০৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

গবেষণা: গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ

গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। এই নিবন্ধে গবেষণা, গবেষণার ধারণা ও গবেষণার প্রকারভেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৮:১০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১
  • / ১৪৯০৫৫ বার পড়া হয়েছে

নিয়মতান্ত্রিকভাবে সত্য অনুসন্ধান করা হলো গবেষণা

মানুষ সবসময়ই কৌতূহলী। মানুষ জানতে চায় অজানাকে, আবার যা জানা আছে গভীরে প্রবেশ করতে চায় তার। সব সময়ই সত্যকে জানার কাজে ব্যস্ত থাকে মানুষ। সত্য জানার মাধ্যমে মিথ্যাকে দূরে ঠেলতে মানুষকে যেতে হয় নানা রকম অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে, যে অনুসন্ধানকে গবেষণা বলে চিহ্নিত করা যায়। গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। এই নিবন্ধে গবেষণা, গবেষণার ধারণা ও গবেষণার প্রকারভেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এক নজরে এই নিবন্ধ

গবেষণার সংজ্ঞা

কোনো সমস্যার বিপরিতে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ উপায়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগে ধারবাহিকভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলে।

গবেষণার ধারণা

গবেষণা কথাটির সাথে ‘কোনো কিছু খোঁজা’ বা ‘অনুসন্ধান’ জড়িত রয়েছে। যদি ‘গবেষণা’ শব্দের দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে এটি ‘গো’ এবং ‘এষণা’ শব্দ দুইটির মিলিত রুপ। এখানে ‘গো’ শব্দটির অর্থ পৃথিবী এবং ‘এষণা’ শব্দটির অর্থ হলো অনুসন্ধান করা। এ হিসেবে গবেষণার অর্থ হলো পৃথিবী অনুসন্ধান। তাহলে পৃথিবী অনুসন্ধান মানে কী? পৃথিবী অনুসন্ধান হলো- পৃথিবী, পৃথিবী সংশ্লিষ্ট বিষয়, পৃথিবীতে অস্তিত্ব, পৃথিবীতে বিচরণ করা করছে এমন সকল জীব, পৃথিবীতে একে অপররের ওপর নির্ভরশীলতা, পৃথিবীর নানান সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে কী, কেন, কোথায়, কীভাবে, কতটুকু ইত্যাদি প্রশ্নের অনুসন্ধান করা।

‘গো’ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো কিরণ বা আলো। এ হিসেবে ‘গো’ এবং ‘এষনা’র মিলিত অর্থ। অর্থাৎ ‘গবেষণা’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘আলোর অনুসন্ধান’। আলোর অনুসন্ধান মানে কী? এখানে কেন আলোর অনুসন্ধান করতে হবে? ‘গবেষণা’ প্রত্যয়টির মাধ্যমে কোন আলোর কথা বলা হয়েছে? সত্যিকার অর্থে এখানে যে আলোর কথা বলা হয়েছে তার সাথে সত্য, তথ্য ও যুক্তির আলো। অর্থাৎ উপাত্ত বা তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে কোনো সত্যকে খোঁজার নাম হলো গবেষণা।

আবার বাংলাদেশের অনেক আলোচক ‘গবেষণা’ শব্দকে ‘গোরু খোঁজা’র সাথে তুলনা করছেন। তাঁদের যুক্তি হলো- যেহেতু ‘গবেষণা’ শব্দটি ‘গো’ ও ‘এষনা’র মিলিত রূপ এবং অভিধানে ‘গো’ শব্দের অন্য একটি স্পষ্ট অর্থ হলো গোরু, পাশাপাশি ‘এষণা’ মানে হলো অনুসন্ধান। এ হিসেবে তাঁরা বলছেন যে, গোরু হারিয়ে যাওয়া মানে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হওয়া আর সে হারিয়ে যাওয়া গোরু ফিরে পাবার জন্য খোঁজা হলো ওই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা। এ হিসেবে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান হলো গবেষণা।

বাংলা ‘গবেষণা’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘research’। Research শব্দটি দুটো আলাদা শব্দ ‘re’ এবং ‘search’ এর মিলিত রুপ। আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় পুনরায় অনুসন্ধান করা বা আবার খোঁজা। যেহেতু re শব্দের অর্থ পুনরায় বা আবার এবং search শব্দের অর্থ অনুসন্ধান করা বা খোঁজা। এখানে একই বিষয় পর্যায়ক্রমিকভাবে বা ধারাবাহিকভাবে বারবার অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। এই হিসেবে গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

উল্লেখ্য, শাব্দিকভাবে re-search এবং research এর মধ্যে পার্থ্ক্য রয়েছে। Re-search (রি-সার্চ) অর্থ পুনরায় বা আবার খোঁজা। Research (রিসার্চ) অর্থ পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশেষ কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক উপাত্ত আহরণ করে তা বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়া হলো গবেষণা।

গবেষণার প্রকারভেদ

উদ্দেশ্য, গভীরতা, বিশ্লেষণ, সময়, উপাত্ত ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গবেষণা বিভিন্ন রকমের হতে পারে, নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা দুই ধরর

১. তাত্ত্বিক গবেষণা (Theoritical Reseach)

যে পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারিক প্রয়োগ নির্বিশেষে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা হয় তাকে তাত্ত্বিক গবেষণা বলে। তাত্ত্বিক গবেষণাকে বিশুদ্ধ গবেষণা (Pure Research), মৌলিক গবেষণা (Fundamental Research), প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research) নামে চিহ্নিত করা হয়। তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা।

যে ক্ষেত্রে কখনো গবেষণা হয়নি সে ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা করা অথবা পূর্বে গবেষণা করা হয়েছে কিন্তু সেখানে বিশেষ পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজনের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো মৌলিক গবেষণা বা তাত্ত্বিক গবেষণা।

২. ফলিত গবেষণা (Applied Research)

যে গবেষণার মাধ্যমে তাত্ত্বিক বা মৌলিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তা হলো ফলিত গবেষণা। ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ।

ফলিত গবেষণা দুই ধরর, যথা

i. প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা

প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা সাধারণত যন্ত্র, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সম্পর্কিত হয়ে থাকে। উৎপাদনমুখী কাজে কীভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় বা ত্রুটিমুক্তভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে যে ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা বলে।

ii. বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা

বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় পূর্বানুমানের ভিত্তিতে। যে ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো কোনো বিশেষ জিনিসের (পণ্য বা যে-কোনো কিছু) ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিবর্তনশীলতা নির্ণয় করা তা হলো বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা।

গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণার গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে মোটামুটিভাবে চার ধরনের হয়ে থাকে, যথা

১. অনুসন্ধানী গবেষণা বা অন্বেষণমূলক (Exploratory Research)

পূর্বের কোনো গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলে বা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে, ওই বিষয় বা জ্ঞানের ওপর স্পষ্ট ধারণা অর্জন ও তার সঠিক ব্যবহার জানার জন্য যে পদ্ধতিগত বিজ্ঞানভিত্তিক ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তাকে অনুসন্ধানী গবেষণা বলে। কোনো বিষয়ের ওপর পূর্বে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালিত না হলেও সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানী গবেষণা করা যায়। অনুসন্ধানী গবেষণা অনেকাংশেই তত্ত্ব ও সংগৃহীত নির্ভর হয়ে থাকে।

২. বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research)

সমাজবিজ্ঞান গবেষণা শাখায় বহুল পরিচিতি একটি গবেষণা হলো বর্ণনামূলক গবেষণা। এতে নির্দিষ্ট সময়, ঘটনা, বিশ্বাস, প্রবণতা, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বর্ণনা করা হয়। এ ধরনের গবেষণায় অনেক সময় পর্যাপ্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান বা তদন্ত না করেই ফলাফল প্রদান করা হয়।

বর্ণণামূলক গবেষণা আবার বিভিন্ন ধরর হতে পারে, যেমন

i. জরিপ গবেষণা

কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো সমস্যা বা বিষয়বস্তুর ওপর ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ফলাফল থেকে গাণিতিক বা পরিসংখ্যানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য উদ্ঘাটন করে অনুমিত সিদ্ধান্তের সত্যতা যাচাই হলো জরিপ গবেষণা। এটি পরিমাণগত গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

ii. কেইস স্টাডি

কেইস স্টাডি (Case Study) এর বাংলা অর্থ হলো ঘটনা বিশ্লেষণ বা বিষয়ী অনুধ্যান। কেইস স্টাডির আরেক নাম জীবনেতিহাস। কেইস স্টাডি হলো সামাজিক একেকটি একক যেমন কোনো বিষয়, ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে জানার একটি প্রক্রিয়া।

iii. কর্মসহায়ক গবেষণা

কর্মসহায়ক গবেষণা মানে হলো এমন এক প্রকারের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়।

কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুণ

৩. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা (Explanatory Research)

বর্ণনামূলক গবেষণাকে ভিত্তি করেই ব্যাখ্যামূলক গবেষণার উৎপত্তি। বর্ণনা এই গবেষণার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলেও ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আধুনিক গবেষণায় যত পদ্ধতির বা যত প্রকারের গবেষণা প্রচলিত, সে সবের মধ্যে বর্ণণামূলক গবেষণা অন্যতম। যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে কারণ ও প্রভাব (cause-and-effect) সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে ব্যাখ্যামূলক গবেষণা বলে।

৪. সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Research)

যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে একাধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয় তা হলো সম্পর্কযুক্ত বা কোরিলেশনাল গবেষণা (correlational Research) ।

ব্যবহৃত উপাত্ত অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহার করা উপাত্ত অনুসারে গবেষণা তিন ধরনের। যথা-

১. গুণগত গবেষণা (Qualitative Research)

গুণগত গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ধারার সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। যে গবেষণায় প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরাসরি (first-hand) পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় যার সব ই অগাণিতিক তাকে গুণগত গবেষণা বলে। গুণগত গবেষণা করা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে, তুলনা করতে বা কখনো কখনো সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য। গুণগত গবেষণার ফলাফল গাণিতিক উপায়ে বা পরিসংখ্যানে প্রকাশ করা যায় না।

২. পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research)

যে গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত সবসময় সংখ্যাসূচক হয় এবং গাণিতিক ও পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় তা হলো পরিমাণগত গবেষণা। একে সংখ্যাত্বক গবেষণাও বলে। এই গবেষণার একটি রুপ হলো জরিপ গবেষণা, যা বর্ণনামূলক গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

৩. মিশ্র গবেষণা (Mixed-method Research)

যখন কোনো গবেষণায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় প্রকারের উপাত্ত ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করা হয় তা হলো মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা। মিশ্র গবেষণার উপাত্ত- ও ফলাফল গাণিতিক ও অগাণিতিক।

চলকের ব্যবহারগত দিক থেকে গবেষণার প্রকারভেদ

চলকের ব্যবহার ও ব্যবহারের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত গবেষণা তিন প্রকারের। যথা-

১. পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Experimental Research)

নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ হলো পরীক্ষণ। যে গবেষণায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে সেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে চলকের বৈশিষ্ট্য ও এক চলকের প্রতি অন্য চলকের প্রভাব নির্ণয় করা হয় তাকে পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা পরীক্ষামূলক গবেষণা বলে।

২. অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Non-experimental Research)

অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা হিসেবেও পরিচিত, তবে এই পর্যবেক্ষণ কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সম্পাদন হয় না। যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো চলকের ওপর পর্যবেক্ষণ করে তার স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু গবেষকের সরাসরি হতক্ষেপ থাকে না তাকে অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বলে।

৩. অর্ধ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Quasi-Experimental Research)

বাস্তবেক্ষেত্রে পরীক্ষণমূলক গবেষণা পরিচালনা যখন অসম্ভব বলে মনে করা হয় তখন দ্বৈবচয়নের ওপর ভিত্তি না করে সমগ্রক থেকে বাছাই করে কয়েকটি দল গঠন করে প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যে নকশা প্রণয়ন করে যৌক্তিক মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয় তা হলো অর্থ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা আপাত-পরীক্ষণমূলক গবেষণা।

অনুমানের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণার প্রকারভে

গবেষণায় অনুমান ও এর শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণা তিন প্রকার। যথা-

১. অবরোহী গবেষণা (Deductive Investigation)

পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে বা বিবৃতি থেকে সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে ধারণা গঠন করা হয় তখন তাকে অবরোহী পদ্ধতির গবেষণা বলে। অবরোহী পদ্ধতি হলো সূত্র থেকে উদাহরণ গঠনের প্রক্রিয়া।

যেমন, ‘মানুষ মরণশীল’, এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আশিক, তানজিল, আব্বাসেরও মৃত্যু হবে। এখানে মানুষ হলো সমগ্রক আর আশিক, তানজিল এবং আব্বাস হলো সমগ্রকের অংশ।

২. আরোহী গবেষণা (Inductive Research)

উদাহরণ থেকে সূত্র গঠন প্রক্রিয়া হলো আরোহী পদ্ধতি। সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে পর্যবেক্ষণ করে বা সূত্র হতে প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার সাথে জড়িত গবেষণাকে বলা হয় আরোহী গবেষণা।

যেমন- আশিক, তানজিল এবং আব্বাসের মৃত্যু হলো; এখান থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, ‘মানুষ মরণশীল’।

৩. অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা (Hypothetical-Deductive Investigation)

