০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আমাদের মাঝে নয়টি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০১:৩১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
  • / ১৫৯২ বার পড়া হয়েছে

অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আমাদের কাছে ৯ টি কারণে স্মরনীয় হয়ে থাকবে। ছবি: মো. তানজিলুর রহমান।

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের আমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে তা নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। যেভাবেই হোক বা যেমন করেই হোক, বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলার সাঁইত্রিশতম আসর আয়োজন ও সম্পন্ন করতে পেরেছে। এবারের অমর একুশে বইমেলা আমাদের মাঝে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এ বইমেলার ইতিহাসে অর্থাৎ বিগত ৩৬ টি আসরে ২০২১ সালের বইমেলার মতো আরেকটা অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও অনুষ্ঠিত হবে কি না সেটিও আন্দাজ করে নেওয়া যায় না। তবে কেন এই অমর একুশে বইমেলা আমাদের মনে বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে তা আলোচনা করে হয়েছে এই আর্টিকেলে। অমর একুশে বইমেলা ২০২১ স্মরণীয় হয়ে থাকার ৯ টি কারণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

১। গ্রন্থমেলা থেকে বইমেলা

কাগজে-কলমে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হলেও একে সম্ভবত ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ কখনোই একে ‘গ্রন্থমেলা’ বলেন না। সবাই একে ‘বইমেলা’ বলতেই অভ্যস্ত। শব্দ হিসেবে ‘বই’র কাছে ‘গ্রন্থ’কে অচলই মনে হয়। ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেদিন তিনি বইমেলা সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে এমনটাই বলেন যে, ‘গ্রন্থমেলা’ বলার চেয়ে ‘বইমেলা’ একটু বেশি আপন আপন লাগে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ‘গ্রন্থমেলা’ বলার চেয়ে ‘বইমেলা’ বলার মধ্যে যে স্বাচ্ছন্দের কথা প্রকাশ করছেন তার সাথে একমত হয়েছিলেন প্রায় সবাই আর এখান থেকে অমর একুশে বইমেলার নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এই মেলার নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যখন থেকে শুরু হলো, কেউ কেউ ছোটো করে এর প্রতিবাদও করেছিলেন। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যৌথভাবে লিখিতভাবেও এর প্রতিবাদ জানায়। তবে শেষ পর্যন্ত নাম পরিবর্তন হয়ে প্রথমবারের মতো বইমেলাকে ‘বইমেলা’ নামেই পাওয়া গেল। ২০২১ সাল থেকে বইমেলার দাপ্তরিক নাম হলো ‘অমর একুশে বইমেলা’ যা বইমেলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

২। বইমেলা হওয়া বা না হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা

২০২১ সালের অমর একুশে বইমেলা আমাদের সবার নিকট স্মরণীয় হয়ে থাকার আরেকটি বিষয় হলো, বইমেলা এ বছর অনুষ্ঠিত হবে কি না বা বাংলা একাডেমি আদৌ এ মেলার আয়োজন করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না।

‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বইমেলার মধ্যেই চলমান করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশেও যা করা হয়েছিল ওই বছরের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে। মানুষের চলাচলেও এসেছিল নিষেধাজ্ঞা। দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়াদি যুক্ত হলেও কর্তৃপক্ষ একবার বলেছে বইমেলা ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, আবার সেই বক্তব্য ফিরিয়ে নিয়ে জানিয়েছিল বইমেলার আয়োজন কড়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাথে দফায় দফায় বৈঠকও হয় বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে। সিদ্ধান্ত পাওয়া গেল বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে এবং সে অনুসারে প্রকাশকদের কাছ থেকে স্টল/প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের আবেদন চাওয়া হলো।

প্রকাশকগণ নিজেদের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুসারে স্টল ও প্যাভিলিয়নের জন্য আবেদন করলেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিলেন। বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্ট দপ্তর আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রত্যেককে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাঁদের স্টল ও প্যাভিলয়ন বরাদ্দ দেওয়ার প্রাথমিক নিশ্চয়ন জানিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু পরক্ষণেই জানা গেল, এবার বইমেলার আয়োজন কড়া বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব না।

আবার সেই পুস্তক প্রকাশক সমিতি ও বাংলা একাডেমির বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বইমেলা যেভাবেই হোক সরকারি বিধিনিষেধ মেনে আয়োজন করা হবে।

৩। ফেব্রুয়ারিতে না হয়ে মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হলো বইমেলা

অমর একুশে বইমেলার ৩৭তম আসর অনুষ্ঠিত হলো। অন্যসব সময়ের মতো ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে এই মেলা আয়োজন সম্ভব না হলেও, মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধন করলেন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের অন্যতম একটি উপাদান ভিডিয়ো কনফারেন্স সুবিধা ব্যবহার করে। আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বাংলা একাডেমিতে না এসে নিজের সরকারি বাসভবনে বসেই এই আনুষ্ঠানিকতা সেড়েছেন মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে। বইমেলা মার্চের ১৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও তা শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে ১২ এপ্রিল।

৪। বইমেলার আয়তন বৃদ্ধি

আয়তনে সবচেয়ে বড়ো বইমেলা অনুষ্ঠিত হলো ২০২১ সালে। সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত রাজু ভাষ্কর্জের বিপরিতে থাকা গেইট থেকে পুর্ব দিকের রমনার ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটের পাশের গেইট পর্যন্ত মেলার পরিধি নির্ধারিত হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের পাদদেশে যে, লেকটি রয়েছে তার তিন দিকে মেলার বিন্যাস করা হয়। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গন তো ছিলই। বইমেলার ইতিহাসে এত বড়ো আয়তন নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। বইমেলা-২০২১ এর ম্যাপ যখন প্রকাশিত হয় তখন অনেকেই খুশি হয়েছিলেন কিন্তু যখনই বইমেলা শুরু হলো তখন বোঝা গেল যে, মহামারীতে দূরত্ব বজায় রাখার অজুহাতে মেলার আয়তন এতটা পরিমাণে বৃদ্ধি করা ভালো সিদ্ধান ছিল না। এবার খুব কম পাঠকই বইমেলার এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরতে পেরেছেন। বইমেলায় যারা বই কিনতে যান তাঁদের মধ্যে একটি বড়ো অংশ হলো একটু বয়স্ক শ্রেণির লোকজন যারা আকারের দিক থেকে এত বড়ো বইমেলা পরিদর্শনে এসে বা বই কিনতে এসে বিরক্ত ও হতাশ হয়েছে। গরমের মধ্যে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় অনেকেই এ বইমেলা ভালো করে উপভোগ করতে পারেননি। যুবক বা যুবতি শ্রেণির পাঠকরাও যে খুব একটা সন্তষ্ট ছিলেন তাও নয়; যারা প্রকৃত পাঠক বা বই কিনতেই বইমেলায় প্রবেশ করেন তাঁদের হতাশা ও বিরক্তি ছিল সব থেকে বেশি। আর এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে বই বিক্রয় নিয়ে সন্তষ্ট হতে পারেননি প্রকাশকগণ।

৫। দর্শনার্থী ও ক্রেতার পরিমাণ হতাশ করেছে

অমর একুশে বইমেলা-২০২১ এ দর্শনার্থী ও ক্রেতার পরিমাণ প্রকাশকদের হতাশ করেছে। পূর্ব থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল যে, এবার আগের বইমেলা থেকে দর্শক ও ক্রেতা কম হবে। কিন্তু এতটা কম হবে সেটা কেউই বুঝতে পারেননি। মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যসব কিছু যথাযথভাবে চললে বইমেলা যে এভাবে মুখ থুবরে পড়বে সেটা অনুমান করতে পারেননি বেশিরভাগ মানুষ। মার্চের ১৪ তারিখ মেলার শুরুর দিন থেকেই দর্শক-ক্রেতার অভাব দেখা গিয়েছে মেলার শেষ দিন পর্যন্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে বা মহামারী করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে লোকজন কমই ঢুকবে বইমেলার মাঠে, এটা স্বাভাবিক কিন্তু এর কারণে বইমেলার সময় পরিবর্তন, মেলার আয়তন বাড়ানো, মেলা চলাকালীন করোনাভাইরাসের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া, একাধিকবার সময়সুচি পরিবর্তন, লকডাউন ঘোষণা ইত্যাদির কারণে মেলার শেষ দশদিনের দর্শক-ক্রেতার সংখ্যা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

