১০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার লক্ষ্য

  • প্রকাশ: ১২:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
  • / ১৯৪৭ বার পড়া হয়েছে

বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার লক্ষ্য কী?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে গবেষণার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। গবেষণা বা রিসার্চ হলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলি। তবে প্রতিটি গবেষণার একটি লক্ষ্য থাকতে হবে। আমাদের দেশে গবেষণার গতিপ্রকৃতি লক্ষ্যকেন্দ্রিক কিনা এই বিষয়ে তেমন কোনো বিচার বিশ্লেষণ নেই। আবার অনেক সময় গবেষকরাও গবেষণার লক্ষ্য কীভাবে নির্ধারিত হবে বা কীভাবে লক্ষ্য অর্জনে গবেষণা করা দরকার— সেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না।

আমাদের দেশে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে তার ফলাফল কোনো সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে কিনা—সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। এজন্য গবেষণা শুরু করার আগে সেই গবেষণা থেকে কি লক্ষ্য অর্জিত হবে এবং এটি কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে তার অধিকাংশরই বাস্তব প্রয়োগ বা ব্যবহার নেই। শিল্পক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের দেশের গবেষকদের যেভাবে কাজ করা উচিত, সেভাবে তারা করতে পারছেন না। ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলো থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এতে করে প্রচুর অর্থ আমাদের দেশ থেকে বাইরে চলে যায়। যার প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতির উপর পড়ে। দেশে প্রযুক্তির ব্যবহারকে দুভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথমত বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করা হলেও সময়ের সঙ্গে এই প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটছে, তা নিয়ে আমাদের গবেষকরা ভাবছেন না।

আবার শিল্পকারখানার মালিকদের মধ্যেও গবেষণা যে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনা করেন না। ফলে শিল্পকারখানায় বিদ্যমান প্রযুক্তি যখন সময়ের সঙ্গে পুরাতন হয়ে যায় তখন শিল্প উদ্যোক্তারা আবার উন্নত প্রযুক্তি আমদানি করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি এভাবে ঘটার কথা ছিল না। বরং শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের যে শিল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করে চলেছে প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তার কোনো উন্নয়ন ঘটছে কিনা এটি দেশের গবেষকদের দেখার দায়িত্ব দিতে পারতেন।

এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করে সেখানে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির পরিবর্তনের ধারণা পেতেন। ইন্ড্রাস্ট্রির গবেষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের গবেষণা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্প ধারণাকে ধীরে ধীরে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে গবেষকদের কোন কোন প্রযুক্তির ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটছে আর কোন কোন প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এই বিষয়গুলো বিভিন্ন তথ্যের উৎস থেকে সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। আধুনিক শিল্প ধারণা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের যে জার্নালগুলো রয়েছে তা থেকে গবেষকদের নিয়মিত ধারণা নিতে হবে।

আবার নিজেদের গবেষণার অর্জিত ফলাফলকে গবেষণাপত্র হিসেবে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্ভাবনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প প্রযুক্তির ধারণাকে দেশজ প্রযুক্তিতে পরিণত করার পদক্ষেপ থাকতে হবে।

গবেষণা করার জন্য গবেষকদের গবেষণার মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়। যেমন: আলবার্ট আইনস্টাইনের গবেষণার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগার ছিল না। তিনটি জিনিস তার গবেষণার মূল উপাদান হিসেবে বিদ্যমান ছিল। এগুলো হলো- কাগজ, কলম ও চিন্তাশক্তি। এখানে চিন্তাশক্তিই গবেষণার মানসিকতা গড়ে তুলতে ও নতুন প্রযুক্তি ধারণা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। মেধাশক্তির উৎকর্ষতার জন্য শিশুর মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবেশগত ও কৌশলগত পদ্ধতির প্রয়োগ প্রয়োজন হয়। যেমন— ইসরাইলের মানুষদের মেধাশক্তি পৃথিবীর সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়। এর কারণ জন্মগত নয় বরং মেধাশক্তি বিকাশের বিভিন্ন প্রক্রিয়াই এর কারণ।

আমাদের দেশের মানুষের মেধাশক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে কীভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় সংযুক্ত করে বিজ্ঞান ও কর্মমুখী করে গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য চর্চা করলেও বিজ্ঞান চর্চাও করে গেছেন। বিজ্ঞানের নিজের ধারণা তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীদের আদান প্রদান করেছেন। এর মাধ্যমে সাহিত্য যেমন বিজ্ঞানকে সাহায্য করেছে, তেমনি সাহিত্য বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অমর্ত্য সেন ও রিচার্ড এইচ থ্যালার মানবিক প্রগতির মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন কিংবা মানুষের কল্যাণের জন্য অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। একইভাবে মানবিক প্রগতির জন্য বিজ্ঞান চর্চা, এর ব্যবহার ও প্রয়োগকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে, তবেই মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার লক্ষ্য

প্রকাশ: ১২:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে গবেষণার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। গবেষণা বা রিসার্চ হলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলি। তবে প্রতিটি গবেষণার একটি লক্ষ্য থাকতে হবে। আমাদের দেশে গবেষণার গতিপ্রকৃতি লক্ষ্যকেন্দ্রিক কিনা এই বিষয়ে তেমন কোনো বিচার বিশ্লেষণ নেই। আবার অনেক সময় গবেষকরাও গবেষণার লক্ষ্য কীভাবে নির্ধারিত হবে বা কীভাবে লক্ষ্য অর্জনে গবেষণা করা দরকার— সেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না।

আমাদের দেশে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে তার ফলাফল কোনো সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে কিনা—সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। এজন্য গবেষণা শুরু করার আগে সেই গবেষণা থেকে কি লক্ষ্য অর্জিত হবে এবং এটি কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে তার অধিকাংশরই বাস্তব প্রয়োগ বা ব্যবহার নেই। শিল্পক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের দেশের গবেষকদের যেভাবে কাজ করা উচিত, সেভাবে তারা করতে পারছেন না। ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলো থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এতে করে প্রচুর অর্থ আমাদের দেশ থেকে বাইরে চলে যায়। যার প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতির উপর পড়ে। দেশে প্রযুক্তির ব্যবহারকে দুভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথমত বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করা হলেও সময়ের সঙ্গে এই প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটছে, তা নিয়ে আমাদের গবেষকরা ভাবছেন না।

আবার শিল্পকারখানার মালিকদের মধ্যেও গবেষণা যে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনা করেন না। ফলে শিল্পকারখানায় বিদ্যমান প্রযুক্তি যখন সময়ের সঙ্গে পুরাতন হয়ে যায় তখন শিল্প উদ্যোক্তারা আবার উন্নত প্রযুক্তি আমদানি করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি এভাবে ঘটার কথা ছিল না। বরং শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের যে শিল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করে চলেছে প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তার কোনো উন্নয়ন ঘটছে কিনা এটি দেশের গবেষকদের দেখার দায়িত্ব দিতে পারতেন।

এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করে সেখানে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির পরিবর্তনের ধারণা পেতেন। ইন্ড্রাস্ট্রির গবেষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের গবেষণা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্প ধারণাকে ধীরে ধীরে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে গবেষকদের কোন কোন প্রযুক্তির ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটছে আর কোন কোন প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এই বিষয়গুলো বিভিন্ন তথ্যের উৎস থেকে সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। আধুনিক শিল্প ধারণা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের যে জার্নালগুলো রয়েছে তা থেকে গবেষকদের নিয়মিত ধারণা নিতে হবে।

আবার নিজেদের গবেষণার অর্জিত ফলাফলকে গবেষণাপত্র হিসেবে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্ভাবনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প প্রযুক্তির ধারণাকে দেশজ প্রযুক্তিতে পরিণত করার পদক্ষেপ থাকতে হবে।

গবেষণা করার জন্য গবেষকদের গবেষণার মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়। যেমন: আলবার্ট আইনস্টাইনের গবেষণার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগার ছিল না। তিনটি জিনিস তার গবেষণার মূল উপাদান হিসেবে বিদ্যমান ছিল। এগুলো হলো- কাগজ, কলম ও চিন্তাশক্তি। এখানে চিন্তাশক্তিই গবেষণার মানসিকতা গড়ে তুলতে ও নতুন প্রযুক্তি ধারণা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। মেধাশক্তির উৎকর্ষতার জন্য শিশুর মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবেশগত ও কৌশলগত পদ্ধতির প্রয়োগ প্রয়োজন হয়। যেমন— ইসরাইলের মানুষদের মেধাশক্তি পৃথিবীর সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়। এর কারণ জন্মগত নয় বরং মেধাশক্তি বিকাশের বিভিন্ন প্রক্রিয়াই এর কারণ।

আমাদের দেশের মানুষের মেধাশক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে কীভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় সংযুক্ত করে বিজ্ঞান ও কর্মমুখী করে গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য চর্চা করলেও বিজ্ঞান চর্চাও করে গেছেন। বিজ্ঞানের নিজের ধারণা তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীদের আদান প্রদান করেছেন। এর মাধ্যমে সাহিত্য যেমন বিজ্ঞানকে সাহায্য করেছে, তেমনি সাহিত্য বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অমর্ত্য সেন ও রিচার্ড এইচ থ্যালার মানবিক প্রগতির মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন কিংবা মানুষের কল্যাণের জন্য অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। একইভাবে মানবিক প্রগতির জন্য বিজ্ঞান চর্চা, এর ব্যবহার ও প্রয়োগকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে, তবেই মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব হবে।