০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ৮ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কৌশল

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ১২:০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২
  • / ২২৫৭ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সুশিক্ষা ও মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক। শিক্ষকের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য একদিকে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা, অন্যদিকে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক-শিক্ষা এবং চাহিদাভিত্তিক যুগোপযোগী পৌনঃপুনিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন করা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

দেশে প্রচলিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা খুবই গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্র সর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান,ব্যবহারিক শিক্ষা অপূর্ণ, মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী। তাই আশানুরূপ ফললাভ হচ্ছে না। বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৪টি সরকারি প্রশিক্ষণ কলেজ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য ৫টি এইচ.এস.টি.টি.আই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য একটি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। ১৪টি সরকারি প্রশিক্ষণ কলেজেই বিএড ডিগ্রি দেওয়া হয়। কয়েকটি প্রশিক্ষণ কলেজে এমএড ডিগ্রিও প্রদান করা হয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও দূর শিক্ষণের মাধ্যমে প্রতি বছর বিএড ডিগ্রি প্রদান করছে। এছাড়া ১০৬ টি বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ রয়েছে। এগুলোতে ভে․তব্যবস্থা, প্রশিক্ষকের মান এবং প্রদত্ত প্রশিক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকেও ব্যাচেলর অব এডুকেশন ও মাস্টার অব এডুকেশন প্রদান করা হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ৫৩টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। এগুলোতে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে তা অপ্রতুল, চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত এবং যুগোপযোগী নয়। তাই প্রশিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের শিক্ষাদানে দক্ষতা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

  • শিক্ষক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিখন-শিখানো কলাকে․শল সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।
  • শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান।
  • শিক্ষকদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা।
  • শিক্ষকদেরকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের জরুরী সমস্যাগুলোর সাথে পরিচিত করা এবং তাদেরসাথে সম্পৃক্ত করতে সাহায্য করা।
  • শিক্ষকদের আচরণিক দক্ষতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং দুর্বলতার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করা।
  • শিক্ষণের জন্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন এবং তা ব্যবহারে উৎসাহিত করা।নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কে․শল বৃদ্ধি করা।
  • গবেষণাপত্র ক্সতরি ও প্রতিবেদন পেশের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব অর্জনে সহায়তা করা।
  • সমাজের সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্ত্বা, আর্থ-সামাজিক শ্রেণির শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দিয়ে পাঠদানে উৎসাহিত করা।
  • সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বা এবং প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের বিশেষ শিখন চাহিদা অনুসারে শিখন সেবা প্রদানের কলাকে․শল অর্জনে সহায়তা করা।
  • সমস্যাদি বিশ্লেষণে দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
  • তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় সকল স্তরের শিক্ষককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এর সর্বোচ্চ অনুশীলনে উৎসাহিত করা।
  • দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন থেকে কার্য সম্পাদনের জন্য শিক্ষকদেরকে উৎসাহিত করা।
  • গবেষণা কাজে অংশগ্রহণের জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং গবেষণা কাজে উৎসাহিত করা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কৌশল

  • নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য দুই মাসের বুনিয়াদী ও কলেজ শিক্ষকদের জন্য চারমাসের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের কাজে যোগদানের তিন বছরের মধ্যে যথাক্রমে সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন ও বিএড কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
  • শিক্ষক প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ করা হবে।
  • প্রশিক্ষকদের পরিবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রবর্তনের আগেই নিজ নিজ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা থাকতে হবে।
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রম সি-ইন-এড পরিবর্তন করে নতুন কার্যক্রম প্রবর্তন করা হবে। এ কার্যক্রমের মেয়াদ এক বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ মাস করা হবে। নতুন কার্যক্রমে শিখন-শেখানো ও মূল্যায়নের আধুনিক কলা-কে․শল সংযোজন করা হবে। ইন্টার্নসিপ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যবহারিক পাঠদানের মেয়াদ দুই পর্যায়ে কমপক্ষে নয় মাস করা হবে (ইতোমধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকগণের জন্য ১৮ মাস মেয়াদী ডিপিএড কোর্স চালু করা হয়েছে)।
  • সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)এ দেওয়া হচ্ছে এবং এটি চলমান থাকবে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক শিক্ষককে তিন বছর অন্তর বিষয়ভিত্তিক সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বেগবান করার জন্য প্রত্যেক বিভাগে একটি করে আঞ্চলিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • শিক্ষা প্রশাসনে যোগ্য ও আত্মবিশ্বাসী কর্মকর্তা সৃষ্টির জন্য চাকুরির মধ্য ও উচ্চ স্তরে ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
  • বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দকেও বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এইচএসটিটিআই-তে বর্তমানে চলমান বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা হবে।
  • দেশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মান সমপর্যায়ে উন্নীত করা এবং সেগুলোতে যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমপর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বদলীর ব্যবস্থা করা হবে।
  • প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে।
  • প্রশিক্ষণে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের ব্যাপক ব্যবস্থা করা ও প্রশিক্ষণার্থীদের ভূমিকার উপযুক্ত মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হবে।
  • সকল শিক্ষক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে যাতে সকল একাডেমিক ষ্টাফ এর ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে যুগোপযোগী রাখতে পারেন।
  • প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য নিবিড় পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হবে। কোনো দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলে তা বিশেষ ব্যবস্থায় দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
  • বিভিন্ন পর্যায়ের ও ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা, প্রতিবন্ধী, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক) ভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনের উপযোগী দক্ষ শিক্ষক সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়বস্তুর তারতম্য থাকবে।
  • শিক্ষক সংগঠনগুলো তাদের কর্মকাণ্ড শুধু পেশাগত দাবি আদায়ের মধ্যে নিয়োজিত না রেখে শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করা হবে।
  • প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকালীন আর্থিক মঞ্জুরি বাড়ানো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
  • প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরো বস্তুনিষ্ঠ ও কার্যকর এবং সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণের স্বার্থে নিম্নমানের বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করে সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যে․ক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকালীন পূর্ণ আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কৌশল

প্রকাশ: ১২:০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২

সুশিক্ষা ও মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক। শিক্ষকের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য একদিকে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা, অন্যদিকে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক-শিক্ষা এবং চাহিদাভিত্তিক যুগোপযোগী পৌনঃপুনিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন করা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

দেশে প্রচলিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা খুবই গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্র সর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান,ব্যবহারিক শিক্ষা অপূর্ণ, মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী। তাই আশানুরূপ ফললাভ হচ্ছে না। বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৪টি সরকারি প্রশিক্ষণ কলেজ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য ৫টি এইচ.এস.টি.টি.আই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য একটি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। ১৪টি সরকারি প্রশিক্ষণ কলেজেই বিএড ডিগ্রি দেওয়া হয়। কয়েকটি প্রশিক্ষণ কলেজে এমএড ডিগ্রিও প্রদান করা হয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও দূর শিক্ষণের মাধ্যমে প্রতি বছর বিএড ডিগ্রি প্রদান করছে। এছাড়া ১০৬ টি বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ রয়েছে। এগুলোতে ভে․তব্যবস্থা, প্রশিক্ষকের মান এবং প্রদত্ত প্রশিক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকেও ব্যাচেলর অব এডুকেশন ও মাস্টার অব এডুকেশন প্রদান করা হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ৫৩টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। এগুলোতে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে তা অপ্রতুল, চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত এবং যুগোপযোগী নয়। তাই প্রশিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের শিক্ষাদানে দক্ষতা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

  • শিক্ষক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিখন-শিখানো কলাকে․শল সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।
  • শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান।
  • শিক্ষকদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা।
  • শিক্ষকদেরকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের জরুরী সমস্যাগুলোর সাথে পরিচিত করা এবং তাদেরসাথে সম্পৃক্ত করতে সাহায্য করা।
  • শিক্ষকদের আচরণিক দক্ষতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং দুর্বলতার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করা।
  • শিক্ষণের জন্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন এবং তা ব্যবহারে উৎসাহিত করা।নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কে․শল বৃদ্ধি করা।
  • গবেষণাপত্র ক্সতরি ও প্রতিবেদন পেশের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব অর্জনে সহায়তা করা।
  • সমাজের সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্ত্বা, আর্থ-সামাজিক শ্রেণির শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দিয়ে পাঠদানে উৎসাহিত করা।
  • সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বা এবং প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের বিশেষ শিখন চাহিদা অনুসারে শিখন সেবা প্রদানের কলাকে․শল অর্জনে সহায়তা করা।
  • সমস্যাদি বিশ্লেষণে দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
  • তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় সকল স্তরের শিক্ষককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এর সর্বোচ্চ অনুশীলনে উৎসাহিত করা।
  • দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন থেকে কার্য সম্পাদনের জন্য শিক্ষকদেরকে উৎসাহিত করা।
  • গবেষণা কাজে অংশগ্রহণের জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং গবেষণা কাজে উৎসাহিত করা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কৌশল

  • নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য দুই মাসের বুনিয়াদী ও কলেজ শিক্ষকদের জন্য চারমাসের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের কাজে যোগদানের তিন বছরের মধ্যে যথাক্রমে সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন ও বিএড কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
  • শিক্ষক প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ করা হবে।
  • প্রশিক্ষকদের পরিবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রবর্তনের আগেই নিজ নিজ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা থাকতে হবে।
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রম সি-ইন-এড পরিবর্তন করে নতুন কার্যক্রম প্রবর্তন করা হবে। এ কার্যক্রমের মেয়াদ এক বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ মাস করা হবে। নতুন কার্যক্রমে শিখন-শেখানো ও মূল্যায়নের আধুনিক কলা-কে․শল সংযোজন করা হবে। ইন্টার্নসিপ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যবহারিক পাঠদানের মেয়াদ দুই পর্যায়ে কমপক্ষে নয় মাস করা হবে (ইতোমধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকগণের জন্য ১৮ মাস মেয়াদী ডিপিএড কোর্স চালু করা হয়েছে)।
  • সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)এ দেওয়া হচ্ছে এবং এটি চলমান থাকবে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক শিক্ষককে তিন বছর অন্তর বিষয়ভিত্তিক সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বেগবান করার জন্য প্রত্যেক বিভাগে একটি করে আঞ্চলিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • শিক্ষা প্রশাসনে যোগ্য ও আত্মবিশ্বাসী কর্মকর্তা সৃষ্টির জন্য চাকুরির মধ্য ও উচ্চ স্তরে ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
  • বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দকেও বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এইচএসটিটিআই-তে বর্তমানে চলমান বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা হবে।
  • দেশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মান সমপর্যায়ে উন্নীত করা এবং সেগুলোতে যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমপর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বদলীর ব্যবস্থা করা হবে।
  • প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে।
  • প্রশিক্ষণে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের ব্যাপক ব্যবস্থা করা ও প্রশিক্ষণার্থীদের ভূমিকার উপযুক্ত মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হবে।
  • সকল শিক্ষক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে যাতে সকল একাডেমিক ষ্টাফ এর ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে যুগোপযোগী রাখতে পারেন।
  • প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য নিবিড় পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হবে। কোনো দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলে তা বিশেষ ব্যবস্থায় দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
  • বিভিন্ন পর্যায়ের ও ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা, প্রতিবন্ধী, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক) ভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনের উপযোগী দক্ষ শিক্ষক সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়বস্তুর তারতম্য থাকবে।
  • শিক্ষক সংগঠনগুলো তাদের কর্মকাণ্ড শুধু পেশাগত দাবি আদায়ের মধ্যে নিয়োজিত না রেখে শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করা হবে।
  • প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকালীন আর্থিক মঞ্জুরি বাড়ানো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
  • প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরো বস্তুনিষ্ঠ ও কার্যকর এবং সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণের স্বার্থে নিম্নমানের বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করে সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যে․ক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকালীন পূর্ণ আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।