০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

নৈতিকতা কাকে বলে এবং নৈতিকতার দর্শন ও উৎপত্তি কী

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ১১:১৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • / ২১৭৫ বার পড়া হয়েছে

নৈতিক চেতনা মানুষকে তার আচরণের নৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। মানুষকে তার কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

নৈতিকতা (Morality), যার অর্থ হলো ভদ্রতা, চরিত্র, উত্তম আচরণ। নৈতিকতা মূলত উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ, উচিত-অনুচিত এর পার্থক্যকারী।

নৈতিকতার সংজ্ঞা কী

নৈতিকতাকে একটি আদর্শিক মানদণ্ড বলা যেতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। মানুষের কথা বার্তায় চাল চলনে নীতি মেনে চললে তাকে নৈতিকতা বলে।

নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। আবার এটি সেসকল বিষয় হতেও আসতে পারে যেসকল বিষয়কে সমগ্র মানুষ কল্যাণকর হিসেবে আখ্যায়িত করে। নৈতিকতাকে “সঠিকতা” বা “ন্যায্যতা”-ও বলা যায়।

নৈতিকতার আদর্শে পরানীতিবিদ্যা অন্তর্ভুক্ত থাকে যেখানে নৈতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ, উক্তি, প্রবণতা এবং বিচারের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। নৈতিকতার একটি আদর্শ উদাহরণ হলো— “আমাদের উচিত অন্যের সাথে সেভাবেই আচরণ করা যেমনটা আমরা নিজেরা অন্যের থেকে আশা করব।”

অপরদিকে, অনৈতিকতা হলো নৈতিকতারই সম্পূর্ণ বিপরীত। যা অসচেতনতা, অবিশ্বাস, উদাসীনতারই বহিঃপ্রকাশ।

নির্দিষ্ট অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এক ধরনের আদর্শিক মানদণ্ডকে নৈতিকতা বলে।

নৈতিকতার দর্শন

নীতিবিদ্যা হলো দর্শনের সেই শাখা যেখানে নৈতিকতা সম্বন্ধীয় প্রশ্ন করা হয়।নীতি শব্দটি নৈতিকতারই সমার্থক শব্দ।অর্থাৎ নীতিবিদ্যা দ্বারা নৈতিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান বা বিদ্যাকে বোঝায়। এটি মূলত উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত এবং কমের মধ্যকার ভালো খারাপ উচিত-অনুচিত এর পাথক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদণ্ড বা নীতিমালা যা নিদিষ্ট কোনো আদর্শ ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে।

নৈতিকতার উৎপত্তি ও বিকাশ

আধুনিক নৈতিকতার বিকাশ সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনের সাথে জড়িত একটি প্রক্রিয়া।  কিছু বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী, বিশেষত সমাজবিজ্ঞানী, বিশ্বাস করেন যে নৈতিকতা হলো ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সমষ্টিগত পর্যায়ে কাজ করা ক্রমবিকাশমূলক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ, যদিও এটি আসলে কোন মাত্রায় সংঘটিত হয় তা বিবর্তনবাদী তত্ত্বের একটি বিতর্কিত বিষয়।  কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতে মানুষের নৈতিকতা সৃষ্টিকারী আচরণবিধি মূলত বিকশিত হয়েছিল কেননা তারা মানষের সম্ভাব্য বেঁচে থাকা বা প্রজননে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছিলো। যেমন— বিবর্তনীয় সাফল্য বৃদ্ধি করেছে। এরই ফলস্বরূপ মানুষের এই নৈতিক আচরণগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে “সম-সামাজিক” অনুভূতি যেমন সমবেদনা বা অপরাধবোধের বিকাশ ঘটে।

নৈতিকতা ও মনোবিজ্ঞান

আধুনিক নৈতিক মনোবিজ্ঞানে, নৈতিকতা ব্যক্তিগত বিকাশের মাধ্যমে পরিবর্তন হিসাবে বিবেচিত হয়।  নৈতিকতার বিভিন্ন ধারার উপর গবেষণা করে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী নৈতিকতার বিকাশের উপর বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন।  লরেন্স কোহলবার্গ, জিন পিয়াগেট এবং এলিয়ট টুরিয়াল নৈতিক বিকাশ ও জ্ঞানীয়-বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন;  এই তাত্ত্বিকদের মতে নৈতিকতা কতগুলো গঠনমূলক ডোমেইনের ধারায় অবস্থান করে।  ক্যারল গিলিগান প্রতিষ্ঠিত যত্নের নীতি পদ্ধতির ক্ষেত্রে, নৈতিক বিকাশ যত্নশীল, পারস্পরিক প্রতিক্রিয়াশীল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ঘটে যা আন্তঃনির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে বিশেষত পিতামাতার ক্ষেত্রেও সাধারণত সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।  মার্টিন হফম্যান এবং জনাথন হ্যাডের মতো সামাজিক মনোবিজ্ঞানীরা সহানুভূতির মতো জীববিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের উপর জোর দেন।  নৈতিক পরিচয় তাত্ত্বিকরা, যেমন উইলিয়াম ড্যামন এবং মুরডেচাই নিসান নৈতিক প্রতিশ্রুতিটিকে নৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি স্ব-পরিচয়ের বিকাশ থেকে উদ্ভূত হিসাবে দেখেন: এই নৈতিক আত্ম-পরিচয় এই জাতীয় উদ্দেশ্যগুলি অনুসরণ করার দায়বদ্ধতার অনুভূতি বাড়ে।  মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে (historical) ঐতিহাসিক আগ্রহের মধ্যে রয়েছে সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতো মনোবিজ্ঞানীদের তত্ত্ব, যারা বিশ্বাস করেন যে নৈতিক বিকাশকে অপরাধ-লজ্জা পরিহার হিসাবে অতি-অহংকারের দিকগুলির ফসল বলে মনে হয়।

তথ্যসূত্র

  • Stanford University (১৪ মার্চ ২০১১)। “The Definition of Morality”। Stanford Encyclopedia of Philosophy। Stanford University। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৪।
  • Johnstone, Megan-Jane (২০০৮)। Bioethics: A Nursing Perspective। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 102–103। আইএসবিএন 978-0-7295-3873-2।
  • Superson, Anita (২০০৯)। The Moral Skepticবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 127–159। আইএসবিএন 978-0-19-537662-3।

শেয়ার করুন

One thought on “নৈতিকতা কাকে বলে এবং নৈতিকতার দর্শন ও উৎপত্তি কী

  1. ধন্যবাদ। নৈতিকতা সম্পর্কে সুন্দর কনটেন্ট লেখার জন্য

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

নৈতিকতা কাকে বলে এবং নৈতিকতার দর্শন ও উৎপত্তি কী

প্রকাশ: ১১:১৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

নৈতিকতা (Morality), যার অর্থ হলো ভদ্রতা, চরিত্র, উত্তম আচরণ। নৈতিকতা মূলত উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ, উচিত-অনুচিত এর পার্থক্যকারী।

নৈতিকতার সংজ্ঞা কী

নৈতিকতাকে একটি আদর্শিক মানদণ্ড বলা যেতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। মানুষের কথা বার্তায় চাল চলনে নীতি মেনে চললে তাকে নৈতিকতা বলে।

নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। আবার এটি সেসকল বিষয় হতেও আসতে পারে যেসকল বিষয়কে সমগ্র মানুষ কল্যাণকর হিসেবে আখ্যায়িত করে। নৈতিকতাকে “সঠিকতা” বা “ন্যায্যতা”-ও বলা যায়।

নৈতিকতার আদর্শে পরানীতিবিদ্যা অন্তর্ভুক্ত থাকে যেখানে নৈতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ, উক্তি, প্রবণতা এবং বিচারের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। নৈতিকতার একটি আদর্শ উদাহরণ হলো— “আমাদের উচিত অন্যের সাথে সেভাবেই আচরণ করা যেমনটা আমরা নিজেরা অন্যের থেকে আশা করব।”

অপরদিকে, অনৈতিকতা হলো নৈতিকতারই সম্পূর্ণ বিপরীত। যা অসচেতনতা, অবিশ্বাস, উদাসীনতারই বহিঃপ্রকাশ।

নির্দিষ্ট অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এক ধরনের আদর্শিক মানদণ্ডকে নৈতিকতা বলে।

নৈতিকতার দর্শন

নীতিবিদ্যা হলো দর্শনের সেই শাখা যেখানে নৈতিকতা সম্বন্ধীয় প্রশ্ন করা হয়।নীতি শব্দটি নৈতিকতারই সমার্থক শব্দ।অর্থাৎ নীতিবিদ্যা দ্বারা নৈতিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান বা বিদ্যাকে বোঝায়। এটি মূলত উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত এবং কমের মধ্যকার ভালো খারাপ উচিত-অনুচিত এর পাথক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদণ্ড বা নীতিমালা যা নিদিষ্ট কোনো আদর্শ ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে।

নৈতিকতার উৎপত্তি ও বিকাশ

আধুনিক নৈতিকতার বিকাশ সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনের সাথে জড়িত একটি প্রক্রিয়া।  কিছু বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী, বিশেষত সমাজবিজ্ঞানী, বিশ্বাস করেন যে নৈতিকতা হলো ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সমষ্টিগত পর্যায়ে কাজ করা ক্রমবিকাশমূলক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ, যদিও এটি আসলে কোন মাত্রায় সংঘটিত হয় তা বিবর্তনবাদী তত্ত্বের একটি বিতর্কিত বিষয়।  কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতে মানুষের নৈতিকতা সৃষ্টিকারী আচরণবিধি মূলত বিকশিত হয়েছিল কেননা তারা মানষের সম্ভাব্য বেঁচে থাকা বা প্রজননে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছিলো। যেমন— বিবর্তনীয় সাফল্য বৃদ্ধি করেছে। এরই ফলস্বরূপ মানুষের এই নৈতিক আচরণগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে “সম-সামাজিক” অনুভূতি যেমন সমবেদনা বা অপরাধবোধের বিকাশ ঘটে।

নৈতিকতা ও মনোবিজ্ঞান

আধুনিক নৈতিক মনোবিজ্ঞানে, নৈতিকতা ব্যক্তিগত বিকাশের মাধ্যমে পরিবর্তন হিসাবে বিবেচিত হয়।  নৈতিকতার বিভিন্ন ধারার উপর গবেষণা করে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী নৈতিকতার বিকাশের উপর বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন।  লরেন্স কোহলবার্গ, জিন পিয়াগেট এবং এলিয়ট টুরিয়াল নৈতিক বিকাশ ও জ্ঞানীয়-বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন;  এই তাত্ত্বিকদের মতে নৈতিকতা কতগুলো গঠনমূলক ডোমেইনের ধারায় অবস্থান করে।  ক্যারল গিলিগান প্রতিষ্ঠিত যত্নের নীতি পদ্ধতির ক্ষেত্রে, নৈতিক বিকাশ যত্নশীল, পারস্পরিক প্রতিক্রিয়াশীল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ঘটে যা আন্তঃনির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে বিশেষত পিতামাতার ক্ষেত্রেও সাধারণত সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।  মার্টিন হফম্যান এবং জনাথন হ্যাডের মতো সামাজিক মনোবিজ্ঞানীরা সহানুভূতির মতো জীববিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের উপর জোর দেন।  নৈতিক পরিচয় তাত্ত্বিকরা, যেমন উইলিয়াম ড্যামন এবং মুরডেচাই নিসান নৈতিক প্রতিশ্রুতিটিকে নৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি স্ব-পরিচয়ের বিকাশ থেকে উদ্ভূত হিসাবে দেখেন: এই নৈতিক আত্ম-পরিচয় এই জাতীয় উদ্দেশ্যগুলি অনুসরণ করার দায়বদ্ধতার অনুভূতি বাড়ে।  মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে (historical) ঐতিহাসিক আগ্রহের মধ্যে রয়েছে সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতো মনোবিজ্ঞানীদের তত্ত্ব, যারা বিশ্বাস করেন যে নৈতিক বিকাশকে অপরাধ-লজ্জা পরিহার হিসাবে অতি-অহংকারের দিকগুলির ফসল বলে মনে হয়।

তথ্যসূত্র

  • Stanford University (১৪ মার্চ ২০১১)। “The Definition of Morality”। Stanford Encyclopedia of Philosophy। Stanford University। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৪।
  • Johnstone, Megan-Jane (২০০৮)। Bioethics: A Nursing Perspective। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 102–103। আইএসবিএন 978-0-7295-3873-2।
  • Superson, Anita (২০০৯)। The Moral Skepticবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 127–159। আইএসবিএন 978-0-19-537662-3।