০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

হারুকি মুরাকামি জাপানি ঔপন্যাসিক কিন্তু তাঁর আলোচ্য বিষয়াবলি বৈশ্বিক

মাছুম বিল্লাহ
  • প্রকাশ: ০১:১৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • / ১১৮৭ বার পড়া হয়েছে

হারুকি মুরাকামি

হারুকি মুরাকামি (Haruki Murakami) পৃথিবীখ্যাত জাদুকরী বাস্তবতার ঔপন্যাসিক। তাঁর রচিত সাহিত্য মানুষের আভ্যন্তরীন অবস্থা বুঝার এবং আবিষ্কার করার প্রচ্ছন্ন বাসনার প্রকাশ। তার নায়কেরা আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণ করেন। তারা স্বপ্নপলায়ন এবং মৃত্যুরাজ্যে হারানো মানুষদের ও বস্তুর স্মৃতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেন ভালোবাসা, হারিয়ে যাওয়া, আধ্যাতিকতা, স্বপ্ন, সঙ্গীতের শক্তি, মুক্তি, লৈঙ্গিক পরিচয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।মুরাকামি অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ঐতিহ্যের বিষয়টিও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত এবং তার উপন্যাসের বিষয়গুলোও নেওয়া হয়েছে তার প্রিয় লেখক এবং সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে।

হারুকি মুরাকামি জাপানি কল্পকাহিনির চেহারা তিনি পরিবর্তন করে ফেলেছেন। জাপানি সাহিত্যে তিনিই প্রথম পশ্চিমা প্রভাব ঢুকিয়েছেন যা জাপানি পাঠকগন এরপূর্বে কখনো দেখেননি। লেখক ও শিল্পীগণ যদি তাদের পুরো জীবন একই ধরনের বিষয় নিয়ে সারা জীবন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যান তবে তবে হারুকি মুরাকামি হবেন সেই সাফল্যের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একজন স্বাধীন শিল্পী হিসেবে এবং এই রূপকল্পকে সামনে রেখে বিশ্ব লেখক সংঘের মধ্যে তিনি এ বিষয়ে তিনি অদ্বিতীয়।

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ হারুকি মুরাকামিকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ (A Wild Sheep Chase ) উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই বেনামি একজন চেইন ধুমপায়ীকে বর্ণনাকারী হিসেবে। বর্ণনাকারীর জীবন হতাশাজনক এবং সেখানে কোন ধরনের শুভ অগ্রগতির চিহ্ন দৃশ্যমান নয়। তবে, ঘটনা যখন সামনের দিকে আগাতে থাকে, অদ্ভুত সব ঘটনা তখন ঘটতে থাকে। বর্ণনাকারী একটি অদ্ভুত সুন্দর কর্ণের অধিকারী একটি মেয়ের সাথে ডেটিং শুরু করেন। তিনি ‘দ্য র‌্যাট’ নামক এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি চিঠি পান, এই বন্ধু গত পাঁচ বছর আগে শহর ছেড়ে চলে যান এবং তার কোন ধরনের চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ উপন্যাসে তিনি আরও একটি বড়ো পটভুমিতে জড়িয়ে পড়েন যেখানে একজন ডানপন্থী রাজনীতিকের সাথে আটেকে যান। তাকে টোকিও থেকে হোক্কাইডোর গ্রাম্য পরিবেশে এক ধরনের ভেড়ার খোঁজে বের হতে হয় যা পৃথিবীতে প্রচলিত আছে কিংবা নেই। এভাবে মুরাকামির অন্যান্য উপন্যাসের মতো ‘অ্য ওয়াইলড শিপ চেইজ’ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও বাক্যের সমারোহে পূর্ণ। তিনি নতুন এক সুন্দর কর্ণের অধিকারী বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, তার ব্যবসায়ী বন্ধুও তার মেয়েটির সাথে অস্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যেটি একটি ভীতিকার অবস্থা হিসেবে দেখছেন তিনি। মেয়েবন্ধুর চমৎকার কর্ণ যে কাউকে বিমোহিত করতে পারে।

উপন্যাসটির কয়েকটি অংশ সংঘটিত হয়েছে হোক্কাইডোর গ্রাম্য জঙ্গলে যাকে বিকল্পভাবে নায়কের মনের ভেতরকার অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিংবা এটি মৃতব্যক্তিদের পৌরাণিক কাহিনির ভূমি। মুরাকামির বহু উপন্যাসের মতো এটি কেন্দ্রেও রয়েছে ব্যক্তি ইচ্ছার এবং নৈর্ব্যক্তিক (ইমপারসোনাল) অবস্থার দ্বন্দের গল্প। আর শান্তশিষ্ট ও সর্বদিকে শক্তিশালী একটি ভেড়া তো রয়েছেই। আর তাই মূল উপাখ্যানই হচ্ছে ভেড়া সম্পকির্ত একটি দুঃসাহসিক অভিযান। উচ্চমার্গের পৌরানিক কাহিনি এবং রহস্যে ঘেরা একটি উপন্যাস। অসাধারন একটি রোমাঞ্চকার সাহিত্যের গল্প যা মুরাকামির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে।

‘নরওয়েজিয়ান উড’ এবং সুপারস্টার মুরাকামি

‘নরওয়েজিয়ান উড’ (Norwegian Wood) বইটি হারুকি মুরাকামিকে সুপারষ্টার বানিয়েছে। এটি ভালোবাসা ও হারানোর একটি নস্টালজিক গল্প। তরু ওয়াটানাবে, যিনি নিজেকে কলেজের একজন নবীন ছাত্র হিসেবে দেখছেন। দুজন সুন্দরী ও অস্বাভাবিক নারীর সাথে সম্পর্কের কথা বিস্তারিতবাবে বর্ণনা করা হয়েছে এখানে। এটি মূলত একটি বাস্তব ও জটিল ভালোবাসার গল্প। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ উপন্যাসে সুন্দরী বমণীদ্বয় হচ্ছেন ‘নেওকো’ ও ‘মিদরি’। বইটির শিরোনমা নেয়া হয়েছে ১৯৬৫সালের বিটলেসের একটি গান থেকে যার নাম ‘নরওয়েজিয়ান উড’ (দ্য বার্ড হ্যাজ ফ্লোন- পাখীটি উড়ে গেছে)। এটি উপন্যাসটির বর্ণনায় বার বার এসেছে। সাথে এসেছে পশ্চিমা সঙ্গীত ও সাহিত্য। ১৯৬০এর দশকে এটি সংঘটিত হয় টোকিওতে। এটি পরিবর্তিত জাপানের চিত্র তুলে ধরে। শিক্ষার্থীরা ইস্টাবিশিমেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। হারুকি মুরাকামি ছাত্র আন্দোলনকে সাদামাটা হিসেবে দেখিয়েছেন।

তরু ওয়াটানাবে ‘হিস্ট্রি অব ড্রামা’ ক্লাসে এক উচছল তরুণীর সাক্ষাত পানতার নাম মিদোরি। তিনি তরুর নোট ধার চেয়েছেন।যদিও তিনি খুব একটা সময়ানুবর্তী নন, তার নোট ফেরত দেওয়ার তারিখ বার বার পরিবর্তন করছিলেন তার পরেও তরু তার প্রতি আকৃষ্ট হন, তার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা দুজনেই একে অপরকে সময় দিয়ে যাচ্ছেন এমনকি তরু যখন তার ভালোলাগার আরেক মেয়ে নাওকোকেও চিঠি লিখে যাচ্ছেন তার মধ্যেও তাদেও দু’জনে একে অপরকে সময় দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে গল্প চলছে। এক বিকেলে মিদোরি তরুর জন্য দুপারের খাবার রান্না করেন, খাওয়া দাওয়ার পর দুজন ছাদে গিয়ে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে দু’জন ‘চুমো খান’। তরু তাকে খুলে বলেন যে, তাকে তার ভাল লাগে কিন্তু তিনি এক আবেগঘন ও জটিল রোমান্টিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মিদোরিও বললেন যে, তারও একটি ছেলে বন্ধু রয়েছে, অতএব দুইজনই শুধু বন্ধুই থাকতে চান, সম্পর্ক অন্যকোনদিকে নিয়ে যাবেন না।

একদিন কথা বলার এক পর্যায়ে মিদোরি হঠাৎ আবগেঘন হয়ে পড়েন এবং চিৎকার করেন। পরে তার রুমমেট রেইকো, তরু ও তিনি বিকেলে ঘুরতে বের হন। রুমে ফিরে এস নেওকো তার হঠাৎ আবেগী হওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তারা তিনজনই ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেন। মধ্যরাতে নেওকো তরুর বিছানার কাছে চলে আসেন, তার পোশাক খুলে ফেলেন এবং তার উলঙ্গ দেহটাকে তরুর কাছে সমর্পন করেন। পরদিন সকল বেলা তাকে মনে হচ্ছে কিংবা তিনি ভান করছেন যে, রাতের কোন ঘটনাই তার মনে নেই কিংবা রাতে কিছুই হয়নি।

সেদিন রেইকো ও নেওকো দুজনেই তরুকে পাহাড়ের মধ্যে হাঁটতে নিয়ে যান। পথিমধ্যে রেইকো কফি খাওয়ার জন্য একটি দোকানে থামেন এবং তরু ও নেওকোকে একান্তে কিছু সময় কাটানের জন্য বলেন। পরে বনের মধ্যে হাঁটতে শুরু করেন এবং কথা বলতে বলতে নেওকো তার হাত ব্যবহার করেই তরুকে উত্তেজনার চরম সীমায় পৌছে দেন।

পরে এটিও জানা যায় যে, নেওকোর বোনও তরুনী বয়সে আত্মহত্যা করে মারা যান এবং নেওকো তার দেহ খুঁজে বের করেন। তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে তরুকে পীড়াপীড়ি করছেন তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য জীবন শুরু করতে। কারন সে ভালোবাসার আঘাতে এত জর্জরিত যে, অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারছেনা। কিন্তু তরু বলছেন যে, তিনি তার অপেক্ষায় থাকবেন। ঐ রাতে তরু ও রেইকো আবার হাঁটতে বের হয় এবং রেইকো তার গল্প শেষ করেন। তিনি বলছেন যে তার এক ছাত্র আবেগপ্রবন মিথ্যাবাদী। সে রোগী সেজে তাকে বিপথে চালিত করেছে। সে তাকে ভুলিয়ে বেডরুমে নিয়ে গেছে এবং তার সাথে যৌনখেলা খেলেছে। তিনি সেই রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেছেন কিন্তু তার ছাত্র রটিয়ে বেড়িয়েছে যে, রেইকো তাকে যৌনহেনস্থা করেছেন। বলতে বলতে এই অবস্থায় তার মনটা আবার ভেঙ্গে পড়ে এবং অমি হোস্টেলে ফিরে যায় যেখানে তিনি থাকছেন নেওকোর সাথে।তাই তিনি তরুকে বলছেন যে, ভালোবাসার সম্পর্কের জগতে প্রবেশ করতে তার ভয় হচ্ছে,কিন্তু তরু বলছেন যে, রেইকোর প্রতি প্রতি তার বিশ্বাস রয়েছে। পরদিন সকালে তরু টোকিও চলে আসেন কিছুটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে।

পরদিন সে মিদোরির কাছে চলে যান তার আমন্ত্রণে। দু’জনই বেশ মদ্য পান করেন এবং মিদোরি তার প্রতি তার আগ্রহের কথা জানায়,  তরু এটিকে হেসে উড়িযে দেন কিন্তু তরু যখন রবিবার আবার একত্রিত হওয়ার কথা বলেন, তখন কিন্তু তিনি মিদোরির আমন্ত্রণে সাড়া দেন এবং ছুটে আসেন। মিদোরি তরুকে নিয়ে যেতে তার ডরমিটরিতে চলে আসেন। রেলস্টেশন পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে তরু মিদোরিকে জিজ্ঞেস করেন তারা আসলে কোথায় যাচ্ছে। তখন মিদোরি জানান যে তারা তার বাবাকে দেখতে হাসাপাতাল যাচেছ। তার বাবা ব্রেইন টিউমারে মারা যাওয়ার অবস্থায় আছেন। এ সময় মিদোরি তরুর কাছে তার বাবার উরুগুয়ে থাকার কথা বলেছিলেন যা ছিল মিথ্যে। এ জন্য তিনি তরুর কাছে ক্ষমা চাচেছন। তার বাবা মি. কোবাইশি মারাত্মক অসুস্থ এবং তিনি কথা বলতে পারছেন না বললেই চলে।

হারুকি মুরাকামির পরলৌকিক গোলকধাঁধার ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রোনিকেল’

‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রোনিকেল’ (The Wind-Up Bird Chronicle) মুরাকামির আরও একটি উপন্যাস যেখানে অন্য একটি জগত প্রতিফলিত হয়েছে। এবার গোলকধাধার একটি হোটেলকে নেওয়া হয়েছে পটভূমি হিসবে যেখানে নায়কের স্ত্রী কুমিকোকে তার শয়তান ভাই বন্দী করে রেখেছে। ভাইয়ের নাম ওয়াতিয়া নবোরু। নায়ক হচ্ছেন নরম মেজাজের বেকার ঘরে থাকা স্বামী, নাম ওকাদা তরু। তিনি এই পরলৌকিক গোলকধাঁধার মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করেন। তিনি নবোরুকে মোকাবিলা করে তার স্ত্রী কুমিকোকে উদ্ধার করেন। এই সময়ে তিনি দুঃসময় মোকাবিলা করেন এবং সময় দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে, একটির পর একটি আলাদা আলাদা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে থাকে। উপ্যনাসটি যৌনতার পরীক্ষা নিরীক্ষা, সন্ত্রাস, হারিয়ে যাওয়া ও উদ্ধার হওযা স্মৃতিগুলোর সংগ্রহ।

তরু ওকাদা সম্প্রতি আইন কোম্পানীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং একদিন তার হারিয়ে যাওয়া বেড়ালোর সন্ধানে বের হন এবং হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করেন একটির পর একটি বিশ্রী অভিযানের মধ্যে। তার বিড়ালটি হারিয়ে যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় তার স্ত্রী কুমিকোকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তাদের বিয়ের নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে চিন্তা করছিলেন, তারপরেও তার স্ত্রীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এই সময়ের মধ্যে তরু একজনের পর একজন উৎসুক মানুষের দেখা পান।

মে কাসহারা, সমস্যা জর্জড়িত তরুনী যিনি নিজেকে দায়ী মনে করেন তার ছেলেবন্ধুর মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াকে। মাল্টা কানো নামে এক মানসিক রোগী তরুর হারিয়ে যাওয়া বিড়াল নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করেন। মাল্টার বোন ক্রেটা, দাবী করেন যে, কুমিকোর ভাই নবোরু ওয়াতিয়া তাকে ধর্ষন করেছে। লেফটেন্যান্ট মামিয়া নামে একজন সৈনিক বলেন যে, একজন জীবন্তা মানুষের চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে, নুটমেগ আকাসাকা, রহস্যময়ী উপশমকারী যার স্বামীকে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে, নুটমেগের পুত্র সিনামোন বালক অবস্থায় কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।

এই লোকগুলো কাকতালীয়ভাবে অদ্ভূত সব ঘটনা সংযুক্ত করে। জানা যায় যে, নুটমার্গের বাবা, মাঞ্চুরিয়ায় একজন পশুচিকিৎসক, তরুর মতো তার গালেও একটি অদ্ভুত দাগ আছে। তরু ও ক্রেটা দুজনেরই বেশ্যাবৃত্তি নিয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।আরও জানতে পারি যে, বিভিন্ন ধরনের মানুষ যারা রহস্যজনক উড়ীয়মান (উইন্ড-আপ) পাখীর কথা শুনেছে তাদের শেষ পরিণতি হয়েছে খুব খারাপ।

উচ্চমার্গের প্লটে পাঠকের সাথে মুরাকামির মজা

মুরাকামির কয়েকটি উপন্যাস পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন যে, তার লেখাগুলো আবেগ ও অনুভুতিতে ভর্তি, এগুলো হালকা তবে সিরিয়াস একক ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে রচিত। উচ্চমার্গের প্লট পাঠককে মাঝে মাঝে কিছুট ভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। তবে এগুলো সবই পাঠকের সাথে মুরাকামির এক ধরনের মজা করা।

তিনি ‘নরওয়েজিয়ান উড’এ বলেছেন, ঝড় যখন শেষ হয়ে যায় তখন কিভাবে সেটি পার করে এসেছি তা চিন্তা করিনা, নিজে কিভাবে রক্ষা পেয়েছি সেটি চিন্তা করি। এমনকি আমরা নিশ্চিত হইনা যে, ঝড় কি আসলেই শেষ হয়ে গেছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, আমরা যখন ঝড় পার করে আসি, আমরা আর পূর্বের মতো মানুষ থাকিনা, আমরা পরিবর্তনশীল এক মানুষে পরিণত হই। ঝড় সম্পর্কে এটিই আসল কথা।

বৈশ্বিক মুরাকামি

হারুকি মুরাকামি একজন জাপানি লেখক কিন্তু রচনাবলিতে আলোচিত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক, সব দেশের মানুষের। তিনি তার লেখায় শুধু জাপানি সংস্কৃতির কথাই তুলে ধরেন না। গোটা মানবজাতির দ্বন্দ, ভালোবাসা, মানসিক সমস্যা, জটিলতা ও প্রশ্ন নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। একজন ব্যক্তিসত্ত্বার প্রৃকৃতি কেমন? ‘শান্তির সংজ্ঞা কি? বিশ্বায়নের এই যুগে সাফল্য বলতে আমরা কি বুঝি? আত্মা বলতে কি বুঝায় এবং আমরা আত্মা কিভাবে পেয়ে থাকি? মুরাকামি এসব বিষয়গুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রচনাবলীতে এবং এগুলো আমরা যে দেশেই বাস করিনা কেন আমাদের কোন না কোনভাবে প্রভাবিত করে। তাই তিনি শুধু জাপানি লেখক নন, বৈশ্বিক।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মাছুম বিল্লাহ

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং প্রেসিডেন্ট: ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)। সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর- ভাব বাংলাদেশ এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞ -ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি। ইমেইল: [email protected]

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

হারুকি মুরাকামি জাপানি ঔপন্যাসিক কিন্তু তাঁর আলোচ্য বিষয়াবলি বৈশ্বিক

প্রকাশ: ০১:১৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

হারুকি মুরাকামি (Haruki Murakami) পৃথিবীখ্যাত জাদুকরী বাস্তবতার ঔপন্যাসিক। তাঁর রচিত সাহিত্য মানুষের আভ্যন্তরীন অবস্থা বুঝার এবং আবিষ্কার করার প্রচ্ছন্ন বাসনার প্রকাশ। তার নায়কেরা আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণ করেন। তারা স্বপ্নপলায়ন এবং মৃত্যুরাজ্যে হারানো মানুষদের ও বস্তুর স্মৃতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেন ভালোবাসা, হারিয়ে যাওয়া, আধ্যাতিকতা, স্বপ্ন, সঙ্গীতের শক্তি, মুক্তি, লৈঙ্গিক পরিচয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।মুরাকামি অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ঐতিহ্যের বিষয়টিও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত এবং তার উপন্যাসের বিষয়গুলোও নেওয়া হয়েছে তার প্রিয় লেখক এবং সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে।

হারুকি মুরাকামি জাপানি কল্পকাহিনির চেহারা তিনি পরিবর্তন করে ফেলেছেন। জাপানি সাহিত্যে তিনিই প্রথম পশ্চিমা প্রভাব ঢুকিয়েছেন যা জাপানি পাঠকগন এরপূর্বে কখনো দেখেননি। লেখক ও শিল্পীগণ যদি তাদের পুরো জীবন একই ধরনের বিষয় নিয়ে সারা জীবন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যান তবে তবে হারুকি মুরাকামি হবেন সেই সাফল্যের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একজন স্বাধীন শিল্পী হিসেবে এবং এই রূপকল্পকে সামনে রেখে বিশ্ব লেখক সংঘের মধ্যে তিনি এ বিষয়ে তিনি অদ্বিতীয়।

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ হারুকি মুরাকামিকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ (A Wild Sheep Chase ) উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই বেনামি একজন চেইন ধুমপায়ীকে বর্ণনাকারী হিসেবে। বর্ণনাকারীর জীবন হতাশাজনক এবং সেখানে কোন ধরনের শুভ অগ্রগতির চিহ্ন দৃশ্যমান নয়। তবে, ঘটনা যখন সামনের দিকে আগাতে থাকে, অদ্ভুত সব ঘটনা তখন ঘটতে থাকে। বর্ণনাকারী একটি অদ্ভুত সুন্দর কর্ণের অধিকারী একটি মেয়ের সাথে ডেটিং শুরু করেন। তিনি ‘দ্য র‌্যাট’ নামক এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি চিঠি পান, এই বন্ধু গত পাঁচ বছর আগে শহর ছেড়ে চলে যান এবং তার কোন ধরনের চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

‘আ ওয়াইল্ড শিপ চেইস’ উপন্যাসে তিনি আরও একটি বড়ো পটভুমিতে জড়িয়ে পড়েন যেখানে একজন ডানপন্থী রাজনীতিকের সাথে আটেকে যান। তাকে টোকিও থেকে হোক্কাইডোর গ্রাম্য পরিবেশে এক ধরনের ভেড়ার খোঁজে বের হতে হয় যা পৃথিবীতে প্রচলিত আছে কিংবা নেই। এভাবে মুরাকামির অন্যান্য উপন্যাসের মতো ‘অ্য ওয়াইলড শিপ চেইজ’ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও বাক্যের সমারোহে পূর্ণ। তিনি নতুন এক সুন্দর কর্ণের অধিকারী বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, তার ব্যবসায়ী বন্ধুও তার মেয়েটির সাথে অস্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যেটি একটি ভীতিকার অবস্থা হিসেবে দেখছেন তিনি। মেয়েবন্ধুর চমৎকার কর্ণ যে কাউকে বিমোহিত করতে পারে।

