০৮:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষাই প্রকৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষা

মাছুম বিল্লাহ
  • প্রকাশ: ১০:২০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ১৫২১ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

প্রকৃত শিক্ষালাভের জন্য আপনার সন্তানকে সবসময়ই নোট বই, গাইড বই, কোচিং, বইয়ের থলে আর ব্লাকবোর্ডের সাথে লেগে থাকতে হবে না। সত্যিকারের শিক্ষা শুধুমাত্র ঐতিহাসিক কিছু ডাটা মুখস্থ করা কিংবা কয়েকটি গণিতের সমাধান করা নয়, বা গ্রামারের কিছু নিয়ম জানা নয়। শিক্ষা হচ্ছে একধরনের জীবনব্যাপী ইন্টারঅ্যাকটিভ পদ্ধতি যেখানে থাকবে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, ক্রিটিক্যালি কোনো কিছু চিন্তা করা, কোনো প্রচলিত বিষয়ের মধ্যে নতুন অর্থ খুঁজে বের করা এবং প্রতিটি অবস্থায় অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা।

ধরুন, টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি খেলা দেখছেন। বিষয়টি কেমন? অবশ্যই মজার। কিন্তু ধরুন আপনি স্টেডিয়ামে বা মাঠে সমর্থক কর্তৃক বেষ্টিত হয়ে খেলা দেখছেন। দুটোতে কি একই ধরনের মজা পাবেন? এই বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা কোনোভাবেই টেলিভিশনে বা প্রতিবিম্বের বা ইমেজের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব নয়। শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

শ্রেণিকক্ষে যে শিক্ষাদান করা হয় তা অনেক সময়ই বাস্তব অবস্থার সাথে মিল থাকে না।

আমাদের শিক্ষার্থীরা ইটালিয়ান রেনেসাঁ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে বই পড়ে, সেই জানা আর যদি ইটালিয়ান ভাস্কর্য দেখে, পেইন্টিং দেখে কিংবা একুরিয়াম স্বচক্ষে দেখে তাহলে কি একই ধারণা হবে রেনেসাঁ সম্পর্কে?

আমাদের অনেক বিদ্যালয়েই বিজ্ঞান পড়ানোর যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিন দিন। শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে যখন ল্যাবটেরিতে কাজ শুরু করে তখন খুব উত্তেজিত থাকে কিন্তু কিছুদিন যাওযার পর অনেক এক্সপেরিমেন্টের বাস্তবের সাথে মিল থাকে না বিধায় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাইকেল রেইস বলেছেন, “ক্লাসরুমের বাইরের কার্যাবলী শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি বাড়ায়।”

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর নিমিত্তে আমরা ফিল্ড ভিজিটের আয়োজন করে থাকি। মার্টিন ব্রন্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর বলেছেন ফিল্ড ট্রিপের কথা। ফিল্ড ট্রিপের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা শিক্ষার্থীরা অনেকদিন মনে রাখতে পারে। তারা সেখান থেকে সরাসরি যে উদাহরণগুলো দিতে পারে তা বিদ্যালয় কিংবা শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক শিক্ষায় সম্ভব নয়। ফিল্ড ট্রিপ শুধু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, এটি ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, ইংরেজিসহ কারিকুলামের অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আমার মনে আছে, আমরা যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। শেক্সপিয়ারের যে নাটকটি যেদিন পড়ানো হবে শিক্ষকগণ তার আগে বলতেন আগামীকাল বা তার পরদিন ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘ম্যাকবেথ’ নাটক মঞ্চস্থ হবে, তোমরা সবাই নাটকটি দেখবে। নাটক দেখে আসতাম এবং পড়ার সময় বার বার কোন চরিত্র কিভাবে আচরণ করত, কি ভূমিকা পালন করত নাটক পড়ার সময়ে চোখের সামনে ভেসে আসত।

একদল শিক্ষার্থীদের যখন বায়োলজির জন্য ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারা ঐদিনের জন্য অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্লাসও করতে পারছে না। কাজেই অন্যান্য বিষয়গুলোও ফিল্ডট্রিপের আওতায় আনা দরকার।

শিখন শেখানো প্রকৃতিগতভাবেই স্বতস্ফূর্ত হতে পারে এবং শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক হতে পারে যখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের চার দেয়ালে বন্দিদশা থেকে বাইরের মুক্ত বাতাসে নিয়ে আসা হয়। শিক্ষার্থীরা যখন কোনো বিষয় বাস্তব জীবনে অনুশীলন করার সুযোগ পায় তখন শ্রেণিকক্ষের বাইরে এবং ভেতরে একীভূত এক ধরনের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রাসঙ্গিকতা রক্ষা করতে পারে।

শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষা দেয়ার বা গ্রহণ করার কয়েক ধরনের সুবিধা আছে। এখানে শিক্ষা বাস্তব পরিবেশে ঘটে বলে শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ের ওপর স্বচ্ছ ধারণা জন্মে, শিক্ষা গ্রহণ হয় বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক। যে বিষয়ের ধারণা শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তৈরি করতে পারে না উন্মুক্ত ও বিস্তৃত প্রকৃতির কোলে তা তারা সহজেই বুঝতে পারে।

ধরুন, আপনি মূল, কান্ড, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি পড়াচ্ছেন হয় ছবি এঁকে বা উদাহরণ দিয়ে। তা না করে আপনি যদি বিদ্যালয়ের পাশে কোনো বাগানে নিয়ে সরাসরি গাছ দেখাতে পারেন তা হলে সে সহজে ব্যাপারগুলো বুঝতে পারবে এবং ঐ শিক্ষার কথা তারা সহজে ভুলবে না।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি তাদের পাখার ক্লিপ কিংবা বাঁধন খুলে দিলেন। তাদের মন উন্মুক্ত হলো এবং উন্মুক্ত মন এমন কিছু সৃষ্টি করবে যা সম্পর্কে আপনি প্রস্তুত ছিলেন না, আপনি আবিষ্কার করতে পারেননি যে, ঐ শিক্ষার্থীরা কি কি করতে পারে। এতদিন তারা পরিবেশ পায়নি বলে করতে পারেনি। আপনি যে বিষয়েই পড়ান না কেন সব বিষয়ের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটবে।

আমাদের দেশের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোর কিছু কিছু কাজ খুব প্রশংসনীয়। প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের কিছু প্রজেক্ট ওয়ার্ক করতে হয়। যেমন- অটিস্টিক শিশুদের জন্য সহায়তা প্রদান করার নিমিত্তে তারা ফান্ড সংগ্রহ করে এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অটিস্টিকদের সহায়তা করে। বিষয়টির ওপর সেমিনারের আয়োজন করে, তাদের জন্য আর্ট এবং ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, অটিস্টিকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করে। এগুলোর আয়োজন করা একদিকে যেমন সামাজিক দায়িত্বাবলী সম্পর্কে তাদের সচেতন করে অন্যদিকে তাদের মধ্যে নেতৃত্বেও বিকাশ ঘটায়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মেশার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

মাঝে মাঝে তারা রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলার জন্য পথচারীদের সচেতন করে। রাস্তার ভিক্ষুকদের স্থায়ীভাবে কিছু করার জন্য সহায়তা প্রদান করে ও মটিভেশন দিয়ে থাকে।

আমাদের বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ ধরনের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। তারা ক্লাস আর কোচিং নিয়েই ব্যস্ত, তাদের জগৎ যেন এখানেই সীমাবদ্ধ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মাছুম বিল্লাহ

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং প্রেসিডেন্ট: ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)। সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর- ভাব বাংলাদেশ এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞ -ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি। ইমেইল: [email protected]

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষাই প্রকৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষা

প্রকাশ: ১০:২০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১

প্রকৃত শিক্ষালাভের জন্য আপনার সন্তানকে সবসময়ই নোট বই, গাইড বই, কোচিং, বইয়ের থলে আর ব্লাকবোর্ডের সাথে লেগে থাকতে হবে না। সত্যিকারের শিক্ষা শুধুমাত্র ঐতিহাসিক কিছু ডাটা মুখস্থ করা কিংবা কয়েকটি গণিতের সমাধান করা নয়, বা গ্রামারের কিছু নিয়ম জানা নয়। শিক্ষা হচ্ছে একধরনের জীবনব্যাপী ইন্টারঅ্যাকটিভ পদ্ধতি যেখানে থাকবে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, ক্রিটিক্যালি কোনো কিছু চিন্তা করা, কোনো প্রচলিত বিষয়ের মধ্যে নতুন অর্থ খুঁজে বের করা এবং প্রতিটি অবস্থায় অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা।

ধরুন, টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি খেলা দেখছেন। বিষয়টি কেমন? অবশ্যই মজার। কিন্তু ধরুন আপনি স্টেডিয়ামে বা মাঠে সমর্থক কর্তৃক বেষ্টিত হয়ে খেলা দেখছেন। দুটোতে কি একই ধরনের মজা পাবেন? এই বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা কোনোভাবেই টেলিভিশনে বা প্রতিবিম্বের বা ইমেজের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব নয়। শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

শ্রেণিকক্ষে যে শিক্ষাদান করা হয় তা অনেক সময়ই বাস্তব অবস্থার সাথে মিল থাকে না।

আমাদের শিক্ষার্থীরা ইটালিয়ান রেনেসাঁ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে বই পড়ে, সেই জানা আর যদি ইটালিয়ান ভাস্কর্য দেখে, পেইন্টিং দেখে কিংবা একুরিয়াম স্বচক্ষে দেখে তাহলে কি একই ধারণা হবে রেনেসাঁ সম্পর্কে?

আমাদের অনেক বিদ্যালয়েই বিজ্ঞান পড়ানোর যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিন দিন। শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে যখন ল্যাবটেরিতে কাজ শুরু করে তখন খুব উত্তেজিত থাকে কিন্তু কিছুদিন যাওযার পর অনেক এক্সপেরিমেন্টের বাস্তবের সাথে মিল থাকে না বিধায় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাইকেল রেইস বলেছেন, “ক্লাসরুমের বাইরের কার্যাবলী শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি বাড়ায়।”

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর নিমিত্তে আমরা ফিল্ড ভিজিটের আয়োজন করে থাকি। মার্টিন ব্রন্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর বলেছেন ফিল্ড ট্রিপের কথা। ফিল্ড ট্রিপের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা শিক্ষার্থীরা অনেকদিন মনে রাখতে পারে। তারা সেখান থেকে সরাসরি যে উদাহরণগুলো দিতে পারে তা বিদ্যালয় কিংবা শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক শিক্ষায় সম্ভব নয়। ফিল্ড ট্রিপ শুধু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, এটি ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, ইংরেজিসহ কারিকুলামের অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আমার মনে আছে, আমরা যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। শেক্সপিয়ারের যে নাটকটি যেদিন পড়ানো হবে শিক্ষকগণ তার আগে বলতেন আগামীকাল বা তার পরদিন ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘ম্যাকবেথ’ নাটক মঞ্চস্থ হবে, তোমরা সবাই নাটকটি দেখবে। নাটক দেখে আসতাম এবং পড়ার সময় বার বার কোন চরিত্র কিভাবে আচরণ করত, কি ভূমিকা পালন করত নাটক পড়ার সময়ে চোখের সামনে ভেসে আসত।

একদল শিক্ষার্থীদের যখন বায়োলজির জন্য ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারা ঐদিনের জন্য অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্লাসও করতে পারছে না। কাজেই অন্যান্য বিষয়গুলোও ফিল্ডট্রিপের আওতায় আনা দরকার।

শিখন শেখানো প্রকৃতিগতভাবেই স্বতস্ফূর্ত হতে পারে এবং শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক হতে পারে যখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের চার দেয়ালে বন্দিদশা থেকে বাইরের মুক্ত বাতাসে নিয়ে আসা হয়। শিক্ষার্থীরা যখন কোনো বিষয় বাস্তব জীবনে অনুশীলন করার সুযোগ পায় তখন শ্রেণিকক্ষের বাইরে এবং ভেতরে একীভূত এক ধরনের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রাসঙ্গিকতা রক্ষা করতে পারে।

শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষা দেয়ার বা গ্রহণ করার কয়েক ধরনের সুবিধা আছে। এখানে শিক্ষা বাস্তব পরিবেশে ঘটে বলে শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ের ওপর স্বচ্ছ ধারণা জন্মে, শিক্ষা গ্রহণ হয় বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক। যে বিষয়ের ধারণা শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তৈরি করতে পারে না উন্মুক্ত ও বিস্তৃত প্রকৃতির কোলে তা তারা সহজেই বুঝতে পারে।

ধরুন, আপনি মূল, কান্ড, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি পড়াচ্ছেন হয় ছবি এঁকে বা উদাহরণ দিয়ে। তা না করে আপনি যদি বিদ্যালয়ের পাশে কোনো বাগানে নিয়ে সরাসরি গাছ দেখাতে পারেন তা হলে সে সহজে ব্যাপারগুলো বুঝতে পারবে এবং ঐ শিক্ষার কথা তারা সহজে ভুলবে না।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি তাদের পাখার ক্লিপ কিংবা বাঁধন খুলে দিলেন। তাদের মন উন্মুক্ত হলো এবং উন্মুক্ত মন এমন কিছু সৃষ্টি করবে যা সম্পর্কে আপনি প্রস্তুত ছিলেন না, আপনি আবিষ্কার করতে পারেননি যে, ঐ শিক্ষার্থীরা কি কি করতে পারে। এতদিন তারা পরিবেশ পায়নি বলে করতে পারেনি। আপনি যে বিষয়েই পড়ান না কেন সব বিষয়ের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটবে।

আমাদের দেশের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোর কিছু কিছু কাজ খুব প্রশংসনীয়। প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের কিছু প্রজেক্ট ওয়ার্ক করতে হয়। যেমন- অটিস্টিক শিশুদের জন্য সহায়তা প্রদান করার নিমিত্তে তারা ফান্ড সংগ্রহ করে এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অটিস্টিকদের সহায়তা করে। বিষয়টির ওপর সেমিনারের আয়োজন করে, তাদের জন্য আর্ট এবং ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, অটিস্টিকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করে। এগুলোর আয়োজন করা একদিকে যেমন সামাজিক দায়িত্বাবলী সম্পর্কে তাদের সচেতন করে অন্যদিকে তাদের মধ্যে নেতৃত্বেও বিকাশ ঘটায়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মেশার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

মাঝে মাঝে তারা রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলার জন্য পথচারীদের সচেতন করে। রাস্তার ভিক্ষুকদের স্থায়ীভাবে কিছু করার জন্য সহায়তা প্রদান করে ও মটিভেশন দিয়ে থাকে।

আমাদের বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ ধরনের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। তারা ক্লাস আর কোচিং নিয়েই ব্যস্ত, তাদের জগৎ যেন এখানেই সীমাবদ্ধ।