শিখন কী? শিখনের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং শর্তাবলি কী?
- প্রকাশ: ১২:১৬:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৬২৭৯২ বার পড়া হয়েছে
শিখন কী
শিখন হলো নতুন কোন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন, দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রাণীকে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে। অর্থাৎ নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রাণীর আচরণের মধ্যে যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটায় তাকে শিখন (Learning) বলা হয়। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নতুন কোনো কিছু আয়ত্ত করার নাম শিখন।
আমরা বলতে পারি, অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আচরণের যে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে শিখন বলে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিখন
ক্রাইডার এবং অন্যান্যরা (Crider et al) বলেছেন, “Learning can be defined as a relatively permanent change in immediate or potential behaviors that results from experience”
উডওয়ার্থ (Woodworth) বলেছেন, “শিখন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা পরবর্তী ক্রিয়ার উপর স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। অর্থাৎ যখনই কোন ক্রিয়ার মধ্যে পূর্ববর্তী ক্রিয়ার ছাপ লক্ষ্য করা যাবে তখনই সেই ক্রিয়াকে শিখনের ফল মনে করা যেতে পারে”।
ম্যাকডুগাল (Mcdougal) বলেছেন, “শিখন হলো অভ্যাসের ফলে আচরণের পরিবর্তন”।
মর্গান এবং কিং (Morgan & King) বলেন, “শিখনকে অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে আচরণের যে কোন তুলনামূলক স্থায়ী পরিবর্তন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়”।
শিখনের বেশ কিছু সংজ্ঞা
শিখনের যেসব সংজ্ঞা পাওয়া যায় সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- শিখনকে তাৎক্ষণিক বা কার্যকর আচরণের তুলনামূলক স্থায়ী পরিবর্তন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, যা অভিজ্ঞতার ফলে উদ্ভূত হয় (Crider et al)।
- শিখন একটি পরিবর্তন অথবা আচরণের জন্য প্রচ্ছন্ন শক্তি হিসেবে সংজ্ঞা দেন, যা পরিবেশগত অভিজ্ঞতার ফলে ঘটে কিন্তু ক্লান্তি, ঔষধ বা আঘাত জনিত কারণে ঘটেনা।
- শিখন হলো উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মাঝে সঠিক সম্পর্ক স্থাপন।
- শিখন হচ্ছে ব্যক্তির মধ্যে নতুন দক্ষতা অর্জন যা ব্যক্তির পরবর্তী ক্রিয়ার উপর একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যায়।
- শিখন হচ্ছে অভ্যাসের ফলে আচরণের স্থায়ী পরিবর্তন।
- শিখনকে আচরণের তুলনামূলক স্থায়ী পরিবর্তন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, যা অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
- শিখন হলো সেই প্রক্রিয়া, যার সহায়তায় আমরা আচরণের মধ্যে এমন পরিবর্তন আনতে পারি যা পরিবেশের সাথে আমাদের সম্বন্ধের উন্নতি সাধন করে।
- শিখনকে আচরণের যে কোন তুলনামূলক স্থায়ী পরিবর্তন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, যা অনুশীলন বা অভ্যাসের ফলে সংঘটিত হয়।
শিখনের বৈশিষ্ট্য
- আচরণের পরিবর্তন: পুরাতন আচরণের পরিবর্তন এবং নতুন আচরণ সম্পাদনই শিখন।
- নতুন অভিজ্ঞত: নতুন আচরণ সম্পাদনের মাঝেই ব্যক্তি বিশেষ নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
- আচরণের স্থায়ীত্ব: নতুন আচরণের স্থায়ীত্ব না থাকলে তাকে শিখন বলা যাবে না। আজকে শিখে আগামীকাল ভুলে গেলে তাকে শিখন বলা যাবে না।
- আচরণের উৎকর্ষতা: শিখনের ফলে আচরণের শুধু পরিবর্তন নয় উন্নত আচরণ আশা করা যায়।
