অর্থনীতি: অর্থনীতিতে প্রচলিত বক্তব্য এবং তাত্ত্বিকভাবে অর্থনীতি কত প্রকার ও কী কী?
- প্রকাশ: ০১:৫২:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ২৮৮৪ বার পড়া হয়েছে
অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র হলো সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
অর্থনীতির সংজ্ঞা ও পরিধি সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অর্থনীতিতে প্রচলিত বক্তব্য
অর্থনীতিতে দুই ধরণের বক্তব্য প্রচলিত আছে; যথা-
(i) ইতিবাচক বক্তব্য (Positive Statement)
(ii) নীতিবাচক বক্তব্য (Normative Statement)।
অর্থনীতির যে শাখা ইতিবাচক বক্তব্য পর্যালোচনা করে, তাকে ইতিবাচক অর্থনীতি বলে এবং যে শাখা নীতি বা আদর্শমূলক বক্তব্য পর্যালোচনা করে তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি বলে।
ইতিবাচক অর্থনীতি (Positive Economics)
যে-সব বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব, তাদেরকে ইতিবাচক বক্তব্য বলে।
যেমন: ১. গত বছরের তুলনায় এ বছরের মুদ্রাস্ফীতি বেশি; এবং ২. ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। এই বক্তব্য দুইটি তথ্য দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব।
অর্থনীতির বিষয়ক যে সকল বক্তব্য বাস্তব তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব তা হলো ইতিবাচক অর্থনীতির আওতাভুক্ত।
অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও বাস্তব তথ্যের ওপর ইতিবাচক অর্থনীতি নির্ভর করে। ইতিবাচক বক্তব্য সরল বা জটিল হতে পারে এবং এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কোনো মতভেদ দেখা দিলে তা বাস্তব তথ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ ও বর্জন করা সম্ভব। যা বিদ্যমান এবং যা ঘটেছে কেবল তারই আলোচনা করা ও কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করা ইতিবাচক অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য।
নীতিবাচক অর্থনীতি (Normative Economics)
কোনটি করা উচিত বা কোনটি করা উচিত নয় এ ধরনের আদর্শমূলক বক্তব্যকে নীতিবাচক বক্তব্য বলে। যেমন: সম্পদের অপচয় রোধে তার সুষ্ঠু বণ্টন হওয়া উচিত।
নীতিবাচক বক্তব্য সাধারণত ঔচিত্যের মাপকাঠিতে বিচার করা হয়। ইতিবাচক বক্তব্যের মতো এ ধরনের বক্তব্য বাস্তব তথ্য দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না।
আমরা বলতে পারি যে, অর্থনীতির যে শাখায় আদর্শগত মূল্যায়নের ভিত্তিতে নীতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি (Normative Economics) বলে।
নীতিবাচক অর্থনীতিকে অনেক ক্ষেত্রে কল্যাণ অর্থনীতি (Welfare Economics) হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
অর্থনীতির প্রকারভেদ
তাত্ত্বিকভাবে আধুনিক অর্থনীতিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো- ১. ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Micro Economics) এবং ২. সামষ্টিক অর্থনীতি (Macro Economics)।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি কী?
‘ব্যষ্টিক অর্থনীতি’র ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো মাইক্রো ইকোনোমিকস (Micro Economics)। এখানে মাইক্রো (Micro) শব্দটির অর্থ ক্ষুদ্র। Micro শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ mikros থেকে নেয়া হয়েছে। ব্যুৎপত্তিগতভাবে ব্যষ্টিক অর্থনীতি ক্ষুদ্র এককের আচরণ আলোচনা করে।
যেমন একজন ভোক্তা, উৎপাদক, শিল্প প্রভৃতি হলো এক একটি ক্ষুদ্র একক। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষুদ্র একককে পৃথকভাবে বিবেচনা করে এদের ব্যবহার ও পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যষ্টিক অর্থনীতি আলোচনা করে।
বলা যায়, যে অর্থনীতিতে কোনো বিশেষ ফার্ম, একক শিল্প, একক পরিবার, দ্রব্য, উপকরণ প্রভৃতির আচরণ এবং চাহিদা, যোগান ও মূল্য সম্বন্ধে পৃথকভাবে আলোচনা করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।
সামষ্টিক অর্থনীতি কী?
সামষ্টিক অর্থনীতি বা সমষ্টিগত অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ম্যাক্রো ইকোনোমিকস (Macro Economics)। এখান ম্যাক্রো (Macro) শব্দের অর্থ বড়ো। এই macro শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ makros থেকে। সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোনোমিকসের অর্থ বা উৎপত্তির দিকে থেকে বোঝা যায় এটি গোটা বা সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে।
যে অর্থনীতিতে ব্যক্তির বা কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আয়, উৎপাদন, দ্রব্যসমষ্টি, দ্রব্যসমষ্টির মূল্যস্তর, বিনিয়োগ, ভোগ ইত্যাদির পরিবর্তে জাতীয় আয়, উৎপাদন, দ্রব্যসমষ্টি, দ্রব্যসমষ্টির মূল্যস্তর, বিনিয়োগ, ভোগ ইত্যাদি আলোচনা করে তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বা সমষ্টিগত অর্থনীতি বলে।