যে গবেষণায় প্রথমে সত্যকে পর্যবেক্ষণ করে একটি অনুসিদ্ধান্তে আসা হয় এবং এর পরে অবরোহী পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে ফলাফল আসে তা অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা বলে।

অতিবাহিত সময় অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যয়িত মোট সময়ের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা (Longitudinal Study)

অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা হলো একই চলককে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বারবার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। এর আরেক নাম প্যানেল স্টাডি (Panel Study) ।

২. ক্রস-সেকশনাল স্টাডি (Cross-Sectional Study)

নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে কোনো ঘটনা, ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির সামষ্টিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তা হলো ক্রস-সেকশনাল স্টাডি।

গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

তথ্যের উৎস অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের উৎসের আলোকে গবেষণা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-

১. প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research)

সরাসরি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে যে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তা হলো প্রাথমিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণা। তাত্ত্বিক গবেষণার মতোই এই গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রাথমিক উৎস থেকে এই গবেষণার উপাত্ত ও সংগৃহীত হয় এবং তা ফার্স্ট-হ্যান্ড (first-hand) হয়ে থাকে।

২. মাধ্যমিক গবেষণা (Secondary Research)

মাধ্যমিক গবেষণা প্রাথমিক গবেষণার ঠিক বিপরীত। যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে মাধ্যমিক উৎস যেমন- সাময়িকী, গবেষণাপত্র, সংবাদপত্র, নথি, চিত্র, প্রতিবেদন ইত্যাদি থেকে উপাত্ত নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় তা হলো মাধ্যমিক গবেষণা।

সংগ্রহের ধরন অনুসারে গবেষণা

গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত আহরণের ক্ষেত্র ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা চার প্রকার। যথা-

১. ডকুমেন্টারি (Documentary)

ডকুমেন্টারিতে বেশিরভাগ সময় মাধ্যমিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডকুমেন্টারি হলো কোনো বিদ্যমান উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্তকে নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনা করে তা পরবর্তিতে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা অথবা পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বিশেষে পৌঁছানো। গবেষণা-সাহিত্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষণীয়।

২. ফিল্ড রিসার্চ (Fileld Research)

মাঠ গবেষণা বা ফিল্ড রিসার্চ হলো যে গবেষণায় সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিচালিত গবেষণা কর্ম। প্রাথমিক গবেষণার মতোই মাঠ গবেষণা।

২. ল্যাবরেটরি গবেষণা (Laboratory Research)

পরীক্ষাগারে বা গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিভিন্ন চলকের মধ্যে সম্পর্ক ও প্রভাব নির্ণয়ের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো পরীক্ষাগার গবেষণা, বা গবেষণাগার গবেষণা বা ল্যাবরেটরি রিসার্চ। পরীক্ষণ গবেষণাই ল্যাবরেটরি গবেষণার নাম।

৩. মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা (Mixed-Method: Documentary, Field and/or Laboratory)

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি বা ল্যাবরেটরির বাইরে যে গবেষণাকর্ম পরিচালিত হয় তা হলো উৎসের ধরন অনুযায়ী মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা।

গবেষণায় উপাত্ত

গবেষণার প্রয়োজনে গবেষক নির্ধারিত বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোনো উৎস বা উৎস সমূহ থেকে যা কিছু আহরণ করেন তা উপাত্ত বা ডেটা (Data)। ডেটা বিন্যাস্ত বা অবিন্যাস্ত উভয়ভাবেই থাকতে পারে।

অনেকে বলেন যে, গবেষণায় উপাত্ত হলো গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত বা ব্যবহৃত সকল উপাত্ত ও তথ্য।

নোট: একটি গবেষণা শুধু একটি প্রকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দুই বা ততোধিক প্রকারের হতে পারে।

শেয়ার করুন

23 thoughts on “গবেষণা: গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ

  1. প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষকদের জন্য নিবন্ধটি সহায়ক ভূমিকা পালনে সক্ষম।

  2. Ami akhono ekjon student,exam pass korar jonno ei lekhata porchi,
    Sotti khub valo ekta lekha,amar khub upokar a aseche

    Thank u sir ❤️🙏

  3. খুব খুব উপকারী লেখা। অত্যন্ত সহজ ভাষায় সুন্দর বিন্যাস। অনেক দুআ আপার জন্য।

  4. ‌আ‌মি একজন নতুন গ‌বেষক। আপনার প্রবন্ধ‌টি আমার বেশ উপকার হ‌য়ে‌ছে। ভা‌লো লাগ‌লো। ধন‌্যবাদ স‌্যার।

  5. অনেক ভালো লিখেছেন, আমিও ঢাকা টিটি কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছি

  6. দারুণ লিখেছেন। উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ লেখক কে।

  7. অনেক ভালো ছিলো,
    ভালো থাকবেন স্যার।

  8. গতকালকে ভার্সিটির স্যার এই বিষয়ে জানতে বলেছিলেন,অনেক উপকৃত হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  9. খুব সুন্দর তথ্য। ধন্যবাদ।

      1. অবাক হলাম যখন দেখলাম এটা তোর লেখা।
        আমি আমার প্রয়োজনে কিছু নিয়েছি, অনেক ভালো লিখেছিস, এগিয়ে যা। দোয়া রইলো।

  10. খুব ভালো লাগলো গবেষণা সম্পর্কে একটি লং নোটস রেডি করে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শিক্ষক মহাশয়

  11. তাত্ত্বিক ধারণা ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

  12. অনেক ধন্যবাদ গবেষণা প্রসঙ্গে এই লেখাটির জন্য।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। এই নিবন্ধে গবেষণা, গবেষণার ধারণা ও গবেষণার প্রকারভেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

গবেষণা: গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ

প্রকাশ: ০৮:১০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

মানুষ সবসময়ই কৌতূহলী। মানুষ জানতে চায় অজানাকে, আবার যা জানা আছে গভীরে প্রবেশ করতে চায় তার। সব সময়ই সত্যকে জানার কাজে ব্যস্ত থাকে মানুষ। সত্য জানার মাধ্যমে মিথ্যাকে দূরে ঠেলতে মানুষকে যেতে হয় নানা রকম অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে, যে অনুসন্ধানকে গবেষণা বলে চিহ্নিত করা যায়। গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। এই নিবন্ধে গবেষণা, গবেষণার ধারণা ও গবেষণার প্রকারভেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এক নজরে এই নিবন্ধ

গবেষণার সংজ্ঞা

কোনো সমস্যার বিপরিতে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ উপায়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগে ধারবাহিকভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলে।

গবেষণার ধারণা

গবেষণা কথাটির সাথে ‘কোনো কিছু খোঁজা’ বা ‘অনুসন্ধান’ জড়িত রয়েছে। যদি ‘গবেষণা’ শব্দের দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে এটি ‘গো’ এবং ‘এষণা’ শব্দ দুইটির মিলিত রুপ। এখানে ‘গো’ শব্দটির অর্থ পৃথিবী এবং ‘এষণা’ শব্দটির অর্থ হলো অনুসন্ধান করা। এ হিসেবে গবেষণার অর্থ হলো পৃথিবী অনুসন্ধান। তাহলে পৃথিবী অনুসন্ধান মানে কী? পৃথিবী অনুসন্ধান হলো- পৃথিবী, পৃথিবী সংশ্লিষ্ট বিষয়, পৃথিবীতে অস্তিত্ব, পৃথিবীতে বিচরণ করা করছে এমন সকল জীব, পৃথিবীতে একে অপররের ওপর নির্ভরশীলতা, পৃথিবীর নানান সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে কী, কেন, কোথায়, কীভাবে, কতটুকু ইত্যাদি প্রশ্নের অনুসন্ধান করা।

‘গো’ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো কিরণ বা আলো। এ হিসেবে ‘গো’ এবং ‘এষনা’র মিলিত অর্থ। অর্থাৎ ‘গবেষণা’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘আলোর অনুসন্ধান’। আলোর অনুসন্ধান মানে কী? এখানে কেন আলোর অনুসন্ধান করতে হবে? ‘গবেষণা’ প্রত্যয়টির মাধ্যমে কোন আলোর কথা বলা হয়েছে? সত্যিকার অর্থে এখানে যে আলোর কথা বলা হয়েছে তার সাথে সত্য, তথ্য ও যুক্তির আলো। অর্থাৎ উপাত্ত বা তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে কোনো সত্যকে খোঁজার নাম হলো গবেষণা।

আবার বাংলাদেশের অনেক আলোচক ‘গবেষণা’ শব্দকে ‘গোরু খোঁজা’র সাথে তুলনা করছেন। তাঁদের যুক্তি হলো- যেহেতু ‘গবেষণা’ শব্দটি ‘গো’ ও ‘এষনা’র মিলিত রূপ এবং অভিধানে ‘গো’ শব্দের অন্য একটি স্পষ্ট অর্থ হলো গোরু, পাশাপাশি ‘এষণা’ মানে হলো অনুসন্ধান। এ হিসেবে তাঁরা বলছেন যে, গোরু হারিয়ে যাওয়া মানে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হওয়া আর সে হারিয়ে যাওয়া গোরু ফিরে পাবার জন্য খোঁজা হলো ওই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা। এ হিসেবে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান হলো গবেষণা।

বাংলা ‘গবেষণা’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘research’। Research শব্দটি দুটো আলাদা শব্দ ‘re’ এবং ‘search’ এর মিলিত রুপ। আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় পুনরায় অনুসন্ধান করা বা আবার খোঁজা। যেহেতু re শব্দের অর্থ পুনরায় বা আবার এবং search শব্দের অর্থ অনুসন্ধান করা বা খোঁজা। এখানে একই বিষয় পর্যায়ক্রমিকভাবে বা ধারাবাহিকভাবে বারবার অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। এই হিসেবে গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

উল্লেখ্য, শাব্দিকভাবে re-search এবং research এর মধ্যে পার্থ্ক্য রয়েছে। Re-search (রি-সার্চ) অর্থ পুনরায় বা আবার খোঁজা। Research (রিসার্চ) অর্থ পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশেষ কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক উপাত্ত আহরণ করে তা বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়া হলো গবেষণা।

গবেষণার প্রকারভেদ

উদ্দেশ্য, গভীরতা, বিশ্লেষণ, সময়, উপাত্ত ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গবেষণা বিভিন্ন রকমের হতে পারে, নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা দুই ধরর

১. তাত্ত্বিক গবেষণা (Theoritical Reseach)

যে পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারিক প্রয়োগ নির্বিশেষে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা হয় তাকে তাত্ত্বিক গবেষণা বলে। তাত্ত্বিক গবেষণাকে বিশুদ্ধ গবেষণা (Pure Research), মৌলিক গবেষণা (Fundamental Research), প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research) নামে চিহ্নিত করা হয়। তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা।

যে ক্ষেত্রে কখনো গবেষণা হয়নি সে ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা করা অথবা পূর্বে গবেষণা করা হয়েছে কিন্তু সেখানে বিশেষ পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজনের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো মৌলিক গবেষণা বা তাত্ত্বিক গবেষণা।

২. ফলিত গবেষণা (Applied Research)

যে গবেষণার মাধ্যমে তাত্ত্বিক বা মৌলিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তা হলো ফলিত গবেষণা। ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ।

ফলিত গবেষণা দুই ধরর, যথা

i. প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা

প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা সাধারণত যন্ত্র, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সম্পর্কিত হয়ে থাকে। উৎপাদনমুখী কাজে কীভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় বা ত্রুটিমুক্তভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে যে ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা বলে।

ii. বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা

বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় পূর্বানুমানের ভিত্তিতে। যে ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো কোনো বিশেষ জিনিসের (পণ্য বা যে-কোনো কিছু) ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিবর্তনশীলতা নির্ণয় করা তা হলো বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা।

গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণার গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে মোটামুটিভাবে চার ধরনের হয়ে থাকে, যথা

১. অনুসন্ধানী গবেষণা বা অন্বেষণমূলক (Exploratory Research)

পূর্বের কোনো গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলে বা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে, ওই বিষয় বা জ্ঞানের ওপর স্পষ্ট ধারণা অর্জন ও তার সঠিক ব্যবহার জানার জন্য যে পদ্ধতিগত বিজ্ঞানভিত্তিক ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তাকে অনুসন্ধানী গবেষণা বলে। কোনো বিষয়ের ওপর পূর্বে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালিত না হলেও সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানী গবেষণা করা যায়। অনুসন্ধানী গবেষণা অনেকাংশেই তত্ত্ব ও সংগৃহীত নির্ভর হয়ে থাকে।

২. বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research)

সমাজবিজ্ঞান গবেষণা শাখায় বহুল পরিচিতি একটি গবেষণা হলো বর্ণনামূলক গবেষণা। এতে নির্দিষ্ট সময়, ঘটনা, বিশ্বাস, প্রবণতা, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বর্ণনা করা হয়। এ ধরনের গবেষণায় অনেক সময় পর্যাপ্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান বা তদন্ত না করেই ফলাফল প্রদান করা হয়।

বর্ণণামূলক গবেষণা আবার বিভিন্ন ধরর হতে পারে, যেমন

i. জরিপ গবেষণা

কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো সমস্যা বা বিষয়বস্তুর ওপর ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ফলাফল থেকে গাণিতিক বা পরিসংখ্যানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য উদ্ঘাটন করে অনুমিত সিদ্ধান্তের সত্যতা যাচাই হলো জরিপ গবেষণা। এটি পরিমাণগত গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

ii. কেইস স্টাডি

কেইস স্টাডি (Case Study) এর বাংলা অর্থ হলো ঘটনা বিশ্লেষণ বা বিষয়ী অনুধ্যান। কেইস স্টাডির আরেক নাম জীবনেতিহাস। কেইস স্টাডি হলো সামাজিক একেকটি একক যেমন কোনো বিষয়, ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে জানার একটি প্রক্রিয়া।

iii. কর্মসহায়ক গবেষণা

কর্মসহায়ক গবেষণা মানে হলো এমন এক প্রকারের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়।

কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুণ

৩. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা (Explanatory Research)

বর্ণনামূলক গবেষণাকে ভিত্তি করেই ব্যাখ্যামূলক গবেষণার উৎপত্তি। বর্ণনা এই গবেষণার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলেও ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আধুনিক গবেষণায় যত পদ্ধতির বা যত প্রকারের গবেষণা প্রচলিত, সে সবের মধ্যে বর্ণণামূলক গবেষণা অন্যতম। যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে কারণ ও প্রভাব (cause-and-effect) সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে ব্যাখ্যামূলক গবেষণা বলে।

৪. সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Research)

যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে একাধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয় তা হলো সম্পর্কযুক্ত বা কোরিলেশনাল গবেষণা (correlational Research) ।

ব্যবহৃত উপাত্ত অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহার করা উপাত্ত অনুসারে গবেষণা তিন ধরনের। যথা-

১. গুণগত গবেষণা (Qualitative Research)

গুণগত গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ধারার সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। যে গবেষণায় প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরাসরি (first-hand) পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় যার সব ই অগাণিতিক তাকে গুণগত গবেষণা বলে। গুণগত গবেষণা করা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে, তুলনা করতে বা কখনো কখনো সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য। গুণগত গবেষণার ফলাফল গাণিতিক উপায়ে বা পরিসংখ্যানে প্রকাশ করা যায় না।

২. পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research)

যে গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত সবসময় সংখ্যাসূচক হয় এবং গাণিতিক ও পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় তা হলো পরিমাণগত গবেষণা। একে সংখ্যাত্বক গবেষণাও বলে। এই গবেষণার একটি রুপ হলো জরিপ গবেষণা, যা বর্ণনামূলক গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

৩. মিশ্র গবেষণা (Mixed-method Research)

যখন কোনো গবেষণায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় প্রকারের উপাত্ত ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করা হয় তা হলো মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা। মিশ্র গবেষণার উপাত্ত- ও ফলাফল গাণিতিক ও অগাণিতিক।

চলকের ব্যবহারগত দিক থেকে গবেষণার প্রকারভেদ

চলকের ব্যবহার ও ব্যবহারের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত গবেষণা তিন প্রকারের। যথা-

১. পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Experimental Research)

নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ হলো পরীক্ষণ। যে গবেষণায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে সেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে চলকের বৈশিষ্ট্য ও এক চলকের প্রতি অন্য চলকের প্রভাব নির্ণয় করা হয় তাকে পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা পরীক্ষামূলক গবেষণা বলে।

২. অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Non-experimental Research)

অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা হিসেবেও পরিচিত, তবে এই পর্যবেক্ষণ কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সম্পাদন হয় না। যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো চলকের ওপর পর্যবেক্ষণ করে তার স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু গবেষকের সরাসরি হতক্ষেপ থাকে না তাকে অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বলে।

৩. অর্ধ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Quasi-Experimental Research)

বাস্তবেক্ষেত্রে পরীক্ষণমূলক গবেষণা পরিচালনা যখন অসম্ভব বলে মনে করা হয় তখন দ্বৈবচয়নের ওপর ভিত্তি না করে সমগ্রক থেকে বাছাই করে কয়েকটি দল গঠন করে প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যে নকশা প্রণয়ন করে যৌক্তিক মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয় তা হলো অর্থ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা আপাত-পরীক্ষণমূলক গবেষণা।

অনুমানের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণার প্রকারভে

গবেষণায় অনুমান ও এর শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণা তিন প্রকার। যথা-

১. অবরোহী গবেষণা (Deductive Investigation)

পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে বা বিবৃতি থেকে সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে ধারণা গঠন করা হয় তখন তাকে অবরোহী পদ্ধতির গবেষণা বলে। অবরোহী পদ্ধতি হলো সূত্র থেকে উদাহরণ গঠনের প্রক্রিয়া।

যেমন, ‘মানুষ মরণশীল’, এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আশিক, তানজিল, আব্বাসেরও মৃত্যু হবে। এখানে মানুষ হলো সমগ্রক আর আশিক, তানজিল এবং আব্বাস হলো সমগ্রকের অংশ।

২. আরোহী গবেষণা (Inductive Research)

উদাহরণ থেকে সূত্র গঠন প্রক্রিয়া হলো আরোহী পদ্ধতি। সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে পর্যবেক্ষণ করে বা সূত্র হতে প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার সাথে জড়িত গবেষণাকে বলা হয় আরোহী গবেষণা।

যেমন- আশিক, তানজিল এবং আব্বাসের মৃত্যু হলো; এখান থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, ‘মানুষ মরণশীল’।

৩. অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা (Hypothetical-Deductive Investigation)

যে গবেষণায় প্রথমে সত্যকে পর্যবেক্ষণ করে একটি অনুসিদ্ধান্তে আসা হয় এবং এর পরে অবরোহী পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে ফলাফল আসে তা অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা বলে।

অতিবাহিত সময় অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যয়িত মোট সময়ের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা (Longitudinal Study)

অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা হলো একই চলককে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বারবার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। এর আরেক নাম প্যানেল স্টাডি (Panel Study) ।

২. ক্রস-সেকশনাল স্টাডি (Cross-Sectional Study)

নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে কোনো ঘটনা, ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির সামষ্টিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তা হলো ক্রস-সেকশনাল স্টাডি।

গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

তথ্যের উৎস অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের উৎসের আলোকে গবেষণা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-

১. প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research)

সরাসরি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে যে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তা হলো প্রাথমিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণা। তাত্ত্বিক গবেষণার মতোই এই গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রাথমিক উৎস থেকে এই গবেষণার উপাত্ত ও সংগৃহীত হয় এবং তা ফার্স্ট-হ্যান্ড (first-hand) হয়ে থাকে।

২. মাধ্যমিক গবেষণা (Secondary Research)

মাধ্যমিক গবেষণা প্রাথমিক গবেষণার ঠিক বিপরীত। যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে মাধ্যমিক উৎস যেমন- সাময়িকী, গবেষণাপত্র, সংবাদপত্র, নথি, চিত্র, প্রতিবেদন ইত্যাদি থেকে উপাত্ত নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় তা হলো মাধ্যমিক গবেষণা।

সংগ্রহের ধরন অনুসারে গবেষণা

গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত আহরণের ক্ষেত্র ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা চার প্রকার। যথা-

১. ডকুমেন্টারি (Documentary)

ডকুমেন্টারিতে বেশিরভাগ সময় মাধ্যমিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডকুমেন্টারি হলো কোনো বিদ্যমান উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্তকে নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনা করে তা পরবর্তিতে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা অথবা পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বিশেষে পৌঁছানো। গবেষণা-সাহিত্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষণীয়।

২. ফিল্ড রিসার্চ (Fileld Research)

মাঠ গবেষণা বা ফিল্ড রিসার্চ হলো যে গবেষণায় সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিচালিত গবেষণা কর্ম। প্রাথমিক গবেষণার মতোই মাঠ গবেষণা।

২. ল্যাবরেটরি গবেষণা (Laboratory Research)

পরীক্ষাগারে বা গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিভিন্ন চলকের মধ্যে সম্পর্ক ও প্রভাব নির্ণয়ের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো পরীক্ষাগার গবেষণা, বা গবেষণাগার গবেষণা বা ল্যাবরেটরি রিসার্চ। পরীক্ষণ গবেষণাই ল্যাবরেটরি গবেষণার নাম।

৩. মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা (Mixed-Method: Documentary, Field and/or Laboratory)

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি বা ল্যাবরেটরির বাইরে যে গবেষণাকর্ম পরিচালিত হয় তা হলো উৎসের ধরন অনুযায়ী মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা।

গবেষণায় উপাত্ত

গবেষণার প্রয়োজনে গবেষক নির্ধারিত বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোনো উৎস বা উৎস সমূহ থেকে যা কিছু আহরণ করেন তা উপাত্ত বা ডেটা (Data)। ডেটা বিন্যাস্ত বা অবিন্যাস্ত উভয়ভাবেই থাকতে পারে।

অনেকে বলেন যে, গবেষণায় উপাত্ত হলো গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত বা ব্যবহৃত সকল উপাত্ত ও তথ্য।

নোট: একটি গবেষণা শুধু একটি প্রকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দুই বা ততোধিক প্রকারের হতে পারে।