- অনুশীলন/অভ্যাস: পুরাতন আচরণের পরিবর্তে নতুন আচরণ আয়ত্ত করতে বার বার চেষ্টা ও অনুশীলন অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়া শিখন হয় না। নতুন অংক শিখতে বা টাইপ করতে বার বার অনুশীলন করতে হয়।
- পরিণমন: শিখনের একটি অপরিহার্য শর্ত। দৈহিক এবং মানসিকভাবে পরিপক্ক না হলে ব্যক্তি বিশেষকে বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখানো যায় না। লেখা শিখতে গেলে হাতের আঙ্গুলগুলোর সে ধরনের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
- প্রেষণা: শেখার জন্য চাহিদা বা আগ্রহ না থাকলে কাউকে শেখানো যায় না।
- সমস্যা: সমস্যা থাকলেই প্রাণী তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। এভাবেই সে নতুন আচরণ বা শিখন আয়ত্ত করে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, শিখন প্রক্রিয়ার রয়েছে তিনটি স্তর সমস্যা: প্রত্যক্ষণ, উপযোগী আচরণের উদ্ভাবন ও সেই আচরণ আত্মীকরণ।
শিখনের শর্ত
শিখনের জন্য প্রয়োজনীয় যে সব শর্ত রয়েছে সেগুলো হলো- অনুশীলন, দৈহিক ও মানসিক পরিণমন বা পরিপক্কতা, প্রেষণা এবং বলবৃদ্ধি। অনুশীলনের মাধ্যমে শিখন অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ও ফলপ্রসূহয় যা বিভিন্ন বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। দৈহিক ও মানসিক পরিণমন হলো শিখনের অপরিহার্য শর্ত। বিশেষ বিশেষ শিখনের জন্য নির্দিষ্ট দৈহিক ও মানসিক পরিণমন রয়েছে। নির্দিষ্ট মানসিক ও দৈহিক পরিণমন না হলে শিক্ষকের শতচেষ্টার পরেও শিখন সম্ভব নয়। প্রেষণাকে বলা হয় শিখনের একটি অতি প্রয়োজনীয় শর্ত। কোনো কিছুতে তৃপ্তি পাওয়া না গেলে তা যথাযথভাবে শেখা যায় না। প্রেষণা হলো তৃপ্তির পূর্বশর্ত। এছাড়া পর্যবেক্ষণ, মনোযোগ, আগ্রহ ও অনুরাগ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও ফল লাভের জ্ঞান শিখনের জন্য অপরিহার্য বিষয়।
এখানে বেশ কিছু বিষয় রাখা জরুরি-
- শিক্ষার্থী শিখনের প্রয়োজনীয়তা এবং স্থায়ী শিখনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারলে পরবর্তী জীবনে ও শিক্ষার্থীর উপযোগিতা দিয়ে এর যথার্থতা প্রমাণ করতে পারবে বিশেষ করে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে।
- শিশুরা শিখে থাকে তার স্বীয় মস্তিষ্কের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। তাই দেখা যায়, শ্রেণিতে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় সকল শিক্ষার্থী শতভাগ মনোযোগ দিয়েও সমানভাবে শিখতে পারে না। তাই মনে রাখতে হবে, শিখন হতে হবে মস্তিষ্ক বান্ধব (Brain-Friendly)। শিক্ষার্থীর স্বীয় ধারণক্ষমতা এবং চাহিদানুযায়ী তা হতে হবে। তাই পাঠদানের সময় একজন শিক্ষককে মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বতন্ত্র, সবার শিখনের প্রকৃতি ও সক্ষমতা সমান নয়, তাই শিক্ষণে বহুমুখী ব্যবস্থা থাকা দরকার।
- ব্যক্তির শিখনের কিছু কৌশল রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা শিখে থাকি। যেমন:
ক) তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে (Information Processing)
খ) কোন কিছুর সাহায্যে (Scaffolding)
গ) অনুকরণের (Imitation) মাধ্যমে এবং
ঘ) মডেলিং বা নমুনার (Modeling) মাধ্যমে।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ শিক্ষণের সময় শিক্ষকের মাথায় না থাকলে শিক্ষার্থীদের শিখনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
- শিখন তখনই কার্যকর হবে যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুর অর্থ বুঝে পাঠ গ্রহণ করবে। অর্থাৎ শিখন তখনই অর্থপূর্ণ হবে যখন শিক্ষার্থীরা পাঠের হিতকর বা উপকারী দিক দেখতে পাবে।
(সহায়তায় বাউবি বি. এড. মডিউল)
অসাধারণ অসাধারণ।
খুব ভাল লাগলো।
খুব সুন্দর পোস্ট