১১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অপরাধ কী? অপরাধের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও ধরন কী কী?

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৭:৫৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২
  • / ২২২৬৮ বার পড়া হয়েছে

বিচ্যুতিমূলক আচরণ ও অপরাধের প্রতীকী চিত্র | উইকিপিডিয়া


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বিচ্যুত আচরণ সমাজ ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি সমাজে কোনো না কোনো ধরনের বিচ্যুত আচরণ লক্ষ করা যায়। বিচ্যুত আচরণ থেকেই অপরাধের সূচনা হয়। সাধারণ অর্থে সমাজের প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ কিংবা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে তাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ সব সমাজে এক এবং অভিন্ন না-ও হতে পারে। যেমন: পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই ছেলেমেয়েদের বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক, একত্রে বসবাস, সমকামিতা ইত্যাদি আইনত বৈধ এবং সামাজিকভাবে এটি নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এটি রীতিমত নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিকভাবে এটি গ্রহণযোগ্য বা সমর্থনযোগ্য নয়। বস্তুত অপরাধের সাথে সমাজ ও সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

অপরাধের সংজ্ঞা (Definition of crime)

অপরাধের সংজ্ঞায় B. Bhushan (১৯৮৯) বলেছেন, অপরাধ বলতে বুঝায় গোষ্ঠীগত রীতিনীতির পরিপন্থী কোনো আচার-আচরণ। এসব আচরণ প্রতিষ্ঠিত কোনো গোষ্ঠী কিংবা তাদের আইন কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য কষ্টদায়ক সমাজবিরোধী আচরণ। (Crime refers to any behaviour contrary to the groups of moral codes for which there are formalized group sanctions whether they are laws or not. It is anti-social behaviour harmful to individuals or groups).

সাধারণত অপরাধের দু’টি দিক রয়েছে।

  1. সামাজিক— অর্থাৎ সমাজের বিধিবহির্ভূত কাজকে অপরাধ বলা হয় এবং
  2. আইনগত— এটি রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থী আচরণ।

অর্থাৎ রাষ্ট্র বা আইন কর্তৃক অননুমোদিত কাজ হচ্ছে অপরাধ।

গিলিন ও গিলিন তাঁদের ‘Cultural Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, জৈবিক দিক থেকে অপরাধের ধারণা ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতার মধ্যে নিহিত। সমাজতাত্ত্বিক দিক থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিকশিত ব্যক্তিত্বের পার্থক্য অপরাধের সূচনা করে। তাঁদের মতে, সমাজের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত লোকদের বিশ্বাস মতে যারা ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত, সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী তারাই অপরাধী বা কিশোর অপরাধী বলে বিবেচিত। (Sociologically either a criminal or a juvenile delinquent is one who is guilty of an act believed by a group that has a power to enforce its belief to injurious to society and therefore prohibitive).

আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। যেমন— সাদারল্যান্ড (E. H. Sutherland) তাঁর Principles of Criminology (১৯৫৫) গ্রন্থে বলেছেন, আইন লঙ্ঘনই অপরাধ। যেখানে কোনো আইন নেই সেখানে কোনো অপরাধও থাকে না। যখন কোনো আইন পাস করে বলবৎ করা হয়, পূর্বে যে কর্ম অপরাধমূলক ছিল না, এক্ষণে তা অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। (Crime is a violation of law. If there were no laws there would be no crime. Whenever a law is passed and enforced acts that were not crime, previously are made crimes.)

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানী ফজলুর রশীদ খান (Fazlur Rashid Khan) অপরাধের সংজ্ঞায় আইনগত ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। তিনি তাঁর ‘Principles of Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, সাধারণভাবে বলতে গেলে একথা স্পষ্ট যে কোনো সমাজে লোকদের যেসব আচরণ নৈতিকতাবিরোধী ও সমাজবিরোধী সেগুলো অপরাধমূলক কর্ম বলে বর্ণনা করাই সর্বাপেক্ষা সহজতম পন্থা। আইন যেসব কর্মকে নিষিদ্ধ করে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণও সেসব কর্মকে সমাজের জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর বলে মনে করে। এটি স্বতঃসিদ্ধ। 

বস্তুত অপরাধ হচ্ছে এমন আচরণ বা কৃতকর্ম যা সমাজে আপত্তিকর এবং আইন ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ। অপরাধ সমাজে নিন্দনীয় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত। সমাজে এক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় লোকচক্ষুর অন্তরালে, অত্যন্ত প্রচ্ছন্নভাবে। এসব অপরাধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে। এটি মূলত দুর্নীতি বা ভদ্রবেশী অপরাধ (White-collar crime। কর ফাঁকি দেওয়া, ঘুষ নেয়া, তহবিল তছরূপ করা ইত্যাদি এ শ্রেণির অপরাধ।

অপরাধের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Crime)

অপরাধ সামাজিক আচরণবিধি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী একটি প্রত্যয়। এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:

  1. মানুষের সামাজিক আচরণের একটি অস্বাভাবিক রূপ হচ্ছে অপরাধ।
  2. এটি সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং আদর্শগতভাবে ক্ষতিকর। 
  3. অপরাধ মূলত আপেক্ষিক; সময় ও সমাজভেদে এর রূপ ও মাত্রাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
  4. সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হচ্ছে অপরাধ।
  5. অপরাধ সমাজ কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন— শিল্প সমাজের অপরাধপ্রবণতা কৃষি সমাজ অপেক্ষা ভিন্নতর।
  6. অপরাধ সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া এবং সামাজিকীকরণের ফল।
  7. অপরাধ আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য।
  8. বয়স অনুযায়ী অপরাধের মাত্রা ও গুরুত্ব নিরূপণ করা হয়।
  9. অপরাধ নিন্দনীয় এবং বর্জনীয়।
  10. অনেক সময় মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কোনো কোনো মানুষ অপরাধে লিপ্ত হয়। যেমন: ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন প্রমুখ মহান স্বাধীনতার আদর্শে নিবেদিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। 
  11. অপরাধ সমাজের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য বিষয়। এরিকসন (T. Erikson) বলেছেন, সন্ন্যাসীদের সমাজে বসবাসকারী সদস্যদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা বিদ্যমান। ডুর্খেইম অপরাধকে সামাজিক দিক থেকে স্বাভাবিক কার্যকলাপ এবং সুস্থ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য উস্কানি, শর্তভঙ্গ, উন্মুক্ত অপরাধ সংঘটন ইত্যাদি সমাজের ক্ষতি সাধন করে। মাদকাসক্তি, ডাকাতি, আত্মহত্যা ইত্যাদি ব্যক্তিগত এবং বেশ্যাবৃত্তি, সমকামিতা, গর্ভপাত প্রভৃতি কোনো কোনো রক্ষণশীল সমাজের আদর্শগত ক্ষতি সাধন করে থাকে।

অপরাধের ধরনসমূহ (Types of Crime)

সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধবিজ্ঞানীরা পাঁচ ধরনের অপরাধের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে—

  1. কিশোর অপরাধ (Juvenile delinquency)
  2. আত্মবিনাশ অপরাধ (Self-destroyed crime)
  3. ভদ্রবেশী অপরাধ (White-collar crime)
  4. সংগঠিত অপরাধ (Organised crime)
  5. ফৌজদারি অপরাধ (Criminal crime)

কিশোর অপরাধ

কিশোর-কিশোরী দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হচ্ছে কিশোর অপরাধ। ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে কর্তৃক সংঘটিত অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলে অভিহিত করা হয়। 

আত্মবিনাশ অপরাধ

কিছু অপরাধ আছে যা অন্যের নয়, অপরাধীরই ক্ষতিসাধন করে। অর্থাৎ এ ধরনের অপরাধে ব্যক্তি নিজেই নিজের বিনাশ ত্বরান্বিত করে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, জুয়াখেলা, পতিতাবৃত্তি, ইত্যাদি আত্মবিনাশ অপরাধ। 

ভদ্রবেশী অপরাধ কী

সাধারণত ‘ভদ্রলোকেরা’ যে অপরাধ করে তাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে। শিক্ষিত, পেশাজীবী এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গই এ ধরনের অপরাধের সাথে বেশি যুক্ত থাকেন। দায়িত্বে অবহেলা, কাজে ফাঁকি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, প্রতারণা, তহবিল তছরূপ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, ট্রেডমার্ক বা বইয়ের পাণ্ডুলিপি চুরি বা নকল করা ইত্যাদি ভদ্রবেশী অপরাধ বলে পরিগণিত। (ভদ্রবেশী অপরাধ সম্পর্কে পড়ুন)

সংগঠিত অপরাধ

সংগঠিত অপরাধ হচ্ছে দলগত অপরাধ। ‘চেইন অব কমান্ড’ অনুসরণ করে ‘সিন্ডিকেট’ পদ্ধতিতে বেশকিছু মানুষ সমন্বিতভাবে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র, সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সংগঠিত অপরাধে যুক্ত থাকে। চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, নারী ও মানব পাচার, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি অপরাধ দলগতভাবে সংঘটিত অপরাধ। বিভিন্ন সরকারী সেবা যেমন ভিসা-পাসপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমি অফিস বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ‘সিন্ডিকেট’ভিত্তিক অপরাধ পরিলক্ষিত হয়। 

ফৌজদারি অপরাধ

ফোজদারী অপরাধ সরাসরি আইনের লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য। এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিপক্ষ বা অন্য ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সম্পত্তি হরণ কিংবা কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীকে আক্রমণের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সম্পত্তি আত্মসাৎ, জবরদখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-জখম, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, রাহাজানি ইত্যাদি হলো ফৌজদারি অপরাধ।

সারকথা

উত্তর-আধুনিক সমাজের বিচ্যুত আচরণ হচ্ছে অপরাধ। আইন, প্রথা, নিয়ম-কানুন, বিধিনিষেধ ইত্যাদি সমাজ ও মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা ও কল্যাণ বিবেচনায় কোনো কোনো আচরণকে অপরাধ বলে গণ্য করে। অপরাধ প্রায়শ শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয়। মানুষ সমাজ থেকেই অপরাধ রপ্ত করে। সামাজিকীকরণ যেমন মানুষকে যৌক্তিক ও নীতিপরায়ণ করে তোলে তেমনি পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কিছু মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে। কিশোর অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ, ভদ্রবেশী অপরাধসহ সমাজে নানা ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হয়।

শেয়ার করুন

One thought on “অপরাধ কী? অপরাধের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও ধরন কী কী?

  1. কয়েকজন বিশ্ববিখ্যাত অপরাধ বিজ্ঞানীর নামের তালিকাসহ নাম পাঠালে বিশেষভাবে উপকৃত হব।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

অপরাধ কী? অপরাধের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও ধরন কী কী?

প্রকাশ: ০৭:৫৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২

বিচ্যুত আচরণ সমাজ ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি সমাজে কোনো না কোনো ধরনের বিচ্যুত আচরণ লক্ষ করা যায়। বিচ্যুত আচরণ থেকেই অপরাধের সূচনা হয়। সাধারণ অর্থে সমাজের প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ কিংবা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে তাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ সব সমাজে এক এবং অভিন্ন না-ও হতে পারে। যেমন: পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই ছেলেমেয়েদের বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক, একত্রে বসবাস, সমকামিতা ইত্যাদি আইনত বৈধ এবং সামাজিকভাবে এটি নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এটি রীতিমত নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিকভাবে এটি গ্রহণযোগ্য বা সমর্থনযোগ্য নয়। বস্তুত অপরাধের সাথে সমাজ ও সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

অপরাধের সংজ্ঞা (Definition of crime)

অপরাধের সংজ্ঞায় B. Bhushan (১৯৮৯) বলেছেন, অপরাধ বলতে বুঝায় গোষ্ঠীগত রীতিনীতির পরিপন্থী কোনো আচার-আচরণ। এসব আচরণ প্রতিষ্ঠিত কোনো গোষ্ঠী কিংবা তাদের আইন কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য কষ্টদায়ক সমাজবিরোধী আচরণ। (Crime refers to any behaviour contrary to the groups of moral codes for which there are formalized group sanctions whether they are laws or not. It is anti-social behaviour harmful to individuals or groups).

সাধারণত অপরাধের দু’টি দিক রয়েছে।

  1. সামাজিক— অর্থাৎ সমাজের বিধিবহির্ভূত কাজকে অপরাধ বলা হয় এবং
  2. আইনগত— এটি রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থী আচরণ।

অর্থাৎ রাষ্ট্র বা আইন কর্তৃক অননুমোদিত কাজ হচ্ছে অপরাধ।

গিলিন ও গিলিন তাঁদের ‘Cultural Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, জৈবিক দিক থেকে অপরাধের ধারণা ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতার মধ্যে নিহিত। সমাজতাত্ত্বিক দিক থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিকশিত ব্যক্তিত্বের পার্থক্য অপরাধের সূচনা করে। তাঁদের মতে, সমাজের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত লোকদের বিশ্বাস মতে যারা ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত, সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী তারাই অপরাধী বা কিশোর অপরাধী বলে বিবেচিত। (Sociologically either a criminal or a juvenile delinquent is one who is guilty of an act believed by a group that has a power to enforce its belief to injurious to society and therefore prohibitive).

আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। যেমন— সাদারল্যান্ড (E. H. Sutherland) তাঁর Principles of Criminology (১৯৫৫) গ্রন্থে বলেছেন, আইন লঙ্ঘনই অপরাধ। যেখানে কোনো আইন নেই সেখানে কোনো অপরাধও থাকে না। যখন কোনো আইন পাস করে বলবৎ করা হয়, পূর্বে যে কর্ম অপরাধমূলক ছিল না, এক্ষণে তা অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। (Crime is a violation of law. If there were no laws there would be no crime. Whenever a law is passed and enforced acts that were not crime, previously are made crimes.)

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানী ফজলুর রশীদ খান (Fazlur Rashid Khan) অপরাধের সংজ্ঞায় আইনগত ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। তিনি তাঁর ‘Principles of Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, সাধারণভাবে বলতে গেলে একথা স্পষ্ট যে কোনো সমাজে লোকদের যেসব আচরণ নৈতিকতাবিরোধী ও সমাজবিরোধী সেগুলো অপরাধমূলক কর্ম বলে বর্ণনা করাই সর্বাপেক্ষা সহজতম পন্থা। আইন যেসব কর্মকে নিষিদ্ধ করে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণও সেসব কর্মকে সমাজের জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর বলে মনে করে। এটি স্বতঃসিদ্ধ। 

বস্তুত অপরাধ হচ্ছে এমন আচরণ বা কৃতকর্ম যা সমাজে আপত্তিকর এবং আইন ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ। অপরাধ সমাজে নিন্দনীয় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত। সমাজে এক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় লোকচক্ষুর অন্তরালে, অত্যন্ত প্রচ্ছন্নভাবে। এসব অপরাধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে। এটি মূলত দুর্নীতি বা ভদ্রবেশী অপরাধ (White-collar crime। কর ফাঁকি দেওয়া, ঘুষ নেয়া, তহবিল তছরূপ করা ইত্যাদি এ শ্রেণির অপরাধ।

অপরাধের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Crime)

অপরাধ সামাজিক আচরণবিধি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী একটি প্রত্যয়। এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:

  1. মানুষের সামাজিক আচরণের একটি অস্বাভাবিক রূপ হচ্ছে অপরাধ।
  2. এটি সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং আদর্শগতভাবে ক্ষতিকর। 
  3. অপরাধ মূলত আপেক্ষিক; সময় ও সমাজভেদে এর রূপ ও মাত্রাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
  4. সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হচ্ছে অপরাধ।
  5. অপরাধ সমাজ কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন— শিল্প সমাজের অপরাধপ্রবণতা কৃষি সমাজ অপেক্ষা ভিন্নতর।
  6. অপরাধ সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া এবং সামাজিকীকরণের ফল।
  7. অপরাধ আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য।
  8. বয়স অনুযায়ী অপরাধের মাত্রা ও গুরুত্ব নিরূপণ করা হয়।
  9. অপরাধ নিন্দনীয় এবং বর্জনীয়।
  10. অনেক সময় মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কোনো কোনো মানুষ অপরাধে লিপ্ত হয়। যেমন: ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন প্রমুখ মহান স্বাধীনতার আদর্শে নিবেদিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। 
  11. অপরাধ সমাজের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য বিষয়। এরিকসন (T. Erikson) বলেছেন, সন্ন্যাসীদের সমাজে বসবাসকারী সদস্যদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা বিদ্যমান। ডুর্খেইম অপরাধকে সামাজিক দিক থেকে স্বাভাবিক কার্যকলাপ এবং সুস্থ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য উস্কানি, শর্তভঙ্গ, উন্মুক্ত অপরাধ সংঘটন ইত্যাদি সমাজের ক্ষতি সাধন করে। মাদকাসক্তি, ডাকাতি, আত্মহত্যা ইত্যাদি ব্যক্তিগত এবং বেশ্যাবৃত্তি, সমকামিতা, গর্ভপাত প্রভৃতি কোনো কোনো রক্ষণশীল সমাজের আদর্শগত ক্ষতি সাধন করে থাকে।

অপরাধের ধরনসমূহ (Types of Crime)

সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধবিজ্ঞানীরা পাঁচ ধরনের অপরাধের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে—

  1. কিশোর অপরাধ (Juvenile delinquency)
  2. আত্মবিনাশ অপরাধ (Self-destroyed crime)
  3. ভদ্রবেশী অপরাধ (White-collar crime)
  4. সংগঠিত অপরাধ (Organised crime)
  5. ফৌজদারি অপরাধ (Criminal crime)

কিশোর অপরাধ

কিশোর-কিশোরী দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হচ্ছে কিশোর অপরাধ। ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে কর্তৃক সংঘটিত অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলে অভিহিত করা হয়। 

আত্মবিনাশ অপরাধ

কিছু অপরাধ আছে যা অন্যের নয়, অপরাধীরই ক্ষতিসাধন করে। অর্থাৎ এ ধরনের অপরাধে ব্যক্তি নিজেই নিজের বিনাশ ত্বরান্বিত করে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, জুয়াখেলা, পতিতাবৃত্তি, ইত্যাদি আত্মবিনাশ অপরাধ। 

ভদ্রবেশী অপরাধ কী

সাধারণত ‘ভদ্রলোকেরা’ যে অপরাধ করে তাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে। শিক্ষিত, পেশাজীবী এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গই এ ধরনের অপরাধের সাথে বেশি যুক্ত থাকেন। দায়িত্বে অবহেলা, কাজে ফাঁকি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, প্রতারণা, তহবিল তছরূপ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, ট্রেডমার্ক বা বইয়ের পাণ্ডুলিপি চুরি বা নকল করা ইত্যাদি ভদ্রবেশী অপরাধ বলে পরিগণিত। (ভদ্রবেশী অপরাধ সম্পর্কে পড়ুন)

সংগঠিত অপরাধ

সংগঠিত অপরাধ হচ্ছে দলগত অপরাধ। ‘চেইন অব কমান্ড’ অনুসরণ করে ‘সিন্ডিকেট’ পদ্ধতিতে বেশকিছু মানুষ সমন্বিতভাবে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র, সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সংগঠিত অপরাধে যুক্ত থাকে। চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, নারী ও মানব পাচার, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি অপরাধ দলগতভাবে সংঘটিত অপরাধ। বিভিন্ন সরকারী সেবা যেমন ভিসা-পাসপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমি অফিস বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ‘সিন্ডিকেট’ভিত্তিক অপরাধ পরিলক্ষিত হয়। 

ফৌজদারি অপরাধ

ফোজদারী অপরাধ সরাসরি আইনের লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য। এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিপক্ষ বা অন্য ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সম্পত্তি হরণ কিংবা কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীকে আক্রমণের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সম্পত্তি আত্মসাৎ, জবরদখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-জখম, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, রাহাজানি ইত্যাদি হলো ফৌজদারি অপরাধ।

সারকথা

উত্তর-আধুনিক সমাজের বিচ্যুত আচরণ হচ্ছে অপরাধ। আইন, প্রথা, নিয়ম-কানুন, বিধিনিষেধ ইত্যাদি সমাজ ও মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা ও কল্যাণ বিবেচনায় কোনো কোনো আচরণকে অপরাধ বলে গণ্য করে। অপরাধ প্রায়শ শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয়। মানুষ সমাজ থেকেই অপরাধ রপ্ত করে। সামাজিকীকরণ যেমন মানুষকে যৌক্তিক ও নীতিপরায়ণ করে তোলে তেমনি পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কিছু মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে। কিশোর অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ, ভদ্রবেশী অপরাধসহ সমাজে নানা ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হয়।