ইসকন কী এবং বাংলাদেশে ইসকনের যড়যন্ত্র
বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে ইসকন তার যাবতীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালাতে পেরেছে। যেহেতু আওয়ামিলীগ সরকার এবং ইসকন উভয়ই ভারতীয় সমর্থনপুষ্ট সেহেতু এতদিন তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে তাদের কার্যক্রম সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। কেননা তাদের নেতৃত্ব সরাসরি ভারত এবং স্বৈরাচার সরকারের তাঁবেদারি করছে। যা এদেশের সাধারণ মানুষ কখনোই মেনে নিবে না। তাই ইসকনকে তার কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাদের অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
- প্রকাশ: ০৮:০০:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
ইসকন! সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম। ইসকনকে সনাতন বা হিন্দু ধর্মের একটি আধাত্মিক সংগঠন বলা হলেও তাদের সাথে হিন্দু ধর্মের নানান অমিল রয়েছে। এই সংগঠনটি সারা বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এটি হিন্দুদের আধাত্মিক সংগঠন হলেও বিগত কিছু বছর থেকে এর কার্যক্রম খুবই সন্দেহজনক বলে পরিলক্ষিত হয়ে আসছিল। যার সর্বশেষ প্রমাণ একটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সবার সামনে উঠে এসেছে। চলুন আজ আমরা ইসকনের ইতিহাস এবং বাংলাদেশে ইসকনের যড়যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
ইসকন কী
ইসকন মূলত আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ নামে পরিচিত। এটি একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন যার মূল লক্ষ্য হলো তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করা। এই সংগঠনের দর্শন গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
ইসকন কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
ইসকনের প্রতিষ্ঠা হলেন স্বামী প্রভুপাদ। তিনি ১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে পশ্চিমা বিশ্বে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক যাত্রা করেন। প্রায় এক বছর ধরে তিনি নিউ ইয়র্কে কঠোর সাধনা ও প্রচার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। পরিশেষে ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রভুপাদের নির্দেশনায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইসকন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং শতাধিক আশ্রম, মন্দির, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে, অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় এবং ভক্তদের সহযোগিতায় ১৯৬৬ সালে ইসকন জন্ম নেয়।
ইসকনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা ইসকন হলো একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন যার মূল উদ্দেশ্য হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি এবং ভগবদ্গীতার শিক্ষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।
ইসকনের মূল লক্ষ্যগুলো হল
ভক্তি যোগের প্রচার
ইসকন ভক্তি যোগকে আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতির সর্বোত্তম পথ বলে মনে করে। এই যোগের মাধ্যমে ভক্তরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলে।
ভগবদ্গীতার শিক্ষা
ইসকন ভগবদ্গীতাকে জীবনের সর্বোত্তম নির্দেশিকা বলে মনে করে। এই গ্রন্থের শিক্ষাগুলোকে মানুষের জীবনে প্রয়োগ করে তারা আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারে।
নিরামিষ আহার
ইসকন নিরামিষ আহারকে শারীরিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।
সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব
ইসকন সকল মানুষকে একই পরিবারের সদস্য বলে মনে করে এবং সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপনের চেষ্টা করে।
সামাজিক সেবা
ইসকন বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করে, যেমন দুঃস্থদের খাবার বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি।
ইসকনের জীবনধারা
সাধু সঙ্গ
ইসকন সদস্যরা সাধু সঙ্গে থাকার গুরুত্ব দেয়। তারা মনে করে যে, সাধু সঙ্গে থাকলে আধ্যাত্মিক উন্নতি দ্রুত হয়।
নিরামিষ আহার
ইসকন সদস্যরা নিরামিষ আহার করেন। তারা মনে করে যে, নিরামিষ আহার শরীর ও মনকে শুদ্ধ রাখে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সহায়ক হয়।
সেবা
ইসকন সদস্যরা ভগবান কৃষ্ণের সেবায় নিজেদেরকে নিযুক্ত রাখে। তারা মন্দির পরিষ্কার করা, ভোগ রান্না করা, কীর্তন করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সেবা করে।
ইসকন এবং সনাতন ধর্মের মধ্যে পার্থক্য
ইসকনকে হিন্দু সংগঠন বলা হলেও ইসকনের চিন্তাভাবনা এবং সনাতন ধর্মের আচার-আচরণ মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যদিও উভয়ই ভগবান কৃষ্ণকে সর্বোচ্চ সত্তা হিসেবে মনে করে। এই পার্থক্যগুলোকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যেমন,
দৃষ্টিভঙ্গি
সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্মে দেবদেবী পূজা, বেদ ও উপনিষদের শিক্ষা, জাতিবর্ণ ব্যবস্থা, পুরাণ ও ইতিহাসের গুরুত্ব বেশি। এটি বিভিন্ন দেবতাকে পূজা করার উপর জোর দেয় এবং মুক্তির জন্য জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়কে গুরুত্ব দেয়।
ইসকন: ইসকন মূলত ভগবান কৃষ্ণকে একমাত্র সর্বোচ্চ সত্তা হিসেবে মনে করে। এটি ভক্তি যোগকে মুক্তির একমাত্র উপায় বলে মনে করে এবং ভগবদ্গীতাকে সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে। ইসকন জাতিবর্ণ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয় না এবং সকলকে কৃষ্ণের ভক্ত হিসেবে সমান দেখে।
আচার অনুষ্ঠান
সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্মে বিভিন্ন দেবতার পূজা, যজ্ঞ, হোম, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠান রয়েছে।
ইসকন: ইসকনে মূলত হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ, কীর্তন, ভগবদ্গীতা পাঠ এবং ভগবান কৃষ্ণের মূর্তির পূজাই প্রধান আচার অনুষ্ঠান।
সংগঠন
সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্ম একটি অত্যন্ত প্রাচীন ধর্ম এবং এর কোনো একক সংগঠন নেই। এটি বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও মতবাদের সমন্বয়ে গঠিত।
ইসকন: ইসকন একটি আধুনিক ধর্মীয় সংগঠন যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রীলা প্রভুপাদ। এই সংগঠনের একটি নির্দিষ্ট গঠন এবং নিয়মকানুন রয়েছে।
সামাজিক প্রভাব
সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতার মূল ভিত্তি। এটি ভারতীয় সমাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ইসকন: ইসকন বিশ্বব্যাপী একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। এটি বিভিন্ন দেশে মানুষকে ভগবান কৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট করেছে এবং তাদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে বলে তারা মনে করে।
সমালোচনা
সনাতন ধর্ম: সনাতন ধর্মকে জাতিবর্ণ ব্যবস্থা, মহিলাদের অধিকারের অভাব ইত্যাদি বিষয়ে সমালোচনা করা হয়।
ইসকন: ইসকনকে ধর্মান্তরকরণ, উগ্রবাদ এবং মূল ধর্মীয় গ্রন্থের ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
মোটকথা ইসকন এবং সনাতন ধর্ম উভয়ই ভারতীয় ধর্মের একটি অংশ হলেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার অনুষ্ঠান, সংগঠন এবং সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
ইসকন কাদের বেশি প্রভাবিত করে
ইসকন বিভিন্ন ধরনের মানুষকে বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত করতে পারে। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, ইসকন নিম্নলিখিত ধরনের মানুষদের বেশি আকর্ষণ করে:
আধ্যাত্মিক জীবন খুঁজতে আগ্রহী যুবক-যুবতী
যারা চলমান জীবনের গন্ডিতে সুখী নয় এবং আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট, তারা ইসকনের উৎসাহী পরিবেশ, কীর্তন, ভজন এবং আধ্যাত্মিক বক্তৃতায় নিজেদের জীবনের একটি অংশ খুঁজে পায়। তাই তারা আধ্যাত্মিক সাধনায় ইসকনের সাথে যুক্ত হয়।
জীবনের অর্থ খুঁজতে আগ্রহী ব্যক্তি
ইসকনের দর্শন অনুযায়ী, জীবনের অর্থ হলো ভগবান কৃষ্ণের সেবা। এই ধারণা অনেককে তাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ফলে তারা ইসলামের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়।
সামাজিক পরিবর্তন চান এমন ব্যক্তি
ইসকন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে জড়িত থাকে এবং তারা সামাজিক পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর। এই কারণে অনেক উচ্চ মানসিকতার ধারকেরা ইসকনের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী হন।
সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজতে আগ্রহী ব্যক্তি
ইসকন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে। এই কারণে অনেকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজতে ইসকনের দ্বারস্থ হয়।
নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী ব্যক্তি
ইসকন ভগবদ্গীতা, ভক্তি যোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিষয় শেখার সুযোগ দেয়। এই কারণে অনেকে নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসকনে যোগদান করে।
কিছু বিশেষ কারণে অধিকাংশ নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ইসকন দ্বারা বেশি আকৃষ্ট হয়:
সামাজিক বৈষম্য
নিম্নবর্ণের মানুষেরা প্রায়শই সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়। ইসকন সকলকে সমান দেখে এবং এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করে।
সামাজিক নিরাপত্তা
ইসকন সম্প্রদায় একটি নিরাপদ আশ্রয়ের মতো কাজ করে। কারণ অন্যান্য ধর্ম থেকে যারা ইসকনের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তারা সমাজের বেশ প্রভাবশালী হয়ে থাকে। এছাড়াও ইসকনের সকল সদস্য একতাবদ্ধ থাকার কারণে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রতাদের দলছুট করতে পারে না। তাই তারা নিজেদের নিরাপদ বোধ করে।
আধ্যাত্মিক উন্নতি
ইসকন আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি পথ দেখায়, যা অধিকাংশ নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রভাবিত করে।
ইসকনক কেন উগ্রবাদী সংগঠন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধরনের দাবির পেছনে যেসব কারণ থাকতে পারে, সেগুলো নিম্নরূপ:
ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ
ইসকন তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারে খুব সক্রিয়। তাই তারা বিভিন্ন দেশে নানান ভাবে ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করে। করা হয়।
সামাজিক প্রভাব
ইসকন সদস্যরা প্রায়ই উন্মুক্ত ময়দানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ভজন কীর্তন ইত্যাদি করে, যা অনেকের কাছেই বিরক্তির কারণ হিসাবে কাজ করে।
পশ্চিমা প্রভাব
ইসকনের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায়, এর কিছু ধারণা ও পদ্ধতি স্থানীয় সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। ফলে স্থানীয়দের সাথে তাদের মতবিরোধ দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে সহিংসতায় রূপ নেয়।
সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন
ইসকনের অনুসারীদের জীবনযাত্রার ধরন স্থানীয় সামাজিক রীতিনীতির সাথে ভিন্ন হয়, ফলে তা সমাজের একাংশের জন্য অসহ্য হয়ে উঠে।
সংগঠন পরিচালনায় সমস্যা
ইসকন নিজেদের একতাবদ্ধ রাখতে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং নিজেদের যাবতীয় কার্যক্রম সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত করে। অনেক সময় ইসকনের সাথে স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
স্থানীয় ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণা
স্থানীয়দের নিজেদের দলে আনতে সংগঠনটি অন্যান্য ধর্মের লোকদের মধ্যে তাদের ধর্মীয় চেতনা বিরোধী কার্যকলাপ পরিচালিত করে। এইসব কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
কোন কোন দেশে ইসকন নিষিদ্ধ?
ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও কিছু কিছু দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে ইসকনের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যেসব দেশে ইসকন নিষিদ্ধ বা এর কার্যকলাপ সীমিত
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন
১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া ও অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যে ইসকন কাজ করতে শুরু করে।
চীন
চীনে বিদেশি ধর্মীয় সংগঠনের কার্যকলাপ সীমিত। ইসকনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে।
সৌদি আরব ও আফগানিস্তান
ধর্মীয় উগ্রতার কারণে সৌদি আরব ও আফগানিস্তানে ইসকনের কোনো কার্যকলাপের অনুমতি নেই।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ইসকন আংশিকভাবে নিষিদ্ধ। কিছু কিছু শর্ত মেনে দেশটিতে তারা সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চলে।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া
এই দেশগুলোতেও ইসকনের কার্যকলাপ সীমিত।
ইরান
ইরানে ইসকনের কোনো কার্যকলাপের অনুমতি নেই।
তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান: এই দেশগুলোতে ইসকনের কার্যকলাপের ওপর কঠোর নজরদারি রয়েছে।
বাংলাদেশে ইসকনের যড়যন্ত্র
বিদেশী প্রভাব
ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হওয়ায় বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। এরফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। যা এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। আর এই বিদেশি প্রভাবের কারণে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করে। যা ধীরে ধীরে এদেশের হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রতিকে নষ্ট করে দিয়েছে।
ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার
বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হচ্ছে তারা এই দেশে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। একইসাথে ভারতীয় কট্টরপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির আদলে বাংলাদেশেও কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন তৈরি চেষ্টা করছে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
ইসকন নিজেদের পরিচয় অরাজনৈতিক দিলেও, তারা সরাসরি বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। আর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে তারা এই দেশে ধর্মান্তরকরণের নানান অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যা এদেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিচ্ছে না।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক এক সহিংস ঘটনায় ইসকন সদস্যদের জড়িত থাকার পর ইসকনকে ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়। খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ইসকন সদস্যরা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে হামলা এবং পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে৷ যে সংঘর্ষে তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা সংগঠনের উদ্দেশ্য ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের আক্রমণ উদ্বেগজনক, কারণ এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইসকন একটি শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় আন্দোলন থেকে সহিংসতা অবলম্বনের দিকে ঝুঁকছে।
