১২:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সংকট-সংগ্রাম, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অবিচল এক নারীর প্রতিকৃতি: বঙ্গমাতা বেগম মুজিব

মাজহারুল ইসলাম
  • প্রকাশ: ১০:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৭৭১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মুক্তির দীর্ঘ সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও দেশ গঠনে অমর নাম মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হওয়ার প্রতিটি ধাপে যিনি ছায়া হয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন জনগণের সেবায়, দেশের কল্যাণে। তাঁর খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা যেমন আশীর্বাদের চিরন্তন আলোকবর্তিকা, তেমনি আমাদের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান অনন্য অবিস্মরণীয়। বঙ্গমাতা একজন সাধারণ বাঙালি নারীর মতো স্বামী-সংসার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। আর তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 

“বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে”।

বঙ্গমাতা পরিচিতি

বঙ্গমাতার পূর্ণ নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম মুজিব। তাঁর ডাক নাম ছিল রেণু। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা শেখ জহুরুল হক ও পাঁচ বছর বয়সে মাতা হোসনে আরা বেগমকে হারান তিনি। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে লালিত হতে থাকেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বেগম। পড়াশুনার প্রতি বেগম মুজিবের বেশ আগ্রহ ছিল। তবে তখনকার সময়ে মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল তাই তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন নি। তিনি মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাড়িতে আরবি শেখানোর জন্য শিক্ষক ছিল; সেই সাথে বাংলা, ইংরেজি, গণিত শিক্ষার জন্যও গৃহশিক্ষক ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করেন তখন বঙ্গমাতার বয়স মাত্র ৮ বছর। তিনি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ সন্তানের জননী।

বঙ্গমাতা উপাধি

বঙ্গভবনে এক বক্তৃতায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমান  মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা, জহরলাল নেহেরুর স্ত্রী কমলা, এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সাথে তুলনা করতে  গিয়ে  শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে “বঙ্গমাতা” অভিধায় ভূষিত করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি।

বাম থেকে: শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বাম থেকে: শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

চারিত্রিক দৃঢ়তা

বঙ্গমাতা ছিলেন এমন একজন পুরুষের স্ত্রী যার ধ্যান-জ্ঞান ছিল শুধু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা। তিনি এমন একজন দেশপ্রেমিকের স্ত্রী, যার মূল্যবান জীবনের ১৩ টি বছর কারাবন্দী হয়ে কাটাতে হয়েছে শুধু জনগণের হয়ে ন্যায়ের কথা বলার জন্য। কিন্তু তাতেও বঙ্গমাতা মনোবল হারাননি। স্বামীর অনুপস্থিতি প্রতিনিয়ত তাঁর অন্তরকে জর্জরিত করেছিল ঠিকই তবে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় বঙ্গমাতার  ধ্যান-জ্ঞানেও জায়গা করে নিয়েছিল এদেশের মানুষের মুক্তির বার্তা।

বঙ্গমাতার দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আম্মার যে মনোবল দেখেছি, তা ছিল কল্পনাতীত। স্বামীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে গেছে। দুই ছেলে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। তিন সন্তানসহ তিনি গৃহবন্দি। যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন কিন্তু আম্মা মনোবল হারাননি।”

শেখ হাসিনা

আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি

একজন বাঙালি নারী হিসেবে তিনি সংসারের অভাবকে কখনো কারো দৃষ্টিগোচর হতে দেননি। বরং হাসি মুখে যা ছিল তা দিয়েই চালিয়ে নিয়েছেন। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে তার সাথে আচার দিয়ে ছেলে-মেয়েদের বলেছেন, প্রতিদিন কি ভাত-মাছ খেতে ভালো লাগে? আসো, আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাই, এটা খেতে খুব মজা। এতো দুর্দশার মাঝেও বাঙালি নারী হিসেবে তিনি অতিথিপরায়ণতা ভোলেননি। জানুয়ারি ১০, ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরলেন, শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন ভাসানীসহ দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের যা একজন আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি।

প্রেরণাদায়ী হিসেবে বেগম মুজিব

“কোনকালে একা হয় নি কো জয়ী, পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী ”

কাজী নজরুল ইসলাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য যিনি রচনা করেছেন, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে রক্ষার যে শপথ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন সেই দীর্ঘ পথে যিনি ছায়া হয়ে পাশে থেকেছেন, যিনি পাশে থেকে সর্বদা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ না পেলেও ঘরে বসে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দেশ ও বিশ্ব রাজনীতির খবরাখবর রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও বঙ্গমাতা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে উল্লেখ করেন, “আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে দেখা করতে এসে বললো, “বসেই তো আছ, লিখো তোমার জীবনের কাহিনী। অতঃপর সে কয়েকটা খাতা কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল”।

বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম মুজিব কখনো বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতি থেকে পিছু হটতে বলেন নি কিংবা সংসার-সন্তানের দোহাই দিয়ে পথ আটকান নি বরং তিনি প্রতিটা সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

ত্যাগের মহীমায় চিরন্তন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। স্বামীর দীর্ঘ কারাবন্দী জীবন একজন স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য মানসিক ভাবে কতটুকু যন্ত্রণাদায়ক তা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন তবুও মনোবল হারান নি। পরিবারের দেখভাল করা, কারাগারে স্বামীর খোঁজ-খবর নেওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার প্রত্যয় নিয়ে নিয়মিত পরিশ্রম করে গিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। নিজের ঘুম, বিশ্রাম, অসুস্থতাকে পাশে সরিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গ দিয়ে দেশ সেবায় নিজেকে অকপটে বিলিয়ে দিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি শয্যাশায়ী তখনও তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশের তরে কাজের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছেন। 

১৯৪৬ সাল, দেশ ভাগের পর দাঙ্গা শুরু হয়। সেই সময় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অসুস্থ; নিজে শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকলেও স্বামীকে আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি। বরং উৎসাহ দিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, “আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, “ রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্যে টাকা পয়সা জোগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়। আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রেণুর শরীর খুব খারাপ দেখে এসেছিলাম”। তাই একথা অনস্বীকার্য  যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য যে নারী দিনের পর দিন ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন তিনি  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ড. নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছেন, সাধারণ মানুষ বেগম মুজিবের নাম শুনেছে, ছবি দেখেছে- তাও সম্ভবত ইন্তেকালের পর। স্বাধীনতার পূর্বে খুব কম মানুষই বিশেষত পরিবারের বাইরে তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে।’ এভাবেই পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

 তাই তো কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়- 

“বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান

মাতা, ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান”।

কাজী নজরুল ইসলাম

সংগঠক হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

রাজনৈতিক জীবনে মানুষের কথা বলতে গিয়ে শেখ মুজিবকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তার অবর্তমানে দলের পাশে থাকার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতেন বঙ্গমাতা। নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও জননীর মতো বঙ্গমাতার কাছে আশ্রয় নিতেন। বঙ্গমাতা সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতেন, বাড়িয়ে দিতেন সহযোগিতার হাত। বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দিকালে জেলখানায় সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধুর সকল নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কাছে পৌঁছে দিয়ে প্রতিবার তিনি নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করেন। এছাড়াও বাড়িতে দলের সভা পরিচালনা, দলের খরচ জোগানো, রান্না করে নেতা-কর্মীদের খাওয়ানো সবকিছু সুনিপুণভাবে সম্পাদন করতেন। এমনকি মামলার খরচ ও সংগঠনের খরচ জোগাতে নিজের গহনা, ঘরের ফ্রিজ বিক্রয় করেছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এভাবেই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের ‘প্রিয় রেণু’। 

সর্বংসহা, নির্ভীক ও দৃঢ়প্রত্যয়ী যোদ্ধার বেশে বেগম মুজিব

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবকে। তখন বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কি না, এই খবর প্রায় পাঁচ মাস অজানা ছিল। তৎকালীন সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন বঙ্গমাতাকে নিজ বাসভভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এলে তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হন, ফলে হুমকিস্বরূপ বঙ্গমাতাকে গ্রেপ্তার করার কথা বলা হয়। তাতে তিনি মোটেও ভীত সন্ত্রস্ত হন নি। তাঁর তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মামলাটি আইনিভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে আইনজীবীদের পরামর্শ ও অর্থ সংস্থানের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। এছাড়াও প্রতিটি বন্দি পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর নেন ও সহযোগিতা করেন। মামলা পরিচালনার জন্য প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ঘটনায় সারা বাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ফলে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা চিন্তা করেন কিন্তু বঙ্গমাতা দৃঢ়প্রত্যয়ে এর বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি প্রকাশ করেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্যারোলে নয়, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। অবশেষে তাঁর বিশ্বাস বাস্তব রূপ লাভ করে। দেশে গণভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

