পরিকল্পিত শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- প্রকাশ: ০৮:১২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
- / ৫৯২৩ বার পড়া হয়েছে
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর পরিকল্পিত শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি মানবসম্পদে পরিণত হয়। পরিকল্পিত শিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। পরিকল্পিত শিক্ষা একটি দেশের অর্থনীতিতে মানবসম্পদের জোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়া শিক্ষা একটি দেশের দারিদ্র্যবিমোচনের প্রধান হাতিয়ার। পরিকল্পিত শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ যেমন— ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান অর্থনৈতিক উন্নয়নে সফল হয়েছে। এখন নারীরাও পরিকল্পিত শিক্ষার মাধ্যমে উত্পাদন ও উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘Education should be developed as to increase productivity.’
পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষা মূলত দুই ধরনের। এই দুই ধরণের শিক্ষা হলো, ১. সাধারণ শিক্ষা ও ২. কারিগরি শিক্ষা।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলো কারিগরি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে উত্পাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ব্যবহার ও কৌশল প্রয়োগ করে কৃষি ও শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা মূলত একটি উৎপাদনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, যা দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। কারিগরি শিক্ষা শ্রমিকের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, এতে করে শ্রমিক খুব সহজেই শ্রমবাজারে প্রবেশ করে শ্রমশক্তি বৃদ্ধি করে। কারিগরি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় মূলধন তৈরি করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব। যেমন— কারিগরি দক্ষতার ফলেই চীন তার বিশাল জনগোষ্ঠীকে ‘human capital’ অর্থাৎ মানবসম্পদে রূপান্তর করে শিল্পায়নে ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বলতে আমরা স্বনির্ভর অর্থনীতিকে বুঝি। যার অর্থ, কৃষি, শিল্প ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তি-সম্পর্কিত উন্নয়ন, যার জন্য কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে হলেও কারিগরি দক্ষতা ও জ্ঞানের অভাবে এদের শিল্প খাতে নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষা মূলত সনদকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। নির্দিষ্ট সময় পরপর বা নির্দিষ্ট স্তর সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থী সনদ অর্জন করে থাকে এবং নির্দিষ্ট শ্রেণির বা স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের পর সনদ প্রদানের জন্যই এই শিক্ষা পরিচালিত হয়। তবুও সৃষ্টি হচ্ছে না যথাযথ কর্মসংস্থান, যার ফলে Demographic Dividend নামক সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হতে চলেছে। সাধারণ শিক্ষায় কেবল পুঁথিগত তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়, যাতে সৃজনশীলতা ও উত্পাদনশীলতার অভাব রয়েছে। আবার উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক হলেও অনেক সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে না। কারণ তা কেবল উন্নতমানের চাকরি পাওয়ার মাপকাঠি, যা কেবল অনুত্পাদনশীল খাতে আয় করতে সুবিধা দেয়।
সর্বোপরি শিক্ষার মাধ্যমেই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। একটি দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ধনী হলেও এর মানে এই নয় যে, দেশটি অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধশালী। যেমন অ্যাঙ্গোলা তেলসমৃদ্ধ দেশ, কিন্তু দরিদ্র। কারণ দেশটিতে শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ের মতো দেশগুলো দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি লাভ করেছে। জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি রাষ্ট্র শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষায় বিনিয়োগে Rate of Return সর্বদাই অধিক। শিক্ষায় প্রয়োজনীয় ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ একটি দেশের জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করে অর্জন করতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন।