Home মতামত বিভক্ত বিশ্বে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধে ঐতিহাসিক’ চুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার বিজয়

বিভক্ত বিশ্বে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধে ঐতিহাসিক’ চুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার বিজয়

বিভক্ত বিশ্বে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধে ঐতিহাসিক’ চুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার বিজয়
বাংলাদেশ একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, জলোচ্ছাস, বন্যা— প্রায়  সব দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও এখানে অনেক বেশি। | ছবি: bdenvironment.com

বিভাজিত বিশ্বে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রোধে অত্যবশ্যকীয় পদক্ষেপ হিসেবে এবার প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির  খসড়ায় সম্মতিদান জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সম্মেলনের সভাপতি রেনা লি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে দীর্ঘ করতালির মধ্যে উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন ‘আমাদের প্রচেষ্টা অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছেছে’।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন  প্রাকৃতিক নয় বরং তা মানব সৃষ্ট।  মানুষ তার সার্বিক আচরণের মাধ্যমে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন জলবায়ুর সে পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা। সাধারণত সময় বা কারণ-নিরপেক্ষ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ মূলত বর্তমান সময়ের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করা হয় যা মানুষের কার্যক্রমের প্রভাবে ঘটেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাবের শীর্ষে রয়েছে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঝুঁকি প্রশমন ও জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে আমরা (বাংলাদেশ) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’ তিনি বলেন, অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তাদের প্রাপ্য চায়। (সূত্র বাসস, ৫, মার্চ)

জলবায়ুর পরিবর্তন একটা বৈশ্বিক সমস্যা এ সমস্যার সমাধান ও খুঁজতে হবে বৈশ্বিক ভাবে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধে প্রতিনিধিদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তার এক মুখপাত্র বলেন, চুক্তিটি ‘বহুপাক্ষিকতার বিজয় এবং বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য সমুদ্রের বিপন্নতার মুখোমুখি হওয়ার ধ্বংসাত্মক প্রবণতা মোকাবেলায় এই বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা একটি স্মরণীয় ঘটনা।’

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের এর প্রভাব ভয়ংকর ও অসামঞ্জস্যহীন। উন্নত দেশগুলোর জনগণের উন্নত জীবনযাপনের বলি হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। কাজেই  প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন  অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য চায়, যখন বলেন, ‘এলডিসিগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। এলডিসিগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার এবং মঙ্গলের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা এলডিসিতে ২২৬ মিলিয়ন যুবকদের ব্যর্থ করতে পারি না,’ তিনি তা যথার্থ বলেছেন।  

বাংলাদেশ হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের শিকার একটি দেশ, যে দেশের ১৯ টি উপকূলীয় জেলার সমগ্র অঞ্চল ও অধিবাসীদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেনিটেশন ও দক্ষতা বৃদ্ধি সহ কর্মসংস্থানের যুগোপোযুগী কৌশলগত পরিকল্পনা এখনো নেই বললে চলে।  ভৌগোলিক অবস্থান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অপ্রতুলতায় জীবন ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে। মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে  উপকূলীয় ১৯ জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্প নিতে এগিয়ে এসেছে  কানাডার ‘স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের কোস্টাল ১৯ গ্রুপের সহযোগে ও স্থানীয় কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ভেলু চেইন গ্রুপ এর সহায়তায় উপকূলীয় অর্থনৈতিক সুরক্ষায় ও সমূদ্র অর্থনীতির ব্যবহারে গড়ে উঠছে একটি শক্ত বলয়. দারিদ্র বিমোচন, অশিক্ষা দূরকরণ ও চিকিৎসাসুবিধা দানে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ও শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, জলোচ্ছাস, বন্যা— প্রায়  সব দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও এখানে অনেক বেশি। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার শীর্ষে। বাংলাদেশের সমুদ্র বাঁচালে বাংলাদেশ বাঁচাবে একথা দিবালোকের মতো সত্য। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপাদান, জ্ঞানবিজ্ঞান ও কলাকৌশল রপ্তে প্রানপন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ও এর প্রতিক্রিয়া মেনে নিতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে একে স্বাগত। জলবায়ু সমস্যা সমাধানের এ প্রচেষ্টা সভ্যতার বিকাশকে অনিবার্যভাবে বদলে দেবে। বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠুক জলবায়ু সচেতনতা।  বিভক্ত বিশ্বের দারিদ্রপীড়িত মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় মানবতার জয় হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here