বাংলাদেশের পাঠ্যসূচিতে সমুদ্রবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ, জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্যতা
- প্রকাশ: ০৮:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৩৭২ বার পড়া হয়েছে
৩০ নভেম্বর, ২০২২, বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে সুপারিশ করা হয় যে, শিশু শ্রেণিসহ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, একনেক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিএম পদ্ধতিতে দুটি স্পিডবোট এবং ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গবেষণা জাহাজ নির্মাণের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্পিডবোট ও গবেষণা জাহাজের বিস্তারিত স্পেসিফেকশনসহ প্রস্তাব পাওয়ার পর অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজসম্পদ আহরণ ও প্রয়োজনীয় গবেষণা জাহাজ ক্রয়ের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে ফ্রেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এফডিএ) এবং বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে ইকবালুর রহিম, শফিকুল আজম খাঁন, মোজাফফর হোসেন, শিরীন আহমেদ ও সেলিমা আহমাদ উপস্থিত ছিলেন।
কানাডাসহ সাগর-মহাসাগরকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন দেশের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রগুলিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তারা সামুদ্রিক এবং স্থলজ প্রজাতির বিস্তৃত বৈচিত্র্যকে সমর্থন করে কারণ তাদের জীবন, জীবিকা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সাথেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখেনা জনগুষ্ঠির খাদ্য, চাকরি, পরিষ্কার বাতাস এবং আরও অনেক কিছুই সমুদ্র এর উপর নির্ভর।
বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে তীরে অবস্থিত ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আমাদের অভিভাবকত্ব এবং সামুদ্রিক ঐতিহ্যের বিশাল কোন ইতিহাস নেই। বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর আগামী প্রজন্মের জন্য উৎপাদনশীল হতে চলেছে তা এখন শতভাগ নিশ্চিত।
বাংলাদেশে অপরাপর বা সমপর্যায়ের দেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে সমুদ্রভিত্তিক একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনীতিতে বিপ্লবিক পরিবর্তন আনার ও টেকসই উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহারের পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী কৌশল গ্রহণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ দেশের জন্য অনেকটা অবিশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেমন: উপকূলীয় সুরক্ষা ও নজরদারির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ , মৎস্য চাষ, মৎস্য আহরণ, জাহাজ চলাচল, জ্বালানি, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের বিশাল সাগরসীমায় কী আছে এবং কীভাবে সে সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্বি ও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব এ বিষয় নিয়ে অনেক পদক্ষেপ নেয়ার আছে। দেশের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাগর সুরক্ষা পরিকল্পনা, আমাদের উপকূল সুরক্ষা, উন্নত সামুদ্রিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থা এবং ঘটনা ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদক্ষেপ ও স্থানীয় অদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য উন্নত অংশীদারিত্বকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
যেখানে দেশের সমূদ্র অর্থনীতি আমাদের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য হয়ে আসছে। সেখানে আমাদের আগামী বছরের বাজেট এ এর একটি সুনিদিষ্ট প্রতিফলন দেখতে চায় বোদ্দামহল। নতুন বিনিয়োগ, বিদ্যমান উদ্যোগকে অব্যাহত রাখা বা সম্প্রসারিত করা সহ অংশীদারিত্ব বৃদ্বি করার উপর ও জোর দিতে হবে. সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করে অর্থনীতিতে মোট আয়ের অর্ধেকেরও বেশি যেখানে জোগান দেয়া সম্ভব। সম্ভব, দেশের যেকোনো খাদ্য সংঙ্কটের আশংকাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং জীবনমানকে উন্নত করা সেখানে বাংলাদেশের পাঠ্যসূচিতে সমুদ্রবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ একটি যুগান্তকারী ঘটনা ও মাইলফলক ।
বাংলাদেশে সাগরবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করতে খুব প্রাসঙ্গিক ভাবেই এ বিষয়ে অগ্রগামী দেশগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপকে আলোচনা করতে হয়। উন্নত দেশে সামুদ্রিক বিজ্ঞান ক্যারিয়ারের মধ্যে একজন গবেষক, একজন ফিল্ড বায়োলজিস্ট, একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, একজন শিক্ষক/লেকচারার, একজন প্রাণী যত্ন বিশেষজ্ঞ, একজন তিমি গাইড, একজন প্রকৃতিবিদ এবং আরও অনেক কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সাগর-মহাসাগরের বিজ্ঞানী (জৈবিক সমুদ্রবিজ্ঞান, সামুদ্রিক জীব বিজ্ঞানী) সমুদ্রের জীবন্ত প্রাণী এবং তারা যে পরিবেশে বাস করে তাদের মধ্যে সম্পর্ক অধ্যয়ন করে এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে।
কানাডার কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো ও ডিগ্রী প্রদান করা হয় এর মধ্যে: নিউফাউন্ডল্যান্ডের মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি; গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়; অন্টারিও টেক ইউনিভার্সিটি; ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নোভা স্কোটিয়া কমিউনিটি কলেজ, সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ্য করা যেতে পারে । সমুদ্র অধ্যয়নের সাথে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো হলো: রসায়ন,পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিদ্যা, অংক; ক্রস-শৃঙ্খলা ও অন্যান্য।
সাগরের স্বাস্থ্য আমাদের দেশের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যত বাসযোগ্যতার একটি চাবিকাঠি। সমুদ্রে একটি পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। সমুদ্র শিক্ষা একটি সমালোচনামূলক চিন্তার বিকাশ ঘটাবে । সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এবং লোকেদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করার সময় একজন ব্যক্তিকে কীভাবে যুক্তি ব্যবহার করতে হয় (যেমন, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা, সময় ব্যবস্থাপনা বাড়ানো) শেখানোর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা, ব্যক্তিকে চাকরির মৌলিক যোগ্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে শিক্ষা এবং আরও ভালো চাকরি নিশ্চিত করার সম্ভাবনা ও তৈরি করে শিক্ষা। বাংলাদেশে সাগরবিজ্ঞান শিক্ষার দ্বার এখনই উন্নমোচিত হোক।