বুধবার, মার্চ ২৯, ২০২৩

নীতি কাকে বলে? সামাজিক নীতির ধারণা ও বৈশিষ্ট্য কী কী?

জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে সমাজের গতিশীলতা ত্বরান্বিত করতে সামাজিক নীতি প্রণয়ন করা হয়।

নীতি শব্দটি আধুনিক বিশ্বের সমাজব্যবস্থায় কাঙ্খিত উন্নয়ন ও সমাজকর্মের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়। সামগ্রিক কল্যাণের ক্ষেত্রে সামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হিসেবে সমাজসেবা কার্যক্রমের স্বরূপ, প্রকৃতি, পরিচালনা ও প্রশাসন ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা দেয় সামাজিক নীতি।

নীতি কাকে বলে?

নীতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Policy’। সাধারণ অর্থে নীতি হলো কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথনির্দেশিকা।

নীতি হলো কোনো লক্ষ্য অর্জনের সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা। সমাজজীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য কর্মপন্থা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্দেশনাই হলো নীতি। সাধারণভাবে কোনো কাজ সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনা করার মাধ্যমে বাঞ্ছিত ও ইপ্সিত লক্ষ্যে উপণীত হওয়ার জন্য যেসব নিয়মকানুন, পদ্ধতি বা কর্মকৌশল, যা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার কর্তৃক আদর্শ হিসেবে গৃহীত হয় তাকেই নীতি বলে।

অ্যান্ড্রু মরিস বলেছেন যে, নীতি হলো এমন কোনো আইনসিদ্ধ নিয়মাবলির সমষ্টিগত রূপ যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের লক্ষ্য অর্জনে অনুসরণ করা হয়।

সামাজিক নীতির ধারণা

কোনো সমাজে সুশৃঙ্খল ও অর্থবহ সমাজসেবামূলক ব্যবস্থা সামাজিক নীতি কাঠামোর আওতাতেই গড়ে ওঠে। সমাজসেবা ছাড়াও সামাজিক নীতির আরো উল্লেখযোগ্য পরিচয়বাহী বিষয় হলো শাসনতন্ত্র ও সামাজিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতার চুক্তিপত্র। মূলত সমাজ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে যে নীতি প্রণয়ন করা হয় তাই সামাজিক নীতি। একটি সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। যেমন: শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, শিশুনীতি, জনসংখ্যানীতি, নারী উন্নয়ন নীতি, শ্রমনীতি প্রভৃতি।

সামাজিক নীতি হলো সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মপন্থা। সামাজিক নীতি হলো সেসব নিয়মকানুন বা কর্মপন্থা যা কেবল সমাজকল্যাণমূলক কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন বা বাস্তবায়নের পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। 

সমাজকর্ম অভিধান অনুযায়ী, সামাজিক নীতি হলো সমাজের সেসব কার্যক্রম ও বিধিবিধান যেগুলো ব্যক্তি, দল, সমষ্টি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের পথ নির্দেশ করে। এসব কার্যক্রম ও বিধিবিধানগুলো সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রথার ফলশ্রুতি। 

অধ্যাপক মার্শাল বলেন, সামাজিক নীতি প্রত্যয়টি সরকার গৃহীত সেসব নীতিমালার নির্দেশক, যেগুলো নাগরিকদের সেবা ও উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে কল্যাণ নিশ্চিত করার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। 

এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল ওয়ার্ক (Encyclopedia of Social Network) অনুসারে, সামাজিক নীতি হলো সেসব প্রতিষ্ঠিত আইন, প্রশাসনিক বিধান ও সংস্থার নির্দেশনার মূলনীতি, কার্যপ্রক্রিয়া ও কার্যসম্পাদনের উপায়, যা জনগণের সামাজিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে। 

উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, সামাজিক নীতি হলো সমাজের কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজন পূরণ তথা সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের নিমিত্তে কতিপয় নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি বা কৌশল যা মানুষের ব্যক্তিগত, দলগত ও সমষ্টিগত কল্যাণ লাভ এবং সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধনের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং তা আদর্শ হিসেবে অনুসরণের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপণীত হওয়ার প্রয়াস চালায়। 

সামাজিক নীতির বৈশিষ্ট্য

সমাজের কাঙ্খিত পরিবর্তন সাধন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজসেবা কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক সুসমন্বিত নীতিমালা ও কর্মকৌশল হলো সামাজিক নীতি। জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে সমাজের গতিশীলতা ত্বরান্বিত করতে সামাজিক নীতি প্রণয়ন করা হয়। সামাজিক নীতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:

  • সামাজিক নীতি সামাজিক উন্নয়নের পথনির্দেশক ও অনুসরণীয় আদর্শ।
  • সামাজিক নীতি সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কর্মপ্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কাজের শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়।
  • সামাজিক নীতি জনগণের মানবীয় প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে।
  • সামাজিক নীতি সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় তা বাস্তবায়িত হয়।
  • সামাজিক নীতি সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ অনেকগুলো বিকল্প কর্মপন্থা থেকেকোনটি গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। 
  • সামাজিক নীতি বাঞ্ছিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়। সুপরিকল্পিত উপায়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনয়নের জন্য সামাজিক নীতি প্রণীত হয়।
  • সামাজিক নীতি সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।সামাজিক নীতি সামাজিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে। কারণ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা । যেমন: কুপ্রথা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা প্রভৃতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব বাধা দূর করতে প্রয়োজন হয় সামাজিক কার্যক্রমের। সামাজিক নীতি এর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।
  • সামাজিক নীতি সমাজে বসবাসরত মানুষকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে। সামাজিক নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় যাতে মানুষ পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হয়।
  • সামাজিক নীতি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সামাজিক সমতা, স্থিরতা, শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

সারাংশ

নীতি হলো কোনো লক্ষ্য অর্জনের কর্মপন্থা। সমাজজীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য কর্মপন্থা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্দেশনাই হলো নীতি। সাধারণভাবে কোনো কাজ সুষ্ঠুও সঠিকভাবে পরিচালনা করার মাধ্যমে বাঞ্ছিত ও ইপ্সিত লক্ষ্যে উপণীত হওয়ার জন্য যেসব নিয়মকানুন, পদ্ধতি বা কর্মকৌশল যা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার কর্তৃক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাকেই নীতি বলা হয়। অন্যদিকে, সামাজিক নীতি হলো সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মপন্থা। সামাজিক নীতি হলো সেসব নিয়ম-কানুন বা কর্মপন্থা, যা কেবল সমাজকল্যাণমূলক কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন বা বাস্তবায়নের লক্ষ্য ক্ষেত্রে পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।

[বাউবি পাঠ্যবই হতে আইনসিদ্ধ উপায়ে সংকলিত]

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here