০৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস মুহররম

  • প্রকাশ: ০২:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১
  • / ৯৯৯ বার পড়া হয়েছে

মুহররম কী?

মহরম বা মুহররম হলো ইসলাম ধর্মের চার সম্মানিত মাসের এক মাস। এই মাস বড়ো পবিত্র। এই মাসকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হয়। হিজরি সনের প্রথম মাসের নাম হলো মহরম।

ঐতিহাসিক মাস মুহররম

শরিয়তের দিক থেকে এই মাসের যেমন খুব গুরুত্ব আছে, ঠিক তেমনি একে এক ঐতিহাসিক মাস বললেও মোটেও অতুক্তি হবে না। অনেক কালজয়ী ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী থেকেছে এই মাস। যে ইতিহাস হলো হৃদয় বিদারক, বড়ো দুঃখের, বড়ো কষ্টের, বড়ো যন্ত্রণার। এ যন্ত্রণা আমি সঠিকভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম।

মুহররম এবং আশুরা

মহরমের অর্থ বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ। এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো পবিত্র। এর পরবর্তী মাসের নাম হলো সফর। মহরম মাস সম্মানিত হওয়ার পিছনে এক বড়ো কারণ হলো ‘আশুরা’। এই আশুরা শব্দের অর্থ হলো দশম। মহরম মাসের দশ তারিখ, ইতিহাসে আশুরা নামে অভিহিত হয়ে আছে।

এবার মহরমের সেই ঘটনার কথা তুলে ধরার চেষ্টা আমি করছি আপনাদের সামনে।

ইমাম হোসেন

সে অনেক দিন আগের কথা। এই ঘটনা প্রধানত যাঁকে কেন্দ্র করে, তিনি হলেন, হজরত ইমাম হোসেন (হোসাইন)। তিনি ছিলেন পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ও হযরত আলি ও ফতিমার (রা.) পুত্র। ইমাম হোসেন ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি। তিনি হলেন বিশ্ব মানবতার প্রতীক।

এজিদের ইচ্ছে

সে সময় এজিদ (ইয়াজিদ) নিজেকে খলিফা মনে করেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহর প্রতি তার কোনো বিশ্বাস ছিল না। সে ছিল একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। তার মধ্যে ছিল না কোনো দয়া, মায়া, ভালোবাসা। সে চেয়েছিল ইমাম হোসেন যেন তাঁর শিবিরে যোগদান করেন। কিন্তু ইমাম হোসেন তাতে রাজি হননি। এতে হোসেনের ওপর মারাত্মক চটে যায় এজিদ।

কারবালার যুদ্ধ

বর্তমানে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারবালা। যা মক্কা-মদিনার পরে, ইসলাম ধর্মের এক অতি পবিত্র স্থান। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইমাম হোসেন তাঁর পরিবার ও সাথীদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে ছিলেন। তাঁর সাথে ছোটো ছোটো শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধরাও ছিলেন। দশম মহরমের দিন, ঘটে যায় সেই কারবালার যুদ্ধ। এদিক থেকে বলতে গেলে, কারবালা এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানও বটে। কারবালার এই যুদ্ধের কথা বলতে গেলে, হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়।

সেদিন কারবালার প্রান্তরে এজিদের বাহিনী যে চরম নিষ্ঠুরতার নিদর্শন তুলে ধরেছিল, তা সত্যিই ন্যক্কারজনক। এজিদের বাহিনী মহান ইমাম হোসেনের শিরচ্ছেদ করে, তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও অনুচরদের হত্যা করে। মহিলা ও শিশুদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় যুদ্ধবন্দি হিসেবে। চারিদিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। কারবালার প্রান্তর হয়ে ওঠে রক্তাক্ত। মুহররম মাসের দশম দিনটিকে বলা হয়ে থাকে আশুরা। এই মহরম মাস হলো দুঃখের মাস, বেদনার মাস, শোকের মাস। শিয়া ও সুন্নী-এই উভয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই মহরম পালন করে থাকেন শ্রদ্ধার সাথে।

আত্মত্যাগের এক মহান ইতিহাস দ্বারা সমৃদ্ধ হলো মুহররম। ইমাম হুসেন ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের কথা কখনও ভোলা যাবে না। মহরমের সময়, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় বিশ্ব মানবতার প্রতীক ইমাম হুসেনকে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস মুহররম

প্রকাশ: ০২:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১

মুহররম কী?

মহরম বা মুহররম হলো ইসলাম ধর্মের চার সম্মানিত মাসের এক মাস। এই মাস বড়ো পবিত্র। এই মাসকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হয়। হিজরি সনের প্রথম মাসের নাম হলো মহরম।

ঐতিহাসিক মাস মুহররম

শরিয়তের দিক থেকে এই মাসের যেমন খুব গুরুত্ব আছে, ঠিক তেমনি একে এক ঐতিহাসিক মাস বললেও মোটেও অতুক্তি হবে না। অনেক কালজয়ী ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী থেকেছে এই মাস। যে ইতিহাস হলো হৃদয় বিদারক, বড়ো দুঃখের, বড়ো কষ্টের, বড়ো যন্ত্রণার। এ যন্ত্রণা আমি সঠিকভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম।

মুহররম এবং আশুরা

মহরমের অর্থ বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ। এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো পবিত্র। এর পরবর্তী মাসের নাম হলো সফর। মহরম মাস সম্মানিত হওয়ার পিছনে এক বড়ো কারণ হলো ‘আশুরা’। এই আশুরা শব্দের অর্থ হলো দশম। মহরম মাসের দশ তারিখ, ইতিহাসে আশুরা নামে অভিহিত হয়ে আছে।

এবার মহরমের সেই ঘটনার কথা তুলে ধরার চেষ্টা আমি করছি আপনাদের সামনে।

ইমাম হোসেন

সে অনেক দিন আগের কথা। এই ঘটনা প্রধানত যাঁকে কেন্দ্র করে, তিনি হলেন, হজরত ইমাম হোসেন (হোসাইন)। তিনি ছিলেন পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ও হযরত আলি ও ফতিমার (রা.) পুত্র। ইমাম হোসেন ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি। তিনি হলেন বিশ্ব মানবতার প্রতীক।

এজিদের ইচ্ছে

সে সময় এজিদ (ইয়াজিদ) নিজেকে খলিফা মনে করেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহর প্রতি তার কোনো বিশ্বাস ছিল না। সে ছিল একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। তার মধ্যে ছিল না কোনো দয়া, মায়া, ভালোবাসা। সে চেয়েছিল ইমাম হোসেন যেন তাঁর শিবিরে যোগদান করেন। কিন্তু ইমাম হোসেন তাতে রাজি হননি। এতে হোসেনের ওপর মারাত্মক চটে যায় এজিদ।

কারবালার যুদ্ধ

বর্তমানে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারবালা। যা মক্কা-মদিনার পরে, ইসলাম ধর্মের এক অতি পবিত্র স্থান। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইমাম হোসেন তাঁর পরিবার ও সাথীদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে ছিলেন। তাঁর সাথে ছোটো ছোটো শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধরাও ছিলেন। দশম মহরমের দিন, ঘটে যায় সেই কারবালার যুদ্ধ। এদিক থেকে বলতে গেলে, কারবালা এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানও বটে। কারবালার এই যুদ্ধের কথা বলতে গেলে, হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়।

সেদিন কারবালার প্রান্তরে এজিদের বাহিনী যে চরম নিষ্ঠুরতার নিদর্শন তুলে ধরেছিল, তা সত্যিই ন্যক্কারজনক। এজিদের বাহিনী মহান ইমাম হোসেনের শিরচ্ছেদ করে, তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও অনুচরদের হত্যা করে। মহিলা ও শিশুদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় যুদ্ধবন্দি হিসেবে। চারিদিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। কারবালার প্রান্তর হয়ে ওঠে রক্তাক্ত। মুহররম মাসের দশম দিনটিকে বলা হয়ে থাকে আশুরা। এই মহরম মাস হলো দুঃখের মাস, বেদনার মাস, শোকের মাস। শিয়া ও সুন্নী-এই উভয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই মহরম পালন করে থাকেন শ্রদ্ধার সাথে।

আত্মত্যাগের এক মহান ইতিহাস দ্বারা সমৃদ্ধ হলো মুহররম। ইমাম হুসেন ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের কথা কখনও ভোলা যাবে না। মহরমের সময়, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় বিশ্ব মানবতার প্রতীক ইমাম হুসেনকে।