০৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন’স নেক

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০১:৫৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  • / ৪৩৯৫ বার পড়া হয়েছে

মানচিত্র: বাংলাদেশ, ভারত, শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক, ভুটান, ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং চীন।

ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, চীন এবং বিশ্বের  অন্যান্য দেশের মানুষ কাছে শিলিগুড়ি করিডোর (Siliguri Corridor) সম্পর্কে অল্প হলেও শুনেছেন। এই করিডোরটি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিলিগুড়ি করিডোর ভৌগোলিক অবস্থান ও আকৃতির জন্য ‘চিকেন’স নেক’ নামেও পরিচিত।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন’স নেক কী? (What is the Siliguri Corridor or Chicken’s Neck?)

শিলিগুড়ি করিডোর হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে দেশটির অবশিষ্ট অংশের সংযোগরক্ষাকারী এক সরু ভূখণ্ড। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি ভূখণ্ডের আকৃতি অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো বলে একে চিকেন’স (Chicken’s Neck) বলা হয়। ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই শিলিগুড়ি করিডোর। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, চিকেনস নেক চীন দখল করে নিয়ে ভারতকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক কোথায় অবস্থিত

আয়তনে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ভারত। এই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত শিলিগুড়ি জেলায় অবস্থান শিলিগুড়ি করিডোরের। শিলিগুড়ি করিডোর মুলত বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যবর্তী সরু ভূখণ্ড; অর্থাৎ, শিলিগুড়ি করিডোরের দুই পাশে বাংলাদেশ ও নেপাল অবস্থিত।  তবে শিলিগুড়ি জেলার সীমানায় রয়েছে ভুটান, নেপাল, সিকিম, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক (মুরগির ঘাড়) নামের সরু ভূখণ্ডের প্রস্থ স্থানবিশেষে ২১ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

শিলিগুড়ি করিডোর কীভাবে সৃষ্টি হয়?

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস থেকে যে কেউ সহজেই জানতে পারবেন যে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে বৈরিতার ফলস্বরূপ ভারত বিভাগ হয়েছিল। প্রথম থেকেই এই দুটি নতুন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শত্রুতা ও সংঘাতের দ্বারা চিহ্নিত ছিল।

১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে শিলিগুড়ি করিডোরের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হওয়া পর্যন্ত শিলিগুড়ি করিডোর ছিল ‘রাজতন্ত্রী সিকিম করিডোর’-এর উত্তর দিকে। সিকিম করিডোর শিলিগুড়ি করিডোরের উত্তরে ভারতকে এক রকম সুরক্ষা দিয়েছে এবং চীনা চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম দিকের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করেছে।

গোল্ডেন ওয়েজ

২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডোর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে উক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়। তবে অবৈধ মাদক ও অস্ত্রচোরাচালান বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। শিলিগুড়ি করিডোর অর্থাৎ, বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপাল সিমান্ত অবৈধ মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে বলে একে বলা হয় ‘গোল্ডেন ওয়েজ’।

শেষকথা

যদিও শিলিগুড়ি করিডোর চিকেন’স নেক ভারতের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঞ্চল, এর অবস্থান একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন’স নেক

প্রকাশ: ০১:৫৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, চীন এবং বিশ্বের  অন্যান্য দেশের মানুষ কাছে শিলিগুড়ি করিডোর (Siliguri Corridor) সম্পর্কে অল্প হলেও শুনেছেন। এই করিডোরটি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিলিগুড়ি করিডোর ভৌগোলিক অবস্থান ও আকৃতির জন্য ‘চিকেন’স নেক’ নামেও পরিচিত।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন’স নেক কী? (What is the Siliguri Corridor or Chicken’s Neck?)

শিলিগুড়ি করিডোর হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে দেশটির অবশিষ্ট অংশের সংযোগরক্ষাকারী এক সরু ভূখণ্ড। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি ভূখণ্ডের আকৃতি অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো বলে একে চিকেন’স (Chicken’s Neck) বলা হয়। ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই শিলিগুড়ি করিডোর। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, চিকেনস নেক চীন দখল করে নিয়ে ভারতকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক কোথায় অবস্থিত

আয়তনে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ভারত। এই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত শিলিগুড়ি জেলায় অবস্থান শিলিগুড়ি করিডোরের। শিলিগুড়ি করিডোর মুলত বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যবর্তী সরু ভূখণ্ড; অর্থাৎ, শিলিগুড়ি করিডোরের দুই পাশে বাংলাদেশ ও নেপাল অবস্থিত।  তবে শিলিগুড়ি জেলার সীমানায় রয়েছে ভুটান, নেপাল, সিকিম, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র।

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক (মুরগির ঘাড়) নামের সরু ভূখণ্ডের প্রস্থ স্থানবিশেষে ২১ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

শিলিগুড়ি করিডোর কীভাবে সৃষ্টি হয়?

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস থেকে যে কেউ সহজেই জানতে পারবেন যে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে বৈরিতার ফলস্বরূপ ভারত বিভাগ হয়েছিল। প্রথম থেকেই এই দুটি নতুন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শত্রুতা ও সংঘাতের দ্বারা চিহ্নিত ছিল।

১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে শিলিগুড়ি করিডোরের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হওয়া পর্যন্ত শিলিগুড়ি করিডোর ছিল ‘রাজতন্ত্রী সিকিম করিডোর’-এর উত্তর দিকে। সিকিম করিডোর শিলিগুড়ি করিডোরের উত্তরে ভারতকে এক রকম সুরক্ষা দিয়েছে এবং চীনা চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম দিকের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করেছে।

গোল্ডেন ওয়েজ

২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডোর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে উক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়। তবে অবৈধ মাদক ও অস্ত্রচোরাচালান বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। শিলিগুড়ি করিডোর অর্থাৎ, বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপাল সিমান্ত অবৈধ মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে বলে একে বলা হয় ‘গোল্ডেন ওয়েজ’।

শেষকথা

যদিও শিলিগুড়ি করিডোর চিকেন’স নেক ভারতের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঞ্চল, এর অবস্থান একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ।