০৫:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ইউজিসির স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব: দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারবে?

দেলোয়ার জাহিদ
  • প্রকাশ: ০৩:০৪:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩
  • / ৮৪৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-এর লোগো

জানুয়ারি ১২, ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন (ইউজিসি) ১৭ দফা সুপারিশ সহ একটি বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে ২০২১ সালের ইউজিসি কার্যক্রমের ওপর ৪৮তম এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। দেশের অর্ধশতাধিক পাবলিক ও ৯৫ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কার্যক্রমের এতে প্রতিফলন ঘটেছে। দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যেমন পর্যাপ্ত নয় তেমনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও, যেগুলো বা আছে সেগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, গতিশীলতাতো স্বপ্নের ও অতীত, সু-শাসন ও মানসম্মত শিক্ষার প্রত্যাশা শুধুই কল্পনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ কে এখন জাদুঘরে তোলে রাখার সময় হয়ে এসেছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাচার ও দুঃশাসন দানাবেদে উঠেছে, নিশ্চিতভাবে একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয় ব্যবস্থাপনার অস্বচ্ছতা এখন যত্রতত্র। এরই মাঝে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন নিয়ে এসেছে একগুচ্ছ সুপারিশমালা, শিরোনাম হয়েছে সংবাদপত্রের। ” বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ‘স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন’ চায় ইউজিসি (প্রথমআলো, জানুয়ারি ১২, ২০২৩) দুর্নীতি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র কমিশনের প্রস্তাব (দৈনিক শিক্ষা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩)” তথ্য সূত্রে প্রকাশ, “দেশে উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তেও অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসব অনিয়মের প্রতিকার মিলছে না। দু-একটি উদাহরণ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না।”

গোটা ২০২১ সাল, পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্রান্তিকাল বললে তা মোটেই অত্যুক্তি হবে না। দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২৬, ২০২২ লিখেছে, আইন মানছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ মানা বাধ্যতামূলক। আর এই আইন সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা তদারকির জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনও মানছে না, পাশাপাশি ইউজিসির নির্দেশনার বেশির ভাগ অগ্রাহ্য করছে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ‘রাজনৈতিক’ প্রভাবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে ব্যর্থ হচ্ছে এই তদারকি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।”

দৈনিক যুগান্তরে (জুলাই ২৬, ২০২২) আমার নিবন্ধ “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনঃ নিয়োগ নৈরাজ্য ও আইন অমান্যতা” বাংলাদেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া ছাড়াও এগুলোতে সিদ্ধান্তহীনতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ (ইউজিসি) প্রদত্ত তথ্য দেখা যায়, ১০৪ টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০ টিতে ভিসি পদ খালি রয়েছে, ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রো-ভিসি নেই এবং ৪৯ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। (সূত্রঃ ডেইলি সান) সূত্রটি আরও জানায়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০-এর ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে- প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারের মতো ব্যক্তিদের স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক।…উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অচলাবস্থাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া, নিয়োগ নৈরাজ্য ও আইন অমান্যতার প্রতিকারে কঠোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

দৈনিক যুগান্তর (আগস্ট ৫, ২০২২) “একাডেমিক উৎকর্ষতা ও দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্ব মানবসম্পদ উন্নয়নে আলোকবর্তিকা” শিক্ষা নিয়ে দুইহাজার একুশ সালে আমার ডজনখানেক আর্টিকেলের আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে রাষ্ট্রপতির (চ্যান্সেলর) ভূমিকা এবং ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ তাদের নির্বাচন পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা বিবেচনা করে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রতিনিধিত্ব, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণের নামে প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সমালোচনামূলক সংকেত প্রদান করে; ইস্যুটি নিয়ে আরও মনোযোগ দেয়া দরকার কারণ এ মূল্যবোধগুলি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মৌলিক ভিত্তি গঠন করে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করলে আমাদের বর্তমান ব্যবস্থার বিচ্যুতিগুলো সহজে ধরা পড়ে।…শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়া ও শিক্ষকতার মতো একটা পবিত্র ও মহান পেশা নিম্নস্তরে কোথায় নেমে যাচ্ছে এবং কেন নেমে যাচ্ছে তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার ও কাজ করার সময় এসে গেছে, বিলম্বে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের জারিকৃত নিয়োগ বিধি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের অনুমোদিত প্রবিধানমালার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের অনুষদ সদস্য (অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক), রেজিষ্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (আইকিউএসি) ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেধে দেয়া নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করার প্রবণতা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পদে নিয়োগের  উপায়/সুপারিশমালা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পদে নিয়োগের বর্তমান অবস্থা, বিদ্যমান সমস্যাবলি এবং এ সকল সমস্যা সমাধানের উপায়/সুপারিশমালা দেয়া হলো:

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মাবলিঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩১ ধারায় ভাইস-চ্যান্সেলর, ৩২ ধারায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ৩৩ ধারায় ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি-বিধান উল্লেখ রয়েছে। এসব আইনের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ৩৩ ধারা অনুযায়ী ট্রেজারার পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলের অনুমোদনে ৪ বছর মেয়াদের জন্য সকল পদে নিয়োগ লাভ করার বিধান রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যান্সেলর অনুমোদনের অনেক ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মের ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়।
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়মঃ সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি/প্রবিধানমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ প্রদান করলেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রার্থী নিয়োগ প্রদান করলেও কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন নিজদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে অনলাইন ওয়েভ সাইডে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নতুন ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে যাচ্ছে। কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন লাভ করার ক্ষেত্রে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভিসি প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের জন্য জোর দিয়ে থাকে যেখানে ট্রেজারার পদে নিয়োগ উপেক্ষিত হয়ে থাকে। এর ফলে পরবর্তী ৪ বছরেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আর ট্রেজারার নিয়োগের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে না এবং চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদনহীন ট্রেজারার ছাড়াই সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অবস্থা পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি/ ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে শুধুমাত্র অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে যার ফলে এতে কম সংখ্যক প্রার্থী আবেদনের সুযোগ পান। এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ সকল পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা ভিসি এবং ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেয়ে থাকে বা ট্রেজারার পদ শূণ্য থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০১০ এর ১৬(৯) উপ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতা ও দায়িত্ব হিসাবে ধারা ৩১, ৩২ এবং ৩৩ এর বিধান অনুসরণ করে চ্যান্সেলরের সমীপে প্রস্তাব পেশ করার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি/রেজিস্ট্রার অফিসকে জড়িত না করে নিজদের পদন্দের প্রার্থীর প্যানেল তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে থাকে। কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয় না। এ ধরনের প্যানেল প্রস্তাব ইউজিসির প্রক্রিয়া পর্যায়ে কখনও ধরা পড়লে যারা প্রস্তাবিত পদে নিয়োগের যোগ্যতা নেই তাদের নাম বাদ দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্যানেল প্রস্তাব ইউজিসিতে প্রেরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নমনীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় অধিক যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীরা এ সকল পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও গুণগত শিক্ষা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। জানা যায় নিজদের সুবিধার্থে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য প্রার্থীকে নামমাত্র বাছাই করে চ্যান্সেলরের অনুমোদনের জন্য প্যানেল প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াকরণের নিমিত্তে প্রেরণ করে থাকে। 
  • অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে এবং বেতন-ভাতাদি আলোচনা সাপেক্ষে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। বাস্তবে এ সকল পদের প্রার্থীদেরকে ইন্টারভিউতে অনেক প্রার্থীর প্রত্যাশিত বেতন-ভাতাদি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় না বা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদেয় বেতন-ভাতাদি ও সুযোগ-সুবিধাদি সম্পর্কে জানানোও হয় না। এরূপ প্রেক্ষিতে কেহ এ সকল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগের প্রস্তাব পাবার পর নিয়োগ প্রাপ্ত পদের সুযোগ-সুবিধাদি প্রার্থীর জন্য প্রত্যাশিত বা বর্তমান চাকুরির থেকে কম হওয়ায় চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়েও নিয়োগপ্রাপ্ত পদে কেহ কেহ যোগদান করছেন না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, একটি জেলা শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে ৪০,০০০.০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা সাকুল্য বেতন প্রদান করা হয়েছে মর্মে জানা যায়। অপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নির্বাচিত প্রার্থীকে (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে) ১,০০,০০০.০০ (এক লক্ষ) টাকা সাকুল্য বেতন প্রস্তাব করায় যা তার বর্তমান বেতন হতে কম হওয়ায় চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদান করেনি মর্মে জানা যায়।
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কোন বয়সসীমা অনুসরণ করা হয় না। এ সুযোগের সুবাধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সব পদের প্রার্থীর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত কোন কোন মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সকল কোন পদের প্রার্থী বয়স ৭০ এর বেশি অজুহাতে প্রক্রিয়াকরণে প্রার্থী সকল বিষয়ে যোগ্য হলেও তাদের নাম অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে না। আবার কারো ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি উদারভাবে দেখা হয়। বর্তমানে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ বছরের অধিক প্রাক্তন অধ্যাপক ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের সুপারিশ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ হলো:

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভের পর ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারসহ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকেও উৎসাহিত করা;
  • যে সকল নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনও ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি সেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার তথা নুন্যতম ২ টি পদে নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা;
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিনিধি, চ্যান্সেলর নিয়োজিত ভিসি/প্রো-ভিসি/ট্রেজারার, বর্হিবিশেষজ্ঞ ও সরকারের মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যের সমন্বয়ে একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন নিশ্চিত করা;
  • কোন ক্ষেত্রে ইউজিসি হতে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার পদের প্যানেল প্রস্তাবে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না থাকলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের লক্ষ্যে পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাতে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীরা এ সকল পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন;
  • ৫) এ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের রেজুলেশন সম্বলিত ৩ জন প্রার্থীর যে প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণ করা হয় সেখানে অবশ্যই উল্লিখিত পদের বেতন-ভাতাদি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি যেমনঃ উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, গাড়ী সুবিধা/যাতায়ত ভাতা, গ্র্যাচুয়েটি ইত্যাদি) সম্পর্কে উল্লেখ থাকতে হবে যাতে কেহ নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর প্রার্থীভেদে এ সকল প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার তারতম্য/বৈষম্য সৃষ্টি করার কোন বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ না পায়। সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক/অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যে বেতন স্কেল রয়েছে এর নীচে বেতন প্রস্তাব করা যাবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে;
  • ৬) ভিসি/প্রো-ভিসি/ট্রেজারার নিয়োগ প্যানেল অনুমোদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ সকল পদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদি প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যাতে অনুমোদনের পর বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদির হ্রাস/বৃদ্ধি বা পরিবর্তনের কোন সুযোগ না থাকে। অধিকন্তু, ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক/অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যে বেতন স্কেল রয়েছে এর নীচে বেতন প্রস্তাব করা যাবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে; এবং ৭) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সার্বজনিন একটি নীতিমালা অনুসরণ করার বিধান চালু করা যেতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক নিয়োগের নিয়মাবলিঃ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫/০১/২০১৫ তারিখে সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্ধারিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সে মোতাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের অনুষদ সদস্য (অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক) নিয়োগ প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। (নিয়োগের নিয়মাবলিসমূহঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচ.ডি/সমমান ডিগ্রী অথবা এমফিল/সমমানের ডিগ্রীসহ শিক্ষা জীবনে কমপক্ষে দুইটি ১ম শ্রেণি/বিভাগ/এ গ্রেড থাকিতে হইবে। তন্মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর যে কোন একটিতে ১ম বিভাগ/শ্রেণি/এ গ্রেড থাকিতে হইবে। পিএইচডির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা। এমফিল এর ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কমপক্ষে ১৫ টি প্রকাশনা যার মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৭ টি প্রকাশনা থাকতে হবে। অপরদিকে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের একইরূপ ডিগ্রী ও গ্রেড থাকতে হবে। পিএইচডি ডিগ্রীর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা, তন্মধ্যে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা। এছাড়া মোট ৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে, ৩টি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। এমফিল এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, ৪ বছর সহকারি অধ্যাপক হিসেবে ৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে; ৩টি সহকারি অধ্যাপক হিসেবে থাকতে হবে। অন্যান্য ডিগ্রী ও গ্রেডের ক্ষেত্রে মোট ১০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ৬ টি প্রকাশনা থাকতে হবে)।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম

বাস্তবে এ সকল পূরণ করে টপ ব্যাঙ্কিং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের থেকে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্ধারিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত যে নীতিমালা সময়ে জারি হয়েছে সে অনুযায়ী অভিজ্ঞতা ও প্রকাশনার সংখ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কম পারিশ্রমিক (বেতন, ভাতাদি) প্রদান করে নিয়ম বর্হিভুতভাবে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষতার নূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, প্রাসঙ্গিক শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রকাশনা নেই এমন প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে যাদের একটিও প্রকাশনা নেই এবং যাদের বেসরকারি/সরকারি কলেজে চাকুরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ধরনের নিয়োগ প্রদানের ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার গুণগত মান ব্যাহত হচ্ছে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক প্রতিবেদন বা বিশেষ প্রতিবেদন ইউজিসিতে দাখিল করে থাকে। এ সকল প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক কিছু সংখ্যক নমুনায়ন/নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত প্রাসংঙ্গিক ডাটাবেজ ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত নথির তথ্য পরীক্ষাকরণ (প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথে সে সময়ে প্রার্থীর দাখিলকৃত দরখাস্ত (ঈঠ) এর তথ্য পর্যালোচনা করা) হলে উত্থাপিত এ সব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে। এমনকি কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া যাবে; এবং
  • যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি বর্হিভুতভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের নিয়োগ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে বা এ বিষয়ে আইনানুগক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের নিয়মাবলি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ২৭ ধারায় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি গঠন এবং ৩৪ ধারার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ধারা এবং প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী সংবিধি প্রণয়ন এবং ৩৭ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের দৃষ্টান্ত রয়েছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সুপারিশক্রমে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর অনুমোদন এবং ইউজিসির সম্মতিক্রমে তা চুড়ান্তকরণ করার বিধানও রয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জীবন যাত্রার মান ন্যুনতম বজায় রাখার মত বেতন প্রদান করছে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম

দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়ন এসকল নিয়ম ও শর্তাবলী অনুসরণ করলেও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলো কর্তৃক নিজস্ব সংবিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশ কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো স্থায়ীভাবে পূরণ না করে সহযোগী অধ্যাপক বা সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বা একজন কর্মকর্তা বা শিক্ষককে একাধিক পদের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ 

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইউজিসির পূর্বেকার বা বর্তমান পত্র/প্রজ্ঞাপন অনুসরণ না করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে প্রদত্ত সকল নিয়োগ বাতিল করা, অনিয়মের জন্য ইউজিসি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালকে সতর্ক বা জরিমানা করা, মেয়াদ নবায়ন না করা বা নতুনভাবে সময় প্রদান বন্ধ/স্থগিত রাখা এবং নিধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ম অনুসরণ/বাস্তবায়ন করা না হলে এক/একাধিক সেমিস্টারের জন্য নতুন ছাত্র-ছাত্রী বদ্ধ স্থগিত করা;
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা রাখা এবং তা অনুসরণ নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসির ওয়েব সাইডে সংশ্লিষ্ট পদের তথ্য হালনাগাদ করা; ৩) যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূণ পদ যেমনঃ পরিচালক (আইকিউএসি), লাইব্রেরিয়ান, পরিচালক (স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার), প্রভৃতি কর্মকর্তা পর্যায়ের পদগুলো স্থায়ীভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণে ইউজিসির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ/ভূমিকা গ্রহণ এবং নির্দেশনা জারি করতে পারে; এবং
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্য সন্তুুষ্টি বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদ যেমনঃ শিক্ষক (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক), রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (আইকিইউএসি) এবং অন্যান্য পদের ন্যূনতম বেতন সরকারি বা বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রভৃতি পদের জন্য নির্ধারিত বেতন স্কেল এর কম হতে পারবে না মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়/ইউজিসি থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে।

শেষকথা

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সর্বোত্তম অনুশীলন কিনা তা ভেবে দেখার পূর্বে ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট এর অধীন বিতর্কিত সকল নিয়োগকে প্রতিরোধে ইউজিসির গৃহীত পদক্ষেপ এবং সংগঠিত দুর্নীতি ও সজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে অবশ্যই জনগণের জানা থাকা দরকার। বছরব্যাপী পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা, সঙ্কট, দুর্নীতি ও অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে নির্বিকার থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির সুপারিশের চেয়ে জবাবদিহিতা এ মুহূর্তে জরুরি। জরুরি, প্রথমে ইউজিসিকে কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় লোকবল প্রদান করা, স্বচ্ছতাকে উন্নত এবং নৈতিকতা সমুন্নত করা, তা হলেই স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

দেলোয়ার জাহিদ

সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা, কানাডা) নিবাসী
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ইউজিসির স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব: দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারবে?