মুক্তি সংগ্রামে বেগম মুজিব

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হওয়ার অন্যতম ঘটনা হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে দেখা হয়। “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা” ও বাংলাদেশ গ্রন্থে এমএ ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু কোর্টে প্যারোল চেয়ে আবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি পক্ষের প্রধান কৌসুলি ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের কাছে এমন কথা শুনে বেগম মুজিব মনে মনে ভীষণ রুষ্ট হন। তিনি বঙ্গবন্ধু যাতে প্যারোলে মুক্তি না নেন সেই বার্তা পাঠান বন্দিশালায়। বঙ্গমাতার চিন্তা পরবর্তীকালে সঠিক প্রমাণিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেদিন প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন স্তিমিত হতো। জনগণ ও বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধারা হতাশ হতো। আইয়ুব সরকারের শাসন দীর্ঘ হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্যারোলের বদলে বিনাশর্তে মুক্তি পাওয়ায় জনগণ, সহযোদ্ধা ও পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নিকট বঙ্গবন্ধুর আপোসহীন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর বঙ্গবন্ধুর ওই আপোসহীন ভাবমূর্তিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন গতি এনে দেয়। বেগম মুজিবের সুক্ষ্ম রাজনৈতিক চিন্তা স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস অসীম সাহসিকতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে বেগম মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৩ মার্চ পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। নেপথ্যে থেকে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে এবং ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বন্দি থেকেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়িয়ে দলের নেতাদের নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। এ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বড় গেরিলা”। বেগম মুজিবকে বেশ কয়েকবার গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তি-নির্যাতনের হুমকি দেয়, তবু তিনি ছিলেন অকুতোভয়। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তি।

জনসেবায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকৃত নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিজস্ব পারিবারিক জীবন নাই বললেই চলে। তাদের সাথে সহযোগিতা ও সংসার করা খুবই কঠিন এবং দূরুহ ব্যাপার, কিন্তু ব্যতিক্রমী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি দেশমাতৃকার আপামর জনগণকে নিজের করে নিয়েছিলেন। তিনিও মনে প্রাণে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের অনাচার থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পাক। আর তাই এ সংগ্রামে তিনি কখনো সামনে থেকে কখনোবা আড়াল থেকে সাহায্য করে গেছেন। বাংলার মানুষকে পরিবার ভেবে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে নিজের গয়না বিক্রির টাকা জনগণের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন।

১৯৬৬ সালে আগরতলা মামলায় গ্রেফতারকৃত সকলের পরিবারের খোঁজ রেখেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে (১০ জানুয়ারি, ১৯৭২) বঙ্গবন্ধু বাড়ি ফেরার পর এক রাতে নির্জনে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন “তুমি ফিরে এসেছো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ, আমি উল্লসিত কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধূসর প্রান্তরে, ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম, ক্ষুধার্ত শিশু, বিবস্ত্র নারী আর হতাশাগ্রস্ত পুরুষ এবং সন্তানহারা জনক-জননী তোমার প্রতীক্ষায়”। এভাবেই তিনি দেশের মানুষদের নিয়ে ভাবতেন। শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

উপসংহার

শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যে মহীয়সী নারীর তিনি তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। একজন কিশোরী বধূ নিজের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে দেশের প্রয়োজনকেই বড় করে দেখেছেন। এটা কেবল বেগম মুজিব বলেই সম্ভব হয়েছে। সংসারের সকল দায়িত্ব তিনি একাই সামলে নিয়েছেন আর শেখ মুজিব নিশ্চিন্তে মন দিয়েছে দেশ গড়ার কাজে, জনসেবায়। বেগম মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতার একজন যোগ্য বিশ্বস্ত সহচর।তাই তো তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বাঙালির জননীরূপে।  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ত্যাগ ও আত্মদানের চেতনায় উজ্জীবিত হবে প্রতিটি বাঙালি।  বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় ধ্রুব তারার  মতো জ্বলজ্বল করবে বঙ্গজননী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান। বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গপিতা ও বঙ্গমাতার জীবন-দর্শন, কর্ম চির অম্লান হয়ে থাকবে; যা কোটি বাঙালির হৃদয়কে করবে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত। 

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মাজহারুল ইসলাম

মাজহারুল ইসলাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকার একজন সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি শিক্ষাগবেষণায় খুবই আগ্রহী।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

সংকট-সংগ্রাম, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অবিচল এক নারীর প্রতিকৃতি: বঙ্গমাতা বেগম মুজিব

প্রকাশ: ১০:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

বাংলাদেশের মুক্তির দীর্ঘ সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও দেশ গঠনে অমর নাম মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হওয়ার প্রতিটি ধাপে যিনি ছায়া হয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন জনগণের সেবায়, দেশের কল্যাণে। তাঁর খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা যেমন আশীর্বাদের চিরন্তন আলোকবর্তিকা, তেমনি আমাদের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান অনন্য অবিস্মরণীয়। বঙ্গমাতা একজন সাধারণ বাঙালি নারীর মতো স্বামী-সংসার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। আর তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 

“বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে”।

বঙ্গমাতা পরিচিতি

বঙ্গমাতার পূর্ণ নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম মুজিব। তাঁর ডাক নাম ছিল রেণু। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা শেখ জহুরুল হক ও পাঁচ বছর বয়সে মাতা হোসনে আরা বেগমকে হারান তিনি। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে লালিত হতে থাকেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বেগম। পড়াশুনার প্রতি বেগম মুজিবের বেশ আগ্রহ ছিল। তবে তখনকার সময়ে মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল তাই তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন নি। তিনি মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাড়িতে আরবি শেখানোর জন্য শিক্ষক ছিল; সেই সাথে বাংলা, ইংরেজি, গণিত শিক্ষার জন্যও গৃহশিক্ষক ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করেন তখন বঙ্গমাতার বয়স মাত্র ৮ বছর। তিনি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ সন্তানের জননী।

বঙ্গমাতা উপাধি

বঙ্গভবনে এক বক্তৃতায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমান  মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা, জহরলাল নেহেরুর স্ত্রী কমলা, এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সাথে তুলনা করতে  গিয়ে  শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে “বঙ্গমাতা” অভিধায় ভূষিত করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি।

বাম থেকে: শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বাম থেকে: শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

চারিত্রিক দৃঢ়তা

বঙ্গমাতা ছিলেন এমন একজন পুরুষের স্ত্রী যার ধ্যান-জ্ঞান ছিল শুধু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা। তিনি এমন একজন দেশপ্রেমিকের স্ত্রী, যার মূল্যবান জীবনের ১৩ টি বছর কারাবন্দী হয়ে কাটাতে হয়েছে শুধু জনগণের হয়ে ন্যায়ের কথা বলার জন্য। কিন্তু তাতেও বঙ্গমাতা মনোবল হারাননি। স্বামীর অনুপস্থিতি প্রতিনিয়ত তাঁর অন্তরকে জর্জরিত করেছিল ঠিকই তবে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় বঙ্গমাতার  ধ্যান-জ্ঞানেও জায়গা করে নিয়েছিল এদেশের মানুষের মুক্তির বার্তা।

বঙ্গমাতার দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আম্মার যে মনোবল দেখেছি, তা ছিল কল্পনাতীত। স্বামীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে গেছে। দুই ছেলে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। তিন সন্তানসহ তিনি গৃহবন্দি। যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন কিন্তু আম্মা মনোবল হারাননি।”

শেখ হাসিনা

আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি

একজন বাঙালি নারী হিসেবে তিনি সংসারের অভাবকে কখনো কারো দৃষ্টিগোচর হতে দেননি। বরং হাসি মুখে যা ছিল তা দিয়েই চালিয়ে নিয়েছেন। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে তার সাথে আচার দিয়ে ছেলে-মেয়েদের বলেছেন, প্রতিদিন কি ভাত-মাছ খেতে ভালো লাগে? আসো, আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাই, এটা খেতে খুব মজা। এতো দুর্দশার মাঝেও বাঙালি নারী হিসেবে তিনি অতিথিপরায়ণতা ভোলেননি। জানুয়ারি ১০, ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরলেন, শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন ভাসানীসহ দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের যা একজন আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি।

প্রেরণাদায়ী হিসেবে বেগম মুজিব

“কোনকালে একা হয় নি কো জয়ী, পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী ”

কাজী নজরুল ইসলাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য যিনি রচনা করেছেন, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে রক্ষার যে শপথ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন সেই দীর্ঘ পথে যিনি ছায়া হয়ে পাশে থেকেছেন, যিনি পাশে থেকে সর্বদা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ না পেলেও ঘরে বসে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দেশ ও বিশ্ব রাজনীতির খবরাখবর রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও বঙ্গমাতা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে উল্লেখ করেন, “আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে দেখা করতে এসে বললো, “বসেই তো আছ, লিখো তোমার জীবনের কাহিনী। অতঃপর সে কয়েকটা খাতা কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল”।

বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম মুজিব কখনো বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতি থেকে পিছু হটতে বলেন নি কিংবা সংসার-সন্তানের দোহাই দিয়ে পথ আটকান নি বরং তিনি প্রতিটা সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

ত্যাগের মহীমায় চিরন্তন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। স্বামীর দীর্ঘ কারাবন্দী জীবন একজন স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য মানসিক ভাবে কতটুকু যন্ত্রণাদায়ক তা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন তবুও মনোবল হারান নি। পরিবারের দেখভাল করা, কারাগারে স্বামীর খোঁজ-খবর নেওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার প্রত্যয় নিয়ে নিয়মিত পরিশ্রম করে গিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। নিজের ঘুম, বিশ্রাম, অসুস্থতাকে পাশে সরিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গ দিয়ে দেশ সেবায় নিজেকে অকপটে বিলিয়ে দিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি শয্যাশায়ী তখনও তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশের তরে কাজের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছেন। 

১৯৪৬ সাল, দেশ ভাগের পর দাঙ্গা শুরু হয়। সেই সময় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অসুস্থ; নিজে শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকলেও স্বামীকে আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি। বরং উৎসাহ দিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, “আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, “ রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্যে টাকা পয়সা জোগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়। আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রেণুর শরীর খুব খারাপ দেখে এসেছিলাম”। তাই একথা অনস্বীকার্য  যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য যে নারী দিনের পর দিন ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন তিনি  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ড. নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছেন, সাধারণ মানুষ বেগম মুজিবের নাম শুনেছে, ছবি দেখেছে- তাও সম্ভবত ইন্তেকালের পর। স্বাধীনতার পূর্বে খুব কম মানুষই বিশেষত পরিবারের বাইরে তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে।’ এভাবেই পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

 তাই তো কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়- 

“বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান

মাতা, ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান”।

কাজী নজরুল ইসলাম

সংগঠক হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

রাজনৈতিক জীবনে মানুষের কথা বলতে গিয়ে শেখ মুজিবকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তার অবর্তমানে দলের পাশে থাকার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতেন বঙ্গমাতা। নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও জননীর মতো বঙ্গমাতার কাছে আশ্রয় নিতেন। বঙ্গমাতা সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতেন, বাড়িয়ে দিতেন সহযোগিতার হাত। বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দিকালে জেলখানায় সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধুর সকল নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কাছে পৌঁছে দিয়ে প্রতিবার তিনি নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করেন। এছাড়াও বাড়িতে দলের সভা পরিচালনা, দলের খরচ জোগানো, রান্না করে নেতা-কর্মীদের খাওয়ানো সবকিছু সুনিপুণভাবে সম্পাদন করতেন। এমনকি মামলার খরচ ও সংগঠনের খরচ জোগাতে নিজের গহনা, ঘরের ফ্রিজ বিক্রয় করেছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এভাবেই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের ‘প্রিয় রেণু’। 

সর্বংসহা, নির্ভীক ও দৃঢ়প্রত্যয়ী যোদ্ধার বেশে বেগম মুজিব

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবকে। তখন বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কি না, এই খবর প্রায় পাঁচ মাস অজানা ছিল। তৎকালীন সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন বঙ্গমাতাকে নিজ বাসভভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এলে তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হন, ফলে হুমকিস্বরূপ বঙ্গমাতাকে গ্রেপ্তার করার কথা বলা হয়। তাতে তিনি মোটেও ভীত সন্ত্রস্ত হন নি। তাঁর তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মামলাটি আইনিভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে আইনজীবীদের পরামর্শ ও অর্থ সংস্থানের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। এছাড়াও প্রতিটি বন্দি পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর নেন ও সহযোগিতা করেন। মামলা পরিচালনার জন্য প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ঘটনায় সারা বাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ফলে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা চিন্তা করেন কিন্তু বঙ্গমাতা দৃঢ়প্রত্যয়ে এর বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি প্রকাশ করেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্যারোলে নয়, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। অবশেষে তাঁর বিশ্বাস বাস্তব রূপ লাভ করে। দেশে গণভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

মুক্তি সংগ্রামে বেগম মুজিব

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হওয়ার অন্যতম ঘটনা হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে দেখা হয়। “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা” ও বাংলাদেশ গ্রন্থে এমএ ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু কোর্টে প্যারোল চেয়ে আবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি পক্ষের প্রধান কৌসুলি ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের কাছে এমন কথা শুনে বেগম মুজিব মনে মনে ভীষণ রুষ্ট হন। তিনি বঙ্গবন্ধু যাতে প্যারোলে মুক্তি না নেন সেই বার্তা পাঠান বন্দিশালায়। বঙ্গমাতার চিন্তা পরবর্তীকালে সঠিক প্রমাণিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেদিন প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন স্তিমিত হতো। জনগণ ও বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধারা হতাশ হতো। আইয়ুব সরকারের শাসন দীর্ঘ হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্যারোলের বদলে বিনাশর্তে মুক্তি পাওয়ায় জনগণ, সহযোদ্ধা ও পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নিকট বঙ্গবন্ধুর আপোসহীন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর বঙ্গবন্ধুর ওই আপোসহীন ভাবমূর্তিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন গতি এনে দেয়। বেগম মুজিবের সুক্ষ্ম রাজনৈতিক চিন্তা স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস অসীম সাহসিকতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে বেগম মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৩ মার্চ পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। নেপথ্যে থেকে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে এবং ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বন্দি থেকেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়িয়ে দলের নেতাদের নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। এ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বড় গেরিলা”। বেগম মুজিবকে বেশ কয়েকবার গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তি-নির্যাতনের হুমকি দেয়, তবু তিনি ছিলেন অকুতোভয়। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তি।

জনসেবায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকৃত নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিজস্ব পারিবারিক জীবন নাই বললেই চলে। তাদের সাথে সহযোগিতা ও সংসার করা খুবই কঠিন এবং দূরুহ ব্যাপার, কিন্তু ব্যতিক্রমী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি দেশমাতৃকার আপামর জনগণকে নিজের করে নিয়েছিলেন। তিনিও মনে প্রাণে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের অনাচার থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পাক। আর তাই এ সংগ্রামে তিনি কখনো সামনে থেকে কখনোবা আড়াল থেকে সাহায্য করে গেছেন। বাংলার মানুষকে পরিবার ভেবে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে নিজের গয়না বিক্রির টাকা জনগণের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন।

১৯৬৬ সালে আগরতলা মামলায় গ্রেফতারকৃত সকলের পরিবারের খোঁজ রেখেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে (১০ জানুয়ারি, ১৯৭২) বঙ্গবন্ধু বাড়ি ফেরার পর এক রাতে নির্জনে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন “তুমি ফিরে এসেছো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ, আমি উল্লসিত কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধূসর প্রান্তরে, ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম, ক্ষুধার্ত শিশু, বিবস্ত্র নারী আর হতাশাগ্রস্ত পুরুষ এবং সন্তানহারা জনক-জননী তোমার প্রতীক্ষায়”। এভাবেই তিনি দেশের মানুষদের নিয়ে ভাবতেন। শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

উপসংহার

শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যে মহীয়সী নারীর তিনি তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। একজন কিশোরী বধূ নিজের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে দেশের প্রয়োজনকেই বড় করে দেখেছেন। এটা কেবল বেগম মুজিব বলেই সম্ভব হয়েছে। সংসারের সকল দায়িত্ব তিনি একাই সামলে নিয়েছেন আর শেখ মুজিব নিশ্চিন্তে মন দিয়েছে দেশ গড়ার কাজে, জনসেবায়। বেগম মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতার একজন যোগ্য বিশ্বস্ত সহচর।তাই তো তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বাঙালির জননীরূপে।  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ত্যাগ ও আত্মদানের চেতনায় উজ্জীবিত হবে প্রতিটি বাঙালি।  বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় ধ্রুব তারার  মতো জ্বলজ্বল করবে বঙ্গজননী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান। বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গপিতা ও বঙ্গমাতার জীবন-দর্শন, কর্ম চির অম্লান হয়ে থাকবে; যা কোটি বাঙালির হৃদয়কে করবে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত।