০৬:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

গাঠনিক পদ্ধতি কাকে বলে? গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা কী কী?

শেহনাজ ইসলাম মুক্তি
  • প্রকাশ: ১০:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ নভেম্বর ২০২১
  • / ৫৩১৩ বার পড়া হয়েছে

মৌখিকের চেয়ে লেখার ক্ষেত্রে গাঠনিক পদ্ধতি বেশি উপযুক্ত।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

গাঠনিক পদ্ধতিতে বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় শিক্ষাদান পদ্ধতি। সনাতন পদ্ধতির এই শিখন পদ্ধতিটি পূর্বে বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও আধুনিক শিক্ষাবিদরা শ্রেণিকক্ষে এর ব্যবহারের পরামর্শ খুব কমই দেন। তবে একজন শিক্ষকের জন্য শিক্ষাদানের বা শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সকল পদ্ধতি সম্পর্কেই ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে গাঠনিক পদ্ধতি কাকে বলে বা গাঠনিক পদ্ধতির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গাঠনিক পদ্ধতি (Constructive Teaching Method)

বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কিছু না শিখিয়ে গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখানোর পদ্ধতিকে গাঠনিক পদ্ধতি বলে। গাঠনিক পদ্ধতি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদ্ধতি তবে সময় বেশি লাগে। গাঠনিক পদ্ধতি হলো দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি।

বাক্য গঠনে ভাষা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সযত্নে পর্যায়ক্রমে গাঠনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ভাষা না শিখিয়ে গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভাষা শেখানোর জন্য গাঠনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। শব্দ শিখিয়ে একটি শব্দের বিভিন্ন ব্যবহার এবং সরল বাক্য শিখিয়ে ধীরে ধীরে জটিল বাক্য এবং যৌগিক বাক্যে শব্দের প্রয়োগ এই পদ্ধতিতে শেখানো হয়। এ ভাবে গঠনমূলক পদ্ধতি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে একসময়ে যথেষ্ট কার্যকর ছিল। ভাষাকে ব্যাকরণগত, উচ্চারণগত ও মৌখিক দক্ষতার মাধ্যমে উপস্থাপনের চেষ্টা এই পদ্ধতিতে করা হয়।

মৌখিকের চেয়ে লেখার ক্ষেত্রে গাঠনিক পদ্ধতি বেশি উপযুক্ত।

গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

  • মডেলিং (Modeling): জটিল বিষয়সমূহকে অভিনয় করে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে সে বিষয়টি অনুকরণ করে উপস্থাপনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়।
  • কোচিং (Coaching): শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীর শিখনফল অর্জনে সহযোগিতায় সদা প্রস্তুত থাকেন শিক্ষক।
  • কাঠামোগত এবং ধারণাগত সহায়তা (Scaffolding and fading): শিক্ষার্থী যে সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পায়নি বা নিজের চেষ্টায় তা অর্জন করতে পারেনি শিক্ষক সে সব বিষয়ে সহায়তা করবেন এবং পর্যায়ক্রমে তার সহায়তা কমিয়ে-কমিয়ে এক সময় প্রত্যাহার করে নেবেন।
  • কথায় উপস্থাপন (Articulation): একে কেউ বলেছেন ‘বিন্যাস’। এর অর্থ হলো: শিক্ষার্থীগণ তাদের ধারণা, চিন্তা এবং সমাধানগুলোকে সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করবে।
  • প্রতিফলন (Reflection): শিক্ষার্থীরা তাদের বিষয়বস্তুর ধারণা বা সমাধানসমূহ অন্যান্য সহপাঠীদের কাজের সাথে তুলনা করবে।
  • সহযোগিতা (Collaboration): শিক্ষার্থী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা করবেন।
  • সংযুক্তি (Connection): শিক্ষার্থীর অর্জিত শিখনফল পূর্ব জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্তি ঘটাবে।
  • উদ্দেশ্যপূর্ণতা (Goal orientation): শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয়বস্তু শিখনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবে এবং যখনই সম্ভব শিক্ষার্থী তার শিখন প্রক্রিয়ার সাথে উদ্দেশ্যের সংযোগ ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাবে।

গাঠনিক পদ্ধতির সুবিধা

গাঠনিক পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে খুব বেশি বলার প্রয়োজন পড়ে না; তবে সম্যক উপলব্ধির পক্ষেকতিপয় বৈশিষ্ট্যের তালিকা করা যেতে পারে: 

  • শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে গাঠনিক পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় আর্বিভূত হয়েছে।
  • পর্যায়ক্রমে ও সযত্নে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় বলে এর কার্যফল প্রত্যক্ষ করার সুযোগ থাকে।
  • শিক্ষা গবেষকদের মতে গঠনমূলক (constructive) শিক্ষাদান পদ্ধতি অন্যান্য শিক্ষাদান পদ্ধতির চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক।
  • এই পদ্ধতি অনুসৃত হলে শিক্ষার্থী মুক্তচিন্তা করতে পারবে এবং বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।

গাঠনিক পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা

  • গাঠনিক পদ্ধতির সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো এটি দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি।
  • প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন ও সময় নিয়ে এটি প্রয়োগ করতে হয় বলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবকাঠামোতে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে না।
  • বর্তমান প্রগতি আর প্রযুক্তির যুগে যেখানে উন্নততর পদ্ধতি অধিকতর ফল-প্রদায়ী হিসেবে সমাদৃত ও অনুসৃত হচ্ছে সেখানে গাঠনিক পদ্ধতির প্রলম্বন সমর্থন ও চর্চা লাভ করে না।
  • গাঠনিক পদ্ধতি মূলত যেখানে সনাতন পদ্ধতি রূপে সমধিক পরিচিত সেখানে ‘শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক’ পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষকদের কাছে এর পুরাতন ও আধুনিক ধারণার সংবৃত্তায়ন ঘটানো আপাতত বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।

গাঠনিক পদ্ধতি যদিও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী তবে এতে সময় বেশি লাগে বলে এর ব্যবহার এখন হয় না বললেই চলে। তবুও এই গাঠনিক পদ্ধতি যদি কোনো শিক্ষক ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে ভালো ফল আসতে পারে শিখনফল অর্জনে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

গাঠনিক পদ্ধতি কাকে বলে? গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা কী কী?

প্রকাশ: ১০:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ নভেম্বর ২০২১

গাঠনিক পদ্ধতিতে বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় শিক্ষাদান পদ্ধতি। সনাতন পদ্ধতির এই শিখন পদ্ধতিটি পূর্বে বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও আধুনিক শিক্ষাবিদরা শ্রেণিকক্ষে এর ব্যবহারের পরামর্শ খুব কমই দেন। তবে একজন শিক্ষকের জন্য শিক্ষাদানের বা শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সকল পদ্ধতি সম্পর্কেই ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে গাঠনিক পদ্ধতি কাকে বলে বা গাঠনিক পদ্ধতির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গাঠনিক পদ্ধতি (Constructive Teaching Method)

বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কিছু না শিখিয়ে গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখানোর পদ্ধতিকে গাঠনিক পদ্ধতি বলে। গাঠনিক পদ্ধতি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদ্ধতি তবে সময় বেশি লাগে। গাঠনিক পদ্ধতি হলো দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি।

বাক্য গঠনে ভাষা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সযত্নে পর্যায়ক্রমে গাঠনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ভাষা না শিখিয়ে গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভাষা শেখানোর জন্য গাঠনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। শব্দ শিখিয়ে একটি শব্দের বিভিন্ন ব্যবহার এবং সরল বাক্য শিখিয়ে ধীরে ধীরে জটিল বাক্য এবং যৌগিক বাক্যে শব্দের প্রয়োগ এই পদ্ধতিতে শেখানো হয়। এ ভাবে গঠনমূলক পদ্ধতি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে একসময়ে যথেষ্ট কার্যকর ছিল। ভাষাকে ব্যাকরণগত, উচ্চারণগত ও মৌখিক দক্ষতার মাধ্যমে উপস্থাপনের চেষ্টা এই পদ্ধতিতে করা হয়।

