০১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সংক্ষিপ্ত জীবনী: মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ১২:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৬০৪ বার পড়া হয়েছে

ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদ বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি মুসলিম কবি, ছড়াকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। ফররুখ আহমেদের পূর্ণনাম— সৈয়দ ফররুখ আহমদ। এই বাঙালি কবি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তার কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্‌প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তার কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তার কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। “সাত সাগরের মাঝি” কাব্যগ্রন্থে তিনি যে কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন তা স্বতন্ত্র এবং এ-গ্রন্থ তার এক অমর সৃষ্টি।

ফররুখ আহমদ জুন ১০, ১৯১৮ তারিখ ব্রিটিশ ভারতের মাগুরার শ্রীপুরের মাঝাইলে জন্মগ্রহণ করেন এবং অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪ তারিখ ৫৬ বছর বয়সে বাংলাদেশের ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

এক নজরে ফররুখ আহমদ

নামবাংলা: সৈয়দ ফররুখ আহমদ
ইংরেজি: Syed Farrukh Ahmad
জন্ম১০ জুন ১৯১৮; মাঝাইল, শ্রীপুর, মাগুরা, ব্রিটিশ ভারত
দাম্পত্যসঙ্গীসৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৮-১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশী (১৯৭১-১৯৭৪)
সময়কালবিংশ শতাব্দী
পেশাকবি, সম্পাদক, বেতার শিল্পী
সাহিত্যের ধরনকবিতা, ছড়া, গল্প, শিশু সাহিত্য
সাহিত্যের বিষয়মানবতাবাদ, ইসলামি ঐতিহ্য, রোমান্টিকতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিসাত সাগরের মাঝি; সিরাজাম মুনীরা; হাতেম তায়ী; মুহূর্তের কবিতা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০),
একুশে পদক (১৯৭৭),
স্বাধীনতা পদক (১৯৮০)
মৃত্যুঅক্টোবর ১৯, ১৯৭৪ (বয়স ৫৬); ঢাকা, বাংলাদেশ

জন্ম ও পরিবার

সৈয়দ ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।

১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ ‘উপহার’ নামে একটি কবিতা লেখেন যা সওগাত পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।

ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে এগারো জন। তারা হলেন: সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।

শিক্ষাজীবন

ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় ফররুখ আহমদ বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।

কর্মজীবন

ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কোলকাতায়। ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর, সন্ধেবেলা ঢাকায়। ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের রোমাক্টিকতার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।

রচনাশৈলী

কাঁচড়া পাড়ায় রাত্রি। ডিপোতলে এঞ্জিন বিকল—
সুদীর্ঘ বিশ্রান্ত শ্বাস ফেলে জাগে ফাটা বয়লার,
—অবরুদ্ধ গতিবেগ। তারপর আসে মিস্ত্রিদল
গলানো ইস্পাত আনে, দৃঢ় অস্ত্র হানে বার বার।
জ্বলন্ত অগ্নির তাপে এই সব যন্ত্র জানোয়ার
দিন রাত্রি ঘোরে ফেরে সুদুর্গম দেশে, সমতলে
সমান্তর, রেলে রেলে, সেতুপথ পার হয়ে আর
অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে দার্জিলিংয়ে আসামে জঙ্গলে।
আহত সন্ধ্যায় তারা অবশেষে কাঁচড়া পাড়াতে।
দূরে নাগরিক আশা জ্বলে বালবে লাল-নীল-পীত;
উজ্জীবিত কামনার অগ্নিমোহ-অশান্ত ক্ষুধাতে;
কাঁচড়া পাড়ার কলে মিস্ত্রিদের নারীর সঙ্গীত।
(হাতুড়িও লক্ষ্যভ্রষ্ট) ম্লান চাঁদ কৃষ্ণপক্ষ রাতে
কাঁচড়া পাড়ায় জাগে নারী আর স্বপ্নের ইঙ্গিত।
— ফররুখ আহমদ-এর "কাঁচড়াপাড়ায় রাত্রি", প্রথম প্রকাশ: সওগাত, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ

সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও ফররুখ আহমদের প্রধান পরিচয় ‘কবি’। ফররুখ আহমদ সনেটও রচনা করেছেন। তার রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবি ও ফারসি শব্দের প্রাচুর্য তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামি ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তার অগাধ আস্থা। তবে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থন করতেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই কবি ফররুখ আহমদ মাসিক সওগাতের আশ্বিন ১৩৫৪ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪৭) সংখ্যায় পাকিস্তান: রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য নিবন্ধে লেখেন,

"গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষাকে পর্যন্ত যাঁরা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তরিত করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সকল অধিবাসীর সাথে আমিও এই প্রকার অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি"
ফররুখ আহমদ
ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদের কাব্যগ্রন্থ

  • সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
  • সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
  • নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১)-কাব্যনাট্য
  • মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)
  • ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩)
  • হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬) [হাতেম তায়ী ফররুখ আহমদের কাহিনিকাব্য]
  • নতুন লেখা (১৯৬৯)
  • কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
  • হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
  • সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
  • দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)

ফররুখ আহমদের শিশুতোষ গ্রন্থ

  • পাখির বাসা (১৯৬৫)
  • হরফের ছড়া (১৯৭০)
  • চাঁদের আসর (১৯৭০)
  • ছড়ার আসর (১৯৭০)
  • ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫)

ফররুখ আহমদের প্রাপ্ত পুরস্কার

১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কারইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদকস্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

সংক্ষিপ্ত জীবনী: মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ

প্রকাশ: ১২:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২

ফররুখ আহমদ বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি মুসলিম কবি, ছড়াকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। ফররুখ আহমেদের পূর্ণনাম— সৈয়দ ফররুখ আহমদ। এই বাঙালি কবি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তার কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্‌প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তার কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তার কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। “সাত সাগরের মাঝি” কাব্যগ্রন্থে তিনি যে কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন তা স্বতন্ত্র এবং এ-গ্রন্থ তার এক অমর সৃষ্টি।

ফররুখ আহমদ জুন ১০, ১৯১৮ তারিখ ব্রিটিশ ভারতের মাগুরার শ্রীপুরের মাঝাইলে জন্মগ্রহণ করেন এবং অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪ তারিখ ৫৬ বছর বয়সে বাংলাদেশের ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

এক নজরে ফররুখ আহমদ

নামবাংলা: সৈয়দ ফররুখ আহমদ
ইংরেজি: Syed Farrukh Ahmad
জন্ম১০ জুন ১৯১৮; মাঝাইল, শ্রীপুর, মাগুরা, ব্রিটিশ ভারত
দাম্পত্যসঙ্গীসৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৮-১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশী (১৯৭১-১৯৭৪)
সময়কালবিংশ শতাব্দী
পেশাকবি, সম্পাদক, বেতার শিল্পী
সাহিত্যের ধরনকবিতা, ছড়া, গল্প, শিশু সাহিত্য
সাহিত্যের বিষয়মানবতাবাদ, ইসলামি ঐতিহ্য, রোমান্টিকতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিসাত সাগরের মাঝি; সিরাজাম মুনীরা; হাতেম তায়ী; মুহূর্তের কবিতা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০),
একুশে পদক (১৯৭৭),
স্বাধীনতা পদক (১৯৮০)
মৃত্যুঅক্টোবর ১৯, ১৯৭৪ (বয়স ৫৬); ঢাকা, বাংলাদেশ

জন্ম ও পরিবার

সৈয়দ ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।

১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ ‘উপহার’ নামে একটি কবিতা লেখেন যা সওগাত পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।

ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে এগারো জন। তারা হলেন: সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।

শিক্ষাজীবন

ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় ফররুখ আহমদ বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।

কর্মজীবন

ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কোলকাতায়। ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর, সন্ধেবেলা ঢাকায়। ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের রোমাক্টিকতার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।

রচনাশৈলী

কাঁচড়া পাড়ায় রাত্রি। ডিপোতলে এঞ্জিন বিকল—
সুদীর্ঘ বিশ্রান্ত শ্বাস ফেলে জাগে ফাটা বয়লার,
—অবরুদ্ধ গতিবেগ। তারপর আসে মিস্ত্রিদল
গলানো ইস্পাত আনে, দৃঢ় অস্ত্র হানে বার বার।
জ্বলন্ত অগ্নির তাপে এই সব যন্ত্র জানোয়ার
দিন রাত্রি ঘোরে ফেরে সুদুর্গম দেশে, সমতলে
সমান্তর, রেলে রেলে, সেতুপথ পার হয়ে আর
অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে দার্জিলিংয়ে আসামে জঙ্গলে।
আহত সন্ধ্যায় তারা অবশেষে কাঁচড়া পাড়াতে।
দূরে নাগরিক আশা জ্বলে বালবে লাল-নীল-পীত;
উজ্জীবিত কামনার অগ্নিমোহ-অশান্ত ক্ষুধাতে;
কাঁচড়া পাড়ার কলে মিস্ত্রিদের নারীর সঙ্গীত।
(হাতুড়িও লক্ষ্যভ্রষ্ট) ম্লান চাঁদ কৃষ্ণপক্ষ রাতে
কাঁচড়া পাড়ায় জাগে নারী আর স্বপ্নের ইঙ্গিত।
— ফররুখ আহমদ-এর "কাঁচড়াপাড়ায় রাত্রি", প্রথম প্রকাশ: সওগাত, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ

সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও ফররুখ আহমদের প্রধান পরিচয় ‘কবি’। ফররুখ আহমদ সনেটও রচনা করেছেন। তার রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবি ও ফারসি শব্দের প্রাচুর্য তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামি ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তার অগাধ আস্থা। তবে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থন করতেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই কবি ফররুখ আহমদ মাসিক সওগাতের আশ্বিন ১৩৫৪ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪৭) সংখ্যায় পাকিস্তান: রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য নিবন্ধে লেখেন,

"গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষাকে পর্যন্ত যাঁরা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তরিত করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সকল অধিবাসীর সাথে আমিও এই প্রকার অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি"
ফররুখ আহমদ
ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদের কাব্যগ্রন্থ

  • সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
  • সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
  • নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১)-কাব্যনাট্য
  • মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)
  • ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩)
  • হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬) [হাতেম তায়ী ফররুখ আহমদের কাহিনিকাব্য]
  • নতুন লেখা (১৯৬৯)
  • কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
  • হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
  • সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
  • দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)

ফররুখ আহমদের শিশুতোষ গ্রন্থ

  • পাখির বাসা (১৯৬৫)
  • হরফের ছড়া (১৯৭০)
  • চাঁদের আসর (১৯৭০)
  • ছড়ার আসর (১৯৭০)
  • ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫)

ফররুখ আহমদের প্রাপ্ত পুরস্কার

১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কারইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদকস্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।