শনিবার, জুন ৩, ২০২৩

নেটো কী ও কেন গঠিত হয়েছিল? নেটোর সদস্য, ভিত্তি ও কার্যাবলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইউরোপের ১০টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, এই ১২ টি দেশ মিলে এই আন্তঃসরকার সামরিক সহযোগিতা জোট দ্য নর্থ আটল্যান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা নেটো (NATO) গঠন করে

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ২ টি দেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের ২৮ টি দেশের আন্তঃসরকারি সামরিক সহযোগিতার জোট হলো দ্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (The North Atlantic Treaty Organisation)। বাংলায় এই নামের অর্থ হলো- ‘উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’। এই সামরিক জোটকে সংক্ষেপে নেটো (NATO) নামে ডাকা হয়। ফরাসি ভাষায় (French Language) এর নাম: Organisation du traité de l’Atlantique nord (OTAN)। উচ্চারণ অনেকটা এরকম- নেই-ঠো (যুক্তরাজ্য) এবং নে-ডো (যুক্তরাষ্ট্র)।

বাংলাভাষী মানুষ একে অনেক সময় ন্যাটো উচ্চারণ করে থাকেন ও লিখে থাকেন। যেমন: ন্যাটো কী? ন্যাটো কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? ন্যাটোর কাজ কী? ন্যাটোর সর্বশেষ সদস্য কোন দেশ?

ন্যাটো হবে নাকি নেটো হবে, এই বানান ও উচ্চারণ সম্পর্কিত বিতর্কে না গিয়ে আসল কথা আসা যাক।

নেটো প্রতিষ্ঠিত হয় ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ তারিখ। নেটো প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের হাত থেকে পশ্চিম বার্লিন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নেটো হলো এমন একটি যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি, যে চুক্তির আওতায় জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর নেটো সদস্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মাঠে নামে। নেটো’র সাথে রয়েছে এমন প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখতে বদ্ধপরিকর।

পেছনের ইতিহাস: নেটো কেন, কীভাবে গঠিত হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইউরোপের ১০টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, এই ১২ টি দেশ মিলে এই আন্তঃসরকার সামরিক সহযোগিতা জোট দ্য নর্থ আটল্যান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা নেটো গঠন করে। সামরিক জোট নেটোর মূল উদ্দেশ্য ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকানো।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম বিজয়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুদ্ধে লয় লাভ করার কারণে পূর্ব ইউরোপ জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ সেনা রয়ে যায়। যে কারণে পূর্ব জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হবার পর জার্মানির রাজধানী বার্লিন (Berlin) দখলে নেয় বিজয়ী দেশগুলো। এর পরে দেলহায় যায় যে, ১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ স্ট্যালিন (Joseph Stalin) পশ্চিম বার্লিনের (West Berlin) বিরুদ্ধে অবরোধ শুরু করেন; আর সে সময়ে পশ্চিম বার্লিন এলাকা ছিল তৎকালীন মিত্রশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পুরো এলাকাটি অবস্থিত ছিল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জার্মানিতে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কথা, তবে সেখানে যে ধরনের সংঘর্ষ হবার শঙ্কা করা হচ্ছিল তা এড়ানো গিয়েছে। কিন্তু ওই সংকট সোভিয়েত শক্তিকে রুখে দেবার জন্য বেশ কিছু দেশকে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে একত্র হতে ভূমিকা রেখেছিল, যা একটি রাজনৈতিক ও সামরিক জোট সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল উত্তর আমেরিকার ১২ টি দেশ ও ইউরোপের ১০ টি দেশ মিলে এই রাজনৈতিক ও সামরিক জোট গঠন করে। নেটোর প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ টি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, আইসল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ।

নেটোর দাপ্তরিক ভাষা

নেটোর দাপ্তরিক ভাষা দুইটি। ইংরেজি ও ফ্রেন্স, এই দুইটি ভাষাকে নেটো দাপ্তরিক ভাষা (Official Language) হিসেবে গ্রহণ করেছে। তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রচলিত প্রধান ২০ টি ভাষাকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখে নেটো।

নেটোর ওয়েবসাইট ৪ টি ভাষায় কন্টেন্ট সরবরাহ করে। এই ৪ টি ভাষা হলো দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি ও ফ্রেন্স এবং ইউক্রেনিয়ান ও রাশিয়ান।

নেটো হেডকোয়ার্টার

প্রাথমিকভাবে নেটোর হেডকোয়ার্টার লন্ডনে স্থাপন করা হলেও ১৯৫২ সালে প্যারিসে স্থানান্তর করা হয়। এর পর পাকাপোক্তভাবে নেটো হেডকোয়ার্টার ব্রাসেলসে নিয়ে যাওয়া হয় ১৯৬৭ সালে। নেটোর যে বর্তমান হেডকোয়ার্টার রয়েছে সেখানে বছরের ছয় হাজারেরও বেশি সেমিনার-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নেটো হেডকোয়ার্টার, ব্রাসেলস, বেলজিয়াম
নেটো সদরদপ্তর, ব্রাসেলস, বেলজিয়াম

নেটোর প্রসারণ

১৯৪৯ সালে নেটো প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৫২ সালে তুরস্ক এবং গ্রিস যোগ দিতে চাইলে, দেশ দুটিকে সদস্য করার মাধ্যমে জোটটি আরও প্রসার লাভ করে। এরপর ১৯৫৫ সালে যুক্ত হয় পশ্চিম জার্মানি (বর্তমান: জার্মানি)

পশ্চিম জার্মানি যোগ দেওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছরের মাথায় নেটো নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয় ১৯৮২ সালে। ১৯৮২ সালে নেটোর সদস্য হয় স্পেন। এরপর আবার একটি লম্বা সময় কোনো নতুন সদস্য যোগ দেয়নি নেটোতে।

১৭ বছর পর ১৯৯৯ সাল থেকে এই সংস্থা বা সংগঠন সাবেক পূর্বাঞ্চলীয় জাতি রাষ্ট্রগুলোকেও সদস্য করে নেয়। ১৯৯৯ সালে তিনটি দেশ- চেক রিপাবলিক, হাংগেরি এবং পোল্যান্ড যোগ দেয়।

নেটো প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালে সবচেয়ে বেশি সদস্য গ্রহণ করে। ২০০৪ সালে ৭ টি দেশকে নেটোর সদস্যপদ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে যে সকল দেশ নেটোর সদস্য হয় সে দেশগুলো হলো- বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া।

২০০৯ সালে দুইটি দেশ- আলবানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০১৭ সালে সদস্যপদ পায় মন্টিনিগ্রো। ২০২০ সালে সালে সদস্য হয় উত্তর মেসিডোনিয়া।

বর্তমানে নেটো জোটভুক্ত মোট দেশ ৩০ টি।

নেটোর সদস্য দেশ, দেশের রাজধানী এবং সদস্যপদ পাওয়ার সন

ক্রমিক নম্বরদেশরাজধানীসদস্যপদ পাওয়ার সননোট
বেলজিয়ামব্রাসেলস১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, এখানে সদরদপ্তর অবস্থিত
কানাডাওটাওয়া১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
ডেনমার্ককোপেনহেগেন১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
ফ্রান্সপ্যারিস১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
আইসল্যান্ডরেইকজাভিক১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
ইতালিরোম১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
লুক্সেমবার্গলুক্সেমবার্গ সিটি১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
নেদারল্যান্ডসঅ্যামস্টারডাম১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
নরওয়েঅসলো১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
১০পর্তুগাললিসবন১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
১১যুক্তরাজ্যলন্ডন১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
১২যুক্তরাষ্ট্রওওয়াশিংটন ডিসি১৯৪৯প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
১৩গ্রিসঅ্যাথেন্স১৯৫২
১৪তুরস্কআংকারা১৯৫২মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (৯৯%)
১৫জার্মানিবার্লিন১৯৫৫যোগ দেওয়ার সময় নাম ছিল পশ্চিম জার্মানি
১৬স্পেনমাদরিদ১৯৮২
১৭চেক রিপাবলিকপ্রগ১৯৯৯
১৮হাংগেরিবুডাপেস্ট১৯৯৯
১৯পোল্যান্ডওয়ার-স (ভার্শাভা)১৯৯৯
২০বুলগেরিয়াসোফিয়া২০০৪
২১এস্তোনিয়াতালিন২০০৪
২২লাটভিয়ারিগা২০০৪
২৩লিথুয়ানিয়াভিলনিয়াস২০০৪
২৪রোমানিয়াবুকারেস্ট২০০৪
২৫স্লোভাকিয়াব্রাতিস্লাভা২০০৪
২৬স্লোভেনিয়ালুবিয়ানা২০০৪
২৭আলবানিয়াতিরানা২০০৪মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (৫৬+%)
২৮ক্রোয়েশিয়াজাগরেব২০০৯
২৯মন্টিনিগ্রোপোদগোরিচা২০১৭
৩০উত্তর মেসিডোনিয়াস্কোপজি২০২০
নেটো সদস্য দেশগুলোর তালিকা

নেটোর সদস্য হওয়ার শর্ত কী?

বর্তমানে যে-কোনো ইউরোপিয়ান দেশের জন্য সদস্যপদ গ্রহণ উন্মুক্ত রয়েছে যদি সে দেশগুলো নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে নেটোর নীতিমালার সাথে সম্মত থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো চেকলিস্ট নেই।

উত্তর আটলান্টিক বলতে কী বোঝায়?

উত্তর আটলান্টিক অঞ্চল বলতে বোঝায়, আটলান্টিক মহাদেশের উত্তর অংশের দুই পাশের অঞ্চলসমূহকে; এক্ষেত্রে কল্পিত রেখা কর্কটক্রান্তি (Tropic od Cancer) কে দক্ষিণের সীমানা ধরা হয়ে থাকে।

নেটো প্রধান ৪ টি ভিত্তি দফার ওপর দাঁড়িয়ে আছে

নেটো যে-সকল ভিত্তিমূলক দফার ওপর মননিবেশ করেছে সেগুলো হলো-

১. রাজনৈতক ও সামরিক সহযোগিতা

২. সমন্বিত প্রতিরক্ষা

৩. দ্য ট্রান্সআটলান্টিক লিংক

৪. কৌশলগত ধারণা

১. রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা

নেটো যেভাবে বলছে, ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তা আমাদের ভালো থাকার চাবিকাঠি’। নেটোর উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক এবং সামরিক উভয় উপায়ে এর সদস্যদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করা।

রাজনৈতিক

নেটো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উৎসাহিত করে এবং সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে সমস্যার সমাধান। এ প্রতিষ্ঠানটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে তোলার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে সংঘাত প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

সামরিক

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য নেটো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক্ষেত্রে যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে সংকটব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য সামরিক ক্ষমতার প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে নেটো। নেটো প্রতিষ্ঠাকালীন ওয়াশিংটন চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অথবা জাতিসংঘের আদেশের আওতায় কোনো একটি সদস্য দেশ বা অন্যান্য দেশ এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা ও পরামর্শে এ সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

২. সমন্বিত প্রতিরক্ষা

সদস্য এমন এক বা একাধিক দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণকে সকল সদস্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়; নেটো সদস্যরা এই নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই যৌথ প্রতিরক্ষা নীতি,যা ওয়াশিংটন চুক্তির ৫ নং অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত, এই ধারা মাত্র একবার প্রয়োগ করা হয়েছে,  ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায়।

৩. দ্য ট্র্যান্সআটলান্টিক লিংক

নেটো হলো ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলির একটি জোট। এটি এই দুটি মহাদেশের মধ্যে একটি অনন্য সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে এবং বহুজাতিক সংকট-ব্যবস্থাপনা একসাথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে করে।

বাস্তব ক্ষেত্রে, নেটো এটা নিশ্চিত করে যে, ইউরোপিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা অবিচ্ছেদ্যভাবে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর নিরাপত্তার সাথে জড়িত।”

৪. কৌশলগত ধারণা

নেটো যে কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে চলছে তা হলো- সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা, সংকট ব্যবস্থাপনা এবং সমবায় নিরাপত্তা। প্রতি দশ বছরে এক বার নেটো কৌশলপত্র রচনা করে।

নেটোর কার্যক্রম

নেটো প্রধানত ৪ টি কাজ করে থাকে, এগুলো হলো-

১. সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ

২. অপারেশন এবং মিশন

৩. অংশিদারত্ব

৪. হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা (শক্তি) বৃদ্ধি করা

১. সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ

প্রতিদিনই নেটো সদস্য দেশগুলো সকল স্তরে এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা বিষয়ে পরামর্শ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তকে বলা হয় নেটো সিদ্ধান্ত (NATO decision)। নেটো সদর দফতরের কর্মীদের সঙ্গে দেশগুলোর জাতীয় প্রতিনিধিদল এবং কর্মীদের সহযোগিতায়, শত শত কর্মকর্তা, বেসামরিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন নেটো সদর দপ্তরে তথ্য বিনিময়, ধারণা বিনিময় করেন যা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহায্য করে।

২. অপারেশন এবং মিশন

বেসামরিক জরুরি অপারেশনসহ সংকট ব্যবস্থাপনা অপারেশন এবং মিশনে বিস্তৃত পরিসরে নেটো সক্রিয় ভূমিকা নেয়। এর উদাহরণ লক্ষ করা যায়- আফগানিস্তান, কসোভো, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রে।

৩. অংশীদারত্ব

নেটো সদস্য নয় এমন ৪০ টি দেশের সাথে নেটোর অংশিদারত্বের সম্পর্ক রয়েছে। এর মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে নেটো কাজ করে। এই দেশগুলো নেটোর সাথে বিভিন্ন সংলাপে অংশ নেয়, এছাড়া জোটের সদস্যদের সাথে মাঠপর্যায়েও কাজ করে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশী দেশগুলোর কার্যত কোনো ভূমিকা নেই। নেটো অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও বিস্তৃত পরিসরে সহযোগিতামূলক কাজ করে।

এখানে পরিষ্কার হয় যে, নেটো উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের সংস্থা বলা হলেও এর পরিসর বিশ্বব্যাপী।

৪. হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা (শক্তি) বৃদ্ধিকরণ

সদস্যদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষাসহ নীতি, ক্ষমতা এবং কাঠামো, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবেলা নিশ্চিত করার জন্য নেটো বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন ও এগুলোকে প্রয়োগ সংক্রান্ত কর্মযজ্ঞের সাথে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নিয়োজিত।

নেটোর ভবিষ্যৎ কী?

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে নেটো এর বড়ো দেশগুলোই চাচ্ছে না এই সংস্থাটি থাকুক। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে নেটোর পেছনে তারাই বেশি অর্থ ঢালছে, তবে সে অনুপাতে গ্রহণযোগ্য ফল পাচ্ছে না।

ফ্রান্স মনে করছে, নেটো একটি অকেজো প্রতিষ্ঠান। অন্য৷ অন্যদিকে তুরস্ক বা প্রায়-সমমনা দেশগুলোও আমেরিকাকে খুব একটা পরোয়া করছে না।

এখন এই অবস্থায়, নেটো থাকবে কি থাকবে না সে প্রশ্নের উত্তর বলা যায় এটি স্থায়ী হবে না। কিন্তু এটি কবে বিলুপ্ত হবে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চাইবে না ট্রান্সআটলান্টিক লিংকটি না থাকুক কারণ ইউরোপ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে একটি ভালো কার্যকর কৌশল নেটো ছাড়া তাদের সামনে আর দ্বিতীয়টি নেই। রাশিয়াকে ঠেকানোর পাশাপাশি চীনকেও মোকাবেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র বলে বিবেচিত দেশগুলোর জন্য নেটো হলো একটি বড়ো রকমের শক্তি।

এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের অসদস্য অংশীদার দেশগুলোকেও কাছে পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও নেটোর মাথাওয়ালা দেশগুলো নষ্ট করতে চাইবে না।

তবে আমরা যা অনুমান করি তার উলটো ঘটে যায় অনেক সময়। নেটো কতদূর যাবে, নেটো কতদিন টিকবে সেটি সত্যিই বলা মুশকিল। এ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কিংবা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নেই।

রাশিয়া কি নেটোর সদস্য ছিল?

রাশিয়া নেটোর সদস্য ছিল না। তবে ১৯৯১ সালে উত্তর আটলান্টিক সহযোগিতা পরিষদ (North Atlantic Cooperation Council) এবং ১৯৯৪ সালে পার্টনারশিপ ফর পিস প্রোগ্রামে ( Partnership for Peace programme) যোগ দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নেটো এবং রাশিয়া অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং অবিভক্ত মহাদেশ তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করার জন্য পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম স্থগিত করে নেটো, যা দেশটির মিত্ররা খুব ভালোভাবে নেয়নি এবং কঠোর সমালোচনা করেছিল নেটোর এই সিদ্ধান্তের। অবশ্য রাশিয়ার সাথে নেটোর রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম খোলা রয়েছে।

এখানে নেটো সম্পর্কে সেসব তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে যেসব তথ্য মানুষ প্রাথমিকভাবে জানতে চায়।

নেটো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত দাপ্তরিক তথ্য জানার জন্য পরিদর্শন করুন নেটোর নিজস্ব ওয়েবসাইট। এছাড়া নেটো নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণমূলক খবর, মতামত বা সম্পাদকীয় পড়তে ‘সার্চ ‘ ব্যবহার করুন এবং বিবিসি, আল জাজিরা, টেলিগ্রাফ, ফক্স নিউজ, সাউথ চায়না নিউজ নেটওয়ার্ককে প্রাধান্য দিন।

মু. মিজানুর রহমান মিজান
মু. মিজানুর রহমান মিজানhttps://www.mizanurrmizan.info
মু. মিজানুর রহমান মিজান সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকায় মাস্টার অব এডুকেশন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী এবং একজন স্বাধীন লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী।

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

6 COMMENTS

  1. আমি মনে করি, পৃথিবীর সকল দেশ নেটোর আওতায় আসুক তাহলে এই পৃথিবী হবে মানুষের; হবে না গোলাগুলি, হবে না খুন, হবে না দখল ইত্যাদি। অনেক কথাই বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলে কি লাভ, কে শুনে কার কথা যাইহোক সবাই ভালো থাকুক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here