১০:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

আফগানিস্তান: কেমন মানুষ মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার?

  • প্রকাশ: ০১:০২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
  • / ৪৮৩ বার পড়া হয়েছে

মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

১৬ আগস্ট, ২০২১ তারিখ তালেবান কর্তৃক আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল (Kabul) দখলের তিনদিনের মধ্যে দেশে ফিরেছেন সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার (Mullah Abdul Ghani Baradar)। কাতারের দোহা থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ১৮ আগস্ট, ২০২১ তারিখ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাকে নিয়ে তিনি কান্দাহার বিমানবন্দরে নামেন।

মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মুখে ২০০১ সালে তালেবানের অন্য নেতাদের সাথে প্রথমে আফগানিস্তানের রাজধানী ও সবচেয়ে বড়ো শহর কাবুল এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়েছিলেন। এরপর সন্ত্রাসবাদী অভিযোগে টানাআট বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

অবশেষে দীর্ঘ ২০ বছরের নির্বাসিত জীবন এবং কারাবাসের পর ১৮ আগস্ট বিজয়ীর বেশে নিজের দেশ আফগানিস্তানে ফিরেছেন মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার।

কেমন মানুষ মোল্লাহ বারাদার?

কাবুল দখলের পর অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠেছে যে কেমন মানুষ এই মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার, কীভাবে তার এই উত্থান? আর ক্ষমতা হাতে পেলে কীভাবে তিনি আফগানিস্তান চালাবেন?

জানা যাচ্ছে মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার মনের দিক থেকে একজন খুবই শান্তশিষ্ট হলেও বেশ কঠোর প্রকৃতির। তিনি তরুণ বয়স থেকেই যুদ্ধের সাথে দিন যাপন করে আসছেন। প্রথমে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে, তারপর সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে অন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে তালেবানের উৎখাতের পর পাকিস্তানে এলেও আমেরিকানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানে আট বছর কারাভোগও করেছেন মোল্লাহ বারাদার। তিনি ঠাণ্ডা মাথার একজন কূটনীতিক যিনি পুড়ে পুড়ে বেশ কঠিন একজন মানুষে রূপান্তরিত হয়েছেন, তালেবান সদস্যদের ভাষায় তিনি মুজাহিদ।

মোল্লাহ বারাদার তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের নথি অনুযায়ী, মোল্লাহ বারাদারের জন্ম আফগানিস্তানের উরুযগান প্রদেশের উইটমাক নামে একটি গ্রামে। তবে তিনি বড় হন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। জাতিগত পশতুন বারাদার ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্যদের তাড়াতে ১০ বছর যুদ্ধ করেন। এরপর আফগান গৃহযুদ্ধ চলার সময় মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে যে কয়েকজন পশতুন মুজাহিদীন তালেবান প্রতিষ্ঠা করেন, মোল্লাহ বারাদার ছিলেন তাদের অন্যতম। মোল্লাহ ওমরের ডান হাত ছিলেন তিনি। জানা যায়, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল। মোল্লাহ ওমরের বোনকে বিয়ে করেন বারাদার।

১৯৯৬ সালে যখন তালেবান কাবুল দখল করে, তখন সেই সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০০১ সালে আমেরিকার হামলায় তালেবান ক্ষমতা হারানোর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরে উপমন্ত্রী।

আমেরিকানদের তাড়া খেয়ে অন্য অনেক তালেবান নেতার সাথে তিনিও পালিয়ে যান পাকিস্তানে। পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দাদের আশ্রয়ের ভরসা থাকলেও আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়া বা ড্রোন হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে।

আমেরিকানরা যে ক’জন তালেবান এবং আল-কায়েদা নেতাকে ধরার তালিকা করেছিল, সেই তালিকায় মোল্লাহ বারাদারও ছিলেন।

পাকিস্তানে কেন কারাবাস করতে হয়েছিল মোল্লাহ বারাদারকে?

২০১০ সালে করাচিতে পাকিস্তানের পুলিশ মোল্লাহ বারাদারকে আটক করে। সে সময় পত্র-পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছিল, তাদে দেখা যায় তাকে লোহার চেন দিয়ে হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক মিডিয়ায় তখন বিশ্লেষকরা লিখেছিলেন যে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ভালো করার আশায় মোল্লাহ বারাদারকে ধরেছে পাকিস্তান। কারণ, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তালেবান এবং আল-কায়েদাকে আশ্রয় দিচ্ছে এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল।

তখন এমন সব খবরও বের হয় যে মোল্লাহ বারাদার আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা হিসাবে কাবুলে সে সময়কার প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সাথে গোপনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, যা আইএসআই জেনে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে আটক করলেও আমেরিকানদের হাতে তুলে দেয়নি পাকিস্তান।

মোল্লাহ বারাদারের পথ পরিক্রমা: করাচি থেকে দোহা

সন্ত্রাসের মামলায় আট বছর পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তখন এমন খবর বেরিয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মুক্তি চেয়েছিলেন, কারণ আমেরিকা আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ করার জন্য তালেবানের সাথে মীমাংসায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে লক্ষ্যে ওই সংগঠনের একজন প্রভাবশালী নেতার খোঁজ করছিলেন। এই খবর সত্য প্রমাণিত হয় যখন মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরই মি. বারাদার দোহায় গিয়ে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসের দায়িত্ব নেন।

আমেরিকানরা আপোষ ও মীমাংসার জন্য তালেবানের পক্ষে তাকেই কেন বেছে নিয়েছিল, তা খুব পরিষ্কার নয়। তবে সে সময় নিউইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে মি. বারাদারের সাংগঠনিক দক্ষতা, স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব এবং তালেবানের তৃণমূলে তার প্রভাব নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ সালে মি. বারাদার সাধারণ মানুষের মন জয় করার উপায় নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেটি তৃণমূলে তালেবানের যোদ্ধাদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।

লন্ডনের দৈনিক সংবাদপত্র গার্ডিয়ানে তালেবানকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে সাংবাদিক জুলিয়ান বোর্গার লিখেছেন, পশ্চিমা কূটনীতিকরা দেখেছিলেন যে তালেবান শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মি. বারাদারই পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কথা সবসময় শুনতে চাইতেন না এবং তিনি অতীতে কাবুলের প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

২০১৯ সালে দোহায় গিয়ে তালেবানের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব নেন মি. বারাদার। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনিই সই করেন।

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদারকেই সারা বিশ্বের লোকজন দেখেছে। কিন্তু তিনি তালেবানের এক নম্বর নেতা নন, তবে বিশ্বের কাছে তিনিই এখন তালেবানের প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছেন,ভালো ইংরেজি জানেন, বিশ্বের নেতাদের সাথে কথা বলছেন, বিদেশ সফরে গিয়ে তাদের ভরসা দিচ্ছেন, স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন ইত্যাদি। তাছাড়া পাকিস্তানের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো, চীনের সাথেও সম্পর্ক তৈরি করেছেন।

পাকিস্তান তাকে এক সময় আটক করে জেলে পুরলেও ২০২০ সালে আমেরিকার সাথে চুক্তি সই করার আগে মি. বারাদার ইসলামাবাদ গিয়ে পাকিস্তানি নেতাদের সাথে কথা বলে আসেন, যা নিয়ে তখন বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

কন্ট্রিবিউটর, বিশ্লেষণ

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

আফগানিস্তান: কেমন মানুষ মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার?

প্রকাশ: ০১:০২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১

১৬ আগস্ট, ২০২১ তারিখ তালেবান কর্তৃক আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল (Kabul) দখলের তিনদিনের মধ্যে দেশে ফিরেছেন সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার (Mullah Abdul Ghani Baradar)। কাতারের দোহা থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ১৮ আগস্ট, ২০২১ তারিখ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাকে নিয়ে তিনি কান্দাহার বিমানবন্দরে নামেন।

মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মুখে ২০০১ সালে তালেবানের অন্য নেতাদের সাথে প্রথমে আফগানিস্তানের রাজধানী ও সবচেয়ে বড়ো শহর কাবুল এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়েছিলেন। এরপর সন্ত্রাসবাদী অভিযোগে টানাআট বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

অবশেষে দীর্ঘ ২০ বছরের নির্বাসিত জীবন এবং কারাবাসের পর ১৮ আগস্ট বিজয়ীর বেশে নিজের দেশ আফগানিস্তানে ফিরেছেন মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার।

কেমন মানুষ মোল্লাহ বারাদার?

কাবুল দখলের পর অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠেছে যে কেমন মানুষ এই মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার, কীভাবে তার এই উত্থান? আর ক্ষমতা হাতে পেলে কীভাবে তিনি আফগানিস্তান চালাবেন?

জানা যাচ্ছে মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার মনের দিক থেকে একজন খুবই শান্তশিষ্ট হলেও বেশ কঠোর প্রকৃতির। তিনি তরুণ বয়স থেকেই যুদ্ধের সাথে দিন যাপন করে আসছেন। প্রথমে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে, তারপর সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে অন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে তালেবানের উৎখাতের পর পাকিস্তানে এলেও আমেরিকানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানে আট বছর কারাভোগও করেছেন মোল্লাহ বারাদার। তিনি ঠাণ্ডা মাথার একজন কূটনীতিক যিনি পুড়ে পুড়ে বেশ কঠিন একজন মানুষে রূপান্তরিত হয়েছেন, তালেবান সদস্যদের ভাষায় তিনি মুজাহিদ।