সনাতন হিন্দু ধর্মের সাথে অসঙ্গতি
ইসকনকে শুধু মুসলিমরাই অপছন্দ করে তা নয়, তাদের কিছু ধারণা ও অনুশীলন সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রচলিত ধারণার সাথে মিলে না। বিশেষ করে হরে কৃষ্ণ মন্ত্রের উপর জোর দেওয়া এবং অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা না করা সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশকে অসন্তুষ্ট করে।
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রদান
ইসকন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানান যড়যন্ত্রমূলক তথ্য প্রচার করে, যা বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। এইসব বিদ্বেষমূলক তথ্য দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জন্য হুমকিস্বরূপ। ইতিমধ্যে এইধরনের ভুল তথ্যের কারণে বেশকিছু সংঘর্ষও সংঘটিত হয়েছে। যা স্পষ্টভাবে দেশের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের একটি অংশ বলে রাষ্ট্র বিবেচনা করছে।
শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
ইসকনের কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ
বাংলাদেশে ইসকনের কিছু নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রদায়িক উসকানি
ইসকনক তার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে দেশের মধ্যে নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম প্রচার
ইসকন সামাজিক কার্যক্রমের নামে বিভিন্ন স্কুলে নানান কর্মসূচী পালন করে। এইসব কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা কোমলমতি শিশুদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুড়সুড়ি
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামিলীগ সরকারের পরিবর্তনের পর ইসকন সরাসরি হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লাগানোর জন্য নানান কর্মকান্ডে তৎপর। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বানোয়াট নির্যাতনের খবর তারা প্রচার করছে। এই জন্য তারা বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আর্থিক সহায়তা পায় বলেও সরকারের কাছে তথ্য আছে।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট
ইসকন বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের একটি বানোয়াট চিত্র তুলে ধরছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, এই জাতীয় চিত্র আন্তর্জাতিক মহলে প্রকাশ পেলে তাদের সহানুভূতি এবং সমর্থন লাভ করা যাবে। যে কারণে সামান্য ছোটখাটো ঘটনাকেও তিলকে তাল করে অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উপস্থাপিত করছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ইসকন আন্তর্জাতিক মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং দেশটির ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
হত্যার সাথে জড়িত
ইসকন নেতার উসকানিতে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুদের হাতে একজন মুসলিম আইনজীবী হত্যা হয়েছে। যার হত্যার সাথে ইসকন কর্মীরা সরাসরি জড়িত। যারা ইতিমধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের সহযোগী
ইসকন সরাসরি বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে। এতদিন ভারতীয় মদদপুষ্ট সরকার থাকার কারণে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারিনি এবং জানতেও পারেনি। কিন্তু যখনই ভারতীয় সমর্থিত সরকারের পতন হয়, তখনই কাল্পনিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে তারা এদেশে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার করতে নানান যড়যন্ত্র শুরু করে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে এদেশের মানুষ পেয়েছ।
মোটকথা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে ইসকন তার যাবতীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালাতে পেরেছে। যেহেতু আওয়ামিলীগ সরকার এবং ইসকন উভয়ই ভারতীয় সমর্থনপুষ্ট সেহেতু এতদিন তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে তাদের কার্যক্রম সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। কেননা তাদের নেতৃত্ব সরাসরি ভারত এবং স্বৈরাচার সরকারের তাঁবেদারি করছে। যা এদেশের সাধারণ মানুষ কখনোই মেনে নিবে না। তাই ইসকনকে তার কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাদের অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।