১১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

সামি ইউসুফ— ইসলামি সংগীতের নক্ষত্র

আবু রাইহান
  • প্রকাশ: ০৬:৪৮:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২
  • / ৫১০ বার পড়া হয়েছে

সামি ইউসুফ— ইসলামি সংগীতের নক্ষত্র

ইসলামি সংগীতের দেদীপ্যমান নক্ষত্র সামি ইউসুফ। সারা পৃথিবীর রেডিও, টেলিভিশন, নগরচত্বর, স্টেডিয়াম থেকে জনাকীর্ণ কনসার্ট হল- সর্বত্রই শোনা যায় সামি ইউসুফের আকর্ষণীয় কন্ঠের সুমধুর সুর। সামি ইউসুফ সম্ভবত ইসলামি চেতনাসম্পন্ন একমাত্র মুসলিম শিল্পী যাকে দুনিয়ার তাবৎ মূলধারার প্রচারমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছে। সামি ইউসুফ হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী যাকে তাজিকিস্তানে প্রেসিডেন্টের মতো অভ্যর্থনা জানানো হয়, তুরস্কে যার কনসার্টে লক্ষ লোকের ঢল নামে, মধ্যপ্রাচ্যে যার ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যার কোনো হিসাব নেই।

সামি ইউসুফকে কেউ বলে ‘Islam’s Biggest Rockstar’— আবার কেউ বলে, ‘The Biggest British Star in the Middle East’। বেশিরভাগ মানুষ তাকে প্রখ্যাত ইসলামি সংগীতশিল্পী বা কন্ঠশিল্পী হিসেবে চিনলেও তার পরিচয় আরো বেশি ব্যাপক, আরো বেশি বিস্তৃত। সামি ইউসুফের পারদর্শিতা শুধু কন্ঠের সুনিপুণ ব্যবহারে জাদুময় সুরের প্রক্ষেপণেই নয়, সেই মোহনীয় সুরের স্রষ্টাও তিনিই। বহুবিধ বাদ্যযন্ত্রে অসাধারণ দক্ষতা তাঁর সংগীত প্রতিভাকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। সংগীত প্রযোজনার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে। সেই সাথে তাঁর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মানবতার এক মহান সেবকের ভূমিকায় আবির্ভুত হওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামি ইউসুফকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

১৯৮০ সালের জুলাই ইরানের আধুনিক রাজধানী তেহরানের এক সংগীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সামি ইউসুফ। তাঁর বাবা-মা দু’জনই ছিলেন সংগীতাঙ্গনের মানুষ। তাঁর বয়স যখন তিন বছর, তখন তাঁর পরিবার পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। লন্ডনে সামি ইউসুফের বাবা বাবাক রাদমানেশ ছিলেন বিখ্যাত ইরানি কবি, গীতিকার ও সুরকার। তিনি ইরানি শিল্পীদের জন্য গান লিখতেন, সুর করতেন। সেই সুবাদে ইরানের প্রথিতযশা শিল্পীদের যাতায়াত ছিল সামি ইউসুফদের বাসায়। শৈশবে বিশিষ্ট শিল্পীদের সান্নিধ্য তাঁর সংগীতজ্ঞ ক্যারিয়ারে প্রখ্যাত শিল্পীদের সাথে কাজ করার আত্মবিশ্বাস ও সাহস যুগিয়েছিল। সামি ইউসুফের সৃষ্টিশীল সুরযাত্রার শুরু তাঁর বাবার হাত ধরে। তাঁর বাবা শুধু সুরকারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহু বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী একজন দক্ষ সংগীতজ্ঞ। তিনি সংগীতের নামকরা শিক্ষকও ছিলেন। বাবার কল্যাণে সব ধরনের গানের সাথে সামির পরিচয় হয় শৈশবেই। সেই ছোটবেলাতেই সংগীতের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। তবে তাঁর শুরুটা গান দিয়ে নয়, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে। টনবাক নামের একটি পার্সিয়ান বাদ্যযন্ত্র দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। এরপর সামি পিয়ানো, ভায়োলিনের মতো আধুনিক বাদ্যযন্ত্র থেকে সানতুর, ওউদ, তার, ডাফের মতো ঐতিহ্যবাহী ইরানি, তুর্কি, সিরিয়ান বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে শেখেন।

সামি ইউসুফের বয়স যখন ষোল বছর তখন তাঁর মনে ইসলামি চেতনা ও মূল্যবোধ জাগরিত হয়। তিনি ইসলামের জন্য কাজ করতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি মিউজিক ছেড়ে দিয়ে আইন পড়তে মনস্থ করেন। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু বারা খেরিজি তাঁকে বোঝালেন যে, গানের মাধ্যমেও আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা সম্ভব। সম্ভব সেই ভালবাসাকে দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া। সামি ইউসুফ তাঁর বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হন। তারপর তিনি পৃথিবীতে সংগীতশিক্ষার অন্যতম সেরা পীঠস্থান রয়্যাল মিউজিক কলেজ অফ লন্ডন থেকে প্রাচ্য ও ভারতীয় সংগীতশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন। সামি ইউসুফ চেয়েছিলেন সুরকার বা সংগীতজ্ঞ হতে। কন্ঠশিল্পী হওয়ার কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। তিনি কন্ঠশিল্পী হয়ে ওঠেন নিছক দুর্ঘটনাবশত। একবার বিখ্যাত পার্সিয়ান শিল্পী ওমিদকে গানের ডেমো দেয়ার কথা ছিল সামির বাবার। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ায় ডেমো দিতে গেলেন সামি ইউসুফ। তাঁর ডেমো শুনে ওমিদ বলেছিলেন, দারুণ গেয়েছেন সামি। সামি ইউসুফের পরিবারও এরপর তাঁকে উৎসাহ দেয় গান গাইতে। তারপর সামি প্রস্তুতি নেন গানের অ্যালবাম বের করার।

সামি ইউসুফ যখন প্রথম শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তখন তাঁর অসাধারণ কন্ঠ, তাঁর গানের শান্তি আর ভালবাসার বার্তা আর তাঁর সৌম্য চেহারা ও অত্যন্ত বিনয়ী আচরণে মুগ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই বলে সামি ইউসুফ যে শুধু তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় তা ভাবার কোনো কারণ নেই। সব বয়সের, সব আদর্শের, সব ধর্মের মানুষ তাঁর গান শোনেন। অনেকের কাছেই তিনি রীতিমতো নায়ক। এরকম অসাধারণ ব্যক্তিত্বের, অনুপম গায়কীর, তুমুল জনপ্রিয় আর ভালবাসার এক শিল্পীর গান যে মানুষ সরাসরি শুনতে চাইবে তা তো খুবই স্বাভাবিক। তাঁর জনপ্রিয়তা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা— চার মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত। তাই চার মহাদেশ ভ্রমণ করেই তাঁর ভক্তদের জন্য কনসার্ট করেন। তিনি লন্ডনের ওয়েম্বলি এরেনা, লস এঞ্জেলস-এর শ্রিন অডিটরিয়াম, কেপটাউনের ভেলোড্রম-এর মতো জায়গায় গান গেয়েছেন। তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলের তাকসীম স্কয়ারে তাঁর গান শুনতে ভিড় করে আড়াই লক্ষ মানুষ! এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসি বা দুবাইয়ের মতো রাজকীয় শহরগুলোতেও তিনি গান গেয়েছেন। তাঁর মাতৃভূমি আজারবাইজানে তিনি প্রথম গান করেন ২০০৬ সালে। দ্বিতীয়বার আজারবাইজানে তাঁকে গান গাইতে দেখা যায় রাজধানী বাকুর হায়দার আলিয়েভ প্যালেসে ২০১৭ সালে।

২৩ বছর বয়সে ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় সামি ইউসুফের প্রথম অ্যালবাম Al Mu’allim। এই অ্যালবামের সব গানের প্রযোজনা, সুর সৃষ্টি, সংগীত পরিবেশনা সবই তিনি একাই করেছিলেন। আটটি ট্র্যাক সম্বলিত অ্যালবামটি বের হওয়ার সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। অ্যালবামটির ফিচার গান ‘Al Mu’allim’ মুসলিম বিশ্বে তাৎক্ষণিকভাবে তুমুল হিট পায় এবং তুরস্ক ও মিশরে পর পর বারো সপ্তাহ ধরে টপ চার্ট দখল করে রাখে। বিশ্বব্যাপী অ্যালবামটির বিক্রি সাত মিলিয়ন কপি ছাড়িয়ে যায়। এই অ্যালবামটির শেষ ট্র্যাক ‘Supplication’ ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত, হলিউড সিনেমা The Kite Runner-এ ব্যবহৃত হয়। এরপর সামি ইউসুফের ২০০৫ সালে প্রকাশিত হওয়া তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম My Ummah তাঁর জন্য বয়ে নিয়ে আসে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা। চৌদ্দটি ট্র্যাকের এই অ্যালবামে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুই ধরনের মিউজিকের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী সব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এই অ্যালবামের ‘Hasbi Rabbi’ গানটি মিশরে ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায় এবং অ্যালবামটি চার মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়।

তারপর বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রোলিং স্টোনের মতো পৃথিবীর খ্যাতনামা মূলধারার প্রচারমাধ্যমগুলো তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করে। ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন সামি ইউসুফকে ‘Islam’s Biggest Rockstar’ আখ্যা দেয়। দ্য গার্ডিয়ান তাঁকে বলে ‘Biggest British Star in the Middle East’, আল-জাজিরা বলে ‘King of Islamic Pop’। সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে University of Roehampton তাঁকে সম্মানসূচক ‘Doctors of Letters’ ডিগ্রি প্রদান করে। এরই মাধ্যমে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেন মার্ক টোয়েন, জে. কে. রোলিং, রবার্ট ফ্রস্টদের কাতারে। ২০০৯ সালে তাঁর নাম ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায়।

সামি ইউসুফের ষষ্ঠ অ্যালবাম Songs of the Way এই অ্যালবামের গানের কথাগুলো নেওয়া হয়েছে ইরানি দার্শনিক সাইয়্যেদ হোসাইন নাসের-এর কাব্যগ্রন্থ Poems of the way এবং The Pilgrimage of Life থেকে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সপ্তম অ্যালবাম Barakah। বারাকাহ অ্যালবামটি ঐতিহ্যবাহী সংগীত এবং কবিতা সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণার ফলাফল। সামি ইউসুফ বলেছিলেন যে এটি আজকের বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা এবং গোলমালের প্রতি তাঁর সংগীত প্রতিক্রিয়া। এবং তাঁর ইচ্ছা এই সংগীত এবং সুরগুলি শান্তি এবং সম্প্রীতির অভ্যন্তরীণ মরুদ্যানে একটি উইন্ডো সরবরাহ করে। বরাকাহ’র ‘মস্ত কলন্দর’ গানটি আইটিউনস এবং বিবিসি সংগীতে বিশ্ব সংগীত চার্টে এক নম্বরে।

সামি ইউসুফ— ইসলামি সংগীতের নক্ষত্র
সামি ইউসুফ তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবধারার গান গেয়েছেন ইংরেজি, আর, তুর্কি, ফারসি, আজেরি, উর্দু ও মালয় ভাষায়। তিনি গান গেয়েছেন সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য। সামি ইউসুফ তাঁর মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মানবসেবায় নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

সামি ইউসুফ যে বিশেষ ধাঁচের গান করেন সেটাকে অনেকে ইসলামি রক বলতে চান। কেউ আবার এটাকে বলতে চান ইসলামি পপ সংস্কৃতি। সামি ইউসুফ মনে করেন, তাঁর গান এক ধরনের পবিত্র সংগীত, যাকে পপ তো নয়ই, কোনো প্রচলিত সংগীত-প্রকরণের মধ্যে ফেলা যায় না। বরং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রকরণ। তিনি এই ধারার সংগীতের নাম দিয়েছেন Spiritique (স্পিরিটিক)। সামি ইউসুফ বলেন, স্পিরিটিক হচ্ছে অসীম জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, ‘সব ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতেই কিছু জ্ঞান বা সত্য আছে। সেটা বুলি শাহ বা জালালুদ্দীন রুমির দর্শনই হোক আর এরিস্টটলের মতো গ্রিক দার্শনিকদের শিক্ষাই হোক, আমি সেই সত্যের কথা বলি। আমি পবিত্রতাকে পছন্দ করি। আমি আধ্যাত্মিকতাকে ভালবাসি। আমি আমার ইসলামি বিশ্বাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করি। আমার ধর্মবিশ্বাস আমাকে গান গাইতে অনুপ্রাণিত করে।’

সামি ইউসুফ তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবধারার গান গেয়েছেন ইংরেজি, আর, তুর্কি, ফারসি, আজেরি, উর্দু ও মালয় ভাষায়। তিনি গান গেয়েছেন সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য। সামি ইউসুফ তাঁর মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মানবসেবায় নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

২০১০ সালে তিনি পাকিস্তানের আগ্রাসী বন্যায় আক্রান্তদের সাহাযার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্য সামি ইউসুফ একক ‘Here You Call’ গানটি গান। হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য গান ‘In Every Tears’ গানটি। ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ উপদ্বীপের দেশ ইথিওপিয়ার খরাজনিত দুর্ভিক্ষে আক্রান্তদের জন্য সামি ইউসুফ গেয়েছেন ‘Forgotten Pomises’ গানটি। সিরিয়ার নিপীড়িত মানুষদের জন্য গেয়েছেন ‘Silent Words’ গানটি। রাষ্ট্রসংঘের ক্ষুধাসমস্যা নিরসনে World Food Program (WFP)-এ UN Global Ambassador হিসেবে কাজ করেছেন। World Interfaith Harmony Week-এ UN Elite Ambassasorএর ভূমিকা পালন করেন সামি ইউসুফ।

বর্তমান সময়ে ইসলামি সংগীতের কথা বললে মানুষ একবাক্যে যাকে চেনে তিনি সামি ইউসুফ। ইসলামি বা আধ্যাত্মিক গান গেয়ে তাঁর মতো জনপ্রিয়তা খুব কম শিল্পীই পেয়েছেন। বেঁচে থাকুন সামি ইউসুফ তাঁর পবিত্র সুরে, বিশুদ্ধ গানপ্রিয় মানুষের অন্তরে।

নামসামি ইউসুফ (Sami Yusuf)
জন্মজুলাই ২১, ১৯৮০; তেহরান, ইরান
জাতীয়তাব্রিটিশ
উল্লেখযোগ্য অ্যালবামMy Ummah, Al-Mu’allim, Wherever You Are

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

সামি ইউসুফ— ইসলামি সংগীতের নক্ষত্র

প্রকাশ: ০৬:৪৮:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২

ইসলামি সংগীতের দেদীপ্যমান নক্ষত্র সামি ইউসুফ। সারা পৃথিবীর রেডিও, টেলিভিশন, নগরচত্বর, স্টেডিয়াম থেকে জনাকীর্ণ কনসার্ট হল- সর্বত্রই শোনা যায় সামি ইউসুফের আকর্ষণীয় কন্ঠের সুমধুর সুর। সামি ইউসুফ সম্ভবত ইসলামি চেতনাসম্পন্ন একমাত্র মুসলিম শিল্পী যাকে দুনিয়ার তাবৎ মূলধারার প্রচারমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছে। সামি ইউসুফ হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী যাকে তাজিকিস্তানে প্রেসিডেন্টের মতো অভ্যর্থনা জানানো হয়, তুরস্কে যার কনসার্টে লক্ষ লোকের ঢল নামে, মধ্যপ্রাচ্যে যার ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যার কোনো হিসাব নেই।

সামি ইউসুফকে কেউ বলে ‘Islam’s Biggest Rockstar’— আবার কেউ বলে, ‘The Biggest British Star in the Middle East’। বেশিরভাগ মানুষ তাকে প্রখ্যাত ইসলামি সংগীতশিল্পী বা কন্ঠশিল্পী হিসেবে চিনলেও তার পরিচয় আরো বেশি ব্যাপক, আরো বেশি বিস্তৃত। সামি ইউসুফের পারদর্শিতা শুধু কন্ঠের সুনিপুণ ব্যবহারে জাদুময় সুরের প্রক্ষেপণেই নয়, সেই মোহনীয় সুরের স্রষ্টাও তিনিই। বহুবিধ বাদ্যযন্ত্রে অসাধারণ দক্ষতা তাঁর সংগীত প্রতিভাকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। সংগীত প্রযোজনার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে। সেই সাথে তাঁর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মানবতার এক মহান সেবকের ভূমিকায় আবির্ভুত হওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামি ইউসুফকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

১৯৮০ সালের জুলাই ইরানের আধুনিক রাজধানী তেহরানের এক সংগীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সামি ইউসুফ। তাঁর বাবা-মা দু’জনই ছিলেন সংগীতাঙ্গনের মানুষ। তাঁর বয়স যখন তিন বছর, তখন তাঁর পরিবার পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। লন্ডনে সামি ইউসুফের বাবা বাবাক রাদমানেশ ছিলেন বিখ্যাত ইরানি কবি, গীতিকার ও সুরকার। তিনি ইরানি শিল্পীদের জন্য গান লিখতেন, সুর করতেন। সেই সুবাদে ইরানের প্রথিতযশা শিল্পীদের যাতায়াত ছিল সামি ইউসুফদের বাসায়। শৈশবে বিশিষ্ট শিল্পীদের সান্নিধ্য তাঁর সংগীতজ্ঞ ক্যারিয়ারে প্রখ্যাত শিল্পীদের সাথে কাজ করার আত্মবিশ্বাস ও সাহস যুগিয়েছিল। সামি ইউসুফের সৃষ্টিশীল সুরযাত্রার শুরু তাঁর বাবার হাত ধরে। তাঁর বাবা শুধু সুরকারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহু বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী একজন দক্ষ সংগীতজ্ঞ। তিনি সংগীতের নামকরা শিক্ষকও ছিলেন। বাবার কল্যাণে সব ধরনের গানের সাথে সামির পরিচয় হয় শৈশবেই। সেই ছোটবেলাতেই সংগীতের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। তবে তাঁর শুরুটা গান দিয়ে নয়, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে। টনবাক নামের একটি পার্সিয়ান বাদ্যযন্ত্র দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। এরপর সামি পিয়ানো, ভায়োলিনের মতো আধুনিক বাদ্যযন্ত্র থেকে সানতুর, ওউদ, তার, ডাফের মতো ঐতিহ্যবাহী ইরানি, তুর্কি, সিরিয়ান বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে শেখেন।

সামি ইউসুফের বয়স যখন ষোল বছর তখন তাঁর মনে ইসলামি চেতনা ও মূল্যবোধ জাগরিত হয়। তিনি ইসলামের জন্য কাজ করতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি মিউজিক ছেড়ে দিয়ে আইন পড়তে মনস্থ করেন। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু বারা খেরিজি তাঁকে বোঝালেন যে, গানের মাধ্যমেও আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা সম্ভব। সম্ভব সেই ভালবাসাকে দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া। সামি ইউসুফ তাঁর বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হন। তারপর তিনি পৃথিবীতে সংগীতশিক্ষার অন্যতম সেরা পীঠস্থান রয়্যাল মিউজিক কলেজ অফ লন্ডন থেকে প্রাচ্য ও ভারতীয় সংগীতশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন। সামি ইউসুফ চেয়েছিলেন সুরকার বা সংগীতজ্ঞ হতে। কন্ঠশিল্পী হওয়ার কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। তিনি কন্ঠশিল্পী হয়ে ওঠেন নিছক দুর্ঘটনাবশত। একবার বিখ্যাত পার্সিয়ান শিল্পী ওমিদকে গানের ডেমো দেয়ার কথা ছিল সামির বাবার। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ায় ডেমো দিতে গেলেন সামি ইউসুফ। তাঁর ডেমো শুনে ওমিদ বলেছিলেন, দারুণ গেয়েছেন সামি। সামি ইউসুফের পরিবারও এরপর তাঁকে উৎসাহ দেয় গান গাইতে। তারপর সামি প্রস্তুতি নেন গানের অ্যালবাম বের করার।

সামি ইউসুফ যখন প্রথম শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তখন তাঁর অসাধারণ কন্ঠ, তাঁর গানের শান্তি আর ভালবাসার বার্তা আর তাঁর সৌম্য চেহারা ও অত্যন্ত বিনয়ী আচরণে মুগ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই বলে সামি ইউসুফ যে শুধু তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় তা ভাবার কোনো কারণ নেই। সব বয়সের, সব আদর্শের, সব ধর্মের মানুষ তাঁর গান শোনেন। অনেকের কাছেই তিনি রীতিমতো নায়ক। এরকম অসাধারণ ব্যক্তিত্বের, অনুপম গায়কীর, তুমুল জনপ্রিয় আর ভালবাসার এক শিল্পীর গান যে মানুষ সরাসরি শুনতে চাইবে তা তো খুবই স্বাভাবিক। তাঁর জনপ্রিয়তা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা— চার মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত। তাই চার মহাদেশ ভ্রমণ করেই তাঁর ভক্তদের জন্য কনসার্ট করেন। তিনি লন্ডনের ওয়েম্বলি এরেনা, লস এঞ্জেলস-এর শ্রিন অডিটরিয়াম, কেপটাউনের ভেলোড্রম-এর মতো জায়গায় গান গেয়েছেন। তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলের তাকসীম স্কয়ারে তাঁর গান শুনতে ভিড় করে আড়াই লক্ষ মানুষ! এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসি বা দুবাইয়ের মতো রাজকীয় শহরগুলোতেও তিনি গান গেয়েছেন। তাঁর মাতৃভূমি আজারবাইজানে তিনি প্রথম গান করেন ২০০৬ সালে। দ্বিতীয়বার আজারবাইজানে তাঁকে গান গাইতে দেখা যায় রাজধানী বাকুর হায়দার আলিয়েভ প্যালেসে ২০১৭ সালে।

২৩ বছর বয়সে ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় সামি ইউসুফের প্রথম অ্যালবাম Al Mu’allim। এই অ্যালবামের সব গানের প্রযোজনা, সুর সৃষ্টি, সংগীত পরিবেশনা সবই তিনি একাই করেছিলেন। আটটি ট্র্যাক সম্বলিত অ্যালবামটি বের হওয়ার সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। অ্যালবামটির ফিচার গান ‘Al Mu’allim’ মুসলিম বিশ্বে তাৎক্ষণিকভাবে তুমুল হিট পায় এবং তুরস্ক ও মিশরে পর পর বারো সপ্তাহ ধরে টপ চার্ট দখল করে রাখে। বিশ্বব্যাপী অ্যালবামটির বিক্রি সাত মিলিয়ন কপি ছাড়িয়ে যায়। এই অ্যালবামটির শেষ ট্র্যাক ‘Supplication’ ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত, হলিউড সিনেমা The Kite Runner-এ ব্যবহৃত হয়। এরপর সামি ইউসুফের ২০০৫ সালে প্রকাশিত হওয়া তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম My Ummah তাঁর জন্য বয়ে নিয়ে আসে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা। চৌদ্দটি ট্র্যাকের এই অ্যালবামে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুই ধরনের মিউজিকের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী সব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এই অ্যালবামের ‘Hasbi Rabbi’ গানটি মিশরে ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায় এবং অ্যালবামটি চার মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়।

তারপর বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রোলিং স্টোনের মতো পৃথিবীর খ্যাতনামা মূলধারার প্রচারমাধ্যমগুলো তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করে। ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন সামি ইউসুফকে ‘Islam’s Biggest Rockstar’ আখ্যা দেয়। দ্য গার্ডিয়ান তাঁকে বলে ‘Biggest British Star in the Middle East’, আল-জাজিরা বলে ‘King of Islamic Pop’। সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে University of Roehampton তাঁকে সম্মানসূচক ‘Doctors of Letters’ ডিগ্রি প্রদান করে। এরই মাধ্যমে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেন মার্ক টোয়েন, জে. কে. রোলিং, রবার্ট ফ্রস্টদের কাতারে। ২০০৯ সালে তাঁর নাম ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায়।

সামি ইউসুফের ষষ্ঠ অ্যালবাম Songs of the Way এই অ্যালবামের গানের কথাগুলো নেওয়া হয়েছে ইরানি দার্শনিক সাইয়্যেদ হোসাইন নাসের-এর কাব্যগ্রন্থ Poems of the way এবং The Pilgrimage of Life থেকে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সপ্তম অ্যালবাম Barakah। বারাকাহ অ্যালবামটি ঐতিহ্যবাহী সংগীত এবং কবিতা সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণার ফলাফল। সামি ইউসুফ বলেছিলেন যে এটি আজকের বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা এবং গোলমালের প্রতি তাঁর সংগীত প্রতিক্রিয়া। এবং তাঁর ইচ্ছা এই সংগীত এবং সুরগুলি শান্তি এবং সম্প্রীতির অভ্যন্তরীণ মরুদ্যানে একটি উইন্ডো সরবরাহ করে। বরাকাহ’র ‘মস্ত কলন্দর’ গানটি আইটিউনস এবং বিবিসি সংগীতে বিশ্ব সংগীত চার্টে এক নম্বরে।