মোল্লাহ বারাদার তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের নথি অনুযায়ী, মোল্লাহ বারাদারের জন্ম আফগানিস্তানের উরুযগান প্রদেশের উইটমাক নামে একটি গ্রামে। তবে তিনি বড় হন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। জাতিগত পশতুন বারাদার ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্যদের তাড়াতে ১০ বছর যুদ্ধ করেন। এরপর আফগান গৃহযুদ্ধ চলার সময় মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে যে কয়েকজন পশতুন মুজাহিদীন তালেবান প্রতিষ্ঠা করেন, মোল্লাহ বারাদার ছিলেন তাদের অন্যতম। মোল্লাহ ওমরের ডান হাত ছিলেন তিনি। জানা যায়, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল। মোল্লাহ ওমরের বোনকে বিয়ে করেন বারাদার।

১৯৯৬ সালে যখন তালেবান কাবুল দখল করে, তখন সেই সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০০১ সালে আমেরিকার হামলায় তালেবান ক্ষমতা হারানোর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরে উপমন্ত্রী।

আমেরিকানদের তাড়া খেয়ে অন্য অনেক তালেবান নেতার সাথে তিনিও পালিয়ে যান পাকিস্তানে। পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দাদের আশ্রয়ের ভরসা থাকলেও আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়া বা ড্রোন হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে।

আমেরিকানরা যে ক’জন তালেবান এবং আল-কায়েদা নেতাকে ধরার তালিকা করেছিল, সেই তালিকায় মোল্লাহ বারাদারও ছিলেন।

পাকিস্তানে কেন কারাবাস করতে হয়েছিল মোল্লাহ বারাদারকে?

২০১০ সালে করাচিতে পাকিস্তানের পুলিশ মোল্লাহ বারাদারকে আটক করে। সে সময় পত্র-পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছিল, তাদে দেখা যায় তাকে লোহার চেন দিয়ে হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক মিডিয়ায় তখন বিশ্লেষকরা লিখেছিলেন যে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ভালো করার আশায় মোল্লাহ বারাদারকে ধরেছে পাকিস্তান। কারণ, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তালেবান এবং আল-কায়েদাকে আশ্রয় দিচ্ছে এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল।

তখন এমন সব খবরও বের হয় যে মোল্লাহ বারাদার আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা হিসাবে কাবুলে সে সময়কার প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সাথে গোপনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, যা আইএসআই জেনে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে আটক করলেও আমেরিকানদের হাতে তুলে দেয়নি পাকিস্তান।

মোল্লাহ বারাদারের পথ পরিক্রমা: করাচি থেকে দোহা

সন্ত্রাসের মামলায় আট বছর পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তখন এমন খবর বেরিয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মুক্তি চেয়েছিলেন, কারণ আমেরিকা আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ করার জন্য তালেবানের সাথে মীমাংসায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে লক্ষ্যে ওই সংগঠনের একজন প্রভাবশালী নেতার খোঁজ করছিলেন। এই খবর সত্য প্রমাণিত হয় যখন মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরই মি. বারাদার দোহায় গিয়ে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসের দায়িত্ব নেন।

আমেরিকানরা আপোষ ও মীমাংসার জন্য তালেবানের পক্ষে তাকেই কেন বেছে নিয়েছিল, তা খুব পরিষ্কার নয়। তবে সে সময় নিউইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে মি. বারাদারের সাংগঠনিক দক্ষতা, স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব এবং তালেবানের তৃণমূলে তার প্রভাব নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ সালে মি. বারাদার সাধারণ মানুষের মন জয় করার উপায় নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেটি তৃণমূলে তালেবানের যোদ্ধাদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।

লন্ডনের দৈনিক সংবাদপত্র গার্ডিয়ানে তালেবানকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে সাংবাদিক জুলিয়ান বোর্গার লিখেছেন, পশ্চিমা কূটনীতিকরা দেখেছিলেন যে তালেবান শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মি. বারাদারই পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কথা সবসময় শুনতে চাইতেন না এবং তিনি অতীতে কাবুলের প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

২০১৯ সালে দোহায় গিয়ে তালেবানের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব নেন মি. বারাদার। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনিই সই করেন।

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদারকেই সারা বিশ্বের লোকজন দেখেছে। কিন্তু তিনি তালেবানের এক নম্বর নেতা নন, তবে বিশ্বের কাছে তিনিই এখন তালেবানের প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছেন,ভালো ইংরেজি জানেন, বিশ্বের নেতাদের সাথে কথা বলছেন, বিদেশ সফরে গিয়ে তাদের ভরসা দিচ্ছেন, স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন ইত্যাদি। তাছাড়া পাকিস্তানের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো, চীনের সাথেও সম্পর্ক তৈরি করেছেন।

পাকিস্তান তাকে এক সময় আটক করে জেলে পুরলেও ২০২০ সালে আমেরিকার সাথে চুক্তি সই করার আগে মি. বারাদার ইসলামাবাদ গিয়ে পাকিস্তানি নেতাদের সাথে কথা বলে আসেন, যা নিয়ে তখন বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।