উপন্যাসটির কয়েকটি অংশ সংঘটিত হয়েছে হোক্কাইডোর গ্রাম্য জঙ্গলে যাকে বিকল্পভাবে নায়কের মনের ভেতরকার অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিংবা এটি মৃতব্যক্তিদের পৌরাণিক কাহিনির ভূমি। মুরাকামির বহু উপন্যাসের মতো এটি কেন্দ্রেও রয়েছে ব্যক্তি ইচ্ছার এবং নৈর্ব্যক্তিক (ইমপারসোনাল) অবস্থার দ্বন্দের গল্প। আর শান্তশিষ্ট ও সর্বদিকে শক্তিশালী একটি ভেড়া তো রয়েছেই। আর তাই মূল উপাখ্যানই হচ্ছে ভেড়া সম্পকির্ত একটি দুঃসাহসিক অভিযান। উচ্চমার্গের পৌরানিক কাহিনি এবং রহস্যে ঘেরা একটি উপন্যাস। অসাধারন একটি রোমাঞ্চকার সাহিত্যের গল্প যা মুরাকামির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে।

‘নরওয়েজিয়ান উড’ এবং সুপারস্টার মুরাকামি

‘নরওয়েজিয়ান উড’ (Norwegian Wood) বইটি হারুকি মুরাকামিকে সুপারষ্টার বানিয়েছে। এটি ভালোবাসা ও হারানোর একটি নস্টালজিক গল্প। তরু ওয়াটানাবে, যিনি নিজেকে কলেজের একজন নবীন ছাত্র হিসেবে দেখছেন। দুজন সুন্দরী ও অস্বাভাবিক নারীর সাথে সম্পর্কের কথা বিস্তারিতবাবে বর্ণনা করা হয়েছে এখানে। এটি মূলত একটি বাস্তব ও জটিল ভালোবাসার গল্প। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ উপন্যাসে সুন্দরী বমণীদ্বয় হচ্ছেন ‘নেওকো’ ও ‘মিদরি’। বইটির শিরোনমা নেয়া হয়েছে ১৯৬৫সালের বিটলেসের একটি গান থেকে যার নাম ‘নরওয়েজিয়ান উড’ (দ্য বার্ড হ্যাজ ফ্লোন- পাখীটি উড়ে গেছে)। এটি উপন্যাসটির বর্ণনায় বার বার এসেছে। সাথে এসেছে পশ্চিমা সঙ্গীত ও সাহিত্য। ১৯৬০এর দশকে এটি সংঘটিত হয় টোকিওতে। এটি পরিবর্তিত জাপানের চিত্র তুলে ধরে। শিক্ষার্থীরা ইস্টাবিশিমেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। হারুকি মুরাকামি ছাত্র আন্দোলনকে সাদামাটা হিসেবে দেখিয়েছেন।

তরু ওয়াটানাবে ‘হিস্ট্রি অব ড্রামা’ ক্লাসে এক উচছল তরুণীর সাক্ষাত পানতার নাম মিদোরি। তিনি তরুর নোট ধার চেয়েছেন।যদিও তিনি খুব একটা সময়ানুবর্তী নন, তার নোট ফেরত দেওয়ার তারিখ বার বার পরিবর্তন করছিলেন তার পরেও তরু তার প্রতি আকৃষ্ট হন, তার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা দুজনেই একে অপরকে সময় দিয়ে যাচ্ছেন এমনকি তরু যখন তার ভালোলাগার আরেক মেয়ে নাওকোকেও চিঠি লিখে যাচ্ছেন তার মধ্যেও তাদেও দু’জনে একে অপরকে সময় দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে গল্প চলছে। এক বিকেলে মিদোরি তরুর জন্য দুপারের খাবার রান্না করেন, খাওয়া দাওয়ার পর দুজন ছাদে গিয়ে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে দু’জন ‘চুমো খান’। তরু তাকে খুলে বলেন যে, তাকে তার ভাল লাগে কিন্তু তিনি এক আবেগঘন ও জটিল রোমান্টিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মিদোরিও বললেন যে, তারও একটি ছেলে বন্ধু রয়েছে, অতএব দুইজনই শুধু বন্ধুই থাকতে চান, সম্পর্ক অন্যকোনদিকে নিয়ে যাবেন না।

একদিন কথা বলার এক পর্যায়ে মিদোরি হঠাৎ আবগেঘন হয়ে পড়েন এবং চিৎকার করেন। পরে তার রুমমেট রেইকো, তরু ও তিনি বিকেলে ঘুরতে বের হন। রুমে ফিরে এস নেওকো তার হঠাৎ আবেগী হওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তারা তিনজনই ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেন। মধ্যরাতে নেওকো তরুর বিছানার কাছে চলে আসেন, তার পোশাক খুলে ফেলেন এবং তার উলঙ্গ দেহটাকে তরুর কাছে সমর্পন করেন। পরদিন সকল বেলা তাকে মনে হচ্ছে কিংবা তিনি ভান করছেন যে, রাতের কোন ঘটনাই তার মনে নেই কিংবা রাতে কিছুই হয়নি।

সেদিন রেইকো ও নেওকো দুজনেই তরুকে পাহাড়ের মধ্যে হাঁটতে নিয়ে যান। পথিমধ্যে রেইকো কফি খাওয়ার জন্য একটি দোকানে থামেন এবং তরু ও নেওকোকে একান্তে কিছু সময় কাটানের জন্য বলেন। পরে বনের মধ্যে হাঁটতে শুরু করেন এবং কথা বলতে বলতে নেওকো তার হাত ব্যবহার করেই তরুকে উত্তেজনার চরম সীমায় পৌছে দেন।

পরে এটিও জানা যায় যে, নেওকোর বোনও তরুনী বয়সে আত্মহত্যা করে মারা যান এবং নেওকো তার দেহ খুঁজে বের করেন। তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে তরুকে পীড়াপীড়ি করছেন তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য জীবন শুরু করতে। কারন সে ভালোবাসার আঘাতে এত জর্জরিত যে, অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারছেনা। কিন্তু তরু বলছেন যে, তিনি তার অপেক্ষায় থাকবেন। ঐ রাতে তরু ও রেইকো আবার হাঁটতে বের হয় এবং রেইকো তার গল্প শেষ করেন। তিনি বলছেন যে তার এক ছাত্র আবেগপ্রবন মিথ্যাবাদী। সে রোগী সেজে তাকে বিপথে চালিত করেছে। সে তাকে ভুলিয়ে বেডরুমে নিয়ে গেছে এবং তার সাথে যৌনখেলা খেলেছে। তিনি সেই রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেছেন কিন্তু তার ছাত্র রটিয়ে বেড়িয়েছে যে, রেইকো তাকে যৌনহেনস্থা করেছেন। বলতে বলতে এই অবস্থায় তার মনটা আবার ভেঙ্গে পড়ে এবং অমি হোস্টেলে ফিরে যায় যেখানে তিনি থাকছেন নেওকোর সাথে।তাই তিনি তরুকে বলছেন যে, ভালোবাসার সম্পর্কের জগতে প্রবেশ করতে তার ভয় হচ্ছে,কিন্তু তরু বলছেন যে, রেইকোর প্রতি প্রতি তার বিশ্বাস রয়েছে। পরদিন সকালে তরু টোকিও চলে আসেন কিছুটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে।

পরদিন সে মিদোরির কাছে চলে যান তার আমন্ত্রণে। দু’জনই বেশ মদ্য পান করেন এবং মিদোরি তার প্রতি তার আগ্রহের কথা জানায়,  তরু এটিকে হেসে উড়িযে দেন কিন্তু তরু যখন রবিবার আবার একত্রিত হওয়ার কথা বলেন, তখন কিন্তু তিনি মিদোরির আমন্ত্রণে সাড়া দেন এবং ছুটে আসেন। মিদোরি তরুকে নিয়ে যেতে তার ডরমিটরিতে চলে আসেন। রেলস্টেশন পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে তরু মিদোরিকে জিজ্ঞেস করেন তারা আসলে কোথায় যাচ্ছে। তখন মিদোরি জানান যে তারা তার বাবাকে দেখতে হাসাপাতাল যাচেছ। তার বাবা ব্রেইন টিউমারে মারা যাওয়ার অবস্থায় আছেন। এ সময় মিদোরি তরুর কাছে তার বাবার উরুগুয়ে থাকার কথা বলেছিলেন যা ছিল মিথ্যে। এ জন্য তিনি তরুর কাছে ক্ষমা চাচেছন। তার বাবা মি. কোবাইশি মারাত্মক অসুস্থ এবং তিনি কথা বলতে পারছেন না বললেই চলে।

হারুকি মুরাকামির পরলৌকিক গোলকধাঁধার ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রোনিকেল’

‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রোনিকেল’ (The Wind-Up Bird Chronicle) মুরাকামির আরও একটি উপন্যাস যেখানে অন্য একটি জগত প্রতিফলিত হয়েছে। এবার গোলকধাধার একটি হোটেলকে নেওয়া হয়েছে পটভূমি হিসবে যেখানে নায়কের স্ত্রী কুমিকোকে তার শয়তান ভাই বন্দী করে রেখেছে। ভাইয়ের নাম ওয়াতিয়া নবোরু। নায়ক হচ্ছেন নরম মেজাজের বেকার ঘরে থাকা স্বামী, নাম ওকাদা তরু। তিনি এই পরলৌকিক গোলকধাঁধার মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করেন। তিনি নবোরুকে মোকাবিলা করে তার স্ত্রী কুমিকোকে উদ্ধার করেন। এই সময়ে তিনি দুঃসময় মোকাবিলা করেন এবং সময় দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে, একটির পর একটি আলাদা আলাদা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে থাকে। উপ্যনাসটি যৌনতার পরীক্ষা নিরীক্ষা, সন্ত্রাস, হারিয়ে যাওয়া ও উদ্ধার হওযা স্মৃতিগুলোর সংগ্রহ।