৬। বারবার বইমেলার সময়সুচি পরিবর্তন

আমরা সকলেই জানি বইমেলা সাধারণত বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং সরকারি দিনগুলোর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে সকাল ১০ টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত। এবার দেখা গেল সাধারণ দিনগুলোতে বইমেলা উন্মুক্ত থেকেছে বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত আর সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত, তবে এটি ছিল বইমেলার প্রথম কয়েকটি দিনের ঘটনা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বাংলা একাডেমি সময় কমিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত নেয় যা ওই দিন থেকেই কার্যকর করা হয়। ৩১ মার্চ, ২০২১ থেকে বইমেলা চললো ৩.০০ টা থেকে ৬.৩০ টা পর্যন্ত। সময়সুচি এটিও বাকি দিনগুলোর জন্য স্থায়ী করা যায়নি। ৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশ সরকার যে লকডাউন কার্যকর করেছে তার মধ্যেও বইমেলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমি জানায় ৫ মার্চ, ২০২১ থেকে বইমেলা সাধারণ মানুষের জন্য শেষ দিন পর্যন্ত দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা রেখেছে।

৭। লকডাউনে বইমেলা

সরকার মার্চ ৫, ২০২১ তারিখ থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। সকল প্রকারের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। উপরেই বলা হয়েছে লকডাউনের মধ্যে বইমেলা দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্ম খোলা রাখা হয়েছে। লকডাউনে বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। সবকিছু বন্ধ রেখে বইমেলা খোলা রাখার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে হাস্যরসের খোঁড়াক জুগিয়েছিল। অবশ্য সরকারের একজন কর্মকর্তা পরবর্তিতে জানান, এটি লকডাউন নয় বরং নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেককেই কৌতুক করতে দেখা গিয়েছে। ২০২১ সালের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার এটিও অন্যতম একটি বড়ো কারণ।

৮। প্রকাশকদের দুঃখ ও ক্ষোভ

বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২১’ দুঃখ ও ক্ষোভের কারণ হয়ে থাকবে। প্রকাশকদের থেকে জানা গিয়েছে তাঁরা এবার যতগুলো নতুন বই প্রকাশ করেছেন বা পুরনো বই পুনরায় ছাপিয়েছেন, স্টল বা প্যাভিলিয়ন নির্মান ও সাজানো, বিক্রয়প্রতিনিধিদের পেছনে খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাঁরা যা ব্যয় করেছেন উঠে তো আসেইনি বরং আরও ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা যা অন্য বছরগুলোতে সাধারণ হয় না। শোনা গিয়েছে ২০২০ সালের গ্রন্থমেলাতেও কেউ কেউ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তবে এবারের ঘটনা নাকি অনেকের পক্ষে পথে বসে যাবার মতো। এবার দেখা গিয়েছে, এমনও অনেক দিন গিয়েছে যেসব দিনে অনেক প্রকাশকই একটি বইও বিক্রি করতে পারেননি উল্টো স্টল খোলা রাখতে গিয়ে পকেট থেকে কাটা পড়েছে অর্থ। বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকগণের ক্ষতিপূরণ চাওয়াটাও বইমেলার ইতিহাসের একটি সংযোজন। এ নিয়ে আবার কিছু লেখককে অনেকতা এরকমই বলতে শোনা গিয়েছে- প্রকাশকদের একটি বড়ো অংশ আজীবন লেখকদের ঠকিয়েছেন, এবার না হয় তাঁরা নিজেরাই ঠকলেন। আমার মনে হয়েছে উল্লেখিত কারণটিও এবারের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ।

৯। স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদের হতাশা

অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এ হতাশা স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদেরও ছুঁয়ে গিয়েছে যারা এই একমাসের জন্য কাজ নেন বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে ও প্যাভিলিয়নে। হতাশার চেয়ে এখানে ক্ষোভ শব্দটিই বেশি উপযুক্ত হবে, সম্ভবত। বিভিন্ন প্রকাশক তাঁদের স্টল ও প্যাভিলিয়নে বই বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যেসব প্রতিনিধিদের রেখেছেন তাঁদের অনেকেই প্রতিশ্রুত অর্থ পাননি। বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রতিনিধি প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আবার কেউ কেউ অর্ধেকেরও কম পেয়েছে। অভিযোগ আছে, স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদের এবারের বইমেলায় ঠিক মতো নাস্তা-পানীয় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি; নিম্নমানের নাস্তা বা নামমাত্র নাস্তা প্রদানেরও অভিযোগ আছে। ২০২১ সালের বইমেলায় শুক্র ও শনিবার অর্থাৎ সরকারি ছুটির দিনে কর্মিদের জন্য নির্ধারিত দুপুরের খাবারের টাকাও বাঁচানোর চেষ্টা করেছে অনেক প্রকাশক যা খুব ভালোভাবে নেননি স্টল ও প্যাভিলিয়ন কর্মিরা। এটিও কি এবারের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হয়ে থাকবে না এইসব স্টল ও প্যাভিলিয়ন কর্মিদের কাছে? তবে আমি অস্বীকার করছি না যে, কেউ কেউ নিশ্চয়ই তাঁদের ন্যায্য পাওনা পেয়েছেন।

যাইহোক, উপরে বর্ণিত ৯ টি কারণ থেকে নিশ্চয়ই বোঝা যায় অমর একুশে বইমেলা-২০২১ এর চিত্র কেমন ছিল। যারা এই মৌসুমের বইমেলায় গিয়েছেন বা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই দেখেছেন এ চিত্র। আর যারা করোনাভাইরাসের কারণেই হোক বা অন্য কারণেই হোক বই মেলায় যেতে পারেননি তাঁরাও গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে বইমেলার খবর পেয়েছেন। আমি এই বইমেলা একদমই সামনে থেকেই দেখেছি এবং আমার মনে হয়েছে এবারের মেলার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। নিজে পর্যালোচনা করে অনেকগুলো কারণই খুঁজে পেয়েছি যার কারণে বইমেলা-২০২১ মানুষ ভুলতে পারবে না। এখানে যে ৯ টি কারণ উল্লেখ করলাম তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আমি পাইনি। এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আমাদের মাঝে নয়টি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে

প্রকাশ: ০১:৩১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের আমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে তা নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। যেভাবেই হোক বা যেমন করেই হোক, বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলার সাঁইত্রিশতম আসর আয়োজন ও সম্পন্ন করতে পেরেছে। এবারের অমর একুশে বইমেলা আমাদের মাঝে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এ বইমেলার ইতিহাসে অর্থাৎ বিগত ৩৬ টি আসরে ২০২১ সালের বইমেলার মতো আরেকটা অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও অনুষ্ঠিত হবে কি না সেটিও আন্দাজ করে নেওয়া যায় না। তবে কেন এই অমর একুশে বইমেলা আমাদের মনে বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে তা আলোচনা করে হয়েছে এই আর্টিকেলে। অমর একুশে বইমেলা ২০২১ স্মরণীয় হয়ে থাকার ৯ টি কারণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

১। গ্রন্থমেলা থেকে বইমেলা

কাগজে-কলমে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হলেও একে সম্ভবত ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ কখনোই একে ‘গ্রন্থমেলা’ বলেন না। সবাই একে ‘বইমেলা’ বলতেই অভ্যস্ত। শব্দ হিসেবে ‘বই’র কাছে ‘গ্রন্থ’কে অচলই মনে হয়। ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেদিন তিনি বইমেলা সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে এমনটাই বলেন যে, ‘গ্রন্থমেলা’ বলার চেয়ে ‘বইমেলা’ একটু বেশি আপন আপন লাগে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ‘গ্রন্থমেলা’ বলার চেয়ে ‘বইমেলা’ বলার মধ্যে যে স্বাচ্ছন্দের কথা প্রকাশ করছেন তার সাথে একমত হয়েছিলেন প্রায় সবাই আর এখান থেকে অমর একুশে বইমেলার নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এই মেলার নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যখন থেকে শুরু হলো, কেউ কেউ ছোটো করে এর প্রতিবাদও করেছিলেন। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যৌথভাবে লিখিতভাবেও এর প্রতিবাদ জানায়। তবে শেষ পর্যন্ত নাম পরিবর্তন হয়ে প্রথমবারের মতো বইমেলাকে ‘বইমেলা’ নামেই পাওয়া গেল। ২০২১ সাল থেকে বইমেলার দাপ্তরিক নাম হলো ‘অমর একুশে বইমেলা’ যা বইমেলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

২। বইমেলা হওয়া বা না হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা

২০২১ সালের অমর একুশে বইমেলা আমাদের সবার নিকট স্মরণীয় হয়ে থাকার আরেকটি বিষয় হলো, বইমেলা এ বছর অনুষ্ঠিত হবে কি না বা বাংলা একাডেমি আদৌ এ মেলার আয়োজন করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না।

‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বইমেলার মধ্যেই চলমান করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশেও যা করা হয়েছিল ওই বছরের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে। মানুষের চলাচলেও এসেছিল নিষেধাজ্ঞা। দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়াদি যুক্ত হলেও কর্তৃপক্ষ একবার বলেছে বইমেলা ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, আবার সেই বক্তব্য ফিরিয়ে নিয়ে জানিয়েছিল বইমেলার আয়োজন কড়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাথে দফায় দফায় বৈঠকও হয় বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে। সিদ্ধান্ত পাওয়া গেল বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে এবং সে অনুসারে প্রকাশকদের কাছ থেকে স্টল/প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের আবেদন চাওয়া হলো।

প্রকাশকগণ নিজেদের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুসারে স্টল ও প্যাভিলিয়নের জন্য আবেদন করলেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিলেন। বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্ট দপ্তর আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রত্যেককে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাঁদের স্টল ও প্যাভিলয়ন বরাদ্দ দেওয়ার প্রাথমিক নিশ্চয়ন জানিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু পরক্ষণেই জানা গেল, এবার বইমেলার আয়োজন কড়া বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব না।

আবার সেই পুস্তক প্রকাশক সমিতি ও বাংলা একাডেমির বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বইমেলা যেভাবেই হোক সরকারি বিধিনিষেধ মেনে আয়োজন করা হবে।

৩। ফেব্রুয়ারিতে না হয়ে মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হলো বইমেলা

অমর একুশে বইমেলার ৩৭তম আসর অনুষ্ঠিত হলো। অন্যসব সময়ের মতো ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে এই মেলা আয়োজন সম্ভব না হলেও, মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধন করলেন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের অন্যতম একটি উপাদান ভিডিয়ো কনফারেন্স সুবিধা ব্যবহার করে। আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বাংলা একাডেমিতে না এসে নিজের সরকারি বাসভবনে বসেই এই আনুষ্ঠানিকতা সেড়েছেন মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে। বইমেলা মার্চের ১৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও তা শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে ১২ এপ্রিল।

৪। বইমেলার আয়তন বৃদ্ধি

আয়তনে সবচেয়ে বড়ো বইমেলা অনুষ্ঠিত হলো ২০২১ সালে। সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত রাজু ভাষ্কর্জের বিপরিতে থাকা গেইট থেকে পুর্ব দিকের রমনার ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটের পাশের গেইট পর্যন্ত মেলার পরিধি নির্ধারিত হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের পাদদেশে যে, লেকটি রয়েছে তার তিন দিকে মেলার বিন্যাস করা হয়। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গন তো ছিলই। বইমেলার ইতিহাসে এত বড়ো আয়তন নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। বইমেলা-২০২১ এর ম্যাপ যখন প্রকাশিত হয় তখন অনেকেই খুশি হয়েছিলেন কিন্তু যখনই বইমেলা শুরু হলো তখন বোঝা গেল যে, মহামারীতে দূরত্ব বজায় রাখার অজুহাতে মেলার আয়তন এতটা পরিমাণে বৃদ্ধি করা ভালো সিদ্ধান ছিল না। এবার খুব কম পাঠকই বইমেলার এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরতে পেরেছেন। বইমেলায় যারা বই কিনতে যান তাঁদের মধ্যে একটি বড়ো অংশ হলো একটু বয়স্ক শ্রেণির লোকজন যারা আকারের দিক থেকে এত বড়ো বইমেলা পরিদর্শনে এসে বা বই কিনতে এসে বিরক্ত ও হতাশ হয়েছে। গরমের মধ্যে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় অনেকেই এ বইমেলা ভালো করে উপভোগ করতে পারেননি। যুবক বা যুবতি শ্রেণির পাঠকরাও যে খুব একটা সন্তষ্ট ছিলেন তাও নয়; যারা প্রকৃত পাঠক বা বই কিনতেই বইমেলায় প্রবেশ করেন তাঁদের হতাশা ও বিরক্তি ছিল সব থেকে বেশি। আর এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে বই বিক্রয় নিয়ে সন্তষ্ট হতে পারেননি প্রকাশকগণ।

৫। দর্শনার্থী ও ক্রেতার পরিমাণ হতাশ করেছে

অমর একুশে বইমেলা-২০২১ এ দর্শনার্থী ও ক্রেতার পরিমাণ প্রকাশকদের হতাশ করেছে। পূর্ব থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল যে, এবার আগের বইমেলা থেকে দর্শক ও ক্রেতা কম হবে। কিন্তু এতটা কম হবে সেটা কেউই বুঝতে পারেননি। মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যসব কিছু যথাযথভাবে চললে বইমেলা যে এভাবে মুখ থুবরে পড়বে সেটা অনুমান করতে পারেননি বেশিরভাগ মানুষ। মার্চের ১৪ তারিখ মেলার শুরুর দিন থেকেই দর্শক-ক্রেতার অভাব দেখা গিয়েছে মেলার শেষ দিন পর্যন্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে বা মহামারী করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে লোকজন কমই ঢুকবে বইমেলার মাঠে, এটা স্বাভাবিক কিন্তু এর কারণে বইমেলার সময় পরিবর্তন, মেলার আয়তন বাড়ানো, মেলা চলাকালীন করোনাভাইরাসের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া, একাধিকবার সময়সুচি পরিবর্তন, লকডাউন ঘোষণা ইত্যাদির কারণে মেলার শেষ দশদিনের দর্শক-ক্রেতার সংখ্যা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

৬। বারবার বইমেলার সময়সুচি পরিবর্তন

আমরা সকলেই জানি বইমেলা সাধারণত বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং সরকারি দিনগুলোর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে সকাল ১০ টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত। এবার দেখা গেল সাধারণ দিনগুলোতে বইমেলা উন্মুক্ত থেকেছে বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত আর সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত, তবে এটি ছিল বইমেলার প্রথম কয়েকটি দিনের ঘটনা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বাংলা একাডেমি সময় কমিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত নেয় যা ওই দিন থেকেই কার্যকর করা হয়। ৩১ মার্চ, ২০২১ থেকে বইমেলা চললো ৩.০০ টা থেকে ৬.৩০ টা পর্যন্ত। সময়সুচি এটিও বাকি দিনগুলোর জন্য স্থায়ী করা যায়নি। ৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশ সরকার যে লকডাউন কার্যকর করেছে তার মধ্যেও বইমেলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমি জানায় ৫ মার্চ, ২০২১ থেকে বইমেলা সাধারণ মানুষের জন্য শেষ দিন পর্যন্ত দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা রেখেছে।

৭। লকডাউনে বইমেলা

সরকার মার্চ ৫, ২০২১ তারিখ থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। সকল প্রকারের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। উপরেই বলা হয়েছে লকডাউনের মধ্যে বইমেলা দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্ম খোলা রাখা হয়েছে। লকডাউনে বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। সবকিছু বন্ধ রেখে বইমেলা খোলা রাখার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে হাস্যরসের খোঁড়াক জুগিয়েছিল। অবশ্য সরকারের একজন কর্মকর্তা পরবর্তিতে জানান, এটি লকডাউন নয় বরং নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেককেই কৌতুক করতে দেখা গিয়েছে। ২০২১ সালের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার এটিও অন্যতম একটি বড়ো কারণ।

৮। প্রকাশকদের দুঃখ ও ক্ষোভ

বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২১’ দুঃখ ও ক্ষোভের কারণ হয়ে থাকবে। প্রকাশকদের থেকে জানা গিয়েছে তাঁরা এবার যতগুলো নতুন বই প্রকাশ করেছেন বা পুরনো বই পুনরায় ছাপিয়েছেন, স্টল বা প্যাভিলিয়ন নির্মান ও সাজানো, বিক্রয়প্রতিনিধিদের পেছনে খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাঁরা যা ব্যয় করেছেন উঠে তো আসেইনি বরং আরও ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা যা অন্য বছরগুলোতে সাধারণ হয় না। শোনা গিয়েছে ২০২০ সালের গ্রন্থমেলাতেও কেউ কেউ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তবে এবারের ঘটনা নাকি অনেকের পক্ষে পথে বসে যাবার মতো। এবার দেখা গিয়েছে, এমনও অনেক দিন গিয়েছে যেসব দিনে অনেক প্রকাশকই একটি বইও বিক্রি করতে পারেননি উল্টো স্টল খোলা রাখতে গিয়ে পকেট থেকে কাটা পড়েছে অর্থ। বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকগণের ক্ষতিপূরণ চাওয়াটাও বইমেলার ইতিহাসের একটি সংযোজন। এ নিয়ে আবার কিছু লেখককে অনেকতা এরকমই বলতে শোনা গিয়েছে- প্রকাশকদের একটি বড়ো অংশ আজীবন লেখকদের ঠকিয়েছেন, এবার না হয় তাঁরা নিজেরাই ঠকলেন। আমার মনে হয়েছে উল্লেখিত কারণটিও এবারের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ।

৯। স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদের হতাশা

অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এ হতাশা স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদেরও ছুঁয়ে গিয়েছে যারা এই একমাসের জন্য কাজ নেন বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে ও প্যাভিলিয়নে। হতাশার চেয়ে এখানে ক্ষোভ শব্দটিই বেশি উপযুক্ত হবে, সম্ভবত। বিভিন্ন প্রকাশক তাঁদের স্টল ও প্যাভিলিয়নে বই বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যেসব প্রতিনিধিদের রেখেছেন তাঁদের অনেকেই প্রতিশ্রুত অর্থ পাননি। বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রতিনিধি প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আবার কেউ কেউ অর্ধেকেরও কম পেয়েছে। অভিযোগ আছে, স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মিদের এবারের বইমেলায় ঠিক মতো নাস্তা-পানীয় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি; নিম্নমানের নাস্তা বা নামমাত্র নাস্তা প্রদানেরও অভিযোগ আছে। ২০২১ সালের বইমেলায় শুক্র ও শনিবার অর্থাৎ সরকারি ছুটির দিনে কর্মিদের জন্য নির্ধারিত দুপুরের খাবারের টাকাও বাঁচানোর চেষ্টা করেছে অনেক প্রকাশক যা খুব ভালোভাবে নেননি স্টল ও প্যাভিলিয়ন কর্মিরা। এটিও কি এবারের বইমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হয়ে থাকবে না এইসব স্টল ও প্যাভিলিয়ন কর্মিদের কাছে? তবে আমি অস্বীকার করছি না যে, কেউ কেউ নিশ্চয়ই তাঁদের ন্যায্য পাওনা পেয়েছেন।

যাইহোক, উপরে বর্ণিত ৯ টি কারণ থেকে নিশ্চয়ই বোঝা যায় অমর একুশে বইমেলা-২০২১ এর চিত্র কেমন ছিল। যারা এই মৌসুমের বইমেলায় গিয়েছেন বা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই দেখেছেন এ চিত্র। আর যারা করোনাভাইরাসের কারণেই হোক বা অন্য কারণেই হোক বই মেলায় যেতে পারেননি তাঁরাও গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে বইমেলার খবর পেয়েছেন। আমি এই বইমেলা একদমই সামনে থেকেই দেখেছি এবং আমার মনে হয়েছে এবারের মেলার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। নিজে পর্যালোচনা করে অনেকগুলো কারণই খুঁজে পেয়েছি যার কারণে বইমেলা-২০২১ মানুষ ভুলতে পারবে না। এখানে যে ৯ টি কারণ উল্লেখ করলাম তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আমি পাইনি। এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?