০৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ক্যান্সার কী? ক্যান্সারের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় কী কী?

জারিন তাসনিম
  • প্রকাশ: ০৬:৫১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ৫৪৩৯ বার পড়া হয়েছে

ক্যান্সার কী? ক্যান্সারের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় কী কী?

ক্যান্সার (cancer) শব্দের বাংলা অর্থ হলো কর্কটরোগ। এই ক্যান্সার ভা কর্কটরোগ মূলত দেহে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত একাধিক রোগের সমষ্টি। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ক্যান্সারের মৃত্যুর পরিমাণ ও হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না; আর প্রথামিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না করতে পারার ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। এখনো ক্যান্সার দূর করা যায় এমন শতভাগ কার্যকর কোনো চিকিৎসা বা ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। গবেষকদের দেওয়া তথ্যমতে, পৃথিবীতে ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে, যেসবের প্রত্যেকটি প্রকারই আলাদা আলাদা বা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। একেক ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিও একেক রকম। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এখানে যা আছে

ক্যান্সার কর্কটরোগ কী?

সকল প্রাণীর শরীর অসংখ্য ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে তৈরি; এই কোষগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায় এবং নতুন কোষ জন্ম নিয়ে পুরনো (মৃত) কোষগুলোর জায়গা দখল করে। নতুন কোষ জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়। কিন্তু দেহের কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায় যাকে টিউমার বলে।

টিউমার দুই প্রকার:

  • বিনাইন টিউমার
  • ম্যালিগন্যান্ট টিউমার

এই দুই প্রকারের টিউমারের মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে ক্যান্সার বলে।

বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়

অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে; এমন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোষকে বলা হয় নিওপ্লাস্টিক। এই নিওপ্লাস্টিক কোষ যখন এর আশেপাশের কলা বা টিস্যু ভেদ করতে না তখন তাকে বলে বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার হলো একদমই শান্ত প্রকৃতির, এ ধরনের টিউমারকে ক্যান্সার বলা যায় না।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সার

নিওপ্লাসিয়া যখন আশেপাশের কলা বা টিস্যু ভেদ করার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলো অশান্ত প্রকৃতির, যাকে ক্যান্সার বলে।

বিনাইন থেকেও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হলেও পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায়। বলে নেওয়া জরুরি যে, বিনাইন টিউমার যে সর্বদাই ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবে বা হবে না- এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

ক্যান্সারের কারণ কী বা ক্যান্সার কেন হয়?

ঠিক কি কারণে ক্যান্সার বা কর্কটরোগের সৃষ্টি হয় সেটা নিশ্চিত হতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।

বয়স

সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর।

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন, ধূমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।

পারিবারিক ইতিহাস

ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

পরিবেশ এবং পেশাগত কারণ

রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ কী কী?

মানবদেহের প্রস্টেট গ্রন্থি (prostate gland) স্তন (breast), জরায়ু (uterus), অগ্ন্যাশয় (pancreas), রক্ত (blood), চামড়া (skin) ইত্যাদি স্থানে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

  • খুব ক্লান্ত বোধ করা
  • ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
  • শরীরের যে কোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেওয়া (উদাহরণ: ব্রেস্ট লাম্প)
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা
  • মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসা
  • জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
  • ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
  • মানসিক অস্বস্তি

ক্যান্সারের চিকিৎসা কী?

ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিচে এর মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখ করা হলো:

অস্ত্রোপচার

শরীরের যে অংশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সে অংশের আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গা জুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।

রেডিওথেরাপি (Radiotherapy)

নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার কোষগুলোকে ধ্বংস করার প্রযুক্তিগত পদ্ধতিকে বলা রেডিওথেরাপি।

কেমোথেরাপি (Chemotherapy)

এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০ টির বেশি ধরনের কেমওথেরাপি ওষুধ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কোনোটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেওয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

হরমোন থেরাপি

অনেক সময় রোগীর শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে; কোনো কোনো ক্যান্সার এই হরমোনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে থাকে। যার কারণে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

সহায়ক চিকিৎসা

ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এই কারণে অনেক সময়ে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি গ্রুপ গঠন করা, যেখানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোন কাজে নিয়োজিত হতে চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়।

অন্যান্য চিকিৎসা

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে?

গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়। যেমন:

ব্যায়াম এবং ক্যান্সার

প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা। সপ্তাহে কমপক্ষে ২ দিন ভারী ব্যায়াম করতে হবে।

খাদ্যভ্যাস ও ক্যান্সার

ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেয়া বা পরিমাণ কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেয়া বা কমিয়ে দেয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।

সচেতনতা

বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না হলে শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।

পরিভাষা ও নামের উৎস

  • কলায় কোষের সংখ্যাধিক্য তাকে হাইপারপ্লাসিয়া (hyperplasia) বলে।
  • একরকম কলার অন্যরকম কলায় পরিবর্তন হলে তাকে মেটাপ্লাসিয়া (metaplasia) বলে।
  • পূর্বে যে-কোনো প্রদাহ জনিত স্ফীতিকে টিউমার (tumor) টিউমার টিউমার বলা হতো তবে এখন টিউমার বলতে নিওপ্লাসিয়া বোঝায়। (সাধারণত, সব টিউমরের নামের শেষে ‘ওমা’ অনুসর্গ থাকে, যেমন (মেলানোমা, লাইপোমা), ও শুরুর অংশে কলার উৎস সম্বন্ধে নির্দেশ থাকে।)
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্ধনশীল কলাকে নিওপ্লাসিয়া (neoplasia) বলে।
  • কলার কোষগুলি এককভাবে স্থানীয় বিশেষীভবন লাভ করলেও সমবদ্ধভাবে কলার ত্রিমাতৃক স্থাপত্য সঠিকভাবে দেওয়ার বদলে জট পাকিয়ে গেলে তাকে হ্যামারটোমা (Hamartoma) বলে।
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম এবং ভেদন ক্ষমতাযুক্ত টিউমারকে  ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (malignant tumor) বলে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সার।
  • কলার অপ-বিশেষীভবন (ডি-ডিফারেন্সিয়েশন), অর্থাৎ কলা আগের বিশেষীভূত কলা-বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভ্রুণীয় বা প্রাক-কলার মত আচরণ করতে থাকলে তাকে অ্যানাপ্লাসিয়া (anaplasia) বলে। অ্যানাপ্লাস্টিক অর্থাৎ অ্যানাপ্লাসিয়াযুক্ত ক্যান্সার সাধারাণত বেশি ক্ষতিকর।
  • আবরণি কলা (Epithelium) উৎসের ক্যান্সার হলো কারসিনোমা
  • সারকোমা হলো সংযোগ কলা (মেসেনকাইম) উৎসের ক্যান্সার।

কলার উৎস অনুসারে ক্যান্সারের প্রকারভেদ

কারসিনোমা

কারসিনোমা খুব সাধারণ ধরনের ক্যান্সার; ফুসফুস, মলদ্বার, স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এর অন্তর্ভুক্ত।

সারকোমা

সাধারণত হাড়ের, কশেরুকা, চর্বি বা মাংসপেশির ক্যান্সারকে সার্কোমা বলে।

লিম্ফোমা

আমাদের শরীর জুড়ে লিম্ফ নোড ছড়ানো রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই লিম্ফ নোডের সাথে জড়িত। লিম্ফ নোডের ক্যান্সারকেই লিম্ফোমা বলে।

লিউকেমিয়া

রক্ত কোষের ক্যান্সারকেই লিউকেমিয়া বলে। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়।

উৎস: National Cancer Institute, NHS

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

জারিন তাসনিম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বাধীন লেখক।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

ক্যান্সার কী? ক্যান্সারের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় কী কী?

প্রকাশ: ০৬:৫১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১

ক্যান্সার (cancer) শব্দের বাংলা অর্থ হলো কর্কটরোগ। এই ক্যান্সার ভা কর্কটরোগ মূলত দেহে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত একাধিক রোগের সমষ্টি। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ক্যান্সারের মৃত্যুর পরিমাণ ও হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না; আর প্রথামিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না করতে পারার ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। এখনো ক্যান্সার দূর করা যায় এমন শতভাগ কার্যকর কোনো চিকিৎসা বা ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। গবেষকদের দেওয়া তথ্যমতে, পৃথিবীতে ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে, যেসবের প্রত্যেকটি প্রকারই আলাদা আলাদা বা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। একেক ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিও একেক রকম। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এখানে যা আছে

ক্যান্সার কর্কটরোগ কী?

সকল প্রাণীর শরীর অসংখ্য ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে তৈরি; এই কোষগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায় এবং নতুন কোষ জন্ম নিয়ে পুরনো (মৃত) কোষগুলোর জায়গা দখল করে। নতুন কোষ জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়। কিন্তু দেহের কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায় যাকে টিউমার বলে।

টিউমার দুই প্রকার:

  • বিনাইন টিউমার
  • ম্যালিগন্যান্ট টিউমার

এই দুই প্রকারের টিউমারের মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে ক্যান্সার বলে।

বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়

অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে; এমন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোষকে বলা হয় নিওপ্লাস্টিক। এই নিওপ্লাস্টিক কোষ যখন এর আশেপাশের কলা বা টিস্যু ভেদ করতে না তখন তাকে বলে বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার হলো একদমই শান্ত প্রকৃতির, এ ধরনের টিউমারকে ক্যান্সার বলা যায় না।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সার

নিওপ্লাসিয়া যখন আশেপাশের কলা বা টিস্যু ভেদ করার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলো অশান্ত প্রকৃতির, যাকে ক্যান্সার বলে।

বিনাইন থেকেও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হলেও পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায়। বলে নেওয়া জরুরি যে, বিনাইন টিউমার যে সর্বদাই ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবে বা হবে না- এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

ক্যান্সারের কারণ কী বা ক্যান্সার কেন হয়?

ঠিক কি কারণে ক্যান্সার বা কর্কটরোগের সৃষ্টি হয় সেটা নিশ্চিত হতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।

বয়স

সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর।

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন, ধূমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।

পারিবারিক ইতিহাস

ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

পরিবেশ এবং পেশাগত কারণ

রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ কী কী?

মানবদেহের প্রস্টেট গ্রন্থি (prostate gland) স্তন (breast), জরায়ু (uterus), অগ্ন্যাশয় (pancreas), রক্ত (blood), চামড়া (skin) ইত্যাদি স্থানে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

  • খুব ক্লান্ত বোধ করা
  • ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
  • শরীরের যে কোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেওয়া (উদাহরণ: ব্রেস্ট লাম্প)
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা
  • মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসা
  • জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
  • ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
  • মানসিক অস্বস্তি

ক্যান্সারের চিকিৎসা কী?

ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিচে এর মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখ করা হলো:

অস্ত্রোপচার

শরীরের যে অংশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সে অংশের আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গা জুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।

রেডিওথেরাপি (Radiotherapy)

নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার কোষগুলোকে ধ্বংস করার প্রযুক্তিগত পদ্ধতিকে বলা রেডিওথেরাপি।

কেমোথেরাপি (Chemotherapy)

এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০ টির বেশি ধরনের কেমওথেরাপি ওষুধ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কোনোটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেওয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

হরমোন থেরাপি

অনেক সময় রোগীর শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে; কোনো কোনো ক্যান্সার এই হরমোনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে থাকে। যার কারণে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

সহায়ক চিকিৎসা

ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এই কারণে অনেক সময়ে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি গ্রুপ গঠন করা, যেখানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোন কাজে নিয়োজিত হতে চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়।

অন্যান্য চিকিৎসা

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে?

গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়। যেমন:

ব্যায়াম এবং ক্যান্সার

প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা। সপ্তাহে কমপক্ষে ২ দিন ভারী ব্যায়াম করতে হবে।

খাদ্যভ্যাস ও ক্যান্সার

ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেয়া বা পরিমাণ কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেয়া বা কমিয়ে দেয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।

সচেতনতা

বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না হলে শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।

পরিভাষা ও নামের উৎস

  • কলায় কোষের সংখ্যাধিক্য তাকে হাইপারপ্লাসিয়া (hyperplasia) বলে।
  • একরকম কলার অন্যরকম কলায় পরিবর্তন হলে তাকে মেটাপ্লাসিয়া (metaplasia) বলে।
  • পূর্বে যে-কোনো প্রদাহ জনিত স্ফীতিকে টিউমার (tumor) টিউমার টিউমার বলা হতো তবে এখন টিউমার বলতে নিওপ্লাসিয়া বোঝায়। (সাধারণত, সব টিউমরের নামের শেষে ‘ওমা’ অনুসর্গ থাকে, যেমন (মেলানোমা, লাইপোমা), ও শুরুর অংশে কলার উৎস সম্বন্ধে নির্দেশ থাকে।)
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্ধনশীল কলাকে নিওপ্লাসিয়া (neoplasia) বলে।
  • কলার কোষগুলি এককভাবে স্থানীয় বিশেষীভবন লাভ করলেও সমবদ্ধভাবে কলার ত্রিমাতৃক স্থাপত্য সঠিকভাবে দেওয়ার বদলে জট পাকিয়ে গেলে তাকে হ্যামারটোমা (Hamartoma) বলে।
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম এবং ভেদন ক্ষমতাযুক্ত টিউমারকে  ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (malignant tumor) বলে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সার।
  • কলার অপ-বিশেষীভবন (ডি-ডিফারেন্সিয়েশন), অর্থাৎ কলা আগের বিশেষীভূত কলা-বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভ্রুণীয় বা প্রাক-কলার মত আচরণ করতে থাকলে তাকে অ্যানাপ্লাসিয়া (anaplasia) বলে। অ্যানাপ্লাস্টিক অর্থাৎ অ্যানাপ্লাসিয়াযুক্ত ক্যান্সার সাধারাণত বেশি ক্ষতিকর।
  • আবরণি কলা (Epithelium) উৎসের ক্যান্সার হলো কারসিনোমা
  • সারকোমা হলো সংযোগ কলা (মেসেনকাইম) উৎসের ক্যান্সার।

কলার উৎস অনুসারে ক্যান্সারের প্রকারভেদ

কারসিনোমা

কারসিনোমা খুব সাধারণ ধরনের ক্যান্সার; ফুসফুস, মলদ্বার, স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এর অন্তর্ভুক্ত।

সারকোমা

সাধারণত হাড়ের, কশেরুকা, চর্বি বা মাংসপেশির ক্যান্সারকে সার্কোমা বলে।

লিম্ফোমা

আমাদের শরীর জুড়ে লিম্ফ নোড ছড়ানো রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই লিম্ফ নোডের সাথে জড়িত। লিম্ফ নোডের ক্যান্সারকেই লিম্ফোমা বলে।

লিউকেমিয়া

রক্ত কোষের ক্যান্সারকেই লিউকেমিয়া বলে। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়।

উৎস: National Cancer Institute, NHS