মৌখিকের চেয়ে লেখার ক্ষেত্রে গাঠনিক পদ্ধতি বেশি উপযুক্ত।

গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

  • মডেলিং (Modeling): জটিল বিষয়সমূহকে অভিনয় করে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে সে বিষয়টি অনুকরণ করে উপস্থাপনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়।
  • কোচিং (Coaching): শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীর শিখনফল অর্জনে সহযোগিতায় সদা প্রস্তুত থাকেন শিক্ষক।
  • কাঠামোগত এবং ধারণাগত সহায়তা (Scaffolding and fading): শিক্ষার্থী যে সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পায়নি বা নিজের চেষ্টায় তা অর্জন করতে পারেনি শিক্ষক সে সব বিষয়ে সহায়তা করবেন এবং পর্যায়ক্রমে তার সহায়তা কমিয়ে-কমিয়ে এক সময় প্রত্যাহার করে নেবেন।
  • কথায় উপস্থাপন (Articulation): একে কেউ বলেছেন ‘বিন্যাস’। এর অর্থ হলো: শিক্ষার্থীগণ তাদের ধারণা, চিন্তা এবং সমাধানগুলোকে সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করবে।
  • প্রতিফলন (Reflection): শিক্ষার্থীরা তাদের বিষয়বস্তুর ধারণা বা সমাধানসমূহ অন্যান্য সহপাঠীদের কাজের সাথে তুলনা করবে।
  • সহযোগিতা (Collaboration): শিক্ষার্থী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা করবেন।
  • সংযুক্তি (Connection): শিক্ষার্থীর অর্জিত শিখনফল পূর্ব জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্তি ঘটাবে।
  • উদ্দেশ্যপূর্ণতা (Goal orientation): শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয়বস্তু শিখনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবে এবং যখনই সম্ভব শিক্ষার্থী তার শিখন প্রক্রিয়ার সাথে উদ্দেশ্যের সংযোগ ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাবে।

গাঠনিক পদ্ধতির সুবিধা

গাঠনিক পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে খুব বেশি বলার প্রয়োজন পড়ে না; তবে সম্যক উপলব্ধির পক্ষেকতিপয় বৈশিষ্ট্যের তালিকা করা যেতে পারে: 

  • শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে গাঠনিক পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় আর্বিভূত হয়েছে।
  • পর্যায়ক্রমে ও সযত্নে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় বলে এর কার্যফল প্রত্যক্ষ করার সুযোগ থাকে।
  • শিক্ষা গবেষকদের মতে গঠনমূলক (constructive) শিক্ষাদান পদ্ধতি অন্যান্য শিক্ষাদান পদ্ধতির চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক।
  • এই পদ্ধতি অনুসৃত হলে শিক্ষার্থী মুক্তচিন্তা করতে পারবে এবং বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।

গাঠনিক পদ্ধতির অসুবিধা বা সমস্যা

  • গাঠনিক পদ্ধতির সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো এটি দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি।
  • প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন ও সময় নিয়ে এটি প্রয়োগ করতে হয় বলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবকাঠামোতে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে না।
  • বর্তমান প্রগতি আর প্রযুক্তির যুগে যেখানে উন্নততর পদ্ধতি অধিকতর ফল-প্রদায়ী হিসেবে সমাদৃত ও অনুসৃত হচ্ছে সেখানে গাঠনিক পদ্ধতির প্রলম্বন সমর্থন ও চর্চা লাভ করে না।
  • গাঠনিক পদ্ধতি মূলত যেখানে সনাতন পদ্ধতি রূপে সমধিক পরিচিত সেখানে ‘শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক’ পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষকদের কাছে এর পুরাতন ও আধুনিক ধারণার সংবৃত্তায়ন ঘটানো আপাতত বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।

গাঠনিক পদ্ধতি যদিও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী তবে এতে সময় বেশি লাগে বলে এর ব্যবহার এখন হয় না বললেই চলে। তবুও এই গাঠনিক পদ্ধতি যদি কোনো শিক্ষক ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে ভালো ফল আসতে পারে শিখনফল অর্জনে।