের টাকা না দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা করা উচিত। 

বিমা কোম্পানির অ্যাডজাস্টার বা সমন্বয়কারীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে রেকর্ড রাখুন। এসব রেকর্ডের পৃথক ফাইল করুন। যখন কোনো তথ্য বা নথি অ্যাডজাস্টারের কাছে জমা দেবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিটি নথির অনুলিপি সংগ্রহ করুন। 

বিমাচুক্তি চূড়ান্ত বিশ্বাসের চুক্তি। তাই চুক্তিভুক্ত দুটি পক্ষের যে কেউ যদি মিথ্যার আশ্রয় নেয় তবে চুক্তি বাতিলযোগ্য। 

বিমাপত্রে যে সকল তথ্য চাওয়া হয় তার মধ্যে বিমাকৃত সম্পত্তি পূর্বে বিমা করা হয়েছে কিনা, বিমা গ্রহীতার কখনো লোকসান হয়েছে কিনা, কোনো বিমা কোম্পানি উক্ত সম্পত্তি বিমা করতে বা নবায়ন করতে অস্বীকার করেছে কিনা ইত্যাদি 

প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিলে বা মিথ্যা বর্ণনার আশ্রয় নিলে চূড়ান্ত বিশ্বাস ভঙ্গ হয় এবং বিমা বাতিলযোগ্য হয়। ফলে বিমাকারী বিমা দাবী অস্বীকার করতে পারে। 

অগ্নিজনিত কারণে ক্ষতিসাধন হলে যে নিয়মে দাবী উত্থাপন করতে হয় তা এখানে উল্লেখ করা হলো:

  • ক্ষতি হওয়ার সাথে সাথে বিমাগ্রহীতা বিমাকারীকে বিলম্ব না করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানাবে;
  • ক্ষতি সংঘটিত হবার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ লিখিতভাবে বিমাকারীকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ বিমাগ্রহীতা বহন করবে।
  • বিমাকারী চাইলে বিমাগ্রহীতাকে দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও তথ্যাদিসহ একটি সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা পেশ করতে হবে।
  • বিমাকারী বা তার প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংশপ্রাপ্ত সম্পদের দখল নিতে পারবে বা যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে প্রবেশ করতে পারবে;
  • বিমাকারী বিমাকৃত সম্পত্তির দখল নিতে পারবে এবং সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহণ করতে পারবে;
  • বিমাকারী যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের দখল বজায় রাখতে এবং ব্যবহার করতে পারবে। 

বিমাকারী ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের ভবিষ্যৎ ক্ষতি কমাতে তার অধিকার সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করতে পারেন। আরও উল্লেখ্য যে, বিমা গ্রহীতা এ ধরনের কাজে বাধা দান করলে বিমাকারী বিমাগ্রহীতার অধিকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

অনেক সময় একই সম্পত্তি একাধিক বিমাকারীর নিকট বিমা করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি হলে সকল বিমাকারীকে অনুপাতিক হারে ক্ষতি প্রদানে অংশগ্রহণ করতে হয়। একাধিক বিমাকারীর সাথে বিমা করা হলে সহবিমাকারীগণ ক্ষতির অংশ আনুপাতিক হারে পূরণ করে দিবে। বিমাকৃত সম্পত্তির মোট বিমাকৃত অর্থের সাথে সব ক’টি বিমাপত্রের বিমাকৃত অর্থের যে অনুপাত হয় সব ক্ষতিকে সে অনুপাতে ভাগ করলে প্রত্যেক বিমাকারীর ক্ষতির অংশ বের হয়ে যায়।

অগ্নি বিমাপত্রে যেসব শব্দ থাকে

একটি আদর্শ অগ্নি বিমাপত্রে যে সকল ব্যক্ত শর্ত ও শব্দাবলি থাকে বা ব্যবহৃত হয় তা হলো মিথ্যা বর্ণনাযুক্ত রদবদল, বর্জনসমূহ, বিমাদাবী, প্রতারণা, পুনঃস্থাপন, অগ্নিকান্ডের পর বিমাকারীর অধিকার, অংশগ্রহণ বন্টনগড়, স্থলাভিষিক্ততা, বিমাকৃত সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিলি শর্তাবলি, সালিসি, ক্রেতার স্বার্থ ধারা, ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি।

আর অব্যক্ত উহ্য শর্তাবলী হলো, সম্পত্তিরবিদ্যমানতা, বিমাকৃত সম্পত্তি, বিমাযোগ্য স্বার্থ, চূড়ান্ত বিশ্বাস, সনাক্ততা প্রভৃতি।