০৮:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

বিশ্ব মেনোপজ দিবস ও নারীর স্বাস্থ্য

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৫১ বার পড়া হয়েছে

মেনোপজ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া

প্রতিবছর অক্টোবর মাসে স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। এছারা অক্টোবর মাসে বিশ্ব শিশু অধিকার, অস্টিও-পোরোসিস, বিশ্ব মানসিক বৈকল্য দিবস ইত্যাদির সঙ্গে বিশেষভাবে যোগ হয়েছে বিশ্ব মেনোপজ দিবস।

সমগ্র বিশ্বে সাড়া জাগানো একটি দিন ১৮ অক্টোবর— এই ১৮ অক্টোবর হলো বিশ্ব মেনোপজ দিবস। বিশ্বে আলোড়নের এই ঢেউয়ের দোলা আমাদের উন্নয়নশীল দেশেও লেগেছে। মেনোপজ-সম্পর্কিত শারীরিক ও মানসিক নানা ভোগান্তির সমাধানের লক্ষ্যে বরাবরের মতো তৎপর হয়েছে বাংলাদেশের মেনোপজ সোসাইটি।

পৃথিবী জুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের আয়ুষ্কাল। বাংলাদেশের মতো ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় বাস করছে ১৭ কোটি মানুষ। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ। পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতির একটি রেকর্ড। বিরাট এই জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এদের গড় আয়ু আজ ৭৪ বৎসর পার হয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্য প্রকল্প, মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষা ইত্যাদির ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার ক্রমে কমলে নারীর গড় আয়ু ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। ফলে বিপুল এই জনসংখ্যা, যার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তাদের জীবনের একটা দীর্ঘসময় কাটবে মেনোপজে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টাকে অর্থবহ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই করা দরকার। আমাদের দেশের যে ৮০ ভাগ মানুষ বাস করছে গ্রামগঞ্জে, বিশেষ করে তাদেরই সচেতন করে তুলতে হবে স্বাস্থ্য পরিচর্যায়। 

আপনি যখন চল্লিশের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে কিংবা পঞ্চাশের কোঠায়, তখন আপনার শরীর ও মন বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। সেটি হয়তো আগেই শুরু হয়েছে; কিন্তু আপনি প্রত্যক্ষ করবেন এই সময়। কারণ আপনার ‘ওভারি’ দুটি মাসিক নিয়ন্ত্রক হরমোন মহামূল্যবান ইস্টোজেন ও প্রজেস্টরোন তৈরি করা ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলবে। তখন আপনি যেসব সমস্যার সম্মুখীন হবেন, সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো—

মেনোপজের সমস্যাগুলো

  • হঠাৎ করে খুব গরম লাগা—শরীরের ওপরের অংশে একটা গরম ভাঁপের ঢেউ খেলে যায়। শরীরটা ঘেমে ওঠে, মাথা ঘুরে ওঠে, অস্থিরতা হতে পারে। (HOT Flush-হট ফ্লাশ) প্রচুর ঘাম হবে, বিশেষ করে রাতে। (Night Sweats)।
  • ঘুমের ব্যাঘাত ও অতিরিক্ত ঘাম শরীরটাকে ক্লান্ত, অবসন্ন করে তোলে।
  • স্মরণশক্তি ও মনোযোগের অভাব হতে পারে। মাথাব্যথা হতে পারে।
  • যোনিপথ বা urogenital area-র চামড়া হয় পাতলা ও শুষ্ক। সেজন্য সংক্রমণ ও চুলকানির প্রকোপ হতে পারে।
  • মাংসপেশি ঢিলা হওয়ার কারণে প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ কমে আসে এবং নানা রকম প্রসাবজনিত সমস্যা হতে পারে।
  • রক্তে চর্বির (cholesterol) পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে।
  • হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় তিরিশোর্ধ্ব বয়স থেকে। মেনোপজে তা যায় বেড়ে। প্রতি চার জনে একজন হাড় ভেঙে শয্যাশায়ী হবেন ৬০ বৎসর বয়সে। ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত শরীরের ৫০ শতাংশ হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। 
মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের হল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।
মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের হল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।