তরু ওকাদা সম্প্রতি আইন কোম্পানীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং একদিন তার হারিয়ে যাওয়া বেড়ালোর সন্ধানে বের হন এবং হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করেন একটির পর একটি বিশ্রী অভিযানের মধ্যে। তার বিড়ালটি হারিয়ে যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় তার স্ত্রী কুমিকোকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তাদের বিয়ের নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে চিন্তা করছিলেন, তারপরেও তার স্ত্রীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এই সময়ের মধ্যে তরু একজনের পর একজন উৎসুক মানুষের দেখা পান।

মে কাসহারা, সমস্যা জর্জড়িত তরুনী যিনি নিজেকে দায়ী মনে করেন তার ছেলেবন্ধুর মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াকে। মাল্টা কানো নামে এক মানসিক রোগী তরুর হারিয়ে যাওয়া বিড়াল নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করেন। মাল্টার বোন ক্রেটা, দাবী করেন যে, কুমিকোর ভাই নবোরু ওয়াতিয়া তাকে ধর্ষন করেছে। লেফটেন্যান্ট মামিয়া নামে একজন সৈনিক বলেন যে, একজন জীবন্তা মানুষের চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে, নুটমেগ আকাসাকা, রহস্যময়ী উপশমকারী যার স্বামীকে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে, নুটমেগের পুত্র সিনামোন বালক অবস্থায় কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।

এই লোকগুলো কাকতালীয়ভাবে অদ্ভূত সব ঘটনা সংযুক্ত করে। জানা যায় যে, নুটমার্গের বাবা, মাঞ্চুরিয়ায় একজন পশুচিকিৎসক, তরুর মতো তার গালেও একটি অদ্ভুত দাগ আছে। তরু ও ক্রেটা দুজনেরই বেশ্যাবৃত্তি নিয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।আরও জানতে পারি যে, বিভিন্ন ধরনের মানুষ যারা রহস্যজনক উড়ীয়মান (উইন্ড-আপ) পাখীর কথা শুনেছে তাদের শেষ পরিণতি হয়েছে খুব খারাপ।

উচ্চমার্গের প্লটে পাঠকের সাথে মুরাকামির মজা

মুরাকামির কয়েকটি উপন্যাস পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন যে, তার লেখাগুলো আবেগ ও অনুভুতিতে ভর্তি, এগুলো হালকা তবে সিরিয়াস একক ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে রচিত। উচ্চমার্গের প্লট পাঠককে মাঝে মাঝে কিছুট ভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। তবে এগুলো সবই পাঠকের সাথে মুরাকামির এক ধরনের মজা করা।

তিনি ‘নরওয়েজিয়ান উড’এ বলেছেন, ঝড় যখন শেষ হয়ে যায় তখন কিভাবে সেটি পার করে এসেছি তা চিন্তা করিনা, নিজে কিভাবে রক্ষা পেয়েছি সেটি চিন্তা করি। এমনকি আমরা নিশ্চিত হইনা যে, ঝড় কি আসলেই শেষ হয়ে গেছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, আমরা যখন ঝড় পার করে আসি, আমরা আর পূর্বের মতো মানুষ থাকিনা, আমরা পরিবর্তনশীল এক মানুষে পরিণত হই। ঝড় সম্পর্কে এটিই আসল কথা।

বৈশ্বিক মুরাকামি

হারুকি মুরাকামি একজন জাপানি লেখক কিন্তু রচনাবলিতে আলোচিত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক, সব দেশের মানুষের। তিনি তার লেখায় শুধু জাপানি সংস্কৃতির কথাই তুলে ধরেন না। গোটা মানবজাতির দ্বন্দ, ভালোবাসা, মানসিক সমস্যা, জটিলতা ও প্রশ্ন নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। একজন ব্যক্তিসত্ত্বার প্রৃকৃতি কেমন? ‘শান্তির সংজ্ঞা কি? বিশ্বায়নের এই যুগে সাফল্য বলতে আমরা কি বুঝি? আত্মা বলতে কি বুঝায় এবং আমরা আত্মা কিভাবে পেয়ে থাকি? মুরাকামি এসব বিষয়গুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রচনাবলীতে এবং এগুলো আমরা যে দেশেই বাস করিনা কেন আমাদের কোন না কোনভাবে প্রভাবিত করে। তাই তিনি শুধু জাপানি লেখক নন, বৈশ্বিক।