০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নীতিমালা
আহমেদ মিন্টো
- প্রকাশ: ১২:০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১
- / ৫২২৩ বার পড়া হয়েছে
শিক্ষাক্রম প্রণয়ন একটি ধারবাহিক প্রক্রিয়া। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, পরিমার্জন বা উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা রয়েছে। নিচে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বেশকিছু সাধারণ নীতিমালা উল্লেখ করা হলো।
শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নীতিমালা
শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কিছু অ্যাকাডেমিক নীতিমালা রয়েছে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো-
- শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: একটি দেশের শিক্ষানীতি এবং বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দলিলে ঐ রাষ্ট্রের শিক্ষার লক্ষ্য কী হবে সে সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা উল্লেখ থাকে; শিক্ষাক্রমে এসব দিকগুলোর প্রতিফলন ঘটাতে হয়।
- শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক: শিক্ষাক্রম, শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ, সামর্থ, ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি দিককে ভিত্তি করে প্রণয়ন করতে হয়। অর্থাৎ শিক্ষাক্রম হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শেখার সুযোগ থাকতে হবে।
- ব্যক্তির সামাজিক চাহিদার প্রতিফলন: মানুষ সামাজিক জীব। শিক্ষার্থী সমাজেই জন্মগ্রহণ করে ও বেড়ে উঠে। আধুনিক শিক্ষা ব্যক্তির নিজস্ব সত্ত্বা ও সামাজিক সত্ত্বা উভয় দিকের বিকাশকে গুরুত্ব দেয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সৃজনশীলতার বিকাশ: শিক্ষার্থী নিজস্ব সম্ভাবনা ও সৃজনশীলতার উন্নয়ন শিক্ষার অন্যতম কাজ। সুতরাং, শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার বিকাশকে গুরুত্ব দিবে। তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশে জোর দিতে হবে।
- ভবিষ্যৎমূখী করা: শিক্ষা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম হওয়া উচিৎ জীবনভিত্তিক। তবে শিক্ষা শুধু বর্তমান জীবন পরিস্থিতিকেই গুরুত্ব দিবে না; শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও উন্নয়নে যুগপৎ সমাজের ভবিষ্যত চাহিদাকেও বিবেচনা করতে হবে।
- জীবন ধারনের প্রস্তুতি: শিক্ষার্থীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কর্মকাণ্ড এবং এগুলোর মাধ্যমে কীভাবে ব্যক্তির জীবনের চাহিদাসমূহের পরিপূরণ হচ্ছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ শিক্ষাক্রমে থাকবে।
- সংরক্ষণ করা: মানবজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ও তাকে ভবিষ্যতমুখী করার অন্যতম মাধ্যম শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার অর্জিত অভিজ্ঞতা সংরক্ষণের মাধ্যমে আগামী দিনের পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে খাপ খাওয়ার উপযোগী দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা দ্বিমুখী-
- ১. অতীত অভিজ্ঞতার সংরক্ষণ
- ২. ভবিষ্যত সমাজের মধ্যে তার সঞ্চালন।
শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- বিষয়বস্তুর সমন্বয় ও সহসম্পর্ক রক্ষা: শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে বিষয়বস্তুসমূহ যৌক্তিকভাবে ও মনোবিজ্ঞানের নীতিমালা অনুযায়ী বিন্যস্ত হয়। এর ফলে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে যথার্থ সমন্বয় ও সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হবে।
- ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যকে গুরুত্ব দেওয়া: শিক্ষাক্রম এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে করে প্রতিটি শিশুর/শিক্ষার্থী আত্ম-প্রকাশ ও উন্নয়নের সুযোগ থাকে। এ লক্ষ্যে শিক্ষাক্রমকে ব্যক্তিক পার্থক্যের মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হবে যা আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় জটিলতা উপলব্ধি করতে ও তার সমাধানে সহায়ক হবে।
- শিখন সক্ষমতা: শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিষয় বা বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর শেখার উপযোগী হতে হবে। সেই সাথে বিষয়বস্তুসমূহের প্রয়োজনীয়তাও থাকতে হবে।
- সামাজিক সংশ্লিষ্টতা ও উপযোগিতা: শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ এমনভাবে চয়ন করতে হবে যাতে করে শিখন ক্ষেত্র হিসেবে তার গুরুত্ব থাকে। সেই সাথে তার নিজস্ব গুরুত্ব, সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা থাকে।
- অবকাশ সময়ের সদ্ব্যবহার: খেলাধুলা, শিল্পচর্চা, নান্দনিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক বিষয়বস্তু শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অবসর সময়টাকে কার্যকর ও আনন্দঘন ব্যবহারের সুযোগ থাকবে শিক্ষাক্রমে।
- বিভিন্নতার স্বীকৃতি ও নমনীয়তা: শিক্ষাক্রমের সাধারণ উদ্দেশ্য হবে সকলের স্বাভাবিক বিকাশ ও উন্নয়ন। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্নতাকে (ছেলেমেয়ে, জাতি, গোষ্ঠী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি) মূল্যায়ন করবে ও প্রত্যেকের বিশেষ চাহিদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ।