বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩

জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সদ্য স্বাধীন একটি দেশের জাতির জনকের আগমনকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্ক নগরীর বিদ্ব্যত্সমাজে বিশেষ ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। মনে পড়ে, হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া’র রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি। আমার সামনেই উপবিষ্ট একটি পরিবার। পরিচয়ের শুরুতেই তারা আমায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?’ আমি বললাম, বাংলাদেশ থেকে। তখন তাদের মুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি কথাই উচ্চারিত হয়, ‘ও, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব! তিনি একজন মহান নেতা।’ পরিচয় দিয়ে বললাম, আমি তার পলিটিক্যাল সেক্রেটারি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদের ৪৮ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছর। এ উপলক্ষ্যে মনে পড়ছে ১৯৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বরের কথা, যেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য ও মহত্তর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। জাতির জনকের সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে যোগদানের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। বছর ঘুরে দিনটি এলে অনুপম সেই স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা মানসপটে ভেসে ওঠে। আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির জনকের দৃষ্টান্ত অনুসরণে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করেছেন, এবারও ২৩ সেপ্টেম্বর ৭৭তম অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছেন।

১৯৭৪-এর ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার ঐতিহাসিক এই দিনের সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্ররূপে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। এই ঘোষণা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ বঙ্গবন্ধু তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি সুখী হয়েছি যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে তার ন্যায্য আসন লাভ করেছে। জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।’ সেই হিসাবে ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে আমরা ঢাকা ত্যাগ করি। সর্বমোট ২৪ সদস্যের সফরসঙ্গীর মধ্যে ছিলেন—পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. নূরুল ইসলাম, গ্যাস ও ওয়েল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমান, এম আর সিদ্দিকী এমপি, আসাদুজ্জামান খান এমপি, দৈনিক ইত্তেফাকের তত্কালীন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং আরো অনেকে। লন্ডনে যাত্রাবিরতির পর ঐদিন রাতে প্যানঅ্যামের নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় আমরা কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করি। বিমানবন্দর থেকে আমাদের হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া’য় নিয়ে যাওয়া হয়। 

‘ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া’য় বঙ্গবন্ধুর হোটেলরুমে দর্শনার্থীদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিবেশনে আগত প্রতিনিধিদলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ লোকজনও বঙ্গবন্ধুর দর্শনপ্রার্থী ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার হোটেলরুমে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। এরপর আসে প্রতীক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সদ্য সদস্য পদপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা। বক্তৃতা প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম যখন ঘোষিত হয়, তখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মুহুর্মুহু করতালিতে চারদিক মুখরিত। মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চতুর্দিকে তাকিয়ে পরিষদে সমাগত বিশ্বনেতৃবৃন্দকে সম্বোধন করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘকে ‘মানব জাতির মহান পার্লামেন্ট’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতা শুরু করেন। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘শান্তি ও ন্যায়ের জন্য পৃথিবীর সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বিমূর্ত হয়ে উঠবে এমন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আজ পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘের সনদে যেসব মহান আদর্শ উৎকীর্ণ রয়েছে, তারই জন্য আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে।’ সেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সভাপতির আসন অলংকৃত করেছিলেন আলজেরিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা। তাকে আমি ইতিপূর্বে কাছ থেকে দেখেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে ওআইসি সম্মেলনে নেওয়ার জন্য ’৭৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ারে বুমেদিনের বিশেষ বিমান নিয়ে যে পাঁচজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের একজন। বক্তা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরিষদের সভাপতি স্বীয় আসন থেকে উঠে এসে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে তুলে নিয়েছিলেন। পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৪৫ মিনিট বক্তৃতা শেষে সভাপতি নিজেই যখন দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিপুলভাবে করতালি দিয়ে আলিঙ্গন করে অভিনন্দিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। অভাবনীয় সেই দৃশ্য। নিজ চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার মনে পড়ে, অধিবেশনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আমাদের কাছে এসে বলেছিলেন, ‘সত্যিই তোমরা গর্বিত জাতি। তোমরা এমন এক নেতার জন্ম দিয়েছ, যিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, এশিয়ার নেতা নন; তিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা।’ 

বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’ সিদ্ধান্তটি তিনি আগেই নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলা বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করার গুরুদায়িত্বটি অর্পিত হয়েছিল ফারুক চৌধুরীর (প্রয়াত) ওপর। তিনি ছিলেন লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার। ছুটিতে তিনি দেশে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ, ‘ফারুক, তোমার ছুটি নাই। তোমাকে এখানে কাজ করতে হবে।’ বার্মা থেকে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু ফারুক চৌধুরীকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমার লন্ডন যাওয়া চলবে না। তুমি আমার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে যাবে এবং জাতিসংঘে আমি বাংলায় যে বক্তৃতাটি করব, তাত্ক্ষণিকভাবে তুমি সেই বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করবে।’ ফারুক ভাই সুন্দর ইংরেজি বলেন ও লেখেন। প্রথমে ফারুক ভাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি সহজ করতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রিহার্সাল দাও। বক্তৃতা ভাষান্তরের সময় ভাববে যেন তুমিই প্রধানমন্ত্রী। তবে, পরে কিন্তু তা ভুলে যেও।’ মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদানে বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্ত ছিল তার সমগ্র জীবনের স্বাভাবিক ও যৌক্তিক পরিণতি। সেদিন বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে কেবলই মনে হয়েছে, তিনি যেন বহু যুগ ধরে এমন একটি দিনের অপেক্ষায় নিজকে প্রস্তুত করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু মুজিবের এই ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর অধিবেশনে আগত পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধি এবং সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল পঠিত জাতিসংঘের ‘ডেলিগেট বুলেটিন’ বঙ্গবন্ধুকে ‘কিংবদন্তির নায়ক মুজিব’ বলে আখ্যায়িত করে। বুলেটিনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া পত্রস্থ করা হয়। বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, ‘এযাবৎ আমরা কিংবদন্তির নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি। এখন আমরা তাকে কাজের মধ্যে দেখতে পাব।’ জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে বলা হয়, ‘বক্তৃতায় ধ্বনিত হয়েছে মুজিবের মহৎ কণ্ঠ।’ জাতিসংঘের মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম তাত্ক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। বক্তৃতাটি ছিল সহজ, গঠনমূলক ও অর্থবহ।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভূয়সী প্রশংসা করে বুলেটিনটির ভাষ্য ছিল, ‘অতীতের অনগ্রসরতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে, তা বাংলাদেশের নেতা মুজিব তার বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।’

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতিজনিত সমস্যা এবং বাংলাদেশে সর্বনাশা বন্যার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনায় আমার সৌভাগ্য হয়েছিল অংশগ্রহণের। কাছ থেকে দেখেছি অসাধারণ রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে স্বদেশের প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পর জাতিসংঘ বাংলাদেশের ত্রাণকাজে ৭০ লাখ ডলার সহায়তা প্রদান করেছিল এবং উপমহাসচিব ড. ভিক্টর উমব্রাইখটকে বাংলাদেশের সমস্যার প্রতি বিশেষ নজর রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে নিউ ইয়র্ক সিটি হলে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় নিউ ইয়র্কের মেয়র বঙ্গবন্ধুকে নগরীর চাবি উপহার দেন এবং বলেন, ‘এই উপহার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের প্রতি আমেরিকার জনগণের শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন।’ প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা আত্মদান করেছেন, সেই সব শহিদের আর সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে এই চাবি গ্রহণ করে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।’ 

এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে অক্টোবরের ১ তারিখ সকাল ১০টায় আমরা নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়শিংটনের এন্ড্রুজ বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করি। ওয়াশিংটনে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল মার্কিন রাষ্ট্রপতির অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউজে। বেলা ১১টায় ব্লেয়ার হাউজে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম স্যাক্সবি। বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠক করেন। বিকাল ৫টায় সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা। পরদিন অক্টোবরের ২ তারিখ সকালে সিনেটর কেনেডি ও জর্জ ম্যাকভার্ন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধুর সম্মানে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির পক্ষে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। 

সদ্য স্বাধীন একটি দেশের জাতির জনকের আগমনকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্ক নগরীর বিদ্ব্যত্সমাজে বিশেষ ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। মনে পড়ে, হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া’র রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি। আমার সামনেই উপবিষ্ট একটি পরিবার। পরিচয়ের শুরুতেই তারা আমায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?’ আমি বললাম, বাংলাদেশ থেকে। তখন তাদের মুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি কথাই উচ্চারিত হয়, ‘ও, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব! তিনি একজন মহান নেতা।’ পরিচয় দিয়ে বললাম, আমি তার পলিটিক্যাল সেক্রেটারি। কিন্তু তারা বিশ্বাস করতে পারলেন না। আমার মতো অল্প বয়সী একজন কী করে বিশ্বখ্যাত নেতা শেখ মুজিবের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি হতে পারে! কেবল বললেন, ‘আর ইউ শিওর?’ আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। তারপর যখন বঙ্গবন্ধুকে আমি ঘটনাটি ব্যক্ত করি, তিনি বললেন, ‘তাদের নিয়ে এসো।’ তাদের বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে এলাম। অপার বিস্ময়ে কৃতজ্ঞদৃষ্টিতে আমাকে অভিবাদন জানিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপে মগ্ন হলেন। মানবজাতির সর্বোচ্চ পার্লামেন্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও সদস্যপদ অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তোফায়েল আহমেদ
তোফায়েল আহমেদ একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি পাঁচ দফা জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদের একজন সদস্য এবং তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

সতেরো শতকের সাত গম্বুজ মসজিদ

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারণে মসজিদের নাম হয়েছে 'সাতগম্বুজ...

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন

১২ জানুয়ারি  মাস্টারদা সূর্য সেনের  ফাঁসিদিবস । ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি...

ইতিহাস: স্পেনে মুসলমানদের শাসন (উত্থান ও পতন)

আইবেরিয়ান উপদ্বীপে (The Iberian Peninsula) ইসলাম ছিল একটি প্রধান ধর্ম, যাউমাইয়াদের হিস্পেনিয়া বিজয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠে। ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক স্প্যানিশ...

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী  অপরাধ কী এবং বাংলাদেশে ভদ্রবেশী অপরাধের সংঘটন

হোয়াইট কলার অপরাধ। এর কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা ‘ভদ্রবেশী অপরাধ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে...
আরও পড়তে পারেন

শিরক কী, মানুষ কীভাবে শিরকে লিপ্ত হয়

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে স্রষ্টা তার কোনো ক্ষমতাতেই কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র একক ইলাহ যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। সৃষ্টির...

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

টপ্পা গান কী, টপ্পা গানের উৎপত্তি, বাংলায় টপ্পা গান ও এর বিশেষত্ব

টপ্পা গান এক ধরনের লোকিক গান বা লোকগীতি যা ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই টপ্পা গান বলতে...

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়।  এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র...

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী বা গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের অথবা কোনো সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বা পরিচালনাব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here