মেনোপজের সমস্যা নিরাময়ের উপায়

  • একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা প্রণালি ও নিয়মিত শরীরচর্চা।
  • WHO-র পরামর্শ হচ্ছে সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা অর্থাৎ ১৫০ মিনিট।
  • সুষম (balanced) সহজপাচ্য খাদ্যাভ্যাস। নির্ধারিত সময়ে পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করুন। মসলাযুক্ত খাবার, চিনি, লবণ ও প্রাণিজাত প্রোটিন কমিয়ে ফেলুন।
  • খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফলমূল, রঙিন শাকসবজি ও প্রচুর তরল জাতীয় ও পানীয় রাখুন। দুধ, দই, ছোট মাছ, ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • সারা দিনে কাজের ফাঁকে দুপুরে কিছুটা সময় বিশ্রাম এবং রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার নিরুদ্বেগ ঘুম শরীরটাকে রাখতে পারে ঝরঝরে ও মনকে সতেজ।
  • বছরে একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা—বিশেষ করে স্তন, জরায়ু ও ওভারির চেকআপ দরকার। হাড়ের সমস্যার জন্য BMD বা রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দেখতে হবে।
  • প্রয়োজনে ব্যক্তিবিশেষে ডাক্তার আপনাকে বিশেষ সমাধান হিসেবে ‘হরমোন’ (MHT) চিকিৎসা দিতে পারেন।
  • উপরিউক্ত নিয়মাবলি (লাইফ স্টাইল ও diet) যদি আপনি ৩০ বৎসর বয়স থেকে শুরু করেন তাহলে ‘মেনোপজে’ এসে আপনার কষ্ট অনেক কম হবে। 
  • এ প্রসঙ্গে দু-চারটি জরুরি বিষয় আরো উল্লেখ করা দরকার। সেটা হচ্ছে IMS (ইন্টারন্যাশনাল মেনোপজ সোসাইটি) ও CAMS (কাউন্সিল অব দ্য অ্যাফিলিয়েটেড মেনোপজ সোসাইটির)-এর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই মর্মে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনযাত্রার উন্নত মান (QOL), ক্যানসারসহ এই বয়সের বিভিন্ন সমস্যাবলি ও MHT (Menopausal hormone Therapy) সম্পর্কে সব জানা-অজানা কথা ও সন্দেহ নিরসনে গবেষণাভিত্তিক নতুন তথ্য প্রতিদিন আমাদের উপহার দিচ্ছেন তারা। প্রতি বছর IMS একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় বিশ্ব মেনোপজ দিবসে আলোচনার জন্য। এবারের বিষয়টি হচ্ছে ‘Cognition & Mood’। 

‘Cognition’ হচ্ছে চিন্তা, যুক্তি ও অনুধাবনের মধ্য দিয়ে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি অর্জনের সক্ষমতা। মনঃসংযোগ, দৃষ্টি, স্মৃতি ও ভাষার মধ্য দিয়ে কিছু করার শক্তি বা সামর্থ্য। এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, আমাদের Mood ফ্যাক্টরগুলি। প্রসন্নতা, বিষণ্নতা, ভয়ভীতি বা ক্রোধের মাধ্যমে যার বহিঃপ্রকাশ হয় মাত্র। Mood এবং  emotion বেশ জটিল ব্যাপার। এসবই (প্রভাবিত হয়), সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে, তিনটি ফ্যাক্টরের সমন্বয়ে। সেগুলি হচ্ছে Biology (হরমোন ও brain chemicals) Psychology (ব্যক্তিত্ব ও মন-মানসিকতা) এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। অর্থাৎ Environment (অসুস্থতা এবং  emotional stress) এখানে একটি হরমোনের কথা না বললেই নয়; সেটি হচ্ছে Dopamine, সেটাকে ইংরেজিতে ‘feel good hormone/ neurotransmitter’ বলা হয়। সেটি আমাদের ‘মুড’কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্মৃতি ও motor skills-এরও নিয়ন্ত্রক এটি।