সামি ইউসুফ— ইসলামি সংগীতের নক্ষত্র
সামি ইউসুফ তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবধারার গান গেয়েছেন ইংরেজি, আর, তুর্কি, ফারসি, আজেরি, উর্দু ও মালয় ভাষায়। তিনি গান গেয়েছেন সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য। সামি ইউসুফ তাঁর মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মানবসেবায় নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

সামি ইউসুফ যে বিশেষ ধাঁচের গান করেন সেটাকে অনেকে ইসলামি রক বলতে চান। কেউ আবার এটাকে বলতে চান ইসলামি পপ সংস্কৃতি। সামি ইউসুফ মনে করেন, তাঁর গান এক ধরনের পবিত্র সংগীত, যাকে পপ তো নয়ই, কোনো প্রচলিত সংগীত-প্রকরণের মধ্যে ফেলা যায় না। বরং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রকরণ। তিনি এই ধারার সংগীতের নাম দিয়েছেন Spiritique (স্পিরিটিক)। সামি ইউসুফ বলেন, স্পিরিটিক হচ্ছে অসীম জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, ‘সব ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতেই কিছু জ্ঞান বা সত্য আছে। সেটা বুলি শাহ বা জালালুদ্দীন রুমির দর্শনই হোক আর এরিস্টটলের মতো গ্রিক দার্শনিকদের শিক্ষাই হোক, আমি সেই সত্যের কথা বলি। আমি পবিত্রতাকে পছন্দ করি। আমি আধ্যাত্মিকতাকে ভালবাসি। আমি আমার ইসলামি বিশ্বাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করি। আমার ধর্মবিশ্বাস আমাকে গান গাইতে অনুপ্রাণিত করে।’

সামি ইউসুফ তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবধারার গান গেয়েছেন ইংরেজি, আর, তুর্কি, ফারসি, আজেরি, উর্দু ও মালয় ভাষায়। তিনি গান গেয়েছেন সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য। সামি ইউসুফ তাঁর মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মানবসেবায় নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

২০১০ সালে তিনি পাকিস্তানের আগ্রাসী বন্যায় আক্রান্তদের সাহাযার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্য সামি ইউসুফ একক ‘Here You Call’ গানটি গান। হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য গান ‘In Every Tears’ গানটি। ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ উপদ্বীপের দেশ ইথিওপিয়ার খরাজনিত দুর্ভিক্ষে আক্রান্তদের জন্য সামি ইউসুফ গেয়েছেন ‘Forgotten Pomises’ গানটি। সিরিয়ার নিপীড়িত মানুষদের জন্য গেয়েছেন ‘Silent Words’ গানটি। রাষ্ট্রসংঘের ক্ষুধাসমস্যা নিরসনে World Food Program (WFP)-এ UN Global Ambassador হিসেবে কাজ করেছেন। World Interfaith Harmony Week-এ UN Elite Ambassasorএর ভূমিকা পালন করেন সামি ইউসুফ।

বর্তমান সময়ে ইসলামি সংগীতের কথা বললে মানুষ একবাক্যে যাকে চেনে তিনি সামি ইউসুফ। ইসলামি বা আধ্যাত্মিক গান গেয়ে তাঁর মতো জনপ্রিয়তা খুব কম শিল্পীই পেয়েছেন। বেঁচে থাকুন সামি ইউসুফ তাঁর পবিত্র সুরে, বিশুদ্ধ গানপ্রিয় মানুষের অন্তরে।

নামসামি ইউসুফ (Sami Yusuf)
জন্মজুলাই ২১, ১৯৮০; তেহরান, ইরান
জাতীয়তাব্রিটিশ
উল্লেখযোগ্য অ্যালবামMy Ummah, Al-Mu’allim, Wherever You Are