১০:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে প্রয়োজন দক্ষ জনসম্পদ

রেজাউল করিম খোকন
  • প্রকাশ: ১০:২৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩
  • / ৯৯১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হলেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের হার কমেছে বিদায়ী বছরে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী ১ কোটির বেশি প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ (২১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ৩.৫৬ শতাংশ কম। ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ (২২.০৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। 

এদিকে ২০২২ সালে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সাড়ে ১১ লাখ জনশক্তি কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬.৩২ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বিদেশ গেলেও টাকা এলো কম। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ার হার উদ্বেগজনক। এর পেছনে কারণ হিসেবে মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অর্থ লেনদেনের অবৈধ চ্যানেলগুলো চালু হওয়া, নতুন বৈদেশিক নিয়োগ কমে যাওয়া এবং প্রবাসীদের চাকরি হারানোর মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি রয়েছে, যাদের ৮৮ শতাংশই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া দেশত্যাগ করেছে। অর্থাৎ প্রায় ৭৬ লাখ প্রবাসীর কাজের প্রশিক্ষণ নেই। আর বাকি ১২ শতাংশ প্রবাসী কারিগরি শিক্ষা, ভাষা, কম্পিউটার ও ড্রাইভিং-এ চারটির কোনো একটির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ ছেড়েছে।

প্রবাসীদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ প্রবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৬২ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৬ শতাংশের উচ্চশিক্ষা রয়েছে। দক্ষ ও শিক্ষিতের সংখ্যা কম হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশিরা ভালো চাকরি পায় না। অদক্ষ, আধাদক্ষ কারিগরি জ্ঞান না থাকা শ্রমিক, কর্মীদের বেতন নিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, মালিকের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ থাকে না। তারা অন্যান্য দেশের কারিগরি জ্ঞান থাকা শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক কর্মীদের তুলনায় এক্ষেত্রে অনেক দুর্বল এবং অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। ফলে তারা উচ্চ হারে পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে না। অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে সেখানে কাজ করেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ এখনও বেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখাত থেকে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারত। যদি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তেমন উপযুক্ত কাজ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মীরা বিদেশে যেতে পারে, তাহলে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে অন্যান্য দেশের কর্মীদের টেক্কা দিতে পারবে। বাংলাদেশের কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেন বটে; কিন্তু কারিগরি শিক্ষা না থাকায় তাদের অদক্ষ, আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মূল্যও পাচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার কারণে তাদের স্বল্প বেতনে চাকরি করে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। যুগের পর যুগ ধরে এভাবে চলছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এজন্য সরকার দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষালাভের জন্য অনেক ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিকাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে নানা ধরনের কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ, অভিজ্ঞ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে চাহিদা সম্পন্ন করে তোলা সম্ভব।

আজকাল অনেকেই এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ফলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশেই হোক বিদেশেই হোক শ্রম বাজারে নিজের দাম বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষা অর্জনকারী দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মীরা বেশ ভালো এবং সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তেমনি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী। এভাবেই নিজেদের প্রশিক্ষিত করে তারা দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করছে। শ্রমবাজারে তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পারিশ্রমিক, বেতনের ব্যাপারে দরকষাকষির সুযোগ পাচ্ছে তারা। এভাবেই তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অগ্রগতির নানা ধাপ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় এখন আমাদের অবস্থান। অথচ একসময়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দরিদ্র দেশের তালিকায়। তলাবিহীন ঝুড়িও আখ্যা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। তর তর করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে আমরা অনেক মানুষ বাস করি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। মোট আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অভাব, দরিদ্র, বেকারত্ব রয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময়ে পুরোপুরি কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উজ্জ্বল অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আগের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। এছাড়াও আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৃথিবীর অনেক দেশে যাচ্ছে। এগুলোর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে একসময়ে বাংলাদেশের যে পরিচিতি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে সময়ের পালাবদলে। প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোয় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন বিশ্বব্যাপী কারিগরি জ্ঞানের কদর খুব সহজেই চোখে পড়ে। প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাঙাভাব সৃষ্টি করে রেখেছে অনেক দিন ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ আমেরিকায় বাংলাদেশের অগণিত মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। জনশক্তি খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে বর্তমানে তা আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। কারণ, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের অদক্ষ, কারিগরি জ্ঞান না থাকা অশিক্ষিত কর্মীরা অন্যান্য দেশের দক্ষ, অভিজ্ঞ, কারিগরি জ্ঞান জানা শিক্ষিত কর্মীদের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। একটি বিষয় সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে যে, আমাদের যে বিপুল জনসংখ্যা, তাকে জনশক্তি বা জনসম্পদে রূপান্তর করতে না পারলে জনসংখ্যার বিরাট বোঝার চাপে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো নানাভাবে বিপর্যস্ত হবে। দিনে দিনে ভয়াবহ সংকট আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। সামাজিক-রাজনৈতিক-অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি প্রভৃতি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়তেই থাকবে।

জনবহুল একটি দেশের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ যদি কর্মক্ষম এবং উপার্জনক্ষম হয়, তাহলে সেদেশের অর্থনৈতিকভিত্তি স্বাভাবিকভাবেই মজবুত হতে বাধ্য। আমাদের জনসংখ্যাকে আপদ না ভেবে জনশক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালাতে হবে। তখন তা জনসম্পদে পরিণত হবে। আমরা আমাদের জনসম্পদকে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে কাজে লাগাইনা কেন, তা আমাদের জন্য সমৃদ্ধির নতুন বার্তা বয়ে আনবে। অর্থনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করবে। জনশক্তিকে কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার সঠিক এবং কার্যকর উপায়। বেকার, কারিগরি জ্ঞানশূন্য তরুণ-তরুণীদের মেধা, শ্রম ও মননশীলতাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের জাতীয় জীবনে আরও অনেক দুর্যোগ এসে হানা দিতে পারে। আমরা কোনোভাবেই তা চাই না।

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশকে সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই।

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই আমাদের অর্থনীতির চেহারাটা আরও বদলে দিতে পারে। দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উপযুক্ত এবং ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেতে পারে তারা অনায়সেই। এভাবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স ধারায় বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করে দক্ষ মানবসম্পদ পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স ভবিষ্যতে রেকর্ড গড়বে। বিদেশে গিয়ে অদক্ষ আধা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে যেন চাকরি করতে না হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের চাকরি যাতে পেতে পারেন- তেমন যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে। দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার এখন অনেকটাই মনোযোগী হয়েছেন। 

বিদেশগমনেচ্ছু শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ-যোগ্য-অভিজ্ঞ করে তোলার লক্ষ্যে এখন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশগামীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে রেমিট্যান্সের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা করা যায়।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

রেজাউল করিম খোকন

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে প্রয়োজন দক্ষ জনসম্পদ

প্রকাশ: ১০:২৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হলেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের হার কমেছে বিদায়ী বছরে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী ১ কোটির বেশি প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ (২১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ৩.৫৬ শতাংশ কম। ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ (২২.০৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। 

এদিকে ২০২২ সালে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সাড়ে ১১ লাখ জনশক্তি কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬.৩২ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বিদেশ গেলেও টাকা এলো কম। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ার হার উদ্বেগজনক। এর পেছনে কারণ হিসেবে মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অর্থ লেনদেনের অবৈধ চ্যানেলগুলো চালু হওয়া, নতুন বৈদেশিক নিয়োগ কমে যাওয়া এবং প্রবাসীদের চাকরি হারানোর মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি রয়েছে, যাদের ৮৮ শতাংশই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া দেশত্যাগ করেছে। অর্থাৎ প্রায় ৭৬ লাখ প্রবাসীর কাজের প্রশিক্ষণ নেই। আর বাকি ১২ শতাংশ প্রবাসী কারিগরি শিক্ষা, ভাষা, কম্পিউটার ও ড্রাইভিং-এ চারটির কোনো একটির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ ছেড়েছে।

প্রবাসীদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ প্রবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৬২ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৬ শতাংশের উচ্চশিক্ষা রয়েছে। দক্ষ ও শিক্ষিতের সংখ্যা কম হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশিরা ভালো চাকরি পায় না। অদক্ষ, আধাদক্ষ কারিগরি জ্ঞান না থাকা শ্রমিক, কর্মীদের বেতন নিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, মালিকের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ থাকে না। তারা অন্যান্য দেশের কারিগরি জ্ঞান থাকা শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক কর্মীদের তুলনায় এক্ষেত্রে অনেক দুর্বল এবং অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। ফলে তারা উচ্চ হারে পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে না। অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে সেখানে কাজ করেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ এখনও বেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এখাত থেকে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারত। যদি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তেমন উপযুক্ত কাজ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মীরা বিদেশে যেতে পারে, তাহলে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে অন্যান্য দেশের কর্মীদের টেক্কা দিতে পারবে। বাংলাদেশের কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেন বটে; কিন্তু কারিগরি শিক্ষা না থাকায় তাদের অদক্ষ, আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মূল্যও পাচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার কারণে তাদের স্বল্প বেতনে চাকরি করে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। যুগের পর যুগ ধরে এভাবে চলছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এজন্য সরকার দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষালাভের জন্য অনেক ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিকাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে নানা ধরনের কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ, অভিজ্ঞ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে চাহিদা সম্পন্ন করে তোলা সম্ভব।

আজকাল অনেকেই এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ফলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশেই হোক বিদেশেই হোক শ্রম বাজারে নিজের দাম বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষা অর্জনকারী দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মীরা বেশ ভালো এবং সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তেমনি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী। এভাবেই নিজেদের প্রশিক্ষিত করে তারা দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করছে। শ্রমবাজারে তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পারিশ্রমিক, বেতনের ব্যাপারে দরকষাকষির সুযোগ পাচ্ছে তারা। এভাবেই তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অগ্রগতির নানা ধাপ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় এখন আমাদের অবস্থান। অথচ একসময়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দরিদ্র দেশের তালিকায়। তলাবিহীন ঝুড়িও আখ্যা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। তর তর করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে আমরা অনেক মানুষ বাস করি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। মোট আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অভাব, দরিদ্র, বেকারত্ব রয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময়ে পুরোপুরি কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উজ্জ্বল অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আগের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। এছাড়াও আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৃথিবীর অনেক দেশে যাচ্ছে। এগুলোর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে একসময়ে বাংলাদেশের যে পরিচিতি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে সময়ের পালাবদলে। প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোয় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন বিশ্বব্যাপী কারিগরি জ্ঞানের কদর খুব সহজেই চোখে পড়ে। প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাঙাভাব সৃষ্টি করে রেখেছে অনেক দিন ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ আমেরিকায় বাংলাদেশের অগণিত মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। জনশক্তি খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে বর্তমানে তা আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। কারণ, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের অদক্ষ, কারিগরি জ্ঞান না থাকা অশিক্ষিত কর্মীরা অন্যান্য দেশের দক্ষ, অভিজ্ঞ, কারিগরি জ্ঞান জানা শিক্ষিত কর্মীদের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। একটি বিষয় সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে যে, আমাদের যে বিপুল জনসংখ্যা, তাকে জনশক্তি বা জনসম্পদে রূপান্তর করতে না পারলে জনসংখ্যার বিরাট বোঝার চাপে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো নানাভাবে বিপর্যস্ত হবে। দিনে দিনে ভয়াবহ সংকট আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। সামাজিক-রাজনৈতিক-অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি প্রভৃতি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়তেই থাকবে।

জনবহুল একটি দেশের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ যদি কর্মক্ষম এবং উপার্জনক্ষম হয়, তাহলে সেদেশের অর্থনৈতিকভিত্তি স্বাভাবিকভাবেই মজবুত হতে বাধ্য। আমাদের জনসংখ্যাকে আপদ না ভেবে জনশক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালাতে হবে। তখন তা জনসম্পদে পরিণত হবে। আমরা আমাদের জনসম্পদকে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে কাজে লাগাইনা কেন, তা আমাদের জন্য সমৃদ্ধির নতুন বার্তা বয়ে আনবে। অর্থনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করবে। জনশক্তিকে কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার সঠিক এবং কার্যকর উপায়। বেকার, কারিগরি জ্ঞানশূন্য তরুণ-তরুণীদের মেধা, শ্রম ও মননশীলতাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের জাতীয় জীবনে আরও অনেক দুর্যোগ এসে হানা দিতে পারে। আমরা কোনোভাবেই তা চাই না।

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশকে সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই।

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই আমাদের অর্থনীতির চেহারাটা আরও বদলে দিতে পারে। দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উপযুক্ত এবং ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেতে পারে তারা অনায়সেই। এভাবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স ধারায় বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করে দক্ষ মানবসম্পদ পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স ভবিষ্যতে রেকর্ড গড়বে। বিদেশে গিয়ে অদক্ষ আধা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে যেন চাকরি করতে না হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের চাকরি যাতে পেতে পারেন- তেমন যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে। দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার এখন অনেকটাই মনোযোগী হয়েছেন। 

বিদেশগমনেচ্ছু শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ-যোগ্য-অভিজ্ঞ করে তোলার লক্ষ্যে এখন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশগামীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে রেমিট্যান্সের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা করা যায়।