ভুলে যাওয়া, মনঃসংযোগ করতে না পারা এসবই মধ্য বয়সের সমস্যা। তবে cognitionও moodএর ওপর MHT-র তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে দেখা যায়নি। ইস্ট্রোজেনকে মাইগ্রেন জাতীয় মাথাব্যথার সঙ্গে সম্পর্কিত দেখা গেছে। গবেষণা রিপোর্ট বলছে যে, স্বাভাবিক মেনোপজের স্মৃতি ও অন্যান্য cognition কর্মকাণ্ডের ওপর কোনো বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া নেই। ইস্ট্রোজন হরমোন স্বল্পসময়ের জন্য cognition benefit দিতে পারে সার্জারির (জরায়ু-ডিম্বাশয়) ঠিক পরপর।

বিজ্ঞানের আর একটি নতুন অবদানের কথা এখানে বলতে চাই। ‘ওভারি টিস্যু সংরক্ষণ’ নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানীরা এখন মেনোপজকে প্রতিহত করতে এবং মেনোপজের সমস্যাবলির ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক নিরাময় খুঁজতে ‘ওভারি টিস্যু সংরক্ষণ’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘প্রতিস্থাপন’ করার কথাও ভাবছেন। যেসব নারীর জন্য MHT উপযুক্ত নয় (যেমন : হৃদরোগ সমস্যা, DVT, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার) তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে সমাধান খুঁজতে পারেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এভাবে দীর্ঘ জীবনকে সুস্থতা এমনকি genetic engineering-এর মাধ্যমে অমরত্ব অর্জনের কথাও ভাবছে। 

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

বিশ্ব মেনোপজ দিবস ও নারীর স্বাস্থ্য

প্রকাশ: ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২

প্রতিবছর অক্টোবর মাসে স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। এছারা অক্টোবর মাসে বিশ্ব শিশু অধিকার, অস্টিও-পোরোসিস, বিশ্ব মানসিক বৈকল্য দিবস ইত্যাদির সঙ্গে বিশেষভাবে যোগ হয়েছে বিশ্ব মেনোপজ দিবস।

সমগ্র বিশ্বে সাড়া জাগানো একটি দিন ১৮ অক্টোবর— এই ১৮ অক্টোবর হলো বিশ্ব মেনোপজ দিবস। বিশ্বে আলোড়নের এই ঢেউয়ের দোলা আমাদের উন্নয়নশীল দেশেও লেগেছে। মেনোপজ-সম্পর্কিত শারীরিক ও মানসিক নানা ভোগান্তির সমাধানের লক্ষ্যে বরাবরের মতো তৎপর হয়েছে বাংলাদেশের মেনোপজ সোসাইটি।

পৃথিবী জুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের আয়ুষ্কাল। বাংলাদেশের মতো ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় বাস করছে ১৭ কোটি মানুষ। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ। পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতির একটি রেকর্ড। বিরাট এই জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এদের গড় আয়ু আজ ৭৪ বৎসর পার হয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্য প্রকল্প, মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষা ইত্যাদির ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার ক্রমে কমলে নারীর গড় আয়ু ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। ফলে বিপুল এই জনসংখ্যা, যার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তাদের জীবনের একটা দীর্ঘসময় কাটবে মেনোপজে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টাকে অর্থবহ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই করা দরকার। আমাদের দেশের যে ৮০ ভাগ মানুষ বাস করছে গ্রামগঞ্জে, বিশেষ করে তাদেরই সচেতন করে তুলতে হবে স্বাস্থ্য পরিচর্যায়। 

আপনি যখন চল্লিশের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে কিংবা পঞ্চাশের কোঠায়, তখন আপনার শরীর ও মন বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। সেটি হয়তো আগেই শুরু হয়েছে; কিন্তু আপনি প্রত্যক্ষ করবেন এই সময়। কারণ আপনার ‘ওভারি’ দুটি মাসিক নিয়ন্ত্রক হরমোন মহামূল্যবান ইস্টোজেন ও প্রজেস্টরোন তৈরি করা ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলবে। তখন আপনি যেসব সমস্যার সম্মুখীন হবেন, সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো—

মেনোপজের সমস্যাগুলো

  • হঠাৎ করে খুব গরম লাগা—শরীরের ওপরের অংশে একটা গরম ভাঁপের ঢেউ খেলে যায়। শরীরটা ঘেমে ওঠে, মাথা ঘুরে ওঠে, অস্থিরতা হতে পারে। (HOT Flush-হট ফ্লাশ) প্রচুর ঘাম হবে, বিশেষ করে রাতে। (Night Sweats)।
  • ঘুমের ব্যাঘাত ও অতিরিক্ত ঘাম শরীরটাকে ক্লান্ত, অবসন্ন করে তোলে।
  • স্মরণশক্তি ও মনোযোগের অভাব হতে পারে। মাথাব্যথা হতে পারে।
  • যোনিপথ বা urogenital area-র চামড়া হয় পাতলা ও শুষ্ক। সেজন্য সংক্রমণ ও চুলকানির প্রকোপ হতে পারে।
  • মাংসপেশি ঢিলা হওয়ার কারণে প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ কমে আসে এবং নানা রকম প্রসাবজনিত সমস্যা হতে পারে।
  • রক্তে চর্বির (cholesterol) পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে।
  • হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় তিরিশোর্ধ্ব বয়স থেকে। মেনোপজে তা যায় বেড়ে। প্রতি চার জনে একজন হাড় ভেঙে শয্যাশায়ী হবেন ৬০ বৎসর বয়সে। ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত শরীরের ৫০ শতাংশ হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। 
মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের হল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।
মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের হল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।

মেনোপজের সমস্যা নিরাময়ের উপায়

  • একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা প্রণালি ও নিয়মিত শরীরচর্চা।
  • WHO-র পরামর্শ হচ্ছে সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা অর্থাৎ ১৫০ মিনিট।
  • সুষম (balanced) সহজপাচ্য খাদ্যাভ্যাস। নির্ধারিত সময়ে পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করুন। মসলাযুক্ত খাবার, চিনি, লবণ ও প্রাণিজাত প্রোটিন কমিয়ে ফেলুন।
  • খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফলমূল, রঙিন শাকসবজি ও প্রচুর তরল জাতীয় ও পানীয় রাখুন। দুধ, দই, ছোট মাছ, ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • সারা দিনে কাজের ফাঁকে দুপুরে কিছুটা সময় বিশ্রাম এবং রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার নিরুদ্বেগ ঘুম শরীরটাকে রাখতে পারে ঝরঝরে ও মনকে সতেজ।
  • বছরে একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা—বিশেষ করে স্তন, জরায়ু ও ওভারির চেকআপ দরকার। হাড়ের সমস্যার জন্য BMD বা রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দেখতে হবে।
  • প্রয়োজনে ব্যক্তিবিশেষে ডাক্তার আপনাকে বিশেষ সমাধান হিসেবে ‘হরমোন’ (MHT) চিকিৎসা দিতে পারেন।
  • উপরিউক্ত নিয়মাবলি (লাইফ স্টাইল ও diet) যদি আপনি ৩০ বৎসর বয়স থেকে শুরু করেন তাহলে ‘মেনোপজে’ এসে আপনার কষ্ট অনেক কম হবে। 
  • এ প্রসঙ্গে দু-চারটি জরুরি বিষয় আরো উল্লেখ করা দরকার। সেটা হচ্ছে IMS (ইন্টারন্যাশনাল মেনোপজ সোসাইটি) ও CAMS (কাউন্সিল অব দ্য অ্যাফিলিয়েটেড মেনোপজ সোসাইটির)-এর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই মর্মে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনযাত্রার উন্নত মান (QOL), ক্যানসারসহ এই বয়সের বিভিন্ন সমস্যাবলি ও MHT (Menopausal hormone Therapy) সম্পর্কে সব জানা-অজানা কথা ও সন্দেহ নিরসনে গবেষণাভিত্তিক নতুন তথ্য প্রতিদিন আমাদের উপহার দিচ্ছেন তারা। প্রতি বছর IMS একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় বিশ্ব মেনোপজ দিবসে আলোচনার জন্য। এবারের বিষয়টি হচ্ছে ‘Cognition & Mood’। 

‘Cognition’ হচ্ছে চিন্তা, যুক্তি ও অনুধাবনের মধ্য দিয়ে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি অর্জনের সক্ষমতা। মনঃসংযোগ, দৃষ্টি, স্মৃতি ও ভাষার মধ্য দিয়ে কিছু করার শক্তি বা সামর্থ্য। এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, আমাদের Mood ফ্যাক্টরগুলি। প্রসন্নতা, বিষণ্নতা, ভয়ভীতি বা ক্রোধের মাধ্যমে যার বহিঃপ্রকাশ হয় মাত্র। Mood এবং  emotion বেশ জটিল ব্যাপার। এসবই (প্রভাবিত হয়), সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে, তিনটি ফ্যাক্টরের সমন্বয়ে। সেগুলি হচ্ছে Biology (হরমোন ও brain chemicals) Psychology (ব্যক্তিত্ব ও মন-মানসিকতা) এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। অর্থাৎ Environment (অসুস্থতা এবং  emotional stress) এখানে একটি হরমোনের কথা না বললেই নয়; সেটি হচ্ছে Dopamine, সেটাকে ইংরেজিতে ‘feel good hormone/ neurotransmitter’ বলা হয়। সেটি আমাদের ‘মুড’কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্মৃতি ও motor skills-এরও নিয়ন্ত্রক এটি।

ভুলে যাওয়া, মনঃসংযোগ করতে না পারা এসবই মধ্য বয়সের সমস্যা। তবে cognitionও moodএর ওপর MHT-র তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে দেখা যায়নি। ইস্ট্রোজেনকে মাইগ্রেন জাতীয় মাথাব্যথার সঙ্গে সম্পর্কিত দেখা গেছে। গবেষণা রিপোর্ট বলছে যে, স্বাভাবিক মেনোপজের স্মৃতি ও অন্যান্য cognition কর্মকাণ্ডের ওপর কোনো বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া নেই। ইস্ট্রোজন হরমোন স্বল্পসময়ের জন্য cognition benefit দিতে পারে সার্জারির (জরায়ু-ডিম্বাশয়) ঠিক পরপর।

বিজ্ঞানের আর একটি নতুন অবদানের কথা এখানে বলতে চাই। ‘ওভারি টিস্যু সংরক্ষণ’ নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানীরা এখন মেনোপজকে প্রতিহত করতে এবং মেনোপজের সমস্যাবলির ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক নিরাময় খুঁজতে ‘ওভারি টিস্যু সংরক্ষণ’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘প্রতিস্থাপন’ করার কথাও ভাবছেন। যেসব নারীর জন্য MHT উপযুক্ত নয় (যেমন : হৃদরোগ সমস্যা, DVT, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার) তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে সমাধান খুঁজতে পারেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এভাবে দীর্ঘ জীবনকে সুস্থতা এমনকি genetic engineering-এর মাধ্যমে অমরত্ব অর্জনের কথাও ভাবছে।