প্রকাশ: ০৩:০৪:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

জানুয়ারি ১২, ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন (ইউজিসি) ১৭ দফা সুপারিশ সহ একটি বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে ২০২১ সালের ইউজিসি কার্যক্রমের ওপর ৪৮তম এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। দেশের অর্ধশতাধিক পাবলিক ও ৯৫ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কার্যক্রমের এতে প্রতিফলন ঘটেছে। দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যেমন পর্যাপ্ত নয় তেমনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও, যেগুলো বা আছে সেগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, গতিশীলতাতো স্বপ্নের ও অতীত, সু-শাসন ও মানসম্মত শিক্ষার প্রত্যাশা শুধুই কল্পনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ কে এখন জাদুঘরে তোলে রাখার সময় হয়ে এসেছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাচার ও দুঃশাসন দানাবেদে উঠেছে, নিশ্চিতভাবে একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয় ব্যবস্থাপনার অস্বচ্ছতা এখন যত্রতত্র। এরই মাঝে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন নিয়ে এসেছে একগুচ্ছ সুপারিশমালা, শিরোনাম হয়েছে সংবাদপত্রের। ” বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ‘স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন’ চায় ইউজিসি (প্রথমআলো, জানুয়ারি ১২, ২০২৩) দুর্নীতি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র কমিশনের প্রস্তাব (দৈনিক শিক্ষা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩)” তথ্য সূত্রে প্রকাশ, “দেশে উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তেও অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসব অনিয়মের প্রতিকার মিলছে না। দু-একটি উদাহরণ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না।”

গোটা ২০২১ সাল, পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্রান্তিকাল বললে তা মোটেই অত্যুক্তি হবে না। দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২৬, ২০২২ লিখেছে, আইন মানছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ মানা বাধ্যতামূলক। আর এই আইন সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা তদারকির জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনও মানছে না, পাশাপাশি ইউজিসির নির্দেশনার বেশির ভাগ অগ্রাহ্য করছে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ‘রাজনৈতিক’ প্রভাবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে ব্যর্থ হচ্ছে এই তদারকি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।”

দৈনিক যুগান্তরে (জুলাই ২৬, ২০২২) আমার নিবন্ধ “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনঃ নিয়োগ নৈরাজ্য ও আইন অমান্যতা” বাংলাদেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া ছাড়াও এগুলোতে সিদ্ধান্তহীনতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ (ইউজিসি) প্রদত্ত তথ্য দেখা যায়, ১০৪ টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০ টিতে ভিসি পদ খালি রয়েছে, ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রো-ভিসি নেই এবং ৪৯ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। (সূত্রঃ ডেইলি সান) সূত্রটি আরও জানায়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০-এর ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে- প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারের মতো ব্যক্তিদের স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক।…উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অচলাবস্থাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া, নিয়োগ নৈরাজ্য ও আইন অমান্যতার প্রতিকারে কঠোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

দৈনিক যুগান্তর (আগস্ট ৫, ২০২২) “একাডেমিক উৎকর্ষতা ও দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্ব মানবসম্পদ উন্নয়নে আলোকবর্তিকা” শিক্ষা নিয়ে দুইহাজার একুশ সালে আমার ডজনখানেক আর্টিকেলের আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে রাষ্ট্রপতির (চ্যান্সেলর) ভূমিকা এবং ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ তাদের নির্বাচন পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা বিবেচনা করে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রতিনিধিত্ব, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণের নামে প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সমালোচনামূলক সংকেত প্রদান করে; ইস্যুটি নিয়ে আরও মনোযোগ দেয়া দরকার কারণ এ মূল্যবোধগুলি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মৌলিক ভিত্তি গঠন করে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করলে আমাদের বর্তমান ব্যবস্থার বিচ্যুতিগুলো সহজে ধরা পড়ে।…শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়া ও শিক্ষকতার মতো একটা পবিত্র ও মহান পেশা নিম্নস্তরে কোথায় নেমে যাচ্ছে এবং কেন নেমে যাচ্ছে তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার ও কাজ করার সময় এসে গেছে, বিলম্বে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের জারিকৃত নিয়োগ বিধি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের অনুমোদিত প্রবিধানমালার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের অনুষদ সদস্য (অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক), রেজিষ্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (আইকিউএসি) ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেধে দেয়া নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করার প্রবণতা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পদে নিয়োগের  উপায়/সুপারিশমালা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পদে নিয়োগের বর্তমান অবস্থা, বিদ্যমান সমস্যাবলি এবং এ সকল সমস্যা সমাধানের উপায়/সুপারিশমালা দেয়া হলো:

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মাবলিঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩১ ধারায় ভাইস-চ্যান্সেলর, ৩২ ধারায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ৩৩ ধারায় ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি-বিধান উল্লেখ রয়েছে। এসব আইনের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ৩৩ ধারা অনুযায়ী ট্রেজারার পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলের অনুমোদনে ৪ বছর মেয়াদের জন্য সকল পদে নিয়োগ লাভ করার বিধান রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যান্সেলর অনুমোদনের অনেক ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মের ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়।
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়মঃ সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি/প্রবিধানমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ প্রদান করলেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রার্থী নিয়োগ প্রদান করলেও কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন নিজদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে অনলাইন ওয়েভ সাইডে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নতুন ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে যাচ্ছে। কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন লাভ করার ক্ষেত্রে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভিসি প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের জন্য জোর দিয়ে থাকে যেখানে ট্রেজারার পদে নিয়োগ উপেক্ষিত হয়ে থাকে। এর ফলে পরবর্তী ৪ বছরেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আর ট্রেজারার নিয়োগের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে না এবং চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদনহীন ট্রেজারার ছাড়াই সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অবস্থা পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি/ ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে শুধুমাত্র অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে যার ফলে এতে কম সংখ্যক প্রার্থী আবেদনের সুযোগ পান। এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ সকল পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা ভিসি এবং ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেয়ে থাকে বা ট্রেজারার পদ শূণ্য থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০১০ এর ১৬(৯) উপ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতা ও দায়িত্ব হিসাবে ধারা ৩১, ৩২ এবং ৩৩ এর বিধান অনুসরণ করে চ্যান্সেলরের সমীপে প্রস্তাব পেশ করার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি/রেজিস্ট্রার অফিসকে জড়িত না করে নিজদের পদন্দের প্রার্থীর প্যানেল তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে থাকে। কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয় না। এ ধরনের প্যানেল প্রস্তাব ইউজিসির প্রক্রিয়া পর্যায়ে কখনও ধরা পড়লে যারা প্রস্তাবিত পদে নিয়োগের যোগ্যতা নেই তাদের নাম বাদ দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্যানেল প্রস্তাব ইউজিসিতে প্রেরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে নমনীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় অধিক যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীরা এ সকল পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও গুণগত শিক্ষা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। জানা যায় নিজদের সুবিধার্থে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য প্রার্থীকে নামমাত্র বাছাই করে চ্যান্সেলরের অনুমোদনের জন্য প্যানেল প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াকরণের নিমিত্তে প্রেরণ করে থাকে। 
  • অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে এবং বেতন-ভাতাদি আলোচনা সাপেক্ষে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। বাস্তবে এ সকল পদের প্রার্থীদেরকে ইন্টারভিউতে অনেক প্রার্থীর প্রত্যাশিত বেতন-ভাতাদি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় না বা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদেয় বেতন-ভাতাদি ও সুযোগ-সুবিধাদি সম্পর্কে জানানোও হয় না। এরূপ প্রেক্ষিতে কেহ এ সকল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগের প্রস্তাব পাবার পর নিয়োগ প্রাপ্ত পদের সুযোগ-সুবিধাদি প্রার্থীর জন্য প্রত্যাশিত বা বর্তমান চাকুরির থেকে কম হওয়ায় চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়েও নিয়োগপ্রাপ্ত পদে কেহ কেহ যোগদান করছেন না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, একটি জেলা শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে ৪০,০০০.০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা সাকুল্য বেতন প্রদান করা হয়েছে মর্মে জানা যায়। অপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নির্বাচিত প্রার্থীকে (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে) ১,০০,০০০.০০ (এক লক্ষ) টাকা সাকুল্য বেতন প্রস্তাব করায় যা তার বর্তমান বেতন হতে কম হওয়ায় চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদান করেনি মর্মে জানা যায়।
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কোন বয়সসীমা অনুসরণ করা হয় না। এ সুযোগের সুবাধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সব পদের প্রার্থীর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত কোন কোন মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সকল কোন পদের প্রার্থী বয়স ৭০ এর বেশি অজুহাতে প্রক্রিয়াকরণে প্রার্থী সকল বিষয়ে যোগ্য হলেও তাদের নাম অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে না। আবার কারো ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি উদারভাবে দেখা হয়। বর্তমানে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ বছরের অধিক প্রাক্তন অধ্যাপক ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের সুপারিশ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ হলো:

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভের পর ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারসহ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি অনলাইন জব সাইডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকেও উৎসাহিত করা;
  • যে সকল নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনও ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি সেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার তথা নুন্যতম ২ টি পদে নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা;
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিনিধি, চ্যান্সেলর নিয়োজিত ভিসি/প্রো-ভিসি/ট্রেজারার, বর্হিবিশেষজ্ঞ ও সরকারের মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যের সমন্বয়ে একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন নিশ্চিত করা;
  • কোন ক্ষেত্রে ইউজিসি হতে ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার পদের প্যানেল প্রস্তাবে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না থাকলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণের লক্ষ্যে পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাতে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীরা এ সকল পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন;
  • ৫) এ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের রেজুলেশন সম্বলিত ৩ জন প্রার্থীর যে প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণ করা হয় সেখানে অবশ্যই উল্লিখিত পদের বেতন-ভাতাদি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি যেমনঃ উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, গাড়ী সুবিধা/যাতায়ত ভাতা, গ্র্যাচুয়েটি ইত্যাদি) সম্পর্কে উল্লেখ থাকতে হবে যাতে কেহ নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর প্রার্থীভেদে এ সকল প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার তারতম্য/বৈষম্য সৃষ্টি করার কোন বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ না পায়। সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক/অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যে বেতন স্কেল রয়েছে এর নীচে বেতন প্রস্তাব করা যাবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে;
  • ৬) ভিসি/প্রো-ভিসি/ট্রেজারার নিয়োগ প্যানেল অনুমোদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ সকল পদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদি প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যাতে অনুমোদনের পর বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদির হ্রাস/বৃদ্ধি বা পরিবর্তনের কোন সুযোগ না থাকে। অধিকন্তু, ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক/অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যে বেতন স্কেল রয়েছে এর নীচে বেতন প্রস্তাব করা যাবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে; এবং ৭) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সার্বজনিন একটি নীতিমালা অনুসরণ করার বিধান চালু করা যেতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক নিয়োগের নিয়মাবলিঃ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫/০১/২০১৫ তারিখে সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্ধারিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সে মোতাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের অনুষদ সদস্য (অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক) নিয়োগ প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। (নিয়োগের নিয়মাবলিসমূহঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচ.ডি/সমমান ডিগ্রী অথবা এমফিল/সমমানের ডিগ্রীসহ শিক্ষা জীবনে কমপক্ষে দুইটি ১ম শ্রেণি/বিভাগ/এ গ্রেড থাকিতে হইবে। তন্মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর যে কোন একটিতে ১ম বিভাগ/শ্রেণি/এ গ্রেড থাকিতে হইবে। পিএইচডির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা। এমফিল এর ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কমপক্ষে ১৫ টি প্রকাশনা যার মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ৭ টি প্রকাশনা থাকতে হবে। অপরদিকে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের একইরূপ ডিগ্রী ও গ্রেড থাকতে হবে। পিএইচডি ডিগ্রীর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা, তন্মধ্যে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা। এছাড়া মোট ৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে, ৩টি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। এমফিল এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, ৪ বছর সহকারি অধ্যাপক হিসেবে ৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে; ৩টি সহকারি অধ্যাপক হিসেবে থাকতে হবে। অন্যান্য ডিগ্রী ও গ্রেডের ক্ষেত্রে মোট ১০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ৬ টি প্রকাশনা থাকতে হবে)।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম

বাস্তবে এ সকল পূরণ করে টপ ব্যাঙ্কিং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের থেকে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্ধারিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত যে নীতিমালা সময়ে জারি হয়েছে সে অনুযায়ী অভিজ্ঞতা ও প্রকাশনার সংখ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কম পারিশ্রমিক (বেতন, ভাতাদি) প্রদান করে নিয়ম বর্হিভুতভাবে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষতার নূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, প্রাসঙ্গিক শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রকাশনা নেই এমন প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে যাদের একটিও প্রকাশনা নেই এবং যাদের বেসরকারি/সরকারি কলেজে চাকুরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ধরনের নিয়োগ প্রদানের ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার গুণগত মান ব্যাহত হচ্ছে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক প্রতিবেদন বা বিশেষ প্রতিবেদন ইউজিসিতে দাখিল করে থাকে। এ সকল প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক কিছু সংখ্যক নমুনায়ন/নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত প্রাসংঙ্গিক ডাটাবেজ ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত নথির তথ্য পরীক্ষাকরণ (প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথে সে সময়ে প্রার্থীর দাখিলকৃত দরখাস্ত (ঈঠ) এর তথ্য পর্যালোচনা করা) হলে উত্থাপিত এ সব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে। এমনকি কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া যাবে; এবং
  • যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি বর্হিভুতভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের নিয়োগ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে বা এ বিষয়ে আইনানুগক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের নিয়মাবলি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ২৭ ধারায় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি গঠন এবং ৩৪ ধারার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ধারা এবং প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী সংবিধি প্রণয়ন এবং ৩৭ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের দৃষ্টান্ত রয়েছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সুপারিশক্রমে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর অনুমোদন এবং ইউজিসির সম্মতিক্রমে তা চুড়ান্তকরণ করার বিধানও রয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জীবন যাত্রার মান ন্যুনতম বজায় রাখার মত বেতন প্রদান করছে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম

দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়ন এসকল নিয়ম ও শর্তাবলী অনুসরণ করলেও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলো কর্তৃক নিজস্ব সংবিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশ কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো স্থায়ীভাবে পূরণ না করে সহযোগী অধ্যাপক বা সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বা একজন কর্মকর্তা বা শিক্ষককে একাধিক পদের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি/অনিয়ম দূরীকরণে সুপারিশসমূহ 

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সংবিধি ও ৪৩ ধারা অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো ও চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইউজিসির পূর্বেকার বা বর্তমান পত্র/প্রজ্ঞাপন অনুসরণ না করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে প্রদত্ত সকল নিয়োগ বাতিল করা, অনিয়মের জন্য ইউজিসি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালকে সতর্ক বা জরিমানা করা, মেয়াদ নবায়ন না করা বা নতুনভাবে সময় প্রদান বন্ধ/স্থগিত রাখা এবং নিধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ম অনুসরণ/বাস্তবায়ন করা না হলে এক/একাধিক সেমিস্টারের জন্য নতুন ছাত্র-ছাত্রী বদ্ধ স্থগিত করা;
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা রাখা এবং তা অনুসরণ নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসির ওয়েব সাইডে সংশ্লিষ্ট পদের তথ্য হালনাগাদ করা; ৩) যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূণ পদ যেমনঃ পরিচালক (আইকিউএসি), লাইব্রেরিয়ান, পরিচালক (স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার), প্রভৃতি কর্মকর্তা পর্যায়ের পদগুলো স্থায়ীভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণে ইউজিসির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ/ভূমিকা গ্রহণ এবং নির্দেশনা জারি করতে পারে; এবং
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্য সন্তুুষ্টি বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদ যেমনঃ শিক্ষক (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক), রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (আইকিইউএসি) এবং অন্যান্য পদের ন্যূনতম বেতন সরকারি বা বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রভৃতি পদের জন্য নির্ধারিত বেতন স্কেল এর কম হতে পারবে না মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়/ইউজিসি থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে।

শেষকথা

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সর্বোত্তম অনুশীলন কিনা তা ভেবে দেখার পূর্বে ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট এর অধীন বিতর্কিত সকল নিয়োগকে প্রতিরোধে ইউজিসির গৃহীত পদক্ষেপ এবং সংগঠিত দুর্নীতি ও সজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে অবশ্যই জনগণের জানা থাকা দরকার। বছরব্যাপী পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা, সঙ্কট, দুর্নীতি ও অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে নির্বিকার থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির সুপারিশের চেয়ে জবাবদিহিতা এ মুহূর্তে জরুরি। জরুরি, প্রথমে ইউজিসিকে কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় লোকবল প্রদান করা, স্বচ্ছতাকে উন্নত এবং নৈতিকতা সমুন্নত করা, তা